যশোরে ব্যবসায়ীকে বুকসমান বালুতে পুঁতে নির্যাতন ও টাকা আদায়ের ঘটনায় মামলা, একজন গ্রেপ্তার
Published: 4th, August 2025 GMT
যশোরের অভয়নগর উপজেলায় ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীর টিপুকে বুকসমান বালুতে পুঁতে রেখে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কয়েক দফায় চার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজের স্ত্রী আসমা খাতুন বাদী হয়ে ছয়জনের নাম–পরিচয় উল্লেখ করে অভয়নগর থানায় মামলা করেন।
এজাহারভুক্ত আসামি কামরুজ্জামান মিঠু নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁর বাড়ি অভয়নগরের নওয়াপাড়া মহিলা কলেজ গেট এলাকায়। তাঁকে গ্রেপ্তার করে আজ সোমবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মামলার এজাহারভুক্ত অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (স্থগিত পদ) আসাদুজ্জামান জনি, নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দীন দপ্তরী (সাময়িক বহিষ্কৃত), আসাদুজ্জামান জনির বাবা কামরুজ্জামান ও তাঁদের সহযোগী সৈকত হোসেন হীরা প্রমুখ।
আসমা খাতুন আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল রোববার রাতে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছি। একজন আটকও হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে বলা হচ্ছে। যেকোনো সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে খবর দিতে বলা হয়েছে। তারপরও ভয়ে আছি। কারণ, মূল আসামি আসাদুজ্জামান জনি ফেসবুকে সক্রিয় থেকে বিভিন্ন ধরনের উসকানিমূলক পোস্ট দিচ্ছে। পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারছে না।’
ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে গত ৩১ জুলাই অভয়নগরের রাজঘাট সেনা ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগও করেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর স্ত্রী আসমা খাতুন।
মামলার এজাহার ও অভিযোগপত্রে আসমা খাতুন জানান, গত বছর ২ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে তাঁর স্বামীকে নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (স্থগিত পদ) আসাদুজ্জামান জনি ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে মারধর ও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। টাকা পেয়ে ওই দিন তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টার দিকে ব্যবসায়ী টিপু গ্রামের বাড়ি চলিশিয়া থেকে মোটরসাইকেলে করে নওয়াপাড়া বাজারে যাওয়ার পথে তাঁর পথ রোধ করে জোরপূর্বক বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান জনির কনা ইকোপার্কে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর টিপুর স্ত্রী সেখানে গেলে জনি, সাংবাদিক মফিজ উদ্দিন ও তাঁদের এক সহযোগী তাঁর ওপর আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে মারধর করেন। এরপর তাঁরা শাহনেওয়াজ কবীরের বুকপর্যন্ত গর্ত খুঁড়ে বালুচাপা দিয়ে আরও দুই কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। এ সময় ব্যবসায়ী টিপু বাধ্য হয়ে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপককে ফোন করে টাকা জোগাড় করে তাঁদের দেন। এরপর কাউকে কিছু বললে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির (পদ স্থগিত) সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনির মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
সহযোগী সৈকত হোসেন হীরার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁর স্ত্রী কল ধরে বলেন, হীরা ঢাকায় গেছেন। চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান।
অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল আলিম প্রথম আলোকে বলেন, চাঁদাবাজির ঘটনায় ছয়জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। একজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ব যবস য় নওয় প ড় ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
বন্দীদের ফুল দিয়ে বরণ, চালু হলো ফেনীর দ্বিতীয় কারাগার
সংস্কার শেষে ফেনীর দ্বিতীয় কারাগার চালু হয়েছে। আজ শনিবার সকালে বন্দীদের ফুল দিয়ে বরণ করার মধ্য দিয়ে এ কারার যাত্রা শুরু হয়। এতে চট্টগ্রাম বিভাগের আটটি কারাগারের সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের ও ফেনী জজ আদালতে বিচারাধীন মামলার আসামিদের রাখা হবে।
কারা সূত্র জানায়, দেশের পুরোনো চারটি কারাগারের মধ্যে ফেনী-২ কারাগার একটি। শত বছরের পুরোনো এ কারাগার ভবন ছিল জরাজীর্ণ। এ কারণে ২০১৯ সালে ১২ জানুয়ারি এ কারাগার থেকে বন্দীদের ফেনীর শহরতলির রানীরহাট এলাকার নতুন কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এরপর থেকে কারাগারটি অনেকটা ‘পরিত্যক্ত’ অবস্থায় ছিল।
নতুন করে চালু হওয়া কারাগারটির অবস্থান ফেনী শহরের মাস্টারপাড়ায়। এটি ১৯১৫ সালে সাবজেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর ১৯৯৮ সালে জেলা এটিকে কারাগারে উন্নীত হয়। এ কারাগারের বর্তমান ধারণক্ষমতা ১৭২ জন। এর মধ্যে ১৭০ জন পুরুষ ও ২ জন নারী। কারাগার চালু করার জন্য গতকাল কুমিল্লা জেলা কারাগার থেকে ২৪ জন ও চট্টগ্রাম থেকে চারজন বন্দীকে আনা হয়েছিল। তাঁরা সবাই সশ্রম সাজাপ্রাপ্ত। এ কারাগারে তাঁরা রান্নার দায়িত্বে থাকবেন।
কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, ধাপে ধাপে সাজাপ্রাপ্ত ও বিচারাধীন বন্দীদের ফেনীর দ্বিতীয় কারাগারে আনা হবে। আপাতত এতে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২৬ জন, কুমিল্লা থেকে ৭৪ জন, নোয়াখালী থেকে ১৫ জন, লক্ষ্মীপুর থেকে ৪ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ৩৩ জন বন্দী এখানে স্থানান্তর করা হবে। এতে সেল, রান্নাঘর, কিশোর ওয়ার্ড, মসজিদসহ প্রয়োজনীয় সুবিধা রয়েছে। এ কারাগার নিয়ে বর্তমানে দেশে কারার সংখ্যা ৭১।
জানতে চাইলে ফেনী-২–এর জেল সুপার মো. দিদারুল আলম বলেন, ‘রাষ্ট্র চায়, কারাগার শুধু শাস্তির জায়গা নয়, সংশোধনের কেন্দ্র হোক। এরই অংশ হিসেবে সংস্কার শেষে ফেনী কারাগার-২ চালু হয়েছে।’
কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার ফেরদৌস মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ কারাগারে স্থানান্তরিত বন্দীদের সব সুযোগ-সুবিধা ইতিমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে। চিকিৎসক ও প্রশিক্ষিত নার্সও যোগদান করেছেন। বেশির ভাগ পদে কর্মচারীরাও কাজ শুরু করেছেন।’