আমাদের স্বাস্থ্যবিধি
বাকির খাতায় লেখা জরুরি অক্ষর
কিছুটা অস্পষ্ট থাকে, অপাঠ্য অর্থেরা
কিছু নাম, কিছু অঙ্ক ভুল হয়ে থাকে
গাণিতিক সত্যমতে তবু মূলে ফেরা।
অস্তিত্বের শুদ্ধ ডাক ফেরাতে পারি না
পলির সীমানা এঁকে পালায় সময়
দুহাতে যায় না ধরা সকল জবাব—
কেবল জমানো প্রশ্ন, কী জানি কী হয়!
চর্মচক্ষে দেখা ছাড়া আমি নিরুপায়
কত যে ক্ষতাক্ত হয় দেহের পরিধি
কতটা গভীর হলে কান্না জমে থাকে
আমাদের সেই সূত্র জানে স্বাস্থ্যবিধি।
কোঁচড়ে কুড়িয়ে ভুল, লিখি নোটবুকে
যতিচিহ্ন লেপটে থাকে ললাটে চিবুকে।
একা সন্ত, একা সবযেন আমি ভেসে এসে হেসে হেসে যাই
দরজা ডিঙিয়ে একা নীরবে পালাই
যেন আগে আসি নাই নিচুদের পাড়া
সহসা সন্ত্রস্ত ফিরি নিজ পাহারায়।
আমাকে তাড়িয়ে দিয়ে কোথায় লুকাবে
যেন তুমি একা সন্ত, একা ভাঙো ঘর
একার সন্ন্যাস নিয়ে আমার কী দায়
একটু পাবার লোভে হারাও বিস্তর।
যে হারে, সে জিতে যায় পরিণাম বলে
সুদীর্ঘ ভ্রমণ শেষে মধুমতী-জলে
আকণ্ঠ প্লাবিত হই, স্নিগ্ধতার স্রোতে
নিজেকে উপাস্য ভাবি অন্য কোনো ব্রতে।
জগতের রীতি মেনে প্রবেশ-প্রস্থান
প্রতি পলে বেঁচে উঠি আমি হন্যমান।
আঁচলের আঁচেএবার বিরত হই, অনেক তো হলো
জলকেলি, ঘরের ভেতর থেকে ডেকে
উন্মুক্ত উঠোনে পিঁড়ি পেতে বসিয়েছি
আঁধারে মোড়ানো পথ গেছে এঁকেবেঁকে।
সুবিশাল সমাবেশে দাঁড় করিয়েছি
মঞ্চ পেতে সাজিয়েছি উদার বাসর
আঙুলের ইশারায় ফেরাওনি ঘরে
বিশাল প্রান্তর আজ বেহুলার ঘর।
একবার চলে গেলে নাগিনী ফেরে না
আশার পথের দিকে চোখ রেখে ভাবি
হয়তো কখনো এসে মৃদু টোকা দেবে
গোপনে পূরণ হবে অবিনাশী দাবি।
একা দূরে চলে যাই, তাতে সুখ আছে
আর তো পাব না দুঃখ আঁচলের আঁচে।
নাচের সংহত মুদ্রাদেখুন, আমার যতটুকু সাধ্য ছিল তা করেছি
কাঁধে বয়ে নিয়ে হাটে কাঁচাপাকা তরমুজ বেচি
যখন যা দরকারি মনে হয়, তখন তা করি
ওষুধের ভান্ড হাতে ঘুরিফিরি আমি ধনন্তরী।
আমার রয়েছে সাধ, ঘুরপথে সাধুর টিলায়
চলে যাই একা আর নেমে পড়ি যোগসাধনায়
গুপ্ত মন্ত্রে জাদু করে দেখে নিই পড়শির মুখ
কেবল বোঝাতে চাই, কিছু কাজ তুড়ি মেরে পারি।
ক্ষোভের সলতেটুকু অন্ধকারে নিভু নিভু জ্বলে
দুলে ওঠে মধুমতী, নেচে নেচে একা বয়ে চলে
দুচোখে উপেক্ষা মেখে জব্দ করি জলের ভ্রূকুটি
কখনো খুঁজিনি তার মুখসজ্জা অভিনয়-ত্রুটি।
নাচের সংহত মুদ্রা, কিছু কিছু জেনে রাখা ভালো
বোঝা যাবে কার মুখ, কার দিকে দুবাহু বাড়াল।
কালের পুরাণরামকে দিইনি দোষ—কালের নায়ক
সীতার সদ্ভাব মেনে রামায়ণ লিখি
ভরতের রাষ্ট্রনীতি ভক্তিপুষ্পে ঢাকা
সকল দোষের দাগী সুকবি বাল্মিকী।
কৈকেয়ীকে আর আমি দেব না সন্তাপ
তার বরে রাজা হয় গর্ভের ভরত
রাম গেছে বনবাসে চৌদ্দটি বছর
জেনেছে শাসনকলা চড়ে দিব্যরথ।
প্রকৃতির পাঠ থেকে জীবন শিখেছে
সীতার সতীত্ব বাঁচে অগ্নিপরীক্ষায়
যুদ্ধবিদ্যা পারদর্শী লক্ষ্মণের ভ্রাতা
সুগ্রীব ও হনুমান দুঃসাহসী বীর।
ইতিহাস হয়ে ওঠে কালের পুরাণ
অগোচরে রাখি সত্য, গাই জয়গান।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
স্তম্ভিত হারমানপ্রীত, আবেগ-রোমাঞ্চ-গর্ব-ভালোবাসায় মিলেমিশে একাকার
২০০৫ ও ২০১৭, ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডে বিশ্বকাপের খুব কাছে গিয়েও শিরোপা জিততে পারেননি। হারমানপ্রীত কৌররা লম্বা সেই অপেক্ষা দূর করলেন দুই হাজার পঁচিশে।
মুম্বাইয়ের নাভিতে প্রায় ষাট হাজার দর্শকের সামনে উচিুঁয়ে ধরলেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। ২০১৭ সালের ফাইনালেও খেলেছিলেন হারমানপ্রীত। রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। এবার আর ভুল করলেন না। অধিনায়ক হয়ে জিতলেন শিরোপা। গড়লেন ইতিহাস। যে ইতিহাস কখনো মুছবে না। কখনো জং ধরবে না।
ঝলমলে হাসিতে হারমানপ্রীত ট্রফি হাতে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করেন। এবার তার আবেগের ধরণ ছিল ভিন্ন, যেন স্বপ্ন পূরণের মাখামাখি। লম্বা সংবাদ সম্মেলন জুড়ে বারবার তার কণ্ঠ ধরে আসে। আবেগ, রোমাঞ্চ, গর্ব, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তবে একটি শব্দের ওপর বারবার ফিরে আসছিলেন তিনি, তা হলো আত্মবিশ্বাস,
‘‘আমি কেবল আমার অনুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। আমি স্তম্ভিত, আমি বুঝতে পারছি না। আসলে, এতে উত্থান-পতন ছিল, কিন্তু দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি প্রথম দিন থেকেই এটা বলে আসছি। আমরা বাম বা ডানে তাকাচ্ছিলাম না। আমরা কেবল আমাদের মূল লক্ষ্যের দিকে তাকিয়েছিলাম।’’ - বলেছেন হারমানপ্রীত।
স্বপ্ন পূরণের রাতে হারমানপ্রীত কাছে পেয়েছিলেন সাবেক তিন ক্রিকেটার মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামী এবং অঞ্জুম চোপড়াকে। প্রত্যেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানোর। তাদের অধরা সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন জেমিমা, দীপ্তি, শেফালি, স্মৃতিরা।
শিরোপা উৎসবে যোগ দেন মিতালি, ঝুলন, আঞ্জুমরা। তাদের হাতেও ট্রফি তুলে দেওয়া হয়। প্রাক্তন খেলোয়াড়দের সাথে সেই মুহূর্তটি ভাগ করে নেওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে হারমানপ্রীত বলেন, ‘‘ঝুলন দি আমার সবচেয়ে বড় আইডল ছিলেন। যখন আমি দলে যোগ দিই, তখন তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। আমি যখন খুব কাঁচা ছিলাম এবং ক্রিকেট সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না, তখনও তিনি সবসময় আমাকে সমর্থন করতেন। অঞ্জুম দি-ও তাই। এই দুজন আমার জন্য দারুণ সমর্থন ছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ যে আমি তাদের সাথে এই বিশেষ মুহূর্তটি ভাগ করে নিতে পেরেছি। এটি খুব আবেগপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। আমার মনে হয় আমরা সবাই এটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে, আমরা এই ট্রফি স্পর্শ করতে পেরেছি।’’
তার জন্য বিশ্বকাপের পুরো অভিযানটিই ছিল গভীরভাবে আবেগপূর্ণ। রাউন্ড রবিন লিগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ হার। চোট, অফ ফর্ম, জড়তা। সব সামলে সেরা হয়েছেন। তাইতো নিজেদের নিয়ে গর্বটাও বেশি হারমানপ্রীতদের, ‘‘আমরা প্রথম বল থেকেই অনুভব করেছিলাম যে আমরা জিততে পারি, কারণ শেষ তিন ম্যাচে আমাদের দল যেভাবে খেলছিল, তাতে আমাদের জন্য অনেক কিছুর পরিবর্তন এসেছিল, বিশেষ করে আমাদের আত্মবিশ্বাস। আমরা অনেকদিন ধরেই ভালো ক্রিকেট খেলছি। আমরা জানতাম দল হিসেবে আমরা কী করতে পারি।”
"গত এক মাস খুব আকর্ষণীয় ছিল। সেই দিনটির (ইংল্যান্ডের কাছে হারের) পর আমাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসে। সেই রাত আমাদের জন্য অনেক কিছু বদলে দিয়েছিল। এটি প্রত্যেকের উপর প্রভাব ফেলেছিল। আমরা বিশ্বকাপের জন্য আরও প্রস্তুত হলাম। আমরা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং মেডিটেশন শুরু করেছিলাম। আমরা বারবার বলছিলাম, যে জন্য আমরা এখানে এসেছি এবং এবার আমাদের এটা করতেই হবে।" - যোগ করেন হারমানপ্রীত।
প্রথম যে কোনো কিছুই আনন্দের। রোমাঞ্চের। এই অভিজ্ঞতা শব্দে বয়ান করা যায় না। বয়ান করা সম্ভব হয় না। হারমানপ্রীতও পারেন না নিজের সবটা উজার করে বলতে। তবে এই শিরোপায় তাদের নাম লিখা হবে সেই আত্মবিশ্বাস তারও ছিল, ‘‘আমরা বহু বছর ধরে এটি নিয়ে কথা বলছি—আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি, কিন্তু আমাদের একটি বড় শিরোপা জিততেই হতো।"
ঢাকা/ইয়াসিন