হাতি বাঁচাতে ৪০ কোটির প্রকল্প, বসবে ৬ ক্যামেরা–সেন্সর
Published: 5th, August 2025 GMT
পর্যটন শহর কক্সবাজারে ট্রেন নিয়ে যেতে সংরক্ষিত বনের ভেতরে নির্মিত হয়েছে রেলপথ। এমন জায়গায় রেললাইন তৈরি করা হয়েছে, যেটি ছিল এশিয়ান হাতির করিডর (চলচলের পথ)। এভাবে লাইন স্থাপনের কারণে হাতির চলাচলের পথে বাধা তৈরি হয়। যদিও হাতির চলাফেরা নির্বিঘ্ন করার জন্য রেললাইনের ওপর নির্মাণ করা হয় ওভারপাস ও আন্ডারপাস। এরপরও দুর্ঘটনা ঘটছে।
চলাচলের পথে মনুষ্য সৃষ্ট এমন বাধা উপেক্ষা করে ঠিকই বনে নিজের রাজ্যে ঘোরাঘুরি করে হাতির দল। কখনো কখনো রেললাইনের ওপর চলে আসে হাতি। এতে তৈরি হয় মৃত্যুর ঝুঁকি। ইতিমধ্যে ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ গেছে একটি হাতির বাচ্চার। অল্পের জন্য রক্ষা পায় আরেক হাতি।
রেললাইনে এসে বিপণ্নপ্রায় এশিয়ান হাতির যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সে জন্য ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে। দেশের বাইরে থেকে আনা হচ্ছে এসব ক্যামেরা। মূলত এগুলো সেন্সর ক্যামেরা হিসেবে কাজ করবে। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতরে হাতি চলাচলের যেসব পথ রয়েছে, সেখানে বসানো হবে ক্যামেরাগুলো।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, ক্যামেরা কেনার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। বিদেশ থেকে ক্যামেরাগুলো দেশে আনা হচ্ছে। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চলতি বছরের মধ্যে ক্যামেরা স্থাপনের কাজ শেষ করতে চান তাঁরা।
চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের পর ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। বর্তমানে এই রেলপথ দিয়ে দিনে ও রাতে চার জোড়া ট্রেন চলাচল করছে।
চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মিত ১০৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথের ২৭ কিলোমিটার গেছে সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে। লোহাগাড়ার চুনতি, ফাঁসিয়াখালী ও মেধাকচ্ছপিয়া সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে এই রেলপথ গেছে। রেললাইন নির্মাণ করার জন্য বনের ২০৭ একর জায়গাকে সংরক্ষিত বন থেকে বাদ দেওয়া হয়।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, ক্যামেরা কেনার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। বিদেশ থেকে ক্যামেরাগুলো দেশে আনা হচ্ছে। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চলতি বছরের মধ্যে ক্যামেরা স্থাপনের কাজ শেষ করতে চান তাঁরা।বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চুনতি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য চট্টগ্রাম জেলার লোহাগড়া ও বাঁশখালী উপজেলা এবং কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায় অবস্থিত। এর আয়তন ১৯ হাজার ১৮৫ একর। এটি প্রাকৃতিকভাবেই গর্জনগাছ প্রধান এলাকা। আগে এ অঞ্চলে ঘন গর্জন বন থাকলেও বর্তমানে অল্প কিছু গর্জনগাছ অতীতের সাক্ষ্য বহন করে দাঁড়িয়ে আছে। এ বনের উল্লেখযোগ্য প্রাণীদের মধ্যে হাতি অন্যতম। বর্তমানে চুনতি অভয়ারণ্যে প্রায় ৪০ থেকে ৫০টি হাতি আছে। এই হাতির পাল লোহাগাড়া, বাঁশখালী ও চকরিয়ার বনজুড়ে চলাচল করে। এ জন্য রেললাইন পার হতে হয়।
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতি অভয়ারণ্যে রেললাইনের ওপর একটি হাতি। গত ২২ জুলাই রাতে। রিতু পারভী নামের ফেসবুক আইডিতে শেয়ার করা ভিডিও থেকে ছবিটি নেওয়া।.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রক র য় র ভ তর র লপথ
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সহিংসতা: ত্রুটিপূর্ণ গ্রেপ্তার, ঝুঁকিপূর্ণ বিচার
২০২৪ সালের ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগের কর্মীদের গুলিতে শত শত মানুষ নিহত এবং হাজারো মানুষ আহত হন। পাশাপাশি বিক্ষোভকারীদের হাতেও কিছু মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার বিষয়টি গত বছরের ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য সবচেয়ে কঠিন বিষয়গুলোর একটি হয়ে দাঁড়ায়।
প্রায় এক বছর পর সরকার এই বিচারপ্রক্রিয়ায় কতটা সফল হয়েছে, তা মূল্যায়নের প্রয়োজন রয়েছে। এখানে ‘প্রক্রিয়া’ শব্দটি ব্যবহার করাই যথার্থ। কারণ, তদন্ত সঠিক এবং বিচারিক কার্যক্রম ন্যায্য হলেই জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা দ্রুত হয় না। তাই এখনো কোনো মামলার নিষ্পত্তি না হওয়াকে একচেটিয়াভাবে ব্যর্থতার নিদর্শন হিসেবে দেখা উচিত নয়।
একজন কৌঁসুলির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত যে বিচারগুলো এক দশক আগে হয়েছিল, তার তুলনায় বর্তমান পরিস্থিতি প্রমাণসমৃদ্ধ। কারণ, এখানে ভিডিও ফুটেজ ও টেলিফোন যোগাযোগের রেকর্ড পাওয়া সহজ। এ ছাড়া ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টের ঘটনা অতি সম্প্রতি ঘটায় পর্যাপ্ত ও নির্ভরযোগ্য প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য পাওয়া যাচ্ছে। এসব উপাদান থাকায় কৌঁসুলির জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী মামলা উপস্থাপন করা সহজ হয়ে গেছে। মামলাগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য এমন কোনো উপায় অবলম্বনের প্রয়োজন নেই, যা বিচারপ্রক্রিয়াকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে, যে দোষে ১০ বছর আগের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম দুষ্ট ছিল।
বাংলাদেশে জুলাইয়ের আন্দোলন-সংক্রান্ত অপরাধগুলোর জবাবদিহি নিয়ে দুটি সমান্তরাল ফৌজদারি ব্যবস্থা চলছে। প্রথমটি হলো, ভুক্তভোগী বা তাঁদের পরিবারের সদস্যদের থানায় করা মামলাগুলো, যা ‘প্রাথমিক তথ্যবিবরণী’ (এফআইআর) আকারে নথিভুক্ত হয়েছে। এসব অভিযোগে বলা হয়েছে, শত শত মানুষ—প্রধানত স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী এবং দলের সুপরিচিত সমর্থকেরা নির্দিষ্ট মৃত্যু বা আহত হওয়ার ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তারাই হত্যাকাণ্ড বা হত্যাচেষ্টার অপরাধে দোষী।
দ্বিতীয়টি হলো, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) করা মামলাগুলো, যা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের আওতায় বিচারাধীন।
আরও পড়ুনশেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের একই আইনজীবী নিয়ে বার্গম্যানের প্রশ্ন২২ ঘণ্টা আগেসাধারণ আদালত
জুলাইয়ের আন্দোলন নিয়ে ১৭ জুলাই পর্যন্ত করা ১ হাজার ৬০১ মামলার মধ্যে ৬৩৭টি হত্যা মামলা। এসব মামলায় হাজার হাজার না হলেও শত শত মানুষকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এফআইআরে যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের মধ্যে অনেকে আছেন, যাঁরা আন্দোলনের সময় প্রকৃতপক্ষে অপরাধ করেছেন এবং সে কারণে তাঁদের গ্রেপ্তার আইনসংগত হতে পারে।
কিন্তু যে মুহূর্তে কারও নাম একটি এফআইআরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, সেখান থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত—যখন অনেকেই মাসের পর মাস, কেউ কেউ প্রায় এক বছর ধরে গ্রেপ্তার রয়েছেন, চলমান এই বিচারিক ব্যবস্থাটি মূল অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে নির্দোষ ব্যক্তিদের পার্থক্য নির্ধারণের কোনো বাস্তব প্রয়াস দেখাচ্ছে না।
বাংলাদেশে জুলাইয়ের আন্দোলন-সংক্রান্ত অপরাধগুলোর জবাবদিহি নিয়ে দুটি সমান্তরাল ফৌজদারি ব্যবস্থা চলছে।অপরাধে জড়িত ও নির্দোষ—দুই শ্রেণির মানুষই গ্রেপ্তারের শিকার হয়েছেন এবং দীর্ঘ সময় ধরে গ্রেপ্তার রয়েছেন। কাউকে গ্রেপ্তার করার ক্ষেত্রে মূল মানদণ্ড প্রমাণ ছিল না; বরং সবচেয়ে বড় বিবেচ্য ছিল তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক।
এ মুহূর্তে বাংলাদেশে এসব মামলার ক্ষেত্রে যা চলছে, ‘বিচারের আগের আটক’ বা ‘অভিযোগ গঠনের আগের আটক’ নয় (অন্য সবকিছু বাদ দিয়ে শুধু এই দুই ধরনের পদক্ষেপই যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ)। তবু বিষয়টি এখানেই শেষ হয়নি; বরং আরও গুরুতর ও সমালোচনাযোগ্য আরেকটি বিষয় যা ঘটছে, তা হলো ‘তদন্ত শুরুর আগেই আটক’। কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ পরে আংশিক তদন্ত করলেও আদালতকে জানায় না যে গ্রেপ্তার ব্যক্তির সঙ্গে অপরাধের কোনো যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সরকার বা পুলিশকে এমন হয়রানিমূলক গ্রেপ্তার ঠেকানোর কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে সময় লেগেছে ৯ মাস। ইতিমধ্যে শত শত, এমনকি হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২০২৫ সালের ৯ এপ্রিল ঢাকার পুলিশ কর্তৃপক্ষের জারি করা এক নির্দেশনায় বলা হয়, জুলাই-আগস্ট মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে হলে অবশ্যই ‘যথাযথ প্রমাণ’ থাকতে হবে। যেমন ‘প্রত্যক্ষদর্শী’, ‘ভিডিও’, ‘ছবি’ এবং এর সঙ্গে অবশ্যই ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের’ অনুমতি থাকতে হবে। নিঃসন্দেহে এই উদ্যোগ ২০২৪ সালের আগস্ট–সেপ্টেম্বর মাসেই বাস্তবায়িত হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল।
পুলিশের ওই নির্দেশনাকে সংবিধানবিরোধী উল্লেখ করে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। হাইকোর্ট পুলিশের ওই নির্দেশনা স্থগিত করেন। তবে এর পর থেকে সরকার স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেনি। আইন পরিবর্তনের জন্য কোনো অধ্যাদেশও জারি করেনি।
সরকার গত ১০ জুলাই ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করে। এর মাধ্যমে একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে অনুমতি দেওয়া হয় যে ‘প্রাথমিক তদন্ত’ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ‘প্রমাণ অপর্যাপ্ত’ বলে প্রমাণ করলে তিনি (কর্মকর্তা) সেই ব্যক্তির নাম এফআইআর থেকে বাদ দিতে পারবেন। এটি স্বাগতযোগ্য পদক্ষেপ, তবে সংশোধিত আইনটি এখনো ত্রুটিপূর্ণ গ্রেপ্তার বন্ধ করতে পারেনি। প্রমাণ ছাড়া আটক ব্যক্তিদের সহায়তা করতেও কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি।
সমানভাবে উদ্বেগজনক বিষয় হলো জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে বিচারিক ব্যবস্থার দুর্বলতা, বিশেষ করে যখন অভিযুক্ত ব্যক্তি জাতীয়ভাবে পরিচিত। ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা আদালত কখনো জামিন দেন না; অন্তত জাতীয়ভাবে পরিচিত কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে দেওয়া হয় না। হাইকোর্টের বেঞ্চগুলো তুলনায় জামিন প্রদানে বেশি অনুকূল। তবে কিছু কারণে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়া সম্ভব হয় না। যেমন অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় সব অন্তর্বর্তী জামিন আদেশ স্থগিতের আবেদন করে; আপিল বিভাগ অন্তর্বর্তী জামিন আটকানোর সেসব আবেদন মঞ্জুর করে এবং সেই সঙ্গে নতুন কোনো মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পুলিশের গ্রেপ্তার দেখিয়ে দেয়।
সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান