আশুলিয়ায় উল্টো পথে চলা রিকশাকে চাপা দিল লড়ি, নিহত ৩
Published: 4th, August 2025 GMT
ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় উল্টো পথে চলা একটি অটোরিকশাকে চাপা দিয়েছে লড়ি। এ ঘটনায় অটোরিকশাটির আরোহী নারী ও শিশুসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন একজন। দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
রবিবার (৩ আগস্ট) রাত সাড়ে ৯টার দিকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বাইপাইলের দিক থেকে একটি অটোরিকশা উল্টো পথে ঢাকা ইপিজেডের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় সামনে থেকে আসা একটি লড়ি দেখে চালক রিকশাটি রাস্তার মাঝখান দিয়ে সরানোর চেষ্টা করেন।
আরো পড়ুন:
সিরাজগঞ্জে ট্রাক উল্টে চালক নিহত, হেলপার আহত
বিজয়নগরে অটোরিকশার সঙ্গে দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ, নিহত ৫
রাস্তায় পানি থাকায় রিকশাটি একটি গর্তে পড়ে উল্টে যায়। এসময় লড়ির পেছনের চাকা অটোরিকশার চালক ও যাত্রীদের চাপা দেয়।
ঘটনাস্থলেই একজন মারা যান। আহত অবস্থায় রিকশাচালকসহ তিনজনকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক আরো দুইজনকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতদের মধ্যে একজন শিশু, একজন নারী ও একজন পুরুষ রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী লিটন আহমেদ বলেন, “আমি রাস্তা পার হচ্ছিলাম। রিকশাটি গর্তে পড়ে উল্টে যায়। সঙ্গে সঙ্গে একটি লড়ির পেছনের চাকায় চাপা পড়েন যাত্রীরা। একজন ঘটনাস্থলে মারা যান, বাকি তিনজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে একজন শিশু ও একজন নারী ছিলেন।”
ঘটনাস্থলের পাশের দোকানদার মোহাম্মদ মাইনুল ইসলাম বলেন, “আমি দোকানে ছিলাম। হঠাৎ চিৎকার শুনে এগিয়ে গিয়ে দেখি রিকশা উল্টে আছে। একজন মারা গেছেন। বাকিদের হাসপাতালে নেওয়ার পর আরো দুইজন মারা যান।”
সাভার হাইওয়ে থানার পরিদর্শক (ওসি) সালেহ আহমেদ বলেন, “সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। উল্টো পথে একটি অটোরিকশা তিনজন যাত্রী নিয়ে ইপিজেডের দিকে যাচ্ছিল। রিকশাটি সড়কের গর্তে পড়ে উল্টে গেলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি লড়ির নিচে চাপা পড়ে। আহত একজন চিকিৎসাধীন।”
তিনি আরো বলেন, “দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রা কিছুক্ষণের জন্য সড়ক অবরোধ করেন। পুলিশ বুঝিয়ে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।”
ঢাকা/সাব্বির/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক দ র ঘটন ন হত আহত দ র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পের পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের পরও নিশ্চুপ কেন রাশিয়া
ইতিহাসে কি এই প্রথম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথা–কাটাকাটি পারমাণবিক যুদ্ধ উত্তেজনার কারণ হতে চলেছে?
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভের এক পোস্টে ভীষণ ক্ষুব্ধ হন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন রাশিয়ার জলসীমার কাছাকাছি পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
ট্রাম্পের এ পারমাণবিক সাবমেরিন পাঠানোর বিরুদ্ধে কী প্রতিক্রিয়া দেখাতে চলেছে মস্কো? যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া কি একটি পারমাণবিক সংঘাতের পথে এগোচ্ছে, নাকি ইন্টারনেট যুগে এসে নতুন রূপে ১৯৬২ সালের কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র সংকট ফিরতে চলেছে?
রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমগুলোতে ট্রাম্পের পারমাণবিক সাবমেরিন পাঠানোর ঘোষণাকে বেশ অবজ্ঞার সুরে উপস্থাপন করা হয়েছে।উল্লেখ্য, ১৯৬২ সালে কিউবায় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল মস্কো ও ওয়াশিংটন। যদিও শেষ পর্যন্ত পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা বাস্তবে রূপ নেয়নি। তবে সে সময়ে বহু মানুষ আতঙ্কে দিন পার করেছেন।
বিবিসির রাশিয়া প্রতিনিধি স্টিভ রোজেনবার্গ তেমনটা মনে করেছেন না। তিনি বলেন, রাশিয়া প্রাথমিক যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, তাতে এ ধরনের সংকট তৈরি হওয়া নিয়ে তাঁর সন্দেহ রয়েছে।
রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমগুলোতে ট্রাম্পের পারমাণবিক সাবমেরিন পাঠানোর ঘোষণাকে বেশ অবজ্ঞার সুরে উপস্থাপন করা হয়েছে।
মাস্কোভস্কি কোমসমোলিয়েতস পত্রিকাকে একজন সামরিক বিশ্লেষক বলেন, ট্রাম্প শুধু রাগের মাথায় শিশুসুলভ মেজাজ দেখাচ্ছেন।
আবার কমেরসান্ত পত্রিকাকে একজন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল বলেন, সাবমেরিন নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কথাবার্তা নিরর্থক প্রলাপ। তিনি এসব বলে মজা পান।
অন্তত এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রাশিয়া কোনো প্রতিক্রিয়া (আনুষ্ঠানিক) দেখায়নি। দেশটি তার পারমাণবিক সাবমেরিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মোতায়েন করেছে, এমন কোনো ঘোষণাও নেই।স্টিভ রোজেনবার্গ, বিবিসির রাশিয়া প্রতিনিধিএকই পত্রিকাকে রাশিয়ার একজন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, ট্রাম্প (সাবমেরিন পাঠানো বিষয়ে) প্রকৃতপক্ষে কোনো নির্দেশই দেননি।’
কমেরসান্ত পত্রিকায় ২০১৭ সালের কথা উল্লেখ করে আরও বলা হয়, ট্রাম্প সেবার উত্তর কোরিয়াকে সতর্ক করার জন্য কোরীয় উপদ্বীপে দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন পাঠানোর কথা বলেছিলেন। এর কয় দিন পরই উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং–উনের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
খানিকটা অদ্ভুত শোনালেও ট্রাম্পের পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন তবে কি যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া শীর্ষ সম্মেলনের পূর্বাভাস হতে পারে?
রোজেনবার্গ বলেন, তিনি অত দূর ভাবতে চাইছেন না। তবে রুশ কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া দেখানোর বিষয়টি তাঁর কাছে বেশ আকর্ষণীয় মনে হয়েছে।
রোজেনবার্গ বলেন, অন্তত এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রাশিয়া কোনো প্রতিক্রিয়া (আনুষ্ঠানিক) দেখায়নি। রাশিয়া তাদের পারমাণবিক সাবমেরিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মোতায়েন করেছে, এমন কোনো ঘোষণাও আসেনি। এর অর্থ হচ্ছে হয় মস্কো এখনো পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করছে এবং কী করা উচিত ভাবছে অথবা মস্কো মনে করছে, প্রতিক্রিয়া দেখানোর কোনো প্রয়োজনই নেই।
রোজেনবার্গ আরও বলেন, রুশ সংবাদমাধ্যম যে ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে সম্ভবত দ্বিতীয়টাই ঠিক, অর্থাৎ মস্কো প্রতিক্রিয়া দেখাতে চায় না।
তবে কয়েক দিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প-মেদভেদেভ কথার লড়াই চলছে।
কিন্তু হঠাৎই তিনি ট্রাম্পের নজর কাড়েন এবং শুধু নজর কাড়াই নয়; বরং সরাসরি ট্রাম্পের রোষের মুখে পড়েছেন।মার্কিন প্রেসিডেন্ট যখন রাশিয়াকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শেষ করতে বেঁধে দেওয়া ৫০ দিনের সময়সীমা কমিয়ে দুই সপ্তাহের কম করেছিলেন, তখন মেদভেদেভ এক পোস্টে লেখেন, ‘ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে আলটিমেটাম দেওয়ার খেলা খেলছেন… প্রতিটি নতুন আলটিমেটাম এক একটি হুমকি এবং যুদ্ধের দিকে এক একটি পদক্ষেপ।’
জবাবে ট্রাম্প লেখেন, ‘মেদভেদেভকে বলে দিন, তিনি একজন ব্যর্থ সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট, যিনি মনে করেন তিনি এখনো ক্ষমতায় আছেন। তিনি যা বলছেন তাঁকে সে বিষয়ে সতর্ক হতে বলুন। তিনি খুবই বিপজ্জনক এলাকায় প্রবেশ করছেন।’
মেদভেদেভ তাঁর পরের পোস্টে ‘ডেড হ্যান্ড’–এর কথা উল্লেখ করেন। এটি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আমলের একটি স্বয়ংক্রিয় পারমাণবিক প্রতিশোধব্যবস্থা। স্পষ্টতই, মেদভেদেভের ওই বক্তব্য হোয়াইট হাউস প্রধানের কাছে মোটেই গ্রহণযোগ্য হয়নি।
২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন মেদভেদেভ। তুলনামূলকভাবে তাঁকে একজন উদার ব্যক্তি হিসেবেই দেখা হতো তাঁকে। তাঁর বিখ্যাত উক্তি, ‘স্বাধীনতা না থাকার চেয়ে স্বাধীনতা থাকা ভালো।’
কিন্তু মেদভেদেভ ক্রমে কট্টর রাজনৈতিক মনোভাবের দিকে চলে গেছেন। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উগ্র ও পশ্চিমাবিরোধী পোস্ট দেওয়ার জন্য পরিচিত হয়ে উঠেছেন। যদিও তাঁর অধিকাংশ পোস্ট গুরুত্ব পায় না। কারণ, তাঁকে ক্রেমলিনের মুখ হিসেবে দেখা হয় না।
কিন্তু হঠাৎই মেদভেদেভ ট্রাম্পের নজর কাড়েন এবং শুধু নজর কাড়াই নয়; বরং সরাসরি ট্রাম্পের রোষের মুখেও পড়েন।
ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে আলটিমেটাম দেওয়ার খেলা খেলছেন…প্রতিটি নতুন আলটিমেটাম এক একটি হুমকি এবং যুদ্ধের দিকে এক একটি পদক্ষেপ।দিমিত্রি মেদভেদেভ, রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধানসামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো পোস্ট আমাদের পছন্দ না হতেই পারে। সবাইকেই এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু তা এতটাই অপছন্দ হওয়া যে ক্ষুব্ধ হয়ে পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন করাকে অতিরঞ্জন বলে মনে করেন রোজেনবার্গ।
তাহলে ট্রাম্প কেন পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন করলেন, সে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউজম্যাক্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘মেদভেদেভ এমন কিছু কথা বলেছেন, যেগুলো খুবই খারাপ। তিনি পারমাণবিক বিষয়ে (ডেড হ্যান্ড) কথা বলেছেন। যখন আপনি পারমাণবিক শব্দটি বলেন, আমার চোখ ঝলসে ওঠে এবং আমি বলি আমাদের সাবধান হওয়া উচিত। কারণ, এটা চূড়ান্ত হুমকি।’
তাঁর (ট্রাম্পের) মধ্যে এমনভাবে অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়, যা প্রতিদ্বন্দ্বী ও বিরোধীদের আলোচনার আগে বা আলোচনা চলাকালীন অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়।কিন্তু মেদভেদেভের বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পারমাণবিক হুমকি প্রদর্শনের অভিযোগ আছে। এবারের ঘটনা তাই নতুন কিছু নয়।
আরও পড়ুনরাশিয়ার কাছে ট্রাম্পের পরমাণু সাবমেরিন মোতায়েনের ঝুঁকি আসলে কতটা১৯ ঘণ্টা আগেকিন্তু ট্রাম্প এবার মেদভেদেভের পোস্টগুলো যে ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছেন, এটা স্পষ্ট এবং তিনি সে অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। হতে পারে এখানে কিছু কৌশলও কাজ করছে। কারণ, ট্রাম্পের কাজের ধরন, ব্যবসা বা রাজনীতিতে অপ্রত্যাশিত শব্দ একটি বড় ভূমিকা রাখে। তাঁর মধ্যে এমনভাবে অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়, যা প্রতিদ্বন্দ্বী ও বিরোধীদের আলোচনার আগে বা আলোচনা চলাকালীন অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়।
যেমন এই সাবমেরিন মোতায়েন, হতে পারে এ সবকিছু ইউক্রেনে যুদ্ধে সমাপ্তি টানতেই করছেন তিনি। হঠাৎ রাশিয়ার কাছে সাবমেরিন মোতায়েন করাও তাঁর সেই ধরনের অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত হতে পারে।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া উত্তেজনা: বিশ্ব কি পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকির মুখে পড়তে যাচ্ছে১৫ ঘণ্টা আগে