শেখ হাসিনাকে ফেরতের বিষয়ে ইতিবাচক উত্তর দেয়নি ভারত: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
Published: 4th, August 2025 GMT
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করার লক্ষ্যে তাঁকে ফেরত চেয়ে ভারতকে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে এ নিয়ে ভারতের কাছ থেকে কোনো ইতিবাচক উত্তর আসেনি।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
শেখ হাসিনাকে ফেরত আনা নিয়ে জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘এ নিয়ে নতুন কোনো তথ্য নেই। বিচারের সম্মুখীন করতে বাংলাদেশ ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়েছে। ভারত থেকে কোনো ইতিবাচক উত্তর আসেনি। বাংলাদেশ অপেক্ষা করছে। ইতিমধ্যে শেখ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কেউ আসুক আর না আসুক, তার জন্য তো বিচার আটকে থাকে না।’
শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত আনতে আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থার সহযোগিতা নেওয়া হবে কি না সে প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকার প্রয়োজন মনে করলে সহযোগিতা নিতে পারে। তবে এ মুহূর্তে কোনো প্রয়োজন দেখছি না।’
ভারতের ‘পুশ ইন’ প্রথাগত ব্যবস্থার ব্যত্যয়ভারতের ‘পুশ ইন’ (ঠেলে পাঠানো) নিয়ে বাংলাদেশের নীতি বিষয়ে জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘পুশ ইন নিয়ে কোনো নীতি নেই । ভারতে যদি কোনো বাংলাদেশি অবৈধভাবে বসবাস করে তাহলে তাঁকে তারা (ভারত) আটক করতে পারে। বিষয়টি আমাদের জানাবে, বাংলাদেশ তার নাগরিকত্ব নিশ্চিত করবে এবং ফেরত পাঠাবে। পুশ ইন হচ্ছে এ ব্যবস্থার একটি ব্যত্যয় এবং এ নিয়ে আমরা আপত্তি জানিয়েছি।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘ভারতকে বলেছি যে, তোমরা যে নাগরিকদের তালিকা দিয়েছ, সে তালিকা অনুযায়ী যাচাই করে নাগরিকদের ফেরত নিয়েছি। ফলে সে পদ্ধতিতেই ফেরত পাঠানো উচিত। তারপরও ভারত পুশ ইন করছে, এটি দুর্ভাগ্যজনক। আমরা এ বিষয়ে প্রতিবাদ করছি।’
এখন বাংলাদেশের কী করার রয়েছে জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘একটি কথা অনস্বীকার্য যে এ বিষয়ে আমরা যুদ্ধ করব না নিশ্চয়ই। তাহলে পদ্ধতি বাকি থাকে, সেটি হচ্ছে কূটনৈতিক আলোচনা। সেটি আমরা করছি। সাফল্য এখন আসছে না, আমরা আশা করি যে কখনও সাফল্য আসবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পরর ষ ট র উপদ ষ ট ত হ দ হ স ন বল প শ ইন
এছাড়াও পড়ুন:
বাকৃবি ২ ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ ১৫৪ জনকে শাস্তি
জুলাই গণভ্যুত্থান চলাকালে শান্তি মিছিলে যোগদান এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর জুলুম ও নির্যাতনের অভিযোগে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ১৫৪ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকতা কর্মচারীকে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে।
সোমবার (৪ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো হেলাল উদ্দীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ৩২৮তম সভায় গত বছর ৪ আগস্ট ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা’ শান্তি মিছিলে যোগদান এবং গণঅভ্যুত্থান চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরীহ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর জুলুম ও নির্যাতনের অভিযোগে ১৫৪ জনকে শাস্তি প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন, বাকৃবির ৫৭ জন শিক্ষক, ২৪ জন কর্মকর্তা, ২১ জন কর্মচারী এবং ৩১ জন শিক্ষার্থী।
আরো পড়ুন:
যৌন হয়রানির অভিযোগে বেরোবি শিক্ষক রশীদুল বরখাস্ত
বিসিএসে সার্কুলারে নেই আরবি বিভাগ, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
এছাড়াও ২০২২ সালে ২৩ ডিসেম্বর আশরাফুল হক হলে বিকেল ৫টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চারজন শিক্ষার্থীকে ছাত্রদল ও শিবির ট্যাগ দিয়ে অমানবিক শারীরিক নির্যাতনকারী ১৮ জন শিক্ষার্থী, দুইজন শিক্ষক ও একজন কর্মচারীকে শাস্তি প্রদান করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শিক্ষকদের মধ্যে ছয়জনকে বরখাস্ত, ১২ জনকে অপসারণ, আটজনকে পদাবনমন এবং ৩১ জনকে তিরস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তাদের মধ্যে আটজনকে বহিষ্কার, আটজনকে অপসারণ, সাতজনকে তিরস্কার এবং একজনকে ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কর্মচারীদের মধ্যে দুইজনকে বরখাস্ত এবং ১৯ জনকে তিরস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাতজনকে আজীবন বহিষ্কার এবং ২৪ জনের সনদপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আশরাফুল হক হলে ছাত্রদল ও শিবির ট্যাগ দিয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় তিনজন শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার এবং ১৫ জনের সনদপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও একজন শিক্ষককে নিম্নপদে অবনমন, একজনকে বেতন বৃদ্ধি স্থগিত এবং একজন কর্মকর্তাকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিগত ৪ আগস্ট ২০২৪ তারিখে বাকৃবি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ বহিরাগতদের নিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ‘শান্তি মিছিল’ নামে একটি সন্ত্রাসী মিছিল আয়োজন করে। এ মিছিলে ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা’ এবং ‘ঘরে ঘরে খবর দে, এক দফার কবর দে’—এ ধরনের উসকানিমূলক ও সহিংস স্লোগান দিয়ে তারা খুনি ও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার জুলুম, নির্যাতন ও গণহত্যার পক্ষে প্রচারণা চালায়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, এ সময় নিরীহ ছাত্র ও শিক্ষকদের ওপর হামলা চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নজিরবিহীন ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়, যা শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশকে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করে এবং চলমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এছাড়া ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-শিক্ষকদের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে। তাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চিহ্নিত করে শাস্তি প্রদান করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ. কে. ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, “তদন্ত কমিটি বিভিন্ন আলোচনা, সাক্ষাৎকার, তথ্যের ভিত্তিতে শাস্তি সুপারিশ করেছে এবং সেগুলোকে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গত ১৮ মে সিন্ডিকেট সভায় এই শাস্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং পরবর্তী সভায় পরিসমর্থন হয়েছে।”
তিনি বলেন, “তিনজন শিক্ষক তদন্ত কমিটি বৈধ নয় দাবি করে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন। সে রিটগুলো গতকাল খারিজ হয়েছে। আজ থেকে তাদের শাস্তি সংক্রান্ত কাগজ বিলি হচ্ছে।”
ঢাকা/লিখন/মেহেদী