পোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনাকে রাকসু বানচালের ষড়যন্ত্র বলছেন প্রার্থীরা
Published: 19th, September 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলনের পরও আবার ফিরিয়ে আনা হয়েছে পোষ্য কোটা। গতকাল বৃহস্পতিবার ১০টি শর্তে এই কোটা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয় ভর্তি উপকমিটি। সিদ্ধান্তটি বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশের পরপর আবারও প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
নতুন কর্মসূচি অনুযায়ী, আজ শুক্রবার বাদ জুমা পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে বড় ধরনের বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন তাঁরা। অনেকেই এটিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাকসু, হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন। এসব নির্বাচনের মাত্র কয়েক দিন আগে পোষ্য কোটা ফেরানো হয়েছে। অথচ এর আগে বিষয়টি নিয়ে তীব্র আন্দোলনের এক পর্যায়ে প্রশাসন ভবনে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবরুদ্ধ করা হয়, প্যারিস রোডের পাশে পোষ্য কোটার প্রতীকী কবর দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পোষ্য কোটা বাতিল ঘোষণা করেন উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো পোষ্য কোটা থাকবে না বলে তিনি জানিয়েছিলেন।
আরও পড়ুনপোষ্য কোটা ফেরানোর প্রতিবাদে সাড়ে ৪ ঘণ্টা বিক্ষোভ, আজ দুপুরে নতুন কর্মসূচি৪ ঘণ্টা আগেএরপর পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে কয়েক দফা আন্দোলনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সিনেট ভবনে ভর্তি উপকমিটির এক সভায় স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১০টি শর্তে পোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। উপাচার্যের দায়িত্বে নিযুক্ত সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন সভায় সভাপতিত্ব করেন। পরে রাত আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এ খবর পাওয়ার পরই শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, মীমাংসিত পোষ্য কোটা ফেরানোর বিষয়টিকে রাকসু বানচালের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন। তাঁরা যথা সময়ে উৎসবমুখর পরিবেশে রাকসু চান। সেই সঙ্গে পোষ্য কোটাও বাতিল চান।
‘পোষ্য কোটা বাতিল করো, নইলে গদি ছাড়ো’গতকাল সন্ধ্যায় পোষ্য কোটা ফিরে আসার খবরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বর থেকে একটি মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। রাত পৌনে আটটার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডের পাশে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ আন্দোলনে রাকসু নির্বাচনের প্রার্থীরাও জড়ো হতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ রাকসু নির্বাচনের বিভিন্ন প্রার্থী অংশ নেন। এ সময় তাঁরা ‘পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’; ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’; ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন বলেন, ‘পোষ্য কোটার অসিলায় পোষ্য কোটা সামনে এনে রাকসু বানচালের চিন্তা করলে সবকিছু ভেসে যাবে। একটাই কথা, পোষ্য কোটা বাতিল করো, নইলে নকীব (উপাচার্য) গদি ছাড়ো। আপনারা মনে করেন, ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে। কিন্তু যৌক্তিক আন্দোলনে আমরা একসঙ্গে থাকব। আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলনে থেকে আপনাদের অপতৎপরতা ভেঙে দেব।’
অন্যদিকে শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, ‘পোষ্য কোটা একটি মীমাংসিত বিষয়। আন্দোলনের মুখে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের সার্কুলারে পোষ্য কোটা বাদ দেওয়া হয়েছিল। সেই সার্কুলারের আলোকে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়ে সেই সব শিক্ষার্থী এখন ক্লাস করছেন। কিন্তু রাকসু নির্বাচনের অল্প দিন আগে মীমাংসিত বিষয়কে সামনে আনা মানে হচ্ছে, রাকসু বানচালের ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্যে তারা এটি সামনে এনেছে। তবে তাদের এ অন্যায্য সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন।’
আরও পড়ুনরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে কর্মবিরতি চলছে, প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ২৪ আগস্ট ২০২৫‘এটি ক্রেডিট নেওয়ার আন্দোলন’বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের আন্দোলনকে ‘ক্রেডিট নেওয়ার আন্দোলন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন পোষ্য কোটা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার। আসন্ন রাকসু নির্বাচনে তিনি ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী হয়েছেন। ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের উদ্দেশে সালাউদ্দিন বলেন, এখন যে আন্দোলন হচ্ছে, এটি ক্রেডিট নেওয়ার আন্দোলন। রাকসুকে কেন্দ্র করে তারা নিজেদের প্রোফাইল ভারী করছে। প্রশাসন কিন্তু জানে, কোন পরিস্থিতিতে কোটাকে ফিরিয়ে আনলে তারা সফল হবে।
সালাউদ্দিন আম্মার আরও বলেন, ‘ছাত্রশিবির কেন সহ–উপাচার্য মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীনকে চাপ দিচ্ছে না। ছাত্রদল কেন বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের চাপ দিচ্ছে না। আমরা মাঠে আসাটা স্বাভাবিক। কারণ, বিএনপি-জামায়াত-আওয়ামী লীগ আমাদের নয়। এখানে পোষ্য কোটা নিয়ে পলিটিকস চলছে। পোষ্য কোটার আন্দোলনে ছিল ৬৫ থেকে ৭০ জনের।’
আরও পড়ুনরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ শর্তে ফিরল পোষ্য কোটা, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ১৬ ঘণ্টা আগেছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের মূল সংগঠনের শিক্ষক-কর্মকর্তারা আন্দোলন করে পোষ্য কোটা ফিরিয়ে এনেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ও সাবেক সমন্বয়ক ফুয়াদ রাতুল। তাঁর ভাষ্য, উৎসবমুখর পরিবেশে রাকসু হবে, সেই উৎসবকে বানচাল করার জন্য পোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এই পোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনা মানবেন না শিক্ষার্থীরা।
ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি ও সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী মারুফ বলেন, ‘আমরা আন্দোলন করে পোষ্য কোটা বাতিল করাতে বাধ্য করেছিলাম। কিন্তু রাকসু নির্বাচনের সামনে এই কোটা ফিরিয়ে আনা হয়েছে।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, পোষ্য কোটা বাতিলের আন্দোলনে আগে কখনো ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির যুক্ত ছিল না। আজ তারা ক্রেডিট নিতে এসেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরাই পোষ্য কোটা বাতিল করেছিলেন।
আরও পড়ুনরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি১৯ আগস্ট ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ত ল কর উপ চ র য অ য কশন উদ দ ন
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনা ভারতে বসে আবারও ষড়যন্ত্র করছে: দুদু
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, “ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে এবং দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করেছে। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভারতে বসে আবারও ষড়যন্ত্র করছে। চোরাগোপ্তা হামলার পরিকল্পনা করছে।”
জাতীয় নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ নাগরিক অধিকার আন্দোলনের উদ্যোগে আয়োজিত প্রতীকী যুব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, “তারা যদি আবার ষড়যন্ত্র করে, নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করে, তাহলে জনগণ আর কোনো ষড়যন্ত্র মেনে নেবে না। সম্মিলিতভাবে আবার তাদেরকে প্রতিহত করা হবে। বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এ নির্বাচনের প্রত্যাশায় দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর ধরে আন্দোলন-সংগ্রামে অনেক তরুণ প্রাণ ঝরে গেছে, লক্ষাধিক নেতা-কর্মীর নামে মামলা হয়েছে এবং গণতন্ত্র রক্ষায় মানুষ নির্বাসিত জীবনযাপন করছে।”
বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, “যদি নির্বাচনের ঘোষণা আসে, তাহলে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ বিএনপিকে আবারও ক্ষমতায় আনবে।”
তিনি বলেন, “আগামী দিনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমান বাংলাদেশের নেতৃত্বে আসবেন এবং জনগণের ওপর নির্ভর করে দেশকে এগিয়ে নেবেন। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়েই আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।”
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এম জাহাঙ্গীর আলম এবং সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার মোফাজ্জল হোসেন হৃদয়। আরো বক্তব্য রাখেন—বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মো. রহমতুল্লাহ, বিলকিস ইসলাম, প্রিন্সিপাল শাহ মোহাম্মদ নেসারুল হক,মৎস্যজীবী দলের নেতা ইসমাইল হোসেন সিরাজী, কৃষক দলের নেতা আব্দুর রাজী, ছাত্রদলের নেতা শামীম আখন্দ প্রমুখ।
ঢাকা/রায়হান/রফিক