কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর (এআই) অ্যাভাটার (ছবি বা ইমোজি) ব্যবহারের সুযোগ চালু করছে জনপ্রিয় ভিডিও কনফারেন্স সফটওয়্যার জুম। এই সুবিধা চালু হলে অনলাইন বৈঠকের সময় অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের চেহারার বদলে এআই অ্যাভাটার অন্যদের দেখাতে পারবেন। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে চলা অনলাইন বৈঠকে স্বাচ্ছন্দ্যে অংশ নেওয়া যাবে। জুম জানিয়েছে, ব্যবহারকারীরা শিগগিরই নিজেদের ‘ফটো রিয়েলিস্টিক’ বা বাস্তবসম্মত এআই অ্যাভাটার তৈরি করতে পারবেন। ফলে ক্যামেরার সামনে হাজির হওয়ার মতো প্রস্তুতি না থাকলেও মিটিংয়ে স্বচ্ছন্দে অংশ নেওয়া যাবে।

জুমের তথ্যমতে, ডিসেম্বর থেকে এআই অ্যাভাটার ব্যবহারের সুযোগ পাবেন ওয়ার্কপ্লেস ব্যবহারকারীরা। এআই অ্যাভাটার তৈরির জন্য ব্যবহারকারীদের নিজের একটি ছবি তুলে আপলোড করতে হবে। সেই ছবির ভিত্তিতে এআই অ্যাভাটার তৈরি করে দেবে জুম। এই অ্যাভাটারকে ব্যবহারকারী ইচ্ছেমতো পোশাকে সাজাতে পারবেন। বৈঠক চলাকালে অ্যাভাটারটি ব্যবহারকারীর নড়াচড়া ও মুখভঙ্গি অনুকরণ করবে। দেখে মনে হবে যেন সেই ব্যক্তিই কথা বলছেন।

এআই অ্যাভাটারের নিরাপত্তার বিষয়ে জুম জানিয়েছে, কেউ যাতে অন্য কারও রূপ নিয়ে বৈঠকে প্রবেশ করতে না পারেন, সে জন্য চালু করা হবে ‘লাইভ ক্যামেরা অথেনটিকেশন’ নিরাপত্তাব্যবস্থা। পাশাপাশি বৈঠক চলাকালে পর্দায় আলাদা একটি নোটিশ দেখা যাবে, যা জানাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অ্যাভাটার ব্যবহার করছেন। তবে এই নিরাপত্তাব্যবস্থা এখনো উন্নয়নের পর্যায়ে আছে। ফলে চালুর আগে নিয়মকানুনে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।

গত জুনে এক সাক্ষাৎকারে জুমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরিক ইউয়ান জানিয়েছিলেন, ভবিষ্যতে প্রত্যেকের একটি করে ‘ডিজিটাল টুইন’ বা ভার্চ্যুয়াল প্রতিরূপ থাকবে। সেই ডিজিটাল টুইন মালিকের হয়ে মিটিংয়ে যোগ দেবে বা ই–মেইলের উত্তর দেবে। জুম এখনো সেই ধাপে পৌঁছায়নি, তবে সে দিকেই অগ্রসর হচ্ছে।

সূত্র: দ্য ভার্জ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এআই অ য ভ ট র ব যবহ র

এছাড়াও পড়ুন:

‘শরিয়াহ ও সরকারি নীতিবিরোধী’: নারী ও ইরানি লেখকদের ১৪০টিসহ ৬৭৯ বই নিষিদ্ধ করল তালেবান

আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যসূচি থেকে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করেছে তালেবান সরকার। মানবাধিকার ও যৌন হয়রানি–সম্পর্কিত বিষয়ে পাঠদানের ওপর একটি নতুন নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

শরিয়াহবিরোধী ও সরকারি নীতির পরিপন্থী বলে মনে হওয়ায় ৬৭৯টি বইকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে চিহ্নিত করেছে তালেবান। নিষিদ্ধ এসব বইয়ের মধ্যে ১৪০টি নারীদের লেখা ও ৩১০টি ইরানি লেখকদের লেখা বা ইরানে প্রকাশিত।

নিষিদ্ধ বইয়ের ৫০ পৃষ্ঠার একটি তালিকা আফগানিস্তানের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

আফগান সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলা হয়েছে, তারা এখন থেকে ১৮টি বিষয়ে পাঠদান করতে পারবে না। তালেবানের এক কর্মকর্তা বলেন, এসব বিষয় মূলত ইসলামি শরিয়তের মূলনীতি ও সরকারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

চার বছর আগে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ ধরনের নানা নিয়মকানুন জারি করেছে তালেবান সরকার। চলতি সপ্তাহেই তালেবানের সর্বোচ্চ নেতার নির্দেশে অন্তত ১০ প্রদেশে ‘ফাইবার অপটিক ইন্টারনেট’ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কর্মকর্তারা বলেছেন, অনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

আফগান সরকারের পক্ষ থেকে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলা হয়েছে, তারা এখন থেকে ১৮টি বিষয়ে পাঠদান করতে পারবে না। তালেবানের এক কর্মকর্তা বলেছেন, এসব বিষয় মূলত ইসলামি শরিয়তের মূলনীতি ও সরকারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

অনেকের মতে, এসব নিয়মকানুন আফগানিস্তানের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নানাভাবে প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে কিশোরী ও নারীরা এসব নিয়মের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ষষ্ঠ শ্রেণির পর থেকে তাদের শিক্ষা গ্রহণ নিষিদ্ধ। ২০২৪ সালের শেষ দিকে ধাত্রীবিদ্যা বা মিডওয়াইফারি কোর্সও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ১৮ বিষয়ে পাঠদান নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তার ৬টিই নারীদের নিয়ে, যেমন ‘জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’, ‘দ্য রোল অব উইমেন ইন কমিউনিকেশন’ ও ‘উইমেনস সোসিওলজি’।

আরও পড়ুনআফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে কী কারণে স্বীকৃতি দিল রাশিয়া ১৪ জুলাই ২০২৫

তালেবান সরকার বলেছে, তারা আফগান সংস্কৃতি ও ইসলামিক আইনের ভিত্তিতে নারী অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

তালেবানের এসব নিয়মকানুন দেশটির মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নানাভাবে প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে কিশোরী ও নারীরা এসব নিয়মের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

তবে আফগানিস্তানের বই পর্যালোচনা কমিটির একজন সদস্য বিবিসিকে বলেন, নারী লেখকদের সব বই পড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

নিষিদ্ধ বইগুলোর তালিকায় আফগানিস্তানের সাবেক সরকারের বিচার মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী জাকিয়া আদেলির বইও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘চার বছরে তালেবান যা করেছে, তাতে পাঠ্যসূচিতে এমন পরিবর্তনে অবাক হইনি। নারীরা পড়াশোনা করতে পারছেন না। তাদের মতামত ও লেখালিখির অধিকারও দমন করা হবে, এটাই স্বাভাবিক।’

আরও পড়ুনরাশিয়ার পর আর কোন কোন দেশ তালেবানকে স্বীকৃতি দিতে পারে০৫ জুলাই ২০২৫

গত আগস্টের শেষ দিকে বই নিষিদ্ধের অধ্যাদেশে স্বাক্ষর করেন তালেবান সরকারের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক জিয়াউর রহমান আরিয়ুবি। তিনি বলেন, আলেম ও বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শুধু নারী লেখকই নয়, নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকায় ইরানি লেখক ও প্রকাশকদের বইও রয়েছে। বই পর্যালোচনা কমিটির এক সদস্য বলেন, আফগান পাঠ্যসূচিতে ইরানি বিষয়বস্তুর প্রবেশ ঠেকাতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনতালেবান শাসনের তিন বছর, কেমন আছে আফগানিস্তান১৫ আগস্ট ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ