ফেরার কথা ছিল নতুন বউ নিয়ে, ফিরল নিথর দেহ
Published: 2nd, August 2025 GMT
সানাইয়ের সুর, ঢাকঢোলের বাজনা আর আনন্দ-উচ্ছ্বাসে সময় যাচ্ছিল। যুবকের পরণে ছিল শেরওয়ানি, মাথায় ছিল বিয়ের পাগড়ি, কপালে চন্দনের ফোঁটা। কথা ছিল নতুন বউ নিয়ে ফিরে আসবে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, সব আনন্দ মুহূর্তে থেমে গেল।
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামের অমিত কুমার সরকার (৩৫) ছিলেন ব্যবসায়ী। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। ছোট ভাই আশিক সরকার ঘুমের মধ্যে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তিন বছর আগে। সেই শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতে মা-বাবা আরেক সন্তানকে হারালেন।
তিন দশক প্রবাসে কাটিয়ে বাবা দিলীপ সরকার দেশে ফিরেছেন। সংসার আর ব্যবসার হাল ধরেন। ছেলে অমিতের বিয়ে ঠিক করেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভিংরাব গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ের সঙ্গে। দিনক্ষণ ঠিক হয় বাংলা পঞ্জিকার ১৫ শ্রাবণ, অর্থাৎ ৩১ জুলাই।
আরো পড়ুন:
চিকিৎসককে মারধর করলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা
অপারেশনের পর শিশুর মৃত্যু: তদন্ত কমিটি গঠন, থানায় মামলা
পরিকল্পনা অনুযায়ী বিয়ের আগের দিন বুধবার (৩০ জুলাই) গ্রামের বাড়িতে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হয়। পর দিন বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সকাল থেকে শুরু হয় বরযাত্রার প্রস্তুতি। বিকেলে মঙ্গলঘট স্থাপন শেষে শেরওয়ানি-পাগড়ি পরে বরবেশে বের হন অমিত। বাদ্যযন্ত্র আর স্বজনদের আনন্দ উল্লাসে শুরু হয় বরযাত্রা। নতুন বউ আনতে কনে বাড়িতে ছুটে চলে গাড়িবহর।
পথে ঘটে অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়। রাত ১০টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার গৌরীপুর এলাকায় হঠাৎ বুকে তীব্র ব্যথায় কাতর হয়ে পড়েন বর অমিত। সঙ্গে সঙ্গে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে দ্রুত রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে রাত আনুমানিক ২টার দিকে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন অমিত।
কনের বাড়িতে তখনো বিয়ের প্রস্তুতি চলছিল। সবাই অপেক্ষায়, কখন এসে পৌঁছাবে বর আর বরযাত্রীরা। রাত বাড়ে, কোনো খবর আসে না। দুশ্চিন্তা বাড়ে কনের পরিবারের। একের পর এক ফোন যেতে থাকে বরের স্বজনদের কাছে। উত্তর আসে না। হঠাৎ খবর আসে— বর আর আসছেন না। বর চলে গেছেন না-ফেরার দেশে।
যেখানে শুক্রবার (১ আগস্ট) ভোরে সুসজ্জিত প্রাইভেটকারে নতুন বউকে নিয়ে ঘরে ফেরার কথা ছিল, সেই সময়ে একাই ফিরলেন অমিত— সাদা কাফনের কাপড়ে মোড়ানো নিথর দেহে। কপালে তখনো লেগে ছিল চন্দনের সেই ফোঁটা, মাথায় পাগড়ির দাগ।
শোকে বাকরুদ্ধ মা রাধারাণী ছুটে গিয়ে ছেলের নিথর দেহ জড়িয়ে ধরেন। বিলাপ করে কেঁদে ওঠেন, “বাবা তোরা আমাকে কোথায় রেখে গেলি? আর কাকে নিয়ে বাঁচব?”
ঢাকা/রুবেল/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মরদ হ ন হত
এছাড়াও পড়ুন:
সিজারের সময় নবজাতকের পা ভেঙে ফেলার অভিযোগ
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সিজারিয়ান অপারেশনের সময় এক নবজাতকের পা ভেঙে ফেলার অভিযোগ উঠেছে ক্লিনিকের চেয়ারম্যান ও আবাসিক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে বিষয়টি নিয়ে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে নবজাতকসহ তাদেরকে ক্লিনিক থেকে বের করে দেওয়া হয়। ওই রাতেই শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম হাসপাতালে) নেওয়া হয়।
অভিযুক্ত চিকিৎসক পার্থ সমদ্দার কলাপাড়া পৌর শহরের জমজম ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আবাসিক চিকিৎসক এবং চেয়ারম্যান।শিশুটির
স্বজনদের অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) প্রসব বেদনা নিয়ে জমজম ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি হন লালুয়ার ইউনিয়নের গোলবুনিয়া গ্রামের সিদ্দিক মিয়ার মেয়ে ও রফিকুলের স্ত্রী মিম বেগম। ওই রাতেই মিমের সিজারিয়ান অপারেশন করেন ডা. পার্থ সমদ্দার। সিজারের কিছুক্ষণ পরই টিকার কথা বলে নবজাতকের পায়ে একটি ইনজেকশন পুশ করা হয়। পরের দিন থেকেই নবজাতকের বাম পা ফুলতে শুরু করে এবং কান্না বাড়তে থাকে। বিষয়টি চিকিৎসক ও নার্সদেরকে অবহিত করলে তারা তাতে কর্ণপাত করেননি। উল্টো ওই ক্লিনিকের কর্মী ও নার্সরা নবজাতকের স্বজনদের সঙ্গে অসদাচরণের পাশাপাশি তাদের ক্লিনিক থেকে বের করে দেন। পরে অন্যত্র এক্সরে করে জানা যায়, সিজারের সময় নবাজতকের পা ভেঙে ফেলেছেন চিকিৎসক।
নবজাতকের মা মিম আক্তার বলেছেন, বাচ্চা অনবরত কান্না করলে প্রথমে নার্স ও পরে চিকিৎককে অবহিত করা হয়। বাচ্চার বাম ফুলে গেলে তা জানানো হয়। কিন্তু, তারা এর কোনো প্রতিকার না করে আমাদের ধমকাতে থাকেন। ক্লিনিক ছেড়ে চলে যেতে চাপ প্রয়োগ করেন।
নবজাতকের নানা সিদ্দিক বলেন, টিকার কথা বলে আমার নাতিকে শরীর অবশ করার ইনজেকশন দিয়েছিল নার্সরা। ইনজেকশনের কার্যকারিতা শেষ হওয়ার পরপরই আমার নাতি অনেক কান্না করে। আমার স্ত্রী নার্সদের বললে তারা তাকে মারধরের চেষ্টা করে। আমাদের সঙ্গে ক্লিনিকের সবাই অনেক খারাপ আচরণ করেছে। এভাবে রোগীদের সঙ্গে প্রাইভেট ক্লিনিকের কর্মকর্তারাও যদি অসদাচরণ করে, তাহলে আমরা কোথায় যাব?
সিজারের সময় নবজাকের পা ভাঙেনি, দাবি করে জমজম ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেয়ারম্যান ডা. পার্থ সমদ্দার বলেছেন, আমি শিশু বিশেষজ্ঞ নই। নবজাতককে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শংকর প্রসাদ অধিকারী বলেছেন, যদি সিজারিয়ান অপারেশনের প্রশিক্ষণ থাকে, তাহলে এনেস্থেসিস্টও সিজার করতে পারেন। তবে, এনেস্থেসিস্ট একাই সিজারিয়ান অপারেশন করতে পারেন না।
ঢাকা/ইমরান/রফিক