আলুর বিবর্তনমূলক উৎসের সন্ধান মিললো
Published: 3rd, August 2025 GMT
আলু বিশ্বের অন্যতম প্রধান খাদ্য। হাজার হাজার বছর আগে এই শস্যটি দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ অঞ্চলে চাষ করা হয়েছিল এবং ষোড়শ শতাব্দী থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু মানবজাতির জন্য এর গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও, আলুর বিবর্তনীয় উৎপত্তি এখনো পর্যন্ত বিভ্রান্তিকর।
চাষ করা আলু থেকে ৪৫০টি জিনোম এবং বন্য আলুর ৫৬টি জিনোমের একটি নতুন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রায় ৯০ লাখ বছর আগে দক্ষিণ আমেরিকায় একটি বন্য টমেটো গাছ এবং একটি আলুর মতো প্রজাতির মধ্যে প্রাকৃতিক আন্তঃপ্রজননের মাধ্যমে আলুর বংশধারার উৎপত্তি হয়েছিল।
গবেষকদের মতে, এই সংকরায়নের ফলে নবজাতক আলু গাছের কন্দের আবির্ভাব ঘটে। বিজ্ঞানীরা আলুর কন্দ গঠনে জড়িত দুটি গুরুত্বপূর্ণ জিনও চিহ্নিত করেছেন। সেখানে টমেটো গাছের ভোজ্য অংশ হল ফল, আর আলুর ক্ষেত্রে এটি হচ্ছে কন্দ।
সেল জার্নালে প্রকাশিত গবেষণার সিনিয়র লেখক চীনা কৃষি বিজ্ঞান একাডেমির জিনোম জীববিজ্ঞানী ও উদ্ভিদ প্রজননকারী সানওয়েন হুয়াং শুক্রবার বলেছেন, “আলু সত্যিই মানবজাতির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য খাদ্য উপাদানগুলোর মধ্যে একটি, যা অসাধারণ বহুমুখীতা, পুষ্টিগুণ এবং সাংস্কৃতিক সর্বব্যাপীতার সমন্বয় ঘটায়, যা খুব কম ফসলের সাথেই মেলে।”
তিনি বলেন, “মানুষ রান্নার প্রায় প্রতিটি পদ্ধতি ব্যবহার করে আলু খায় - বেকিং, রোস্টিং, ফুটন্ত, বাষ্পীভূত এবং ভাজা। কার্বোহাইড্রেট হিসাবে স্টেরিওটাইপ করা সত্ত্বেও, আলু ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, ফাইবার ও প্রতিরোধী স্টার্চ সরবরাহ করে এবং প্রাকৃতিকভাবে গ্লুটেনমুক্ত, কম চর্বিযুক্ত ও তৃপ্তিদায়ক - একটি পুষ্টিকর-ঘন ক্যালোরির উৎস।”
আধুনিক কালের আলু উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম হল Solanum tuberosum। গবেষণায় এর দুটি পিতামাতা চিহ্নিত করা হয়েছে যারা পেরুতে পাওয়া আলুর মতো প্রজাতির Etuberosum এর পূর্বপুরুষ ছিল। এগুলোর আলুর গাছের সাথে খুব সাদৃশ্যপূর্ণ কিন্তু কন্দ নেই এবং টমেটো গাছ।
এই দুটি উদ্ভিদের একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ ছিল যারা প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ বছর আগে বেঁচে ছিল। একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ৫০ লাখ বছর পরে যখন আকস্মিক সংকরায়ন ঘটনা ঘটেছিল তখন তারা প্রাকৃতিকভাবে আন্তঃপ্রজনন করতে সক্ষম হয়েছিল।
গবেষণার সহ-লেখক লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের উদ্ভিদবিজ্ঞানী স্যান্ড্রা ন্যাপ বলেন, “এই ঘটনার ফলে জিনের এমন পুনর্গঠন ঘটে যে নতুন বংশ কন্দ তৈরি করে। এর ফলে এই উদ্ভিদগুলো ক্রমবর্ধমান আন্দিজ পর্বত শৃঙ্খলে নতুন তৈরি ঠান্ডা, শুষ্ক আবাসস্থলে প্রসারিত হতে শুরু করে।”
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্গম অঞ্চলে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা এখনো পিছিয়ে
বাংলাদেশের চর, হাওর, পাহাড় ও সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকার নারী ও কিশোরীরা এখনো পর্যাপ্ত পরিবার পরিকল্পনা ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। ভৌগোলিক প্রতিবন্ধকতা, বাজেট ও জনবলের ঘাটতি এবং সচেতনতার অভাবে এসব অঞ্চলে প্রজনন অধিকার বাস্তবায়ন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। এই বাস্তবতা সামনে রেখে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর (ডিজিএফপি) ২০২৫-৩০ মেয়াদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে একটি সমন্বিত কৌশলপত্রের মোড়ক উন্মোচন করেছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত কর্মশালায় ‘দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের জন্য পরিবার পরিকল্পনা কৌশল’ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। কর্মশালার আয়োজন করে স্বাস্থ্য ডিজিএফপির ‘ক্লিনিক্যাল গর্ভনিরোধক পরিষেবা ডেলিভারি প্রোগ্রাম’। কারিগরি সহায়তায় ছিল মেরি স্টোপস বাংলাদেশ।
কর্মশালায় কৌশলপত্রটি উপস্থাপন করেন মেরি স্টোপস বাংলাদেশের পার্টনারশিপ অ্যান্ড ফান্ডরাইজিং প্রধান মনজুন নাহার। তিনি জানান, বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে (বিডিএইচএস) ২০১৭-১৮-এর তথ্য অনুযায়ী, দুর্গম এলাকায় পরিবার-পরিকল্পনার ‘অপূর্ণ চাহিদার হার’ উচ্চ, যা মা ও শিশু উভয়ের ঝুঁকি বাড়ায়। পাহাড়, চর ও হাওর অঞ্চলে অধিকাংশ মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছায় না। নিয়মিতভাবে পরিবার পরিকল্পনা ক্যাম্প হয় না। ফলে সচেতনতার অভাব ও যোগাযোগব্যবস্থার দুর্বলতায় সেবার গতি স্থবির হয়ে পড়েছে।
কী আছে ২০২৫-৩০ কৌশলে?
ডিজিএফপি ও মেরি স্টোপস বাংলাদেশ যৌথভাবে প্রণীত এই কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, দুর্গম এলাকার জন্য সুনির্দিষ্ট স্বাস্থ্য অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে; প্রতিটি সেবাকেন্দ্রে কমপক্ষে ৪ জন প্রশিক্ষিত ধাত্রী/এফডব্লিউভি থাকবেন; ওষুধ, গর্ভনিরোধক ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে; সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব জোরদার করা হবে; স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ ও সচেতনতা কর্মসূচি বাড়ানো হবে এবং কিশোর-কিশোরী ও দম্পতিদের মধ্যে এসআরএইচআর সংক্রান্ত তথ্য পৌঁছানো হবে।
কৌশল বাস্তবায়নে সমতা, প্রজনন অধিকার, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, পছন্দের স্বাধীনতা ও গুণগত যত্ন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নমুনা হিসেবে ভোলা, কয়রা, বাগেরহাট, কক্সবাজার, বান্দরবান, পটুয়াখালী, বরগুনা, সুনামগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও সাতক্ষীরা জেলায় প্রাথমিকভাবে এ কৌশল বাস্তবায়ন করা হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সারওয়ার বারী বলেন, পরিবার পরিকল্পনা সেবার ক্ষেত্রে কৌশলপত্রটি একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সভাপতির বক্তব্যে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আশরাফী আহমেদ বলেন, ‘এই প্রস্তুতি আমাদের আগেই থাকা উচিত ছিল, কিন্তু আমরা এখন করেছি। এখন বাস্তবায়ন করাটাই জরুরি।’
স্বাগত বক্তব্যে মেরি স্টোপস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কিশওয়ার ইমদাদ বলেন, ২০২৩ সালে এই কৌশলের খসড়া প্রণয়ন করা হয়। পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ডিজিএফপির যৌথ বৈধতা কর্মশালায় এটি অনুমোদন লাভ করে।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. মাহবুব আলম, এমসিএইচ সার্ভিসেসের পরিচালক মো. সুলতান আহম্মদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বক্তব্য দেন।