অনড় ভারত, রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করছে না দেশটি
Published: 4th, August 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক–খড়্গের মুখেও অনড় অবস্থানে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দেশবাসীকে স্থানীয় পণ্য কেনার আহ্বান জানিয়ে তাঁর প্রশাসন ইঙ্গিত দিয়েছে, রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত থাকবে।
ব্লুমবার্গকে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ভারতীয় তেল শোধনাগারগুলোকে রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধের নির্দেশনা দেয়নি মোদি সরকার। কেনা বন্ধ করা হবে কি না, তা নিয়েও এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সরকারি ও বেসরকারি—দুই ধরনের শোধনাগারই নিজেদের পছন্দমতো উৎস থেকে তেল কেনার অনুমতি পায়। অপরিশোধিত তেল কেনার সিদ্ধান্ত হয় মূলত বাণিজ্যিক বিবেচনা থেকে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। খবর ইনোকমিক টাইমসের
গত সপ্তাহে ভারতীয় রপ্তানিপণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাষ্ট্র। এরপর নানা জল্পনা–কল্পনা চলছে। গত সপ্তাহের শেষভাগে উত্তর প্রদেশের এক সমাবেশে মোদি বলেন, অনিশ্চিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে ভারতের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা জরুরি। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতিতে নানা শঙ্কা বিরাজ করছে—একধরনের অস্থিরতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এখন থেকে আমরা যা-ই কিনব, তার একটাই মানদণ্ড হবে—ঘাম ঝরিয়ে কোনো ভারতীয় যা তৈরি করেছে, আমরা তা–ই কিনব।’
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ইউক্রেনে যুদ্ধ শেষ করতে চাপ দিতে গিয়ে ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছে ভারত। গত সপ্তাহে ট্রাম্প ভারতকে তীব্র সমালোচনা করে বলেন, দেশটি ব্রিকস জোটে যুক্ত হয়েছে এবং রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখছে—‘তারা চাইলে একসঙ্গে নিজেদের মৃত অর্থনীতি ডুবিয়ে দিতে পারে।’
এ মন্তব্যের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানে নাটকীয় পরিবর্তন দেখা গেছে। এত দিন যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ায় চীনের প্রভাব মোকাবিলায় ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে গিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্ক উপেক্ষা করে এসেছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে ব্যর্থ হয়ে পুতিনের ওপর চাপ বাড়াতে ট্রাম্প সেই কৌশল ত্যাগ করতেও প্রস্তুত।
গতকাল রোববার ট্রাম্পের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ স্টিফেন মিলার অভিযোগ করেন, ভারত মার্কিন পণ্যে ‘বিপুল’ শুল্ক আরোপ করছে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসনব্যবস্থার সঙ্গে ভারত ‘প্রতারণা’ করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
মিলারের ভাষ্য, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক চান এবং সব সময়ই ভারতের সঙ্গে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে, তাঁর অসাধারণ সম্পর্ক ছিল। তবে আমাদের বাস্তবতায় ফিরতে হবে—এ যুদ্ধের অর্থায়ন মোকাবিলা করতেই হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধ নিয়ে কূটনৈতিক, আর্থিক বা অন্য সব ধরনের পদক্ষেপই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিবেচনায় আছে—শান্তি প্রতিষ্ঠাই আমাদের লক্ষ্য।’
গত সপ্তাহে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ‘শুনেছেন, ভারত আর রাশিয়া থেকে তেল কিনবে না’—তাঁর ভাষায় এটি ‘ভালো পদক্ষেপ’। ব্লুমবার্গের খবরে বলা হয়, তেল শোধনাগারগুলোকে বিকল্প উৎস থেকে কেনার পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, এটি ছিল মূলত সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রস্তুতি—যদি রুশ তেল অপ্রাপ্য হয়ে পড়ে, সেই পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রস্তুতি।
বাজার–বিশেষজ্ঞ সংস্থা কেপলারের পরিসংখ্যান বলছে, জুন মাসের তুলনায় জুলাই মাসে ভারত রাশিয়া থেকে কম তেল আনলেও তার সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের হুমকির সম্পর্ক নেই। প্রতিবছরই বর্ষার সময়ে রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যা ও বৃষ্টির জন্য চাহিদা কমে যায়, আর সে কারণে তেল কেনা কমায় নয়াদিল্লি। চলতি বছরেও তা করা হয়েছে। তবে বেসরকারি সংস্থার থেকে সরকারি সংস্থাগুলোর তেল আমদানি বেশি হারে কমে যাওয়ায় বিষয়টি অনেকের চোখেই লেগেছে। বিষয়টিকে অনেকেই মার্কিন হুমকির ‘ফল’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন। কিন্তু বিষয়টি ঘটেছে পুরো জুলাই মাস ধরে, যেখানে ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন জুলাইয়ের শেষ প্রান্তে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের সামনে এখন দুই ধরনের বিপদ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট চান না ভারত মস্কো থেকে তেল আনুক। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পক্ষ থেকে আগামী বছর জানুয়ারি থেকে যে নিষেধাজ্ঞা চালু করার কথা রয়েছে, তাতে হয় ভারতকে রুশ তেল কেনা বন্ধ করতে হবে, না হলে ইউরোপ ছেড়ে বিকল্প বাজারের সন্ধান করতে হবে। এতে ভারতের তেল আমদানি ব্যয় অনেকটা বেড়ে যেতে পারে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ডি ব্রুইনা-সিটির পুনর্মিলনীতে হলান্ডের দ্রুততম ‘ফিফটি’
ম্যানচেস্টার সিটি ২-০ নাপোলি
ইতিহাদ ছেড়ে গিয়েছিলেন গত জুনে। তারপর এবারই তাঁর প্রথম ফেরা বড় সাধের এই স্টেডিয়ামে। ম্যানচেস্টার সিটির দর্শকেরা তাঁকে নায়কের মর্যাদায় বরণও করে নিলেও কোথায় যেন একটা অতৃপ্তি থেকে গেল। কেভিন ডি ব্রুইনা এখন হতে পারেন প্রতিপক্ষ, তবু ম্যাচের মাত্র ২৬ মিনিটে তাঁর বদলি হয়ে মাঠ ছাড়ার সময় সিটির দু-একজন সমর্থকদের মুখটা শুকনো দেখা গেল। ক্লাব কিংবদন্তিকে উঠে দাঁড়িয়ে তাঁরা সম্মান দেখিয়েছেন, তবে মাঠে আরও কিছুক্ষণ দেখতে চেয়েছিলেন নিশ্চয়ই!
কৌশলগত কারণে মাঠ ছাড়তে হয় ডি ব্রুইনাকে। নাপোলি কোচ আন্তোনিও কন্তে অবশ্য তাতে হার এড়াতে পারেননি। বিরতির পর আর্লিং হলান্ড ও জেরেমি ডকুর গোল হজম করতে হয়। সিটির ২-০ গোলের এ জয়ে দারুণ এক রেকর্ডও গড়েন হলান্ড।
৫৬ মিনিটে তাঁর গোলটির উৎস সিটি মিডফিল্ডার ফিল ফোডেন। লব করে দারুণভাবে বলটা তুলে সামনে বাড়িয়ে দেন, হেডে চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজের ৫০তম গোল তুলে নেন হলান্ড। সেটা আবার এই প্রতিযোগিতার ইতিহাসে দ্রুততম। ৪৯ ম্যাচে ‘ফিফটি’ পাওয়া হলান্ড পেছনে ফেললেন রুদ ফন নিষ্টলরয়কে (৬২ ম্যাচ)।
ডকুর গোলটি দেখার মতো। ৬৫ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে বল পেয়ে ভেতরে ঢুকে গোল করার পথে নাপোলির তিন খেলোয়াড় মিলেও তাঁকে থামাতে পারেননি। সিটির এই দুই গোলে এগিয়ে যাওয়া আসলে একটি সুবিধার ফল। ২১ মিনিটে বক্সে হলান্ডকে ফাউল করে লাল কার্ড দেখেন নাপোলি অধিনায়ক ও রাইট ব্যাক জিওভান্নি ডি লরেঞ্জো। এরপর ১০ জনে পরিণত হওয়া ইতালিয়ান ক্লাবটির ওপর চেপে বসে সিটির আক্রমণভাগ।
গোল করলেন জেরেমি ডকু