১০০ ‘জুলাই যোদ্ধাকে’ মাসিক আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে সুহানা অ্যান্ড আনিস আহমেদ ফাউন্ডেশন
Published: 4th, August 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী তিন মাসে আন্দোলনে গুরুতর আহত ২৭২ জনকে চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার, ওষুধ এবং আর্থিক সহায়তা দিয়েছে সুহানা অ্যান্ড আনিস আহমেদ ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশন ১০০ জন আহত ও শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিকে গত ডিসেম্বর থেকে নিয়মিত মাসিক আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে। একই সঙ্গে তারা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ২৫ জন আহত শিক্ষার্থীকে পুরোপুরি শিক্ষাবৃত্তির আওতায় আনতে কাজ করছে।
বর্তমানে বিভিন্ন কুরিয়ার ও অনলাইন ডেলিভারি সংস্থায় ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করছে সুহানা অ্যান্ড আনিস আহমেদ ফাউন্ডেশন।
জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের সহযোগিতা করতে ৭ আগস্ট থেকে রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে যান সুহানা অ্যান্ড আনিস আহমেদ ফাউন্ডেশনের ১১৭ জন স্বেচ্ছাসেবক। এর মধ্যে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অন্যতম।
ফাউন্ডেশনসহ সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় গত বছরের আগস্ট থেকে অক্টোবর—প্রথম তিন মাসে ২৭২ জন গুরুতর আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসাসহ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত ১০০ জন আহত ও শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিকে মাসিক আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে। একই সঙ্গে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ২৫ জন আহত শিক্ষার্থীকে সম্পূর্ণ শিক্ষাবৃত্তির আওতায় আনার কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়া বিভিন্ন কুরিয়ার ও অনলাইন ডেলিভারি সংস্থায় আহত ব্যক্তিদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
কুষ্টিয়ার বাসিন্দা সারোয়ার জুলাই অভ্যুত্থানের সময় মিরপুর ২ নম্বর এলাকায় চোখে গুলিবিদ্ধ হন। সুহানা অ্যান্ড আনিস আহমেদ ফাউন্ডেশনের তাৎক্ষণিক সহায়তায় তিনি চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পেরেছেন। ফরিদপুরের বাসিন্দা গাড়িচালক সুজন মোল্লা মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় কোমরে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তিনি এই ফাউন্ডেশনের মাসিক সহায়তা দিয়ে নিজের চিকিৎসা ও মেয়ের পড়াশোনার খরচ মেটাচ্ছেন। পায়ে গুলিবিদ্ধ হওয়া ডেলিভারিম্যান মিঠুন এই ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় পরিবারের দৈনন্দিন খরচ চালাতে পারছেন বলে জানিয়েছেন।
গাজীপুরের গোপীবাগ রেলগেট এলাকার বাসিন্দা জুয়েল জানান, সুহানা অ্যান্ড আনিস আহমেদ ফাউন্ডেশনের সহায়তা দিয়ে নিজের মেয়ের চিকিৎসা ও বাড়ির খরচ মেটাচ্ছেন। কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বাসিন্দা তামজিদ হোসেন জনি ৫ আগস্ট পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। তিনি জানান, এই ফাউন্ডেশনের মাসিক সহায়তা তাঁর চিকিৎসা ও পরিবারের খরচে কাজে আসছে এবং তিনি একটি ছোট ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছেন।
এমজিএইচ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আনিস আহমেদ এবং তাঁর স্ত্রী সুহানা লুৎফা আহমেদের নামে প্রতিষ্ঠিত এই ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু ২০১৭ সালে। তারা স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত, নারীর ক্ষমতায়ন ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে দাতব্য কার্যক্রম চালিয়ে আসছে বলে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়ে ফাউন্ডেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সহচেয়ারম্যান আনিস আহমেদ বলেন, ‘জুলাই যোদ্ধাদের কাছে আমি চিরঋণী, ওরা দেশকে ফ্যাসিস্টমুক্ত না করলে আমি দেশে ফিরতে পারতাম না। আগামী প্রজন্ম যেন তাদের মৌলিক অধিকার সচেতন হয়, জুলাই যোদ্ধাদের ত্যাগে উদ্বুদ্ধ হয়—এটাই আমাদের একমাত্র নিয়ত।’ তিনি জানান, তাঁরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের কাছ থেকে ২৭২ জন আহত ব্যক্তির একটি তালিকা পান। তাঁদের মধ্যে চারজন মারা গেছেন। বাকি ২৬৮ জনকে চিকিৎসায় সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছেন। এর মধ্যে ১০০ জনকে যোগাযোগের মধ্যে রেখেছেন। ভবিষ্যতে তাঁদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে আইটি, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, এআই ইত্যাদি বিষয় পড়াতে চায় সুহানা অ্যান্ড আনিস আহমেদ ফাউন্ডেশন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কলকাতায় প্রবীণের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার, এনআরসি আতঙ্কে আত্মহত্যা বলছে পরিবার
ভারতের দক্ষিণ কলকাতার রিজেন্ট পার্ক এলাকায় রোববার সকালে এক প্রবীণ ব্যক্তির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার ঘিরে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। ওই ব্যক্তির নাম দিলীপ কুমার সাহা (৬৮)। তাঁর পরিবারের দাবি, তিনি গত এক সপ্তাহ ধরে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তথা এনআরসি আতঙ্কে ভুগছিলেন এবং সেই কারণেই আত্মহত্যা করেছেন।
দিলীপ সাহা রিজেন্ট পার্কের আনন্দপল্লি পশ্চিমের বাসিন্দা ছিলেন। ঢাকুরিয়ার একটি স্কুলে কর্মচারী হিসেবে তিনি কাজ করতেন।
রোববার সকালে ঘুম থেকে না ওঠায় দিলীপ সাহার স্ত্রী আরতি সাহা তাঁকে ডাকতে থাকেন। পরে কোনো সাড়া না পেয়ে প্রতিবেশীর সহায়তায় দরজা ভেঙে ঝুলন্ত মরদেহ দেখে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে দিলীপের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দিলীপ সাহা ১৯৭২ সালে ঢাকার নবাবগঞ্জ থেকে কলকাতায় আসেন। পরিবারের দাবি, এনআরসি কার্যকর হতে পারে— এই আশঙ্কায় সম্প্রতি তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। তাঁর ভারতীয় ভোটার কার্ড, আধার ও প্যান কার্ড ছিল। তবুও তিনি ভাবতেন, তাঁকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে।
দিলীপ সাহা একটি ‘সুইসাইড নোট’ রেখে গেছেন বলে জানা গেলেও পুলিশ এখনও তা প্রকাশ করেনি। প্রতিবেশীদের অনেকে বলছেন, তিনি স্নায়ুজনিত সমস্যায় ভুগতেন এবং মানসিকভাবে দুর্বল ছিলেন।
ঘটনার পর পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। ভোটার তালিকা সংশোধনের নাম করে তারা এনআরসির পথ প্রশস্ত করছে।
কলকাতা পুলিশ দিলীপ সাহার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনাকে ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’ হিসেবে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে।