সপ্তাহ দুয়েক ধরে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বাজারগুলোতে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। গত বছরের তুলনায় এবার মণপ্রতি প্রায় এক হাজার টাকা বেশি দামে পাট বিক্রি করছেন কৃষকেরা। এ ছাড়া এবার পাটের ফলন যেমন ভালো হয়েছে, পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় জাগ দেওয়ার জন্য পানির অভাবও হয়নি। সব মিলিয়ে এবার পাটচাষিরা বেশ খুশি।

গত বছরের শুরুতে নতুন পাট বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৯০০ টাকা মণ দরে। এবার কৃষকেরা নতুন পাট বিক্রি করছেন মণপ্রতি ৩ হাজার ৭০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকায়। এবার প্রতি মণে বাড়তি পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।

উপজেলার আমাইকোলা গ্রামের কৃষক আরশেদ আলী বলেন, ‘এবার পাটের ফলনও ভালো হইছে, আবার দামও ভালো পাত্যাছি। এবার নতুন পাট বেইচ্যা মণে হাজার বারো শ টাকা লাভ পাত্যাছি। তয় এমন ভালো দাম কয়দিন থাকে কিডা জানে।’

উপজেলা কৃষি কার্যালয় ও স্থানীয় কয়েকজন কৃষকের সূত্রে জানা যায়, সাঁথিয়া উপজেলায় এবার ৭ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ায় এবার প্রতি বিঘায় গড়ে ৯ মণ ফলন পাওয়া গেছে। এ ছাড়া গত বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন কৃষকেরা। কিন্তু এবার পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় তেমন পরিস্থিতি হয়নি।

তবে কৃষকদের অভিযোগ, গত বছরের তুলনায় এবার পাটের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। বিশেষ করে এবার শ্রমিক প্রতি খরচ বেশি পড়েছে। গত বছর দৈনিক ৭০০ টাকা মজুরিতে শ্রমিক পাওয়া গেছে; কিন্তু এবার পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও ছাড়ানো বাবদ শ্রমিকপ্রতি দৈনিক ৮০০-৯০০ টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে। এতে গত বছরের তুলনায় এবার পাট চাষের খরচ প্রতি মণে দেড় থেকে দুই শ টাকা বেড়েছে। গত বছর যেখানে প্রতি মণ পাটের উৎপাদন খরচ আড়াই হাজার টাকার কাছাকাছি ছিল এবার তা বেড়ে ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা হয়েছে।

সোমবার সাঁথিয়ার করমজা চতুরহাটে সাপ্তাহিক পাটের হাট বসেছিল। এই হাটসহ উপজেলার বিভিন্ন হাটে দুই সপ্তাহ ধরে পাটের কেনাবেচা হচ্ছে। যেসব কৃষক মৌসুমের শুরুর দিকে পাটের আবাদ করেছিলেন, তাঁরাই আগে ভাগে এসব বিক্রি করতে পারছেন। ফলে হাটগুলোতে চোখে পড়ার মতো পাটের সরবরাহ হয়নি।

করমজা চতুরহাটে গতকাল পাট কিনতে যান উপজেলার চোমরপুর গ্রামের ব্যবসায়ী আবু তালেব। তিনি বলেন, এখন যত দিন যাবে, হাটে পাটের সরবরাহ ততই বাড়বে। তবে মৌসুমের শুরু হিসেবে হাটে মোটামুটি ভালোই পাটের সরবরাহ দেখা যাচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগে পাটের দাম (মণপ্রতি) ৩ হাজার ৯০০ টাকায় উঠেছিল। সেই তুলনায় গতকালের হাটে মণে এক থেকে দেড় শ টাকা কমেছে। এর পরও যে দামে পাট বিক্রি হচ্ছে, তাতে কৃষক খুশি মনে বাড়ি ফিরছেন।

তবে আগামী দিনে সরবরাহ বাড়লে পাটের দাম পড়ে যাবে কি না, এমন আশঙ্কায় আছেন কৃষকেরা। শহীদনগর গ্রামের কৃষক সাদ্দাম হোসেন, ছেঁচানিয়া গ্রামের আলতাফ হোসেনসহ পাঁচ-ছয়জন কৃষক জানান, বর্তমান দামে কৃষক খুশি হলেও আগামী দিনগুলোতে সরবরাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম কমে যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় আছেন। এখন বেশির ভাগ কৃষকই অল্প অল্প করে পাট কেটে সেই পাট জাগ দিয়ে ও শুকিয়ে বাজারে আনছেন। বাকি পাট বাজারে আনতে আরও দুই থেকে তিন সপ্তাহ লাগবে। অনেকের আবার এর চেয়েও বেশি দেরি হবে।

কৃষক ভালো দাম পেলে আরও বেশি জমিতে পাট চাষে আগ্রহী হবেন জানিয়ে সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, ‘আবহাওয়া, ফলন ও দাম অনুযায়ী এবার কৃষক পাট চাষে লাভজনক অবস্থায় আছেন। আমাদের হিসাবে বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী প্রতি মণে কৃষকের ১ হাজার ২০০ টাকার বেশি লাভ হচ্ছে। তবে এখনো হাটে পাটের সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। তিন-চার সপ্তাহ পরে সরবরাহ স্বাভাবিক হলে বোঝা যাবে দাম কোথায় গিয়ে দাঁড়াল।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ট র সরবর হ গত বছর র নত ন প ট উপজ ল র

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনের দিন অমোচনীয় কালি সরবরাহ না হলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে: ছাত্রদল

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনে অমোচনীয় কালি সরবরাহ না করলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতারা। এ ছাড়া এমফিল কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ছাত্রদলকে ভোট প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা।

রোববার উপাচার্যের সভাকক্ষে রাজনৈতিক ও সক্রিয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত জকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫–এর আচরণবিধিবিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় ছাত্রদলের নেতারা এমন মন্তব্য করেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘নির্বাচনে যদি কোনো ধরনের অনিয়মের ঘটনা ঘটে, তাহলে আমরা একচুল ছাড় দেব না। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, যদি কোনো ধরনের অনিয়ম হয়— কোনো ছাড় হবে না। নির্বাচনের সময় অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে হবে। যদি নির্বাচন কমিশন অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে।’

ভোটের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ‘ম্যানুয়ালি’ ভোট গণনার দাবি জানিয়ে শামসুল আরেফিন বলেন, ‘কত ব্যালট ছাপানো হলো, কত ভোট গণনা হলো, কত ব্যালট নষ্ট হলো—এসব তথ্য স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রকাশ করতে হবে। কারণ, আমরা ডাকসুতে ব্যালট কেলেঙ্কারির অভিযোগ সম্পর্কে জানি।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ বিধিমালায় এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ছাত্রদলকে ‘মাইনাস’ করার একটি মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘জকসু গঠন ও পরিচালনা বিধিমালায় বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর নিয়মিত শিক্ষার্থী ভোটার কিংবা প্রার্থী ছাড়া কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। অন্যদিকে এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থীর যোগ্যতা না দিয়ে আমাদের মাইনাস করা ছিল মাস্টারপ্ল্যান—আর সেই মাস্টারপ্ল্যান সফল হয়েছে।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসানের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য রেজাউল করিম, প্রক্টর, সিন্ডিকেটের সদস্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর নির্বাচন কমিশনার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই সপ্তাহের মধ্যে তেহরানে সুপেয় পানি ফুরিয়ে যেতে পারে
  • চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে
  • জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন
  • বাজারে আগাম সবজি আসতে দেরি, দাম চড়া
  • নির্বাচনের দিন অমোচনীয় কালি সরবরাহ না হলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে: ছাত্রদল
  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
  • টমাহক কত দূরে আঘাত হানতে পারে, রাডারে কেন ধরা পড়ে না
  • সামুদ্রিক মাছে ভরপুর আড়ত, দাম কেমন
  • যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশে আতঙ্ক-উত্তেজনা, ট্রাম্প আসলে কী চান
  • ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিতে পেন্টাগনের সায়, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প