পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বুধবার ‘কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি’ (এসএমডিএ) স্বাক্ষর করেছেন। রিয়াদে শাহবাজ শরিফকে সৌদি এফ-১৫ যুদ্ধবিমানের অভিবাদন, লালগালিচা সংবর্ধনা এবং পূর্ণ রাজকীয় প্রটোকলের মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয়েছিল। চুক্তি স্বাক্ষরের সময়ও তাঁকে বেশ হাস্যোজ্জ্বল দেখা গিয়েছিল।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, প্রায় আট দশক ধরে চলে আসা পুরোনো দুই মিত্রদেশের জন্য এই চুক্তি স্বাক্ষর একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত।

রাজধানী রিয়াদের আল-ইয়ামামাহ প্রাসাদের রয়্যাল কোর্টে এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সৌদি আরবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সৌদি আরব ইসলামের দুটি পবিত্রতম স্থানের তত্ত্বাবধায়ক। অনুষ্ঠানে মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশ পাকিস্তানের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিরক্ষা চুক্তিটি এমন এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে স্বাক্ষরিত হয়েছে, যখন এ অঞ্চলের রাজনীতি টালমাটাল। দুই বছর ধরে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন চলছে। প্রতিবেশী কয়েকটি দেশে হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত সপ্তাহে সৌদি আরবের সীমান্তবর্তী দেশ কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনার কয়েক দিন পরই এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো।

পাশাপাশি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেও তীব্র উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি হয়েছে। গত মে মাসে দুই দেশের মধ্যে সংক্ষিপ্ত তবে তীব্র সংঘাত হয়েছিল। চার দিনের ওই সংঘাতে একে অপরের সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায়। এ ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশকে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সৌদি আরবের সঙ্গে এই চুক্তি দুই দেশের নিরাপত্তা জোরদার ও আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় উভয় দেশের ‘যৌথ অঙ্গীকারের’ প্রতিফলন। পাশাপাশি চুক্তিতে ‘যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যৌথ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করার’ প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, চুক্তিতে বলা হয়েছে, যেকোনো একটি দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন উভয় দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন বলে গণ্য হবে।

ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক স্টিমসন সেন্টারের জ্যেষ্ঠ ফেলো আসফান্দিয়ার মীর এ চুক্তিকে উভয় দেশের জন্য একটি ‘মাইলফলক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

মীর আল–জাজিরাকে বলেন, পাকিস্তান স্নায়ুযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি বজায় রেখেছিল। তবে সত্তরের দশকেই সেসব ভেঙে পড়েছিল। চীনের সঙ্গে ব্যাপক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তানের কোনো আনুষ্ঠানিক পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি নেই।

পাশাপাশি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেও তীব্র উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি হয়েছে। গত মে মাসে দুই দেশের মধ্যে সংক্ষিপ্ত তবে তীব্র সংঘাত হয়েছিল। চার দিনের ওই সংঘাতে একে অপরের সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায়। এ ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশকে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল।

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক নিরাপত্তা–গবেষক মুহাম্মদ ফয়সাল বলেছেন, এই চুক্তি পাকিস্তানের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কাতারের মতো উপসাগরীয় মিত্রদের সঙ্গে একই ধরনের দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সহযোগিতার একটি মডেল হতে পারে।

ফয়সাল বলেন, চুক্তিটি ইতিমধ্যে চলমান বহুমুখী প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে তাৎক্ষণিকভাবে আরও শক্তিশালী ও আনুষ্ঠানিক রূপ দেবে। যৌথ প্রশিক্ষণ, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন এবং সৌদি আরবে পাকিস্তানি সেনাসদস্য বৃদ্ধির মতো নতুন নতুন ক্ষেত্র খতিয়ে দেখা হবে।

ঐতিহাসিক বন্ধন ও সামরিক সহযোগিতা

১৯৪৭ সালের আগস্টে পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের পর যেসব দেশ তাদের প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল, সৌদি আরব তাদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৫১ সালে দুই দেশ একটি ‘বন্ধুত্ব চুক্তি’ (ট্রিটি অব ফ্রেন্ডশিপ) স্বাক্ষর করে। এই চুক্তি দশকের পর দশক দুই দেশের কৌশলগত, রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ভিত্তি স্থাপন করেছিল।

বিগত বছরগুলোতে পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী বেশ কয়েকবার সৌদি আরবে মোতায়েন করা হয়েছে। তারা উপসাগরীয় অঞ্চল ও পাকিস্তানে সৌদি সেনাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬৭ সাল থেকে পাকিস্তান আট হাজারের বেশি সৌদি সেনাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ১৯৮২ সালে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি এই সহযোগিতাকে আরও সুদৃঢ় করেছে। ওই চুক্তিতে সৌদি আরবে ‘পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ এবং সামরিক প্রশিক্ষণের’ বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

তবে সর্বশেষ এই চুক্তি এমন সময়ে হলো, যখন মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনশীল অবস্থার মধ্যে পড়ে গেছে। গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা এবং প্রতিবেশী দেশগুলোতেও ইহুদি রাষ্ট্রটির হামলার কারণে উপসাগরীয় দেশগুলো অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে পড়েছে। ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়া সত্ত্বেও এসব দেশের বেশির ভাগই এখনো যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।

হামাস নেতাদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে ৯ সেপ্টেম্বর কাতারের দোহায় হামলা চালায় ইসরায়েল। সেখান থেকে কাতারে অবস্থিত ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের (সেন্টকম) সদর দপ্তর মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, চুক্তিতে বলা হয়েছে, যেকোনো একটি দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন উভয় দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন বলে গণ্য হবে।

২০২৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ৪০ থেকে ৫০ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। এসব মার্কিন সেনা রিয়াদের বাইরে প্রিন্স সুলতান বিমানঘাঁটিসহ অন্তত ১৯টি বড় ও ছোট–বড় ঘাঁটিতে অবস্থান করছে।

অবশ্য সৌদি কর্মকর্তারা বলছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে এই প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে অন্তত এক বছর ধরে আলাপ–আলোচনা ও কাজ চলছিল। ওয়াশিংটন ডিসির স্বাধীন নিরাপত্তা বিশ্লেষক সাহার খান বলেন, এই চুক্তির ভাষা যুক্তরাষ্ট্রে প্রশ্ন তুলবে।

২০২১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত জো বাইডেনের প্রশাসন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির অভিযোগে পাকিস্তানি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর সাতবার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে পাকিস্তানের তৈরি ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা এবং সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা পর্যন্ত পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে সক্ষম কি না, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

সাহার খান আল–জাজিরাকে বলেন, ওয়াশিংটনে পাকিস্তানের বিশ্বাসযোগ্যতার সংকট আগে থেকেই ছিল এবং এই চুক্তির ফলে তা কমবে না।

এই বিশ্লেষক আরও বলেন, বিষয়টি পাকিস্তানের স্পষ্ট করা উচিত যে তাদের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ভারতকেন্দ্রিক। সৌদি আরবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শক্তিশালী থাকলেও ‘পাকিস্তান সৌদি আরবের হয়ে যুদ্ধে জড়াবে না, বরং শুধু প্রাসঙ্গিক সহায়তা দেবে’।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬৭ সাল থেকে পাকিস্তান আট হাজারের বেশি সৌদি সেনাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ১৯৮২ সালে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি এই সহযোগিতাকে আরও সুদৃঢ় করেছে। ওই চুক্তিতে সৌদি আরবে ‘পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ এবং সামরিক প্রশিক্ষণের’ বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

উত্তেজনাপূর্ণ অঞ্চল

এ বছরের জুনে ইসরায়েল ইরানে হামলা চালানোর পর দুই দেশের মধ্যে ১২ দিন সংঘাত চলে। ওই হামলায় ইসরায়েল ইরানে পারমাণবিক স্থাপনা এবং ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক নেতাদের নিশানা করেছিল। মার্কিন বোমারু বিমান এই হামলায় সহায়তা করেছিল। তারা ইরানের অন্যতম প্রধান পারমাণবিক স্থাপনা ফর্দোতে বাংকারবিধ্বংসী বিশাল বোমা ফেলেছিল।

তিন মাস পর ইসরায়েল দোহার একটি অভিজাত এলাকায় একটি ভবনে হামলা চালিয়েছে। সেখানে দূতাবাস, বিপণিবিতান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এতে অন্তত পাঁচজন হামাস সদস্য এবং একজন কাতারি নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিহত হন।

দোহায় এ হামলার পর আরব ও ইসলামিক দেশগুলোর একটি জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদভুক্ত (জিসিসি) দেশ—বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত বৈঠকে যোগ দেয়। তারা একটি যৌথ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সক্রিয় করবে বলেও ঘোষণা দেয়।

ফয়সাল বলেছেন, পাকিস্তান-সৌদি চুক্তিকে এসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে দেখা উচিত।

এই বিশ্লেষক বলেন, এসব ঘটনা উপসাগরীয় দেশগুলোর নিরাপত্তা উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাব্যবস্থার ওপর তাদের আস্থা কমিয়ে দিয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলো যখন তাদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে চাইছে, তখন পাকিস্তান, মিসর ও তুরস্কের মতো দেশগুলো স্বাভাবিকভাবেই তাদের অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।

মীর বলেন, পাকিস্তান যখন ভারতীয় সামরিক পদক্ষেপের হুমকির সম্মুখীন, তখনই পাকিস্তান সৌদি আরবের কাছ থেকে একটি শক্তিশালী সম্মিলিত প্রতিরক্ষা চুক্তি অর্জন করেছে। সুতরাং এটি ভবিষ্যৎ ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের সমীকরণে অনেক জটিলতা যোগ করবে।

তবে সাহার খান বলেন, যদিও চুক্তির সময়টি কাতারে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার সঙ্গে সংযোগের কিছুটা ইঙ্গিত দেয়, তবে এ ধরনের চুক্তি আলোচনা করতে মাস, এমনকি বছরও লেগে যায়।

তবু স্টিমসন সেন্টারের মীর উল্লেখ করেছেন, এই চুক্তির মাধ্যমে এটিও পরীক্ষা হয়ে যাবে, পাকিস্তান ও সৌদি আরব কীভাবে একে অপরের উত্তেজনার সঙ্গে নিজেদের সামঞ্জস্য করবে।

মীর বলেন, পাকিস্তান এখন সৌদি আরবের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী, বিশেষ করে প্রতিবেশী ইরানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। অন্যদিকে সৌদি আরব পাকিস্তানের বিবাদ, বিশেষ করে ভারত এবং সম্ভাব্যভাবে তালেবানশাসিত আফগানিস্তানের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করবে, সেটাও দেখার বিষয়।

প্রশ্ন ভারতকে ঘিরে

এই প্রতিরক্ষা চুক্তির ফলে পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তানের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের ওপর নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক ইতিমধ্যে ঐতিহাসিক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। বিশেষ করে গত এপ্রিলে পেহেলগাম হামলার পর দুই দেশের সম্পর্কের আরও অবনতি হয়। ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় ২৬ বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এ জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করলেও পাকিস্তান তা অস্বীকার করে।

কয়েক দিন পর গত মে মাসে ভারত পাকিস্তানে হামলা করে বসলে দুই দেশের মধ্যে চার দিনের সংক্ষিপ্ত সংঘাত হয়। একে অপরের সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। প্রায় তিন দশকের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে এটিই ছিল সবচেয়ে গুরুতর উত্তেজনাপূর্ণ সময়। পরে ১০ মে যুদ্ধবিরতি হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতার দাবি করেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ভারত সরকার এই চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে অবগত।

জয়সোয়াল বলেন, ‘আমরা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার পাশাপাশি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ওপর এ ঘটনার প্রভাব খতিয়ে দেখব। সরকার ভারতের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে এবং সব ক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

তবে সিডনিভিত্তিক বিশ্লেষক ফয়সালের মতে, এই চুক্তি পাকিস্তান-সৌদি আরব সম্পর্কে নতুন ভারসাম্য আনতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই সম্পর্ক মূলত কেবল পাকিস্তানের বিপর্যস্ত অর্থনীতির জন্য সৌদি আর্থিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল ছিল। রিয়াদের সঙ্গে ভারতের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।

ফয়সাল বলেন, পাকিস্তানের অবস্থান আগের তুলনায় উন্নতি হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিষয়ে পাকিস্তান-সৌদি সহযোগিতা বৃদ্ধি করার নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে।

গত দশকে পাকিস্তানের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ায় এবং সৌদি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারত রিয়াদের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক ক্রমাগত গভীর করছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই এপ্রিলে গত এক দশকে তৃতীয়বারের মতো সৌদি আরব সফর করেন।

মীর বলেন, নতুন চুক্তির ফলে দেখা যাচ্ছে, সৌদি আরব এখনো পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ককে মূল্য দেয়। ভারত পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করলেও ইসলামাবাদ তার প্রতিবেশীদের মধ্যে একা নয়।

মীর আরও বলেন, পাকিস্তান যখন ভারতীয় সামরিক পদক্ষেপের হুমকির সম্মুখীন, তখনই পাকিস্তান সৌদি আরবের কাছ থেকে একটি শক্তিশালী সম্মিলিত প্রতিরক্ষা চুক্তি অর্জন করেছে। সুতরাং এটি ভবিষ্যৎ ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের সমীকরণে অনেক জটিলতা যোগ করবে।

সৌদির ওপর পাকিস্তানের পারমাণবিক ছাতা

সৌদি আরব জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে দীর্ঘদিন ধরে বেসামরিক ব্যবহারের জন্য পারমাণবিক প্রযুক্তি অর্জনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

গত জানুয়ারিতে সৌদি জ্বালানিমন্ত্রী প্রিন্স আবদুল আজিজ বিন সালমান আল সৌদ পুনর্ব্যক্ত করেন, রিয়াদ পারমাণবিক কর্মসূচির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ ও বিক্রি করতে প্রস্তুত।

তবে সৌদি আরব বারবার স্পষ্ট করেছে, তারা নিজেরা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় না।

মার্কিন সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড তাঁর ২০২৪ সালের বই ‘ওয়ার’-এ একটি কথোপকথনের কথা উল্লেখ করে লিখেছেন, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান মার্কিন সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামকে বলেছিলেন, রিয়াদ শুধু জ্বালানি শক্তির জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার পরিকল্পনা করছে।

উডওয়ার্ড লিখেছেন, যখন গ্রাহাম সৌদি আরবের বোমা তৈরির সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন, তখন সালমান উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আমার বোমা বানানোর জন্য ইউরেনিয়ামের প্রয়োজন নেই। আমি শুধু পাকিস্তান থেকে একটি কিনে নেব।’

এসব সত্ত্বেও বিশ্লেষক খান বলেন, পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির পরিধি সম্পর্কে কিছু বিষয় অস্পষ্ট।

খান বলেন, এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ, পাকিস্তান আগে প্রতিরক্ষা চুক্তি করলেও সেগুলোর কোনোটিই পারমাণবিক নিশ্চয়তা বা ‘পারমাণবিক ছাতা’ তৈরির দিকে এগোয়নি। এ চুক্তিতেও পারমাণবিক ছাতা বা কোনো বর্ধিত প্রতিরোধ ব্যবস্থার ইঙ্গিত নেই।

মীর সতর্ক করে বলেন, শক্তিশালী জোটেও ঝুঁকি থাকে। এই চুক্তি একটি নতুন জোটের রাজনীতি তৈরি করবে, যেখানে চুক্তির আওতা, প্রতিরোধ ব্যবস্থা, সম্পদের প্রতিশ্রুতি এবং অপারেশনাল বিবরণ নিয়ে আলোচনা হবে।

মীর আরও যোগ করেন, এর ফলে এই চুক্তির রাজনৈতিক তাৎপর্য কমে যায় না। এই চুক্তি উভয় দেশের জন্য বিশাল ঘটনা।

ফয়সালও একমত, চুক্তিতে যদিও একটি দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসনকে উভয়ের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হিসেবে গণ্য করার কথা বলা হয়েছে, এটি আপাতত একটি জোট বা যৌথ প্রতিরক্ষা প্রতিশ্রুতির চেয়ে বেশি কিছু, এটি একটি রাজনৈতিক বার্তা।

ফয়সাল বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে রাজনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সমন্বয় আরও গভীর হবে এবং উভয় দেশের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র এই চ ক ত র কর মকর ত খ ন বল ন র জন ত ক ত র ওপর র ওপর ন সহয গ ত সশস ত র ব যবস থ ন র পর স ল বল কর ছ ল কর ছ ন ল বল ন প রক শ র জন য র র জন অপর র আরব র সরক র সদস য ইসর য র একট অবস থ এ ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি ও জামায়াতের কাছে কেন আরপিওর ২১ ধারা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল

নির্বাচনের আগেই সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে অনেকটাই মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। এ নিয়ে গত ছয় দিনে দল দুটির পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মধ্যেই নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে নির্বাচন-সংক্রান্ত আইন আরপিওর ২১ ধারার সংশোধনীর পরিবর্তন। জামায়াত মনে করে, সরকার বিএনপির চাপে নতি স্বীকার করে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত খসড়া সংশোধনী বাতিল করেছে। আর বিএনপি মনে করে, জামায়াত নির্বাচন পেছাতে চায়।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী সরকার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশের খসড়ায় ২১ ধারার পরিবর্তন করে; যা গত ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অনুমোদিত হয়। আরপিওর ২১ ধারা সংশোধনীর ওই পরিবর্তন বহাল থাকলে কোনো দল জোটগত নির্বাচন করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে বাধ্য ছিল। ৩০ অক্টোবর সেটি আবার পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত হয়। তাতে জোটগত নির্বাচন করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা থাকছে না। এতে জামায়াত বেশ ক্ষুব্ধ হয়।

যদিও সরকারের দিক থেকে এই নতুন সিদ্ধান্তের তথ্য এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে সরকার-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছে, এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সেটি শুধু বিএনপির দাবির কারণে নয়, ছোট বিভিন্ন দলেরও দাবি ছিল।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার নিশ্চিত করেছে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবেই। আমরা সরকারের কথায় বিশ্বাস করি। সুতরাং এখন থেকে আমাদের সব কার্যক্রম নির্বাচনকেন্দ্রিক। এখন সরকার তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কীভাবে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করবে, সেটি তাদের বিষয়। তবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারকে যতটুকু সহযোগিতা দেওয়া দরকার, সেটা বিএনপি করবে।’

বাংলাদেশের শত্রুরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে। যতই সময় যাচ্ছে...একটা পুরোপুরি নৈরাজ্য সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চলছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মহাসচিব, বিএনপি

এ দিকে আজ সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির নিয়মিত সভা হবে। তবে অন্য দিন রাতে সভা হলেও আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় সভা বসবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আজকের সভায় আলোচ্যসূচিতে প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করার বিষয় থাকবে। তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন–সংক্রান্ত বিষয়টিও আলোচনায় আসতে পারে।

হঠাৎ কেন সামনে এল আরপিওর সংশোধনী

আরপিওর ২১ ধারার সংশোধন বিএনপি ও জামায়াতের কাছে হঠাৎ করে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল, সে প্রশ্ন সামনে এসেছে। গত ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের সভায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশ, ২০২৫–এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন হয়। আরপিওর ২১ ধারার এই সংশোধনীর ফলে জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হতো। এতে জামায়াত খুশি হলেও বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো অস্বস্তিতে পড়েছিল। এ কারণে এর পরিবর্তন চেয়ে বিএনপি নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও আইন উপদেষ্টাকে পৃথক চিঠি দেয়। এর পরেই সরকার আরপিওর ২১ ধারার পরিবর্তন না করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ সিদ্ধান্তের ফলে জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, নতুন সিদ্ধান্তে বিএনপি উপকৃত হবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হতো, এমন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ভোটের হিসাব-নিকাশে ক্ষতিগ্রস্ত হতো বিএনপি। অন্য দিকে এতে লাভবান হয় জামায়াতসহ তার মিত্র দলগুলো। এর হিসাবটা হচ্ছে, ছোট দলগুলো বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে আছে একসঙ্গে নির্বাচন করার জন্য এবং সংসদ সদস্য পদে জোটের প্রার্থী হওয়ার আশায়। সে ক্ষেত্রে বিএনপির ‘ধানের শীষ’ প্রতীককে ছোট দলগুলোর নেতারা জয়ের ক্ষেত্রে ‘ভরসা’ হিসেবে দেখেন।

...যে কারণে ফ্যাসিজমের যে রাস্তা, আমরা সংস্কারে বন্ধ করতে চেয়েছিলাম, এগুলো ওনারা বন্ধ করতে দিচ্ছে না। সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের নায়েবে আমির, জামায়াত

এখন জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হলে ছোট দলগুলো বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন করতে খুব আগ্রহী হবে না। এর কারণ দুটি। প্রথমত, বিএনপির সমর্থন পেলেও ব্যক্তি জনপ্রিয়তা না থাকলে ছোট দলগুলোর নেতাদের নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করে জেতা কঠিন হয়ে পড়বে। অন্য দিকে জোটের প্রার্থী হিসেবে বিএনপি আসন ছাড় দিলেও দলের কেউ বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামলে ভোটে জেতা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। সে ক্ষেত্রে বিদ্রোহীকে সরাতে বিএনপির নেতৃত্ব কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, সে প্রশ্নও আছে।

এ ছাড়া এখন পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচিতে যে আটটি দল আছে, তারা আরপিওর ওই ধারা পরিবর্তনের পক্ষে। অর্থাৎ দলগুলো জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে—এর পক্ষে। এর জন্য দলগুলো যৌথ কর্মসূচিও করছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, জামায়াত যে নির্বাচনী জোট বা নির্বাচনী সমঝোতা করতে চাইছে, সে দলগুলো পরস্পর আস্থাশীল। তাদের কাছে ‘দাঁড়িপাল্লা’ বা ‘হাতপাখা’ বা ‘রিকশা’ প্রতীক কোনো বিষয় নয়। সমঝোতা হলে সবাই ওই প্রতীকের পক্ষে এক হয়ে কাজ করবে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা নেই। অন্যদিকে বিএনপির জোটের ক্ষেত্রে ভাবনা হচ্ছে, ধানের শীর্ষ প্রতীক না দিলে ভোটের আগেই আসন হারানোর আশঙ্কা থাকবে।

গতকাল সকালে এক বিবৃতিতে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম পরওয়ার দাবি করেন, একটি দলের সঙ্গে গোপন সমঝোতা করে সরকার আরপিওর সর্বশেষ সংশোধনী বাতিল করেছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) বাতিল করা হলে সেটি ন্যক্কারজনক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হবে।

আরপিওর ২১ ধারার এই সংশোধনীর ফলে জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হতো। এতে জামায়াত খুশি হলেও বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো অস্বস্তিতে পড়েছিল। এ কারণে এর পরিবর্তন চেয়ে বিএনপি নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও আইন উপদেষ্টাকে পৃথক চিঠি দেয়।

ঐকমত্য কমিশন সুপারিশের পর থেকেই উত্তাপ

২৮ অক্টোবর জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশ জমা দেয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশন প্রস্তাব দিয়েছে—সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার বাস্তবায়নে বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাস হলে আগামী সংসদ ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। এই সময়ের মধ্যে সংবিধান সংশোধন না করলে আপনা–আপনি সেটা সংবিধানে যুক্ত হবে। এ ছাড়া গণভোট কবে, জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একই দিন নাকি তার আগে—সেটা ঠিক করবে সরকার।

চরম অনৈক্যের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এটি রাষ্ট্রের জন্য সুখকর নয়। যে রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যুক্ত ছিল, তারা কীভাবে হারানো ঐক্য ফিরে পেতে পারে, সেটি অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখা দরকার।অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ

বিএনপি প্রথমত ক্ষুব্ধ হয় বাস্তবায়নের সুপারিশ থেকে ভিন্নমত বাদ দেওয়ায়। এ ছাড়া সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন, ২৭০ দিন সময় বেঁধে দেওয়া, সেটা না হলে আপনা-আপনি সংবিধানে যুক্ত হওয়া ইত্যাদি বিষয়ে দলটির আপত্তি আছে। দলটি গণভোট আগে নয়, জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে চায়। জামায়াতের অবস্থান এর পুরো বিপরীত।

এসব নিয়ে পরস্পরকে লক্ষ্য করে দল দুটির রাজনৈতিক বক্তৃতা-বিবৃতি ক্রমেই বাড়তে থাকে। জামায়াতকে ইঙ্গিত করে বিএনপির নেতাদের বক্তব্যে এটা আসছে যে জামায়াত নির্বাচন পেছাতে চায়। নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, এমন বক্তব্য অবশ্য বিএনপি আরও আগে থেকেই দিয়ে আসছে।

গতকাল দুপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা দেখছি যে বাংলাদেশের শত্রুরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে। যতই সময় যাচ্ছে, ততই বাংলাদেশে একটা অ্যানার্কিক সিচুয়েশন, একটা পুরোপুরি নৈরাজ্য সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চলছে।’

জামায়াতকে ইঙ্গিত করে বিএনপির নেতাদের বক্তব্যে এটা আসছে যে জামায়াত নির্বাচন পেছাতে চায়। নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, এমন বক্তব্য অবশ্য বিএনপি আরও আগে থেকেই দিয়ে আসছে।

এর আগের দিন শনিবার বিএনপির মহাসচিব জামায়াতে ইসলামীর উদ্দেশে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নির্বাচনকে যতটা বাধা সৃষ্টি করেছেন, সেটা আপনারা করেছেন।’

পাল্টা বক্তব্য এসেছে জামায়াতের দিক থেকেও। দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের গতকাল বিকেলে ঢাকায় এক সেমিনারে বলেছেন, ‘বিএনপি ভেতরে-ভেতরে আবার ফ্যাসিস্ট হওয়ার একটা খায়েশ আছে মনে হচ্ছে। যে কারণে ফ্যাসিজমের যে রাস্তা, আমরা সংস্কারে বন্ধ করতে চেয়েছিলাম, এগুলো ওনারা বন্ধ করতে দিচ্ছেন না।’

অবশ্য সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলতে বিএনপিকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপি যতই উসকানি দিক, জামায়াত বিএনপির সঙ্গে বিরোধে জড়াতে চায় না। মানুষের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক আছে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দূর করে স্পষ্ট করা রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব। সুতরাং আসুন আমরা সব ভুলে আলোচনায় বসি।’

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে এই মুখোমুখি অবস্থা চলতে থাকলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠতে পারে। অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, একটা চরম অনৈক্যের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এটি রাষ্ট্রের জন্য সুখকর নয়। যে রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যুক্ত ছিল, তারা কীভাবে হারানো ঐক্য ফিরে পেতে পারে, সেটি অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখা দরকার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ