নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বাড়িতে ফেরার পথে মানিক মিয়া (৬৫) নামের এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল রোববার রাতে উপজেলার উত্তর বাখরনগরের জঙ্গি শিবপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আজ সোমবার সকালে রায়পুরা থানার পুলিশ আড়িয়াল খাঁ নদের পাড়সংলগ্ন সড়ক থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে।

মানিক মিয়ার বাড়ি রায়পুরা উপজেলার উত্তর বাখরনগর ইউনিয়নের জঙ্গি শিবপুর গ্রামে। কে বা কারা এবং কী কারণে তাঁকে হত্যা করেছে, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। গতকাল রাত দশটা থেকে দেড়টার মধ্যে হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মানিক মিয়া দোকান বন্ধ করে রাতে বাজার থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন। আড়িয়াল খাঁ নদের পাড় ধরে জঙ্গি শিবপুর এলাকায় এলে দুর্বৃত্তরা তাঁর ওপর হামলা চালায়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে হত্যা করে তাঁকে নদের পাড়ের সড়কে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।

মানিক মিয়ার ভাই আরিফ মিয়া বলেন, প্রতি রাতেই ৯টার মধ্যে বাড়িতে ফিরতেন মানিক মিয়া। গতকাল রাতে বাড়িতে না ফিরলে এবং ফোন রিসিভ না করলে খোঁজ নিতে বেরিয়ে রাত দুটোর দিকে নদের পাড়ের সড়কে ভাইয়ের রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখেন।

আজ সোমবার সকালে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। ইতিমধ্যে মানিক মিয়ার বাড়ি ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সুজন চন্দ্র সরকার এবং রায়পুরা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার বায়েজিদ বিন মুনসুর।

সুজন চন্দ্র সরকার বলেন, ওই ব্যক্তির গলার পেছন দিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছে। রাত দশটা থেকে দেড়টার মধ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। ঘটনাস্থল থেকে একটি মুঠোফোন, টর্চলাইট ও কিছু টাকা উদ্ধার করা হলেও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র পাওয়া যায়নি। হত্যার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত চলছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নদ র প ড়

এছাড়াও পড়ুন:

স্তম্ভিত হারমানপ্রীত, আবেগ-রোমাঞ্চ-গর্ব-ভালোবাসায় মিলেমিশে একাকার

২০০৫ ও ২০১৭, ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডে বিশ্বকাপের খুব কাছে গিয়েও শিরোপা জিততে পারেননি। হারমানপ্রীত কৌররা লম্বা সেই অপেক্ষা দূর করলেন দুই হাজার পঁচিশে।

মুম্বাইয়ের নাভিতে প্রায় ষাট হাজার দর্শকের সামনে উচিুঁয়ে ধরলেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। ২০১৭ সালের ফাইনালেও খেলেছিলেন হারমানপ্রীত। রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। এবার আর ভুল করলেন না। অধিনায়ক হয়ে জিতলেন শিরোপা। গড়লেন ইতিহাস। যে ইতিহাস কখনো মুছবে না। কখনো জং ধরবে না।

ঝলমলে হাসিতে হারমানপ্রীত ট্রফি হাতে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করেন। এবার তার আবেগের ধরণ ছিল ভিন্ন, যেন স্বপ্ন পূরণের মাখামাখি। লম্বা সংবাদ সম্মেলন জুড়ে বারবার তার কণ্ঠ ধরে আসে। আবেগ, রোমাঞ্চ, গর্ব, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তবে একটি শব্দের ওপর বারবার ফিরে আসছিলেন তিনি, তা হলো আত্মবিশ্বাস,
‘‘আমি কেবল আমার অনুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। আমি স্তম্ভিত, আমি বুঝতে পারছি না। আসলে, এতে উত্থান-পতন ছিল, কিন্তু দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি প্রথম দিন থেকেই এটা বলে আসছি। আমরা বাম বা ডানে তাকাচ্ছিলাম না। আমরা কেবল আমাদের মূল লক্ষ্যের দিকে তাকিয়েছিলাম।’’ - বলেছেন হারমানপ্রীত।

স্বপ্ন পূরণের রাতে হারমানপ্রীত কাছে পেয়েছিলেন সাবেক তিন ক্রিকেটার মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামী এবং অঞ্জুম চোপড়াকে। প্রত‌্যেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানোর। তাদের অধরা সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন জেমিমা, দীপ্তি, শেফালি, স্মৃতিরা।

শিরোপা উৎসবে যোগ দেন মিতালি, ঝুলন, আঞ্জুমরা। তাদের হাতেও ট্রফি তুলে দেওয়া হয়। প্রাক্তন খেলোয়াড়দের সাথে সেই মুহূর্তটি ভাগ করে নেওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে হারমানপ্রীত বলেন, ‘‘ঝুলন দি আমার সবচেয়ে বড় আইডল ছিলেন। যখন আমি দলে যোগ দিই, তখন তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। আমি যখন খুব কাঁচা ছিলাম এবং ক্রিকেট সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না, তখনও তিনি সবসময় আমাকে সমর্থন করতেন। অঞ্জুম দি-ও তাই। এই দুজন আমার জন্য দারুণ সমর্থন ছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ যে আমি তাদের সাথে এই বিশেষ মুহূর্তটি ভাগ করে নিতে পেরেছি। এটি খুব আবেগপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। আমার মনে হয় আমরা সবাই এটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে, আমরা এই ট্রফি স্পর্শ করতে পেরেছি।’’

তার জন‌্য বিশ্বকাপের পুরো অভিযানটিই ছিল গভীরভাবে আবেগপূর্ণ। রাউন্ড রবিন লিগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ম‌্যাচ হার। চোট, অফ ফর্ম, জড়তা। সব সামলে সেরা হয়েছেন। তাইতো নিজেদের নিয়ে গর্বটাও বেশি হারমানপ্রীতদের, ‘‘আমরা প্রথম বল থেকেই অনুভব করেছিলাম যে আমরা জিততে পারি, কারণ শেষ তিন ম্যাচে আমাদের দল যেভাবে খেলছিল, তাতে আমাদের জন্য অনেক কিছুর পরিবর্তন এসেছিল, বিশেষ করে আমাদের আত্মবিশ্বাস। আমরা অনেকদিন ধরেই ভালো ক্রিকেট খেলছি। আমরা জানতাম দল হিসেবে আমরা কী করতে পারি।”

"গত এক মাস খুব আকর্ষণীয় ছিল। সেই দিনটির (ইংল্যান্ডের কাছে হারের) পর আমাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসে। সেই রাত আমাদের জন্য অনেক কিছু বদলে দিয়েছিল। এটি প্রত্যেকের উপর প্রভাব ফেলেছিল। আমরা বিশ্বকাপের জন্য আরও প্রস্তুত হলাম। আমরা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং মেডিটেশন শুরু করেছিলাম। আমরা বারবার বলছিলাম, যে জন‌্য আমরা এখানে এসেছি এবং এবার আমাদের এটা করতেই হবে।" - যোগ করেন হারমানপ্রীত।

প্রথম যে কোনো কিছুই আনন্দের। রোমাঞ্চের। এই অভিজ্ঞতা শব্দে বয়ান করা যায় না। বয়ান করা সম্ভব হয় না। হারমানপ্রীতও পারেন না নিজের সবটা উজার করে বলতে। তবে এই শিরোপায় তাদের নাম লিখা হবে সেই আত্মবিশ্বাস তারও ছিল, ‘‘আমরা বহু বছর ধরে এটি নিয়ে কথা বলছি—আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি, কিন্তু আমাদের একটি বড় শিরোপা জিততেই হতো।"

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ