ডাকাতির প্রস্তুতিকালে পুলিশ সদস্য, সাবেক সেনাসদস্যসহ গ্রেপ্তার ৯
Published: 3rd, August 2025 GMT
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে একজন কর্মরত পুলিশ সদস্য, একজন চাকরিচ্যুত সাবেক সেনাসদস্য ও একজন নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য আছেন।
গত শুক্রবার রাত তিনটার দিকে উপজেলার আলা মুন্সির মোড় এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। আজ রোববার সকালে লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন সাতক্ষীরা সদর থানার কটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল ইজাজ আহম্মেদ (৩৩), নড়াইলের লোহাগড়ার বাসিন্দা ও নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য অমিত কাজী (২৮), যশোরের ঝিকরগাছার বাসিন্দা ও সাবেক সেনাসদস্য হাফিজুর রহমান (৩৩), লোহাগড়ার তনু মোল্যা (৩৩), ঝিকরগাছার শামীম রেজা (২৩) ও শাওন রহমান (২৮), গোপালগঞ্জের আল আমিন (৩২) ও মোখলেস শেখ (৪০) ও ঝিনাইদহের মাসুদ রানা (৩০)।
পুলিশ জানায়, ওই রাতে টহলকালে আলা মুন্সির মোড়ে তাঁদের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁরা অসংলগ্ন কথা বলায় পুলিশ সন্দেহ করে। পরে তল্লাশি চালিয়ে তিনটি মোটরসাইকেলের খোলা নম্বরপ্লেট, রড, হাতুড়ি, দা, হাতকড়া, পেপার কাটারসহ ডাকাতির সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। তাঁদের ব্যবহৃত সাতটি মোটরসাইকেলও জব্দ করা হয়েছে।
পুলিশের ভাষ্য, জিজ্ঞাসাবাদ ও সার্ভার যাচাই করে দেখা গেছে, অমিত, শামীম, আল আমিন ও মোখলেসের বিরুদ্ধে একাধিক ডাকাতি, অস্ত্র ও মাদকের মামলা আছে। মোখলেস ও আল আমিনের বিরুদ্ধে চারটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে।
লোহাগড়া থানার ওসি শরিফুল ইসলাম বলেন, আটক ব্যক্তিরা আন্তজেলা ডাকাত দলের সদস্য। যশোর, ঝিনাইদহ, গোপালগঞ্জ ও নড়াইলের কয়েকজন মিলে বড় ধরনের ডাকাতির পরিকল্পনা করছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করে গতকাল শনিবার বিকেলে আদালতে পাঠানো হলে বিচারক তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গঙ্গাচড়ায় হিন্দুবাড়িতে হামলা ঠেকাতে ‘পর্যাপ্ত’ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি
তখন বেলা দুইটা। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার সিঙ্গেরগাড়ি বাংলাবাজার থেকে একটি মিছিল তিন কিলোমিটার পশ্চিমে পাড়ের হাটের দিকে যায়। মিছিলে ৩০০-৪০০ মানুষ ছিলেন। তবে মিছিলটি যখন সিঙ্গেরগাড়ি বাংলাবাজারে ফিরে আসে, তখন লোকে লোকারণ্য। মিছিলে পাঁচ-ছয় হাজার মানুষ। এরপর তাঁরা রংপুরের গঙ্গাগড়া উপজেলার বেতগাড়ি ইউনিয়নের আলদাদপুর গ্রামের দিকে রওনা দেন।
হিন্দুদের বসতবাড়িতে হামলার আগে এভাবেই প্রস্তুতি নেওয়ার বর্ণনা দিলেন নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের মাগুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দেখছি, দুজন ছিল গাড়ির ভেতরে। একজন ড্রাইভার, একজন এসআই (উপপরিদর্শক)। আমি বললাম, ভাইয়া, আমার সঙ্গে থাকেন, নিবৃত্ত করি। ওরা ভয়ে মনে হয় পিছিয়ে গিয়েছে! মাইকিং করে যেহেতু এত বড় কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে, ওনাদের (পুলিশ) আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া উচিত ছিল।’
আলদাদপুর গ্রামের এক কিশোরের ফেসবুকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে ফেসবুকে অবমাননার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত রোববার মিছিল নিয়ে গিয়ে গ্রামটিতে হামলা চালানো হয়। আগের দিন শনিবারও গ্রামটিতে হামলা করা হয়। ওই দিন অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে কিশোরটিকে আটক করে থানায় নিয়ে গিয়েছিল গঙ্গাচড়া থানা–পুলিশ। সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা করে পরদিন রোববার ওই কিশোরকে আদালতের মাধ্যমে সম্মিলিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
আলদাদপুর গ্রামটি পাশের জেলা নীলফামারীর মাগুরা ইউনিয়নের সীমানা লাগোয়া। স্থানীয় ব্যক্তি ও ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর ভাষ্য, সিঙ্গেরগাড়ি বাংলাবাজার থেকে মিছিল নিয়ে এসে দুই দফা হামলা চালানো হয়। রোববার সকাল থেকে মাগুরা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে সিঙ্গেরগাড়ি বাংলাবাজারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেওয়ার কথা বলা হয়। দুপুর ১২টার দিকে স্থানীয় কয়েকটি মসজিদের মাইকেও মানববন্ধনের বিষয়টি প্রচার করা হয়।
আমি দেখছি, দুজন ছিল গাড়ির ভেতরে। একজন ড্রাইভার, একজন এসআই (উপপরিদর্শক)। আমি বললাম, ভাইয়া, আমার সঙ্গে থাকেন, নিবৃত্ত করি। ওরা ভয়ে মনে হয় পিছিয়ে গিয়েছে! মাইকিং করে যেহেতু এত বড় কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে, ওনাদের (পুলিশ) আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া উচিত ছিল।মাগুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামানগঙ্গাচড়া উপজেলা প্রশাসনের হিসাবে, ১৫টি বসতঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যে পাঁচ তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে, তাঁদের বাড়ি মাগুরা ইউনিয়নে।
সিঙ্গেরগাড়ি বাংলাবাজার, হাজির হাট ও পাড়ের হাটের অন্তত ২০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা বলেছেন, সেদিন মিছিলে অনেক অপরিচিতি তরুণ ছিলেন। মাইকিং করে হাজার হাজার মানুষ সিঙ্গেরগাড়ি বাংলাবাজারে জড়ো করা হলেও পুলিশের ভূমিকা ছিল দর্শকের মতো। মাগুরার ইউপি সদস্য রুহুল আমিনও অভিন্ন অভিযোগ করেন। বেতগাড়ির ইউপি সদস্য পরেশ চন্দ্র বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গাফিলতি না করলে হামলা ঠেকানো যেত।
তবে কিশোরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলাম দাবি করেন, তাঁরা ওই দিন সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।
বিষয়টি জানার পর থানার ওসি ও ইউপি চেয়ারম্যানকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিলেন বলে জানান কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রীতম সাহা।
গঙ্গাচড়া থানার ওসি আল এমরান বলেন, তিনিসহ থানা ও পুলিশ লাইনসের ৩৫ সদস্য ছিলেন। কিন্তু খিলালগঞ্জ বাজার থেকে উচ্ছৃঙ্খল দেড় হাজার থেকে দুই হাজার তরুণ গ্রামটিতে ঢুকে পড়েন। তাঁদের বাধা দিতে গিয়ে এক কনস্টেবল আহত হন।