নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পাগলা কুতুবপুর এলাকার চিহ্নিত  মাদক ব্যবসায়ী কিলার আক্তার এখন প্রশাসন এবং রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় অব্যাহত অপরাধ চালাচ্ছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, আক্তারের মাদক ব্যবসা ও অন্যান্য অপরাধের ফলে তার সম্পত্তির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকারও বেশি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কিলার আক্তার শ্রমিকলীগ নেতা কাউছার আহমেদ পলাশের হাত ধরে অপরাধ জগতে প্রবেশ করেন। তখন থেকে তার কর্মকাণ্ড ছিল চাঁদাবাজি, হত্যাচেষ্টা ও ভয়ংকর সন্ত্রাস। কুতুবপুরের স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মীরুকে হত্যার চেষ্টা করার মতো ঘটনা তার হাতে ঘটেছে। ফতুল্লার শীর্ষ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে আক্তার গড়ে তুলেছে বিশাল অপরাধ সম্রাজ্য, যা বৃহত্তর পাগলা ও কেরানীগঞ্জ এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত।

পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে কিলার আক্তারের বিরুদ্ধে আইনের কার্যক্রম কার্যকর হয়নি। নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের  তৎকালীন উপ-পরিদর্শক মাজহারুল ইসলামের আর্শীবাদে তিনি মাদক ব্যবসা পরিচালনা করেছে এবং নিজের প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য সরাসরি পুলিশের গাড়ি ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।  এমনকি পুলিশের সঙ্গে ঘুরে এসে শহরের বিভিন্ন আসামিকে গ্রেফতার করাতে দেখা যায়।এমন একটি ভিডিও ফুটেজ রয়েছে প্রতিবেদকের কাছে। যেখানে দেখা যায় ফতুল্লা মডেল থানার এসআই ওয়াসিম এই শীর্ষ অপরাধীকে সাথে নিয়ে আসামি ধরতে গিয়েছেন। এ বিষয়টি ভাইরাল হওয়ার পর ওয়াসিম বলেন আমি জানতাম না এটা আক্তার। সে ছদ্মনাম ব্যবহার করেছে। কিন্তু সাথে সাথে তাকে এই অপরাধীর আসল পরিচয় জানানোর পরও সে আখতার কে গ্রেফতার না করে ছেড়ে দেয়।  স্থানীয়রা প্রশ্ন করছে।কিভাবে একজন শীর্ষ অপরাধীর সঙ্গে পুলিশের এমন ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠল, অথচ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে আটক করতে ব্যর্থ হচ্ছে।অথচ তার বিরুদ্ধে রয়েছে বৈষম্য বিরোধী মামলা। সে এর আগেও ধর্ষণ মামলাও গ্রেফতার হয়েছিলেন। 

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর কিলার আক্তার রাজনৈতিক নেতার পরিবর্তন করে বর্তমানে কুতুবপুর বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতার ছত্রছায়ায় কার্যক্রম চালাচ্ছেন। সূত্র  বলছে, কুতুবপুরের যুবদল নেতা পরিচয় দানকারী ল্যাংড়া লিখন  এখন এই আক্তারের খুব ঘনিষ্ঠ। এই লিখনের অফিসে প্রতিদিন আক্তার কে আড্ডা দিতে দেখা যায়। তার সাথে সক্ষতার একাধিক ছবি প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। এই কিলার আক্তার  প্রশাসন এবং বিএনপির নেতাদের নাম ব্যবহার করে এবং তাঁদের পাশে থেকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন, যা প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের ইমেজ ক্ষুণ্ণ করছে।

কিলার আক্তারের অপরাধী জীবনযাত্রা চোখে পড়ার মতো। বিগত আওয়ামী সরকারের শাসনামলে, তৎকালীন সাংসদ   কবরীর সময় কুতুবপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মিরুকে গুলি করার পর তিনি পাগলা থেকে ডেমরা স্টাফ কোয়াটারে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু নিয়মিত যোগাযোগ অক্ষুন্ন রেখে কুতুবপুর জুড়ে গড়ে তোলেন বিশাল মাদক বাজার।

২০২৩ সালের ১৫ আগস্ট কাউন্টার টেরোরিজম নারায়নগঞ্জ জেলা শাখার হাতে গ্রেফতার হন। গ্রেফতারের সময় উদ্ধার হয় কোটি টাকার ২৫০ কেজি গাঁজা, ২ হাজার পিছ ইয়াবা ট্যাবলেট এবং ৪০০ পুরিয়া হেরোইন। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে কিলার আক্তার মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই জামিনে বের হন। এরপর তিনি পুলিশ কর্মকর্তার নির্দেশে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সোর্স হয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে মাদক ব্যবসা ও প্রতিপক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে থাকেন।

সর্বশেষ, চলতি বছরের মার্চ মাসের ৩ তারিখে বাসা থেকে ডেকে এনে পাগলা-নুরবাগস্থ টর্চার সেলে আদর্শ নগরের আব্দুর রাজ্জাকের দুই ছেলে মারধর করে অস্ত্রসহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। সেই সময় ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় কিলার আক্তারও উপস্থিত। একইভাবে, তার প্রতিপক্ষ মিথুনকে গ্রেফতারের সময়ও পুলিশকে ব্যবহার করা হয়েছে, যার সিসি ফুটেজ ইতিমধ্যেই ভাইরাল।

স্থানীয়দের মতে, কিলার আক্তারের মতো একজন শীর্ষ মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ী পুলিশ এবং প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া এত দীর্ঘ সময় অপরাধ চালাতে পারত না। স্থানীয় মানুষ আতঙ্কিত, প্রশাসনের প্রতি বিশ্বাস ক্ষুণ্ণ এবং প্রশ্ন তুলছে—এই শীর্ষ সন্ত্রাসীকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ কীভাবে নিরাপদে চলাফেরা করছে।

সচেতন মহল এবং সাধারণ জনগণ দাবি করছে—কিলার আক্তারের মতো সন্ত্রাসীকে আইনের আওতায় আনা এখন সময়ের সবচেয়ে জরুরি বিষয়। প্রশাসন ও পুলিশের ঘনিষ্ঠতার এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ছাড়া কুতুবপুরসহ আশেপাশের এলাকায় শান্তি ও আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ব যবহ র কর সন ত র স অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

স্তম্ভিত হারমানপ্রীত, আবেগ-রোমাঞ্চ-গর্ব-ভালোবাসায় মিলেমিশে একাকার

২০০৫ ও ২০১৭, ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডে বিশ্বকাপের খুব কাছে গিয়েও শিরোপা জিততে পারেননি। হারমানপ্রীত কৌররা লম্বা সেই অপেক্ষা দূর করলেন দুই হাজার পঁচিশে।

মুম্বাইয়ের নাভিতে প্রায় ষাট হাজার দর্শকের সামনে উচিুঁয়ে ধরলেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। ২০১৭ সালের ফাইনালেও খেলেছিলেন হারমানপ্রীত। রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। এবার আর ভুল করলেন না। অধিনায়ক হয়ে জিতলেন শিরোপা। গড়লেন ইতিহাস। যে ইতিহাস কখনো মুছবে না। কখনো জং ধরবে না।

ঝলমলে হাসিতে হারমানপ্রীত ট্রফি হাতে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করেন। এবার তার আবেগের ধরণ ছিল ভিন্ন, যেন স্বপ্ন পূরণের মাখামাখি। লম্বা সংবাদ সম্মেলন জুড়ে বারবার তার কণ্ঠ ধরে আসে। আবেগ, রোমাঞ্চ, গর্ব, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তবে একটি শব্দের ওপর বারবার ফিরে আসছিলেন তিনি, তা হলো আত্মবিশ্বাস,
‘‘আমি কেবল আমার অনুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। আমি স্তম্ভিত, আমি বুঝতে পারছি না। আসলে, এতে উত্থান-পতন ছিল, কিন্তু দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি প্রথম দিন থেকেই এটা বলে আসছি। আমরা বাম বা ডানে তাকাচ্ছিলাম না। আমরা কেবল আমাদের মূল লক্ষ্যের দিকে তাকিয়েছিলাম।’’ - বলেছেন হারমানপ্রীত।

স্বপ্ন পূরণের রাতে হারমানপ্রীত কাছে পেয়েছিলেন সাবেক তিন ক্রিকেটার মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামী এবং অঞ্জুম চোপড়াকে। প্রত‌্যেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানোর। তাদের অধরা সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন জেমিমা, দীপ্তি, শেফালি, স্মৃতিরা।

শিরোপা উৎসবে যোগ দেন মিতালি, ঝুলন, আঞ্জুমরা। তাদের হাতেও ট্রফি তুলে দেওয়া হয়। প্রাক্তন খেলোয়াড়দের সাথে সেই মুহূর্তটি ভাগ করে নেওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে হারমানপ্রীত বলেন, ‘‘ঝুলন দি আমার সবচেয়ে বড় আইডল ছিলেন। যখন আমি দলে যোগ দিই, তখন তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। আমি যখন খুব কাঁচা ছিলাম এবং ক্রিকেট সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না, তখনও তিনি সবসময় আমাকে সমর্থন করতেন। অঞ্জুম দি-ও তাই। এই দুজন আমার জন্য দারুণ সমর্থন ছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ যে আমি তাদের সাথে এই বিশেষ মুহূর্তটি ভাগ করে নিতে পেরেছি। এটি খুব আবেগপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। আমার মনে হয় আমরা সবাই এটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে, আমরা এই ট্রফি স্পর্শ করতে পেরেছি।’’

তার জন‌্য বিশ্বকাপের পুরো অভিযানটিই ছিল গভীরভাবে আবেগপূর্ণ। রাউন্ড রবিন লিগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ম‌্যাচ হার। চোট, অফ ফর্ম, জড়তা। সব সামলে সেরা হয়েছেন। তাইতো নিজেদের নিয়ে গর্বটাও বেশি হারমানপ্রীতদের, ‘‘আমরা প্রথম বল থেকেই অনুভব করেছিলাম যে আমরা জিততে পারি, কারণ শেষ তিন ম্যাচে আমাদের দল যেভাবে খেলছিল, তাতে আমাদের জন্য অনেক কিছুর পরিবর্তন এসেছিল, বিশেষ করে আমাদের আত্মবিশ্বাস। আমরা অনেকদিন ধরেই ভালো ক্রিকেট খেলছি। আমরা জানতাম দল হিসেবে আমরা কী করতে পারি।”

"গত এক মাস খুব আকর্ষণীয় ছিল। সেই দিনটির (ইংল্যান্ডের কাছে হারের) পর আমাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসে। সেই রাত আমাদের জন্য অনেক কিছু বদলে দিয়েছিল। এটি প্রত্যেকের উপর প্রভাব ফেলেছিল। আমরা বিশ্বকাপের জন্য আরও প্রস্তুত হলাম। আমরা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং মেডিটেশন শুরু করেছিলাম। আমরা বারবার বলছিলাম, যে জন‌্য আমরা এখানে এসেছি এবং এবার আমাদের এটা করতেই হবে।" - যোগ করেন হারমানপ্রীত।

প্রথম যে কোনো কিছুই আনন্দের। রোমাঞ্চের। এই অভিজ্ঞতা শব্দে বয়ান করা যায় না। বয়ান করা সম্ভব হয় না। হারমানপ্রীতও পারেন না নিজের সবটা উজার করে বলতে। তবে এই শিরোপায় তাদের নাম লিখা হবে সেই আত্মবিশ্বাস তারও ছিল, ‘‘আমরা বহু বছর ধরে এটি নিয়ে কথা বলছি—আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি, কিন্তু আমাদের একটি বড় শিরোপা জিততেই হতো।"

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ