ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোকে গৃহবন্দী করার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার বিচারক এই আদেশ দেন।

আদালতের এই আদেশের ফলে সামরিক অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হওয়া সাবেক ডানপন্থী এই রাজনীতিক ও আদালতের মধ্যকার টানাপোড়েন আরও বাড়ল।

সাবেক সেনা কর্মকর্তা বলসোনারো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একজন মিত্র। ২০২২ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার কাছে হেরেও ক্ষমতা ধরে রাখার ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে তাঁর বিচার চলছে।

জ্বালাময়ী ভাষণ দিয়ে বিচারকাজ বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগে ওঠায় গতিবিধি নজরদারিতে রাখতে গত মাসে বলসোনারোকে (৭০) পায়ে ইলেকট্রিক কড়া পরানোর নির্দেশ দেন আদালত। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তাঁর ছেলেরা ও মিত্ররা জ্বালাময়ী ভাষণগুলো অনলাইনে দিয়েছিল। জনগণের উদ্দেশে দেওয়া এ ধরনের ভাষণ অনলাইনে প্রচার তৃতীয় পক্ষের ওপরও নিষিদ্ধ করা হয়।

গত রোববার বলসোনারোর প্রতি সংহতি জানিয়ে ব্রাজিলের কয়েকটি শহরে সমাবেশ হয়। এর মধ্যে রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে ছেলের সঙ্গে তাঁর সরাসরি ফোনালাপ সম্প্রচার করে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেন বলসোনারোর মিত্ররা।

এ ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারক আলেক্সান্দ্রে ডি মোরায়েস ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। সোমবার তিনি বলেন, বিচার বিভাগ একজন আসামিকে তাঁর ‘রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার’ কারণে এই বিভাগকে বোকা ভাবার সুযোগ দেবে না।

আদালতের বিধিনিষেধ বারবার অমান্য করায় বলসোনারোর সমালোচনা করে তাঁকে রাজধানী ব্রাসিলিয়ার বাড়িতে গৃহবন্দী রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। একই সঙ্গে দেশটির সাবেক এই প্রেসিডেন্টকে তাঁর আইনজীবী ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে দেখা করতে এবং মুঠোফোন ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন তিনি।

আদালতের নতুন এই পদক্ষেপে ওয়াশিংটন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাবে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বলসোনারোর বিরুদ্ধে চলা বিচারকাজকে ‘বিরোধী দমন’ আখ্যা দিয়ে ব্রাজিলের ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপ করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। একই সঙ্গে বিচারক মোরায়েসের ওপর নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুনব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর বাড়ি ও কার্যালয়ে তল্লাশি১৮ জুলাই ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বলস ন র র ব চ রক

এছাড়াও পড়ুন:

‘ঘাড়ে, বুকে, হাতে গরম কিছু এসে লাগল, লুটিয়ে পড়েছিলাম মাটিতে’

চারদিকে গুলির শব্দ। শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। ছত্রভঙ্গ হয়ে দিগ্‌বিদিক ছুটছিলেন শিক্ষার্থীরা। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আচমকাই শরীরে তীব্র একটা ঝাঁকুনি অনুভব করেন খালেদ মাহমুদ। বুঝে ওঠার আগেই লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। জামাও ভিজে যায় রক্তে। সেই চিত্র আজও চোখে ভাসে তাঁর।

গত বছরের ৪ আগস্টের ঘটনা এটি। সেদিনের ঘটনার পর এক বছর কেটে গেছে। তবে সেদিনের যন্ত্রণা শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন খালেদ। এখনো তাঁর শরীরে রয়েছে সাতটি গুলি। বাঁ হাত ও ডান পা অচল। হুইলচেয়ারে বসেই করেন চলাফেরা।

সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা কর্মসূচিতে লক্ষ্মীপুর শহরে অবস্থান নিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ করে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা–কর্মীরা বাড়ির ছাদ থেকে গুলি ছুড়তে শুরু করেন। টানা ছয় ঘণ্টা ধরে চলা এ হামলায় নিহত হন চার শিক্ষার্থী। গুলিবদ্ধ হন শতাধিক। ২০ বছর বয়সী খালেদ তাঁদের একজন।

খালেদ লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর রুহিতা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ থেকে চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। সেদিনের ঘটনার কথা মনে করলে কেঁপে ওঠেন তিনি। প্রথম আলোকে খালেদ বলেন,‘সাড়ে চারটার দিকে হঠাৎ আমার বুক, ঘাড়, হাত—সব জায়গায় একসঙ্গে গরম কিছু এসে লাগল। তীব্র ব্যথায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। হাত-পা বাঁকা হয়ে যাচ্ছিল। পাশে অনেকে চিৎকার করছিল। কেউ চ্যাংদোলা করে, কেউ রিকশায় তুলে নিয়ে যাচ্ছিল আহতদের।’

খালেদ জানান, তাঁর শরীরে ১০টি গুলি লাগে। এর মধ্যে একটি গুলি শরীর ভেদ হয়ে বের হয়ে যায়। পরে অস্ত্রোপচার করে একটি গুলি লিভার থেকে বের করা হয়। আরেকটি বের করা হয় পেট থেকে। বাকি সাতটি শরীরে রয়ে গেছে।

সেদিনের ঘটনার পর দীর্ঘ দেড় মাস তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তবে স্বাভাবিক জীবনে আর ফিরতে পারেননি। বাড়িতেই এখন তাঁর চিকিৎসার কার্যক্রম চলছে। প্রতিদিন তাঁর চলাফেরার জন্য পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা লাগে। নিজের দুর্ভোগের কথা জানিয়ে খালেদ বলেন, ‘সেদিন শুধু আমার শরীরে নয়, আমাদের ভবিষ্যতেও গুলি লেগেছিল। আমি দেশের তরুণদের জন্য আওয়াজ তুলেছিলাম, কোনো অপরাধ করিনি। এখন সাতটা গুলি শরীরে নিয়ে বেঁচে আছি, কিন্তু জীবন আর আগের মতো নেই।’

খালেদের চিকিৎসার ব্যয় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে তাঁর পরিবার। জানতে চাইলে বাবা শাহীন কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিল। পড়াশোনায় ভালো ছিল। গুলি খেয়ে এখন পঙ্গু হয়ে গেছে। চিকিৎসা চালাতে ধারদেনায় ডুবে গেছি। সরকার যদি না দেখে ছেলেোকে কীভাবে বাঁচাব? সে তো কোনো সন্ত্রাসী নয়। দেশকে ভালোবাসত।’

লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, খালেদের বিষয়টি তিনি জেনেছেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। একজন তরুণ ছাত্রকে এভাবে কষ্ট করতে দেখা মর্মান্তিক। বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে সহায়তা দেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আবুল হাসানকে নিয়ে নতুন গল্পগাছা ও পূর্বাপর
  • সরকারের কাছ থেকে ভোট আদায় করেই ছাড়ব: মির্জা আব্বাস
  • অচলায়তন ভেঙে সক্রিয় হওয়ার অপেক্ষায় কোয়াব
  • দেশে আবার একটা অস্থিরতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চলছে: মির্জা ফখরুল
  • রক্তাক্ত ৪ আগস্ট: ফেনীতে গুলিতে ঝরে যায় ৭ তরুণের প্রাণ
  • হাতকড়াসহ নৌকা থে‌কে হাওরে ঝাঁপ দি‌য়ে আওয়ামী লীগ নেতার পলায়ন
  • ছাত্রলীগে লুকিয়ে থাকা শিবিরকে বাঁচাতে সহায়তার ন্যারেটিভটি সম্পূর্ণ মিথ্যা: সাদিক কায়েম
  • কন্যা ফাতিমাকে নবীজির ৫ উপদেশ
  • ‘ঘাড়ে, বুকে, হাতে গরম কিছু এসে লাগল, লুটিয়ে পড়েছিলাম মাটিতে’