আগামী ডিসেম্বরে বিজয় দিবসের আগেই আনুষ্ঠানিকভাবে বগুড়া‌ পৌরসভাকে ঘিরে সি‌টি ক‌র্পো‌রেশন ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবুল খায়ের মোহাম্মদ হাফিজুল্লাহ্ খান।  

সোমবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে বগুড়া পৌরসভার বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শনের সময় তি‌নি সাংবা‌দিক‌দের এই তথ্য দেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন বগুড়া জেলা প্রশাসক (পদোন্নতিপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব) হোসনা আফরোজা, পৌর প্রশাসক মাসুম আলী বেগ, পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা শাহজাহান আলম রিপন, নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হেনা মোস্তফা কামাল, বগুড়া প্রেস ক্লাব সভাপতি রেজাউল হাসান রানু, নগর পরিকল্পনাবিদসহ পৌর কর্মকর্তারা।

পৌরসভার কার্যক্রম পরিদর্শনকালে যুগ্ম সচিব আবুল খায়ের মোহাম্মদ হাফিজুল্লাহ্ খান বলেন, “একটি পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করতে আটটি শর্ত প্রতিপালন করতে হয়। সব শর্তই এখানে পূর্ণ। জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে একটি প্রতিবেদন নিয়েছে  মন্ত্রণালয়। সিটি কর্পোরেশন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বগুড়া পরিদর্শনে এসেছি। সরেজমিন প্রতিবেদন সচিব কমিটির সভায় উপস্থাপন হবে। প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির কাছে উপস্থাপিত হবে। আশা করছি, আগামী বিজয় দিবসের আগেই বগুড়া হবে সিটি কর্পোরেশন।”

যুগ্ম সচিব আরো বলেন, “একটি সিটি কর্পোরেশনে ন্যূনতম চার লাখ জনগোষ্ঠী থাকতে হয়। বগুড়ায় ১০ লাখ মানুষ বসবাস করে। প্রতিবছর ৫ কোটি টাকা রাজস্ব দরকার, এখানে গত বছর প্রায় ৪৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। বগুড়ায় প্রায় ২০ হাজারের বেশি শিল্প কারখানা রয়েছে। সব মিলিয়ে বগুড়া পৌরসভা অনেক আগেই সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হওয়ার অন্যতম মাইলফলক অতিক্রম করেছে।”

চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বগুড়া সিটি কর্পোরেশন গঠনের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রাথমিক প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। ১০ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ের সিটি কর্পোরেশন-২ শাখা থেকে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অনুমতি দেয়। বগুড়া পৌরসভা এলাকার ২১টি ওয়ার্ডের মৌজা নিয়ে বগুড়া সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণবিজ্ঞপ্তি জারি হয়।

বগুড়া পৌরসভা ১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮১ সালে পৌরসভা ‘ক’ শ্রেণির মর্যাদা পায়। কালক্রমে আয়তন বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ৭৬ বর্গকিলোমিটার। ২০০৪ সালে বর্ধিত করে ৬৯ দশমিক ৫৬ বর্গকিলোমিটার করা হয়। ২১টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত বগুড়া পৌরসভা প্রায় ৭০ বর্গ কিলোমিটার। সিটি কর্পোরেশনের জন্য ন্যূনতম আয়তন হতে হয় কমপক্ষে ২৫ বর্গকিলোমিটার। দেশের অনেক সিটি কর্পোরেশনের তুলনায় এটি আয়তনে অনেক বড়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পৌরসভার বার্ষিক আয় ছিল ৬০ কোটি টাকারও বেশি।

ঢাকা/এনাম/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রসভ

এছাড়াও পড়ুন:

টোপাপানায় ম্লান মহামায়া হ্রদের আকর্ষণ

মূল ফটক পেরোলেই সমান্তরাল পিচঢালা রাস্তা। পূর্ব দিকে সেটি উঠে গেছে মহামায়া হ্রদের বাঁধ পর্যন্ত। খাড়া পথ বেয়ে ওঠা ক্লান্ত পর্যটকদের মনে একসময় প্রশান্তি এনে দিত পাহাড়ঘেরা বিস্তীর্ণ মহামায়া হ্রদের টলটলে জলরাশি। মায়াবী সে দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না।

মহামায়া হ্রদের বড় অংশজুড়ে এখন চোখে পড়ে টোপাপানার চাদর আর চারপাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা আবর্জনা। বাঁধের কিনারজুড়ে ঘাস ও লতাগুল্মের ঝোপ। হ্রদে ইঞ্জিনচালিত নৌকার দৌরাত্ম্য। টিকিটেও আদায় হচ্ছে বাড়তি টাকা। সব মিলিয়ে মহামায়া ইকোপার্ক এলাকায় বেড়াতে আসা পর্যটকেরা হতাশ। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় দেশের পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় এ স্থান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পর্যটকেরা।

মহামায়া হ্রদ ও ইকোপার্কের অবস্থান মিরসরাই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নে। সেচ সম্প্রসারণের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে মহামায়া ছড়ার ওপর বাঁধ দিলে পাহাড়ের কোলজুড়ে ১১ বর্গকিলোমিটারের মহামায়া হ্রদ তৈরি হয়। পরে বন বিভাগ এখানকার ১ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমি নিয়ে তৈরি করে মহামায়া ইকোপার্ক। ২০০৯-১০ অর্থবছরে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। গত ২২ জুলাই থেকে ভ্যাট-ট্যাক্সসহ ২ কোটি ২৫ লাখ ৫৬ হাজার ২৫০ টাকায় ১ বছরের জন্য মহামায়া ইকোপার্কের ইজারা পেয়েছে ওয়াসিফা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মহামায়া হ্রদ ও ইকোপার্ক ঘুরে দেখা যায়, শ খানেক পর্যটক বেড়াতে এসেছেন। একদল তরুণ হ্রদের বাঁধে বসে গান করছেন। আশপাশের বেঞ্চে বসে গল্পে মেতেছেন কেউ কেউ। হ্রদের পাড়ে বাঁধা সারি সারি ইঞ্জিনচালিত নৌকা আর কায়াক। ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করে হ্রদ ঘুরে দেখতে বেরিয়েছে দুটি দল। দুটি দলের কোনো সদস্যকেই দেখা গেল না লাইফজ্যাকেট পরতে। কিছুদূর যেতেই ইঞ্জিনচালিত নৌকার বিকট শব্দে উড়ে যেতে দেখা গেল একদল পানকৌড়িকে। হ্রদের বড় একটি অংশজুড়ে টোপাপানার ভারী আস্তরণ।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ মহামায়ার আয়তন প্রায় ১১ বর্গকিলোমিটার। সবুজ পাহাড়ে ঘেরা স্বচ্ছ জলের এই হ্রদের এখন ৩ থেকে ৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা টোপাপানায় ভরে গেছে। দ্রুত বেড়ে চলা এসব জলজ আগাছা মাছের বিচরণক্ষেত্র নষ্টসহ হ্রদের বাস্তুসংস্থানে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। সংকুচিত হচ্ছে পর্যটকদের ভ্রমণ এলাকা।

ইজারাদারের নিয়োগ করা কয়েকজন শ্রমিক নৌকা নিয়ে এক পাশে পরিষ্কার করছিলেন সেসব টোপাপানা। বাঁধের পূর্ব পাশজুড়েই ঘাস ও লতাগুল্মের জঙ্গল। ঘাস মারার ওষুধ ছিটিয়ে বিনষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে সেগুলো। এসব দৃশ্য হ্রদ দেখে প্রশান্তি পাওয়ার বদলে বিষণ্ন করে তুলবে যেকোনো পর্যটকের মন।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ মহামায়ার আয়তন প্রায় ১১ বর্গকিলোমিটার। সবুজ পাহাড়ে ঘেরা স্বচ্ছ জলের এই হ্রদের এখন ৩ থেকে ৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা টোপাপানায় ভরে গেছে। দ্রুত বেড়ে চলা এসব জলজ আগাছা মাছের বিচরণক্ষেত্র নষ্টসহ হ্রদের বাস্তুসংস্থানে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। সংকুচিত হচ্ছে পর্যটকদের ভ্রমণ এলাকা।

নৌকা–বিড়ম্বনা

ইকোপার্ক হওয়ার শর্তে সংরক্ষিত এলাকার প্রাণপ্রকৃতির ক্ষতি না করে বিনোদন ও প্রকৃতি থেকে শিক্ষার কথা বলা হলেও মহামায়া ইকোপার্কের চিত্র যেন পুরোই ভিন্ন। বন বিভাগের ইজারার শর্তে ইঞ্জিনচালিত নৌকা চালানো নিষিদ্ধ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেনে চলছে না সে নিয়ম। বরং কোনো প্রকার নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়া চলা এসব ইঞ্জিনচালিত নৌকায় পর্যটকদের কাছ থেকে আদায় করা হয় বাড়তি ভাড়া।

হ্রদের কিনার জুড়ে ঘাস আর লতাগুল্মের ঝোপ। সম্প্রতি তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টোপাপানায় ম্লান মহামায়া হ্রদের আকর্ষণ