সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসিসহ তিন কর্মকর্তার পত্যাহার দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মানববন্ধন
Published: 15th, August 2025 GMT
সিদ্ধিরগঞ্জের নিমাইকাশারী এলাকার মাকসুদুল হাসান জনি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি সহ তিন পুলিশ কর্মকর্তার প্রত্যাহার ও খুনিদের ফাঁসির দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী। এসময় নিহতের পিতা শুক্কুর আলী ও স্ত্রী ইভা আক্তার সহ স্বজনরাও উপস্থিত ছিলেন।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) জুম্মার পর নাসিক ৩নং ওয়ার্ডের সর্বস্তরের বাসিন্দাদের ব্যানারে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সানারপাড় অংশে এ মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনকালে সড়ক অবোধের ফলে প্রায় ৩০ মিনিট যানচলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এসময় তারা জনি হত্যার রহস্য উদঘাটন, খুনিদের ফাঁসি, ওসিসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তার প্রত্যাহার সহ নানা শ্লোগান দেন।
এসময় নিহতের স্ত্রী ইভা আক্তার বলেন, জনি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি শাহীনুর আলম, সেকেন্ড অফিসার মাহবুব হাসান ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই বজলুর রহমানকে অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবিতে আজকের এই বিক্ষোভ-মানববন্ধন।
তিনি বলেন, আমার স্বামী মাকসুদুল হাসান জনিকে গত মাসের ১৫ জুলাই মারা হয়েছে। তার লাশ পাই ১৮ জুলাই। আমরা সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা করতে যাই। তবে মামলা করার আগেই আমাদের লোকজন নাইটগার্ড আলমগীর, তার ছেলে ইমন ও স্থানীয় যুবক আকাশ নামে একজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
আমার স্বামী নিখোঁজ হওয়ার আগমুহুর্তে ইমন তাকে দুইবার খুঁজতে বাড়িতে আসে। মামলার তন্তকারী কর্মকর্তা এস আই বজলুর রহমান আমাদের জানায় দারোয়ান আলমগীর আদালতে স্বীকারোক্তী দিয়ে যাদের নাম বলেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। অথচ আমার শ^শুড়সহ আমরা মামলায় যাদের নাম দিতে চেয়েছি পুলিশ তাদের নাম দেয় নাই।
আমার শ^শুড় বার বার বলেছে নিখোঁজের আগে ইমন আমার ছেলেকে দুইবার বাসায় এসে খুঁজে গেছে। তাকে আসামি করেন নাই কেন। এস আই বজলুর রহমান বলেন, আলমগীর জবাববন্দিতে যাদের নাম বলেছে তাদের বিরুদ্ধেই মামলা হয়েছে ওসি স্যারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক। পরে ইমনকে অন্য একটি মামলায় আদালতে পাঠায় পুলিশ।
আমাদের মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় নাই। আমাদের কোন কথাই শুনে নাই পুলিশ। পরে এস আই বজুলর রহমান তদন্ত করতে এপার্টমেন্টে আসে। আমি ছাদ থেকে ওনাকে এপার্টমেন্টের আশপাশের ৬-৭টি সিসি টিভির ক্যামেরা দেখিয়ে বলেছি এগুলোর ভিডিও দেখতে কিছু তথ্য পেতে পারেন।
তখন এস আই বলেন, আমরা তো ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে জানতেই পেরেছি আসামি কে। সিসি টিভি দেখে লাভ নাই। তাছাড়া আসামী আসিফ এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার না করে আমাদের বলে আসিফকে পাইছেন? এরপর এজাহারভুক্ত আসামি সাগরের সন্ধান পাই সানারপাড়ে রিহাব সেন্টারে।
হত্যাকান্ড ঘটিয়ে সে ওখানে ভর্তি হয়েছে। ৪ আগস্ট এস আই বজলুর রহমানকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানাই। তিনি বলেন, র্যাব কর্মকর্তা রাজিবকে জানাতে। আমি রাজিব সাহেবকে জানাই। ৭ তারিখ পর্যন্ত তাদেরকে আসামির অবস্থান সম্পর্কে অবহিত করি। কিন্তু তারা কোন প্রদক্ষেপ নেই নাই। পরে আসামি সাগরের পরিবার টের পেয়ে ৮ আগস্ট রিহাব সেন্টার থেকে সাগরকে অন্যত্র সরিয়ে দেয়।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা শতভাগ শিউর পুলিশ আসামি সাগরকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) থানায় গিয়ে এস আই বজলুর রহমানে কাছে সাগরের বিষয় জানতে চাইলে তিনি আমাদের সঙ্গে অনেক খারাপ আচরণ করেন।
পরে আমি আমার স্বামীর পোস্ট মোর্টেম রিপোর্ট এর বিষয় জানতে চাইলেও এস আই বজলুর রহমান আজেবাজে কথা বলে থানা থেকে বের করে দেয়। আমার স্বামী কেনে মাররো, কারা মারলো আমরা এখনো কিছুই জানতে পারি নাই। এর সুষ্ঠ বিচার চাই।
তিনি আরও বলেন, এটা একটা পরিকল্পিত মার্ডার। অথচ ওসি শাহীনুর আলম, সেকেন্ড অফিসার মাহবুব হাসান, তদন্তকারী কর্মকর্তা বজলুর রহমান বলেন এটা চুরির ঘটনা। চুরির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে জনিকে। পুলিশ জনি হত্যা মামলা নিয়ে যথেষ্ট গাফলতি করতেছে। আমরা ওসি সহ তিন পুলিশ কর্মকতার প্রত্যাহার চাই।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহিনূর জানায়, ওই হত্যাকান্ডের ৭ আসামিদের মধ্যের ৪ জনকে আমরা গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছি। বাকিদের ধরার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। চুরি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এই হত্যা হয়েছিল বলে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দিয়েছেন আসামি দারোয়ান।
মামলায় অবহেলা এবং আসামিদের বাঁচানোর অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলে, মামলা হবার পর থেকে ভিকটিম পিতা (বাদী) আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। দায়িত্ববার পাওয়া অফিসার যদি অবহেলা কররে থাকো তারা আমাকে তো অন্তত জানাতে পারতো।
এরপরও যদি তাদের মনে হয় আরও আসামি করা উচিত সেটার জন্যেও তো তদন্ত রয়েছে। তারা তো যোগাযোগই করে না। এই মানববন্ধন অন্য খেলা, জমিজমাসহ রাজনৈতিক কিছু বিষয়াদি রয়েছে যা এটাকে ইস্যু করছে।
প্রসঙ্গত, জনি ও তার কয়েকজন সহযোগী দীর্ঘদিন ধরে নিমাইকাশারী ও আশপাশের এলাকায় চুরি ও ছিনতাই করে আসছিলেন। ১৪ জুলাই রাত ২টার দিকে চুরির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে তাদের মধ্যে তীব্র বিরোধ দেখা দেয়।
একপর্যায়ে সহচরদের কেউ কেউ জনিকে শ্বাসরোধে হত্যা করে তাকওয়া টাওয়ার নামে একটি নির্মাণাধীন ভবনের পাশে ফেলে রেখে যায়।
উল্লেখ্য, নিখোঁজের তিন দিন পর গত ১৮ জুলাই দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের নিমাইকাশারী এলাকার নির্মাণাধীন তাকওয়া ভবনের লিফটের নীচে নর্দমা পানিতে মাকসুদুল হাসান জনির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
পরদিন ১৯ জুলাই জনির পিতা শুক্কুর আলী ৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৩ জনকে আসামি করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: হত য স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ স দ ধ রগঞ জ থ ন র হত য ক ন ড আম র স ব ম কর মকর ত আম দ র সহ ত ন তদন ত আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
তুহিন হত্যার প্রতিবাদে নাঃগঞ্জ জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটের মানববন্ধন
গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার প্রতিবাদে ও হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবীতে নারায়ণগঞ্জ জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১২ আগষ্ট) বিকেল ৪ টায় শহরের চাষাড়ার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটের সভাপতি মোঃশহীদুল্লাহ রাসেলের সভাপতিত্বে ও জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল হোসাইনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন দৈনিক আজকের নীরবাংলার সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন,নারায়ণগঞ্জ রাইটার্স ক্লাব সাধারণ সম্পাদক শফিকুর ইসলাম আরজু, ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আব্দুর রহিম, সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মাসুম।
মানববন্ধনে সাংবাদিকরা বলেন, শুধু গাজীপুরের তুহিনই হত্যা হয়নি। এদেশে একের পর এক সাংবাদিক হত্যা হয়েছে। সাংবাদিকরা যখনই সত্য প্রকাশ করেছে তখনই তাদের টুটি চেপে ধরা হয়েছে।
করা হয়েছে একের পর এক গুম, খুন সহ হামলা মামলা দিয়ে হয়রানি। দেশের সবচেয়ে আলোচিত সাংবাদিক হত্যা সাগর- রুনি দম্পতি হত্যাকান্ড। তথ্যমন্ত্রী বলেছিলো তাদের হত্যার দ্রুত বিচার করা হবে।
কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন বিচার পায়নি এই পরিবারটি। এখনো বলা হচ্ছে সাংবাদিক তুহিনের হত্যার বিচার করা হবে।আদৌ সাংবাদিক তুহিন হত্যার কতটা সুষ্ঠু বিচার করা হবে? নারায়ণগঞ্জের এক সাবেক এমপি আছে যে সত্য প্রকাশ করলে লোক দিয়ে মামলা করে করেন হয়রানি।
তাতে কি হয়েছে সাংবাদিকদের হয়রানি করতে গিয়ে আপনার জেলা এমনকি ছেলের পদ চলে গেছে। সাংবাদিকদের যতই সত্য প্রকাশে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেন না কেন পারবেন না।
সাংবাদিকরা আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। যে সরকার সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দিতে পারে না সেই ব্যর্থ সরকারের তথ্য উপদেষ্টার অবিলম্বে পদত্যাগ চাই।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ করবো সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য নিরাপত্তা আইন পাশ করা হোক। আপনেরা সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দিতে না পারলে সাংবাদিকরা যদি একদিন জন্য কর্মবিরতি দেয় তাহলে এদেশে ধর্ষণ,গুম, খুন, চাঁদাবাজি বেড়ে যাবে।
এতে দেশে অপরাধীদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড কমে না বরং অপরাধ বেড়ে যাবে। তাই অতিবিলম্বে প্রধান উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ করবো আপনেরা সাংবাদিকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন।আজকে সাংবাদিকরা আছে বলেই অপরাধীরা অপরাধ করতে ভয় পাচ্ছে।
এ সময়ে আরও মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, ফতুল্লা মডেল রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি রফিকুল্লাহ রিপন, বাংলাদেশ জাতীয় সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি জুয়েল, সোনারগাঁ প্রেস ক্লাবের সদস্য নজরুল ইসলাম সবুজ, এটিএন (এমসিএল) নারায়ণগঞ্জ, প্রতিনিধি জহিরুল ইসলাম সিরাজ, অপরাধ দমনের স্টাফ রিপোর্টার শাহীন আলম,
তালাশ ডটকমের সম্পাদক জুয়েল আলী, দূর্নীতি চিত্র শাহীম আহমেদ, ইদ্রিস আলী দেওয়ান, নিউজ প্রতিদিন ডটনেট.কম আবুল কালাম, নারায়ণগঞ্জ মেইলের বার্তা সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম, সান নারায়ণগঞ্জের সম্পাদক এড. রোকন, বিপি নিউজের মঞ্জুর মুরশেদ বকুল, সিএনএন বাংলা নারায়ণগঞ্জ সদর প্রতিনিধি মোঃকাওছার সহ জেলার বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।