জিপিএইচ ইস্পাত ও বুয়েটের ‘রাইজ’ চুক্তি সই, কাজ করবে মেধাস্বত্ব নিয়ে
Published: 15th, September 2025 GMT
বুয়েটের রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (রাইজ) এবং জিপিএইচ ইস্পাতের মধ্যে একটি কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আজ সোমবার রাইজের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই চুক্তি সই হয়েছে।
চুক্তির আওতায় জিপিএইচ বিভিন্ন সেমিনার ও কর্মশালা আয়োজনের মাধ্যমে রাইজকে সহায়তা করবে। যেখানে মেধাস্বত্ব গুরুত্ব, সুবিধা, প্রক্রিয়া ও সংশ্লিষ্ট আইন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো হবে, যা ক্রমান্বয়ে সারা দেশে বিস্তার লাভ করবে। এই উদ্যোগটি দেশের জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি গঠনে সহায়ক হওয়ার পাশাপাশি ‘ব্রেইন ড্রেইন’ রোধে ভূমিকা রাখবে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, শিল্প খাত ও সমাজের অন্যান্য অংশের উদ্ভাবকেরা তাঁদের নতুন ধারণা সুরক্ষিত করে প্রোটোটাইপ, উন্নয়ন ও বাণিজ্যিকীকরণের সুযোগ পাবেন; যা অতিরিক্ত আয় ও সামাজিক স্বীকৃতির পথ খুলে দেবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বুয়েটের উপাচার্য আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন জিপিএইচ গ্রুপের চেয়ারম্যান ও জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং বুয়েটের সহ–উপাচার্য আবদুল হাসিব চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাইজের পরিচালক মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম।
এ সময় উপাচার্য আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান বলেন, ‘জিপিএইচ ইস্পাতের এ ধরনের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। কারণ, এতে মেধাস্বত্বকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের উদ্ভাবন ও গবেষণার মেধাস্বত্ব নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব। অতীতে গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে অনেক মেধাস্বত্ব হারাতে হয়েছে, তবে এ উদ্যোগ নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে বলে আমি আশাবাদী।’
মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ উদ্যোগ মূলত গবেষণার ফলকে পেটেন্টের মাধ্যমে সংরক্ষণ ও কাজে লাগানোর প্রচেষ্টা। এর ফলে মেধা পাচার রোধ করে দেশের প্রতিভাবান শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জ্ঞান ও দক্ষতাকে জাতীয় উন্নয়নে কাজে লাগানো হবে।
আবদুল হাসিব চৌধুরী বলেন, জিপিএইচ ইস্পাতের কোয়ান্টাম আর্ক ফার্নেস প্রযুক্তি এনার্জি কনজাম্পশনে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে, যা শিল্প খাতের জন্য একটি অগ্রগতি। শুধু শিল্প নয়, কৃষি, শিক্ষা ও এনার্জি খাতে আরও বেশি বিনিয়োগ ও গবেষণা প্রয়োজন আছে বলে মনে করি। এতে দেশ টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারবে।
মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম বলেন, এটি কেবল একটি সমঝোতা স্মারক নয়, বরং ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির দিকে এগিয়ে নেওয়ার একটি অঙ্গীকার। রাইজের ভিশন হলো গবেষণা ও উদ্ভাবনকে শিল্প ও সমাজের প্রয়োজনের সঙ্গে যুক্ত করে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপান্তরিত করা।
জিপিএইচ ইস্পাত বিশ্বাস করে, উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা মানেই ভবিষ্যতের জন্য একটি উন্নত বাংলাদেশ গঠন। এ লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, ভারী শিল্প, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ও ব্যবসায়িক ক্লাস্টার, বিশেষ করে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, আইসিটি, কৃষি ও স্বাস্থ্যসেবা খাতের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করার পরিকল্পনা করছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
স্তম্ভিত হারমানপ্রীত, আবেগ-রোমাঞ্চ-গর্ব-ভালোবাসায় মিলেমিশে একাকার
২০০৫ ও ২০১৭, ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডে বিশ্বকাপের খুব কাছে গিয়েও শিরোপা জিততে পারেননি। হারমানপ্রীত কৌররা লম্বা সেই অপেক্ষা দূর করলেন দুই হাজার পঁচিশে।
মুম্বাইয়ের নাভিতে প্রায় ষাট হাজার দর্শকের সামনে উচিুঁয়ে ধরলেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। ২০১৭ সালের ফাইনালেও খেলেছিলেন হারমানপ্রীত। রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। এবার আর ভুল করলেন না। অধিনায়ক হয়ে জিতলেন শিরোপা। গড়লেন ইতিহাস। যে ইতিহাস কখনো মুছবে না। কখনো জং ধরবে না।
ঝলমলে হাসিতে হারমানপ্রীত ট্রফি হাতে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করেন। এবার তার আবেগের ধরণ ছিল ভিন্ন, যেন স্বপ্ন পূরণের মাখামাখি। লম্বা সংবাদ সম্মেলন জুড়ে বারবার তার কণ্ঠ ধরে আসে। আবেগ, রোমাঞ্চ, গর্ব, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তবে একটি শব্দের ওপর বারবার ফিরে আসছিলেন তিনি, তা হলো আত্মবিশ্বাস,
‘‘আমি কেবল আমার অনুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। আমি স্তম্ভিত, আমি বুঝতে পারছি না। আসলে, এতে উত্থান-পতন ছিল, কিন্তু দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি প্রথম দিন থেকেই এটা বলে আসছি। আমরা বাম বা ডানে তাকাচ্ছিলাম না। আমরা কেবল আমাদের মূল লক্ষ্যের দিকে তাকিয়েছিলাম।’’ - বলেছেন হারমানপ্রীত।
স্বপ্ন পূরণের রাতে হারমানপ্রীত কাছে পেয়েছিলেন সাবেক তিন ক্রিকেটার মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামী এবং অঞ্জুম চোপড়াকে। প্রত্যেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানোর। তাদের অধরা সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন জেমিমা, দীপ্তি, শেফালি, স্মৃতিরা।
শিরোপা উৎসবে যোগ দেন মিতালি, ঝুলন, আঞ্জুমরা। তাদের হাতেও ট্রফি তুলে দেওয়া হয়। প্রাক্তন খেলোয়াড়দের সাথে সেই মুহূর্তটি ভাগ করে নেওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে হারমানপ্রীত বলেন, ‘‘ঝুলন দি আমার সবচেয়ে বড় আইডল ছিলেন। যখন আমি দলে যোগ দিই, তখন তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। আমি যখন খুব কাঁচা ছিলাম এবং ক্রিকেট সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না, তখনও তিনি সবসময় আমাকে সমর্থন করতেন। অঞ্জুম দি-ও তাই। এই দুজন আমার জন্য দারুণ সমর্থন ছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ যে আমি তাদের সাথে এই বিশেষ মুহূর্তটি ভাগ করে নিতে পেরেছি। এটি খুব আবেগপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। আমার মনে হয় আমরা সবাই এটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে, আমরা এই ট্রফি স্পর্শ করতে পেরেছি।’’
তার জন্য বিশ্বকাপের পুরো অভিযানটিই ছিল গভীরভাবে আবেগপূর্ণ। রাউন্ড রবিন লিগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ হার। চোট, অফ ফর্ম, জড়তা। সব সামলে সেরা হয়েছেন। তাইতো নিজেদের নিয়ে গর্বটাও বেশি হারমানপ্রীতদের, ‘‘আমরা প্রথম বল থেকেই অনুভব করেছিলাম যে আমরা জিততে পারি, কারণ শেষ তিন ম্যাচে আমাদের দল যেভাবে খেলছিল, তাতে আমাদের জন্য অনেক কিছুর পরিবর্তন এসেছিল, বিশেষ করে আমাদের আত্মবিশ্বাস। আমরা অনেকদিন ধরেই ভালো ক্রিকেট খেলছি। আমরা জানতাম দল হিসেবে আমরা কী করতে পারি।”
"গত এক মাস খুব আকর্ষণীয় ছিল। সেই দিনটির (ইংল্যান্ডের কাছে হারের) পর আমাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসে। সেই রাত আমাদের জন্য অনেক কিছু বদলে দিয়েছিল। এটি প্রত্যেকের উপর প্রভাব ফেলেছিল। আমরা বিশ্বকাপের জন্য আরও প্রস্তুত হলাম। আমরা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং মেডিটেশন শুরু করেছিলাম। আমরা বারবার বলছিলাম, যে জন্য আমরা এখানে এসেছি এবং এবার আমাদের এটা করতেই হবে।" - যোগ করেন হারমানপ্রীত।
প্রথম যে কোনো কিছুই আনন্দের। রোমাঞ্চের। এই অভিজ্ঞতা শব্দে বয়ান করা যায় না। বয়ান করা সম্ভব হয় না। হারমানপ্রীতও পারেন না নিজের সবটা উজার করে বলতে। তবে এই শিরোপায় তাদের নাম লিখা হবে সেই আত্মবিশ্বাস তারও ছিল, ‘‘আমরা বহু বছর ধরে এটি নিয়ে কথা বলছি—আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি, কিন্তু আমাদের একটি বড় শিরোপা জিততেই হতো।"
ঢাকা/ইয়াসিন