সৌরজগতে লুকিয়ে আছে আরেকটি গ্রহ
Published: 4th, October 2025 GMT
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা নতুন একটি গ্রহের খোঁজ পেয়েছেন বলে জানা গেছে। আমাদের সৌরজগতের দূরবর্তী প্রান্তে একটি অদৃশ্য গ্রহের সম্ভাব্য উপস্থিতি রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির মাসিক জার্নালে এমন একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকেরা একটি কাল্পনিক গ্রহকে ‘প্ল্যানেট ওয়াই’ নাম দিয়েছেন। সৌরজগতের শেষ সীমানার দিকে কুইপার বেল্টের দূরবর্তী বস্তুর অস্বাভাবিক হেলানো কক্ষপথ থেকে এই গ্রহের অনুমান করছেন বিজ্ঞানীরা।
নেপচুনের বাইরে মহাজাগতিক বস্তুর বিশাল বলয় কুইপার বেল্ট। সেখানে বেশ কিছু গ্রহ লুকিয়ে থাকতে পারে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। সেই গ্রহের সন্ধানে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে আগ্রহী। প্ল্যানেট ওয়াই সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা না গেলেও প্রায় ৫০টি দূরবর্তী বস্তুর কক্ষপথের অপ্রত্যাশিত প্রবণতার কারণে গ্রহটির উপস্থিতি থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী আমির সিরাজ বলেন, ‘সৌরজগতের দূরবর্তী প্রান্তে একটি অদৃশ্য গ্রহের উপস্থিতি থাকতে পারে। এটি সম্ভবত পৃথিবীর চেয়ে ছোট ও বুধের চেয়ে বড়। আমাদের গবেষণাটি কোনো একটি গ্রহ আবিষ্কারের সঙ্গে যুক্ত নয়। গবেষণার মাধ্যমে আমরা একটি ধাঁধার সমাধান করার চেষ্টা করছি।’
নেপচুনের বাইরে লুকিয়ে থাকা গ্রহের ধারণা নতুন নয়। ১৮৪৬ সালে নেপচুন আবিষ্কারের পর ২০ শতকের প্রথম দিক থেকেই সেখানে তথাকথিত প্ল্যানেট এক্সের অনুসন্ধান শুরু হয়। ১৯৩০ সালে প্লুটো আবিষ্কারের পর প্রাথমিকভাবে প্লুটোকে প্ল্যানেট এক্স বলা হয়। যদিও পরে ছোট আকারের কারণে প্লুটোকে বামন গ্রহ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। প্ল্যানেট ওয়াই আগের প্রস্তাবিত প্ল্যানেট নাইন থেকে আলাদা। প্ল্যানেট নাইন পৃথিবীর ভরের ৫ থেকে ১০ গুণ ও আরও অনেক দূরে প্রদক্ষিণ করছে বলে মনে করা হয়।
বিজ্ঞানী সিরাজ বলেন, এ দুটি কাল্পনিক গ্রহ সৌরজগতে সহাবস্থান করতে পারে। কম্পিউটার সিমুলেশন ইঙ্গিত দিচ্ছে, প্রচলিত মডেল সেখানকার হেলানো কক্ষপথের ব্যাখ্যা দিতে পারে না। প্ল্যানেট ওয়াই সম্ভবত বুধ থেকে পৃথিবীর ভরের সমান একটি গ্রহ। পৃথিবী ও সূর্যের দূরত্বের ১০০ থেকে ২০০ গুণ দূরত্বে প্রদক্ষিণ করছে গ্রহটি। পরিচিত গ্রহগুলোর তুলনায় এর কক্ষপথের হেলে থাকার প্রবণতা কমপক্ষে ১৫ ডিগ্রি। প্রায় ৮০ গুণ পৃথিবী–সূর্য দূরত্বের বাইরে পর্যবেক্ষিত কক্ষপথের হেলানো প্রবণতা প্রায় ১৫ ডিগ্রি। কোনো একটি ক্ষণস্থায়ী নক্ষত্র বা আদর্শ গ্রহ গঠনের মডেল দিয়ে এই অবস্থা ব্যাখ্যা করা যায় না। সৌরজগৎ হঠাৎ প্রায় ১৫ ডিগ্রি ঝুঁকে পড়েছে বলে মনে হওয়াটা সত্যিই আশ্চর্যের। সেখান থেকেই প্ল্যানেট ওয়াইয়ের ধারণা এসেছে।
কক্ষপথের তথ্য সম্পর্কে ধারণা থাকলেও প্ল্যানেট ওয়াইয়ের অস্তিত্ব সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত নন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানী সিরাজের মতে, প্রায় ৫০টি বস্তুর পরিসংখ্যানগত অবস্থান থেকে বলা যায়, সেখানে গ্রহ থাকার সম্ভাবনা আছে ৯৬ থেকে ৯৮ শতাংশের মত। ভবিষ্যতে ভেরা সি রুবিন অবজারভেটরি এ বিষয়ে প্রমাণ সংগ্রহে কাজ করবে। বিশ্বের বৃহত্তম ডিজিটাল ক্যামেরায় সজ্জিত এই টেলিস্কোপ প্রতি তিন দিনে পুরো আকাশের তথ্য সংগ্রহ করবে।
সূত্র: এনডিটিভি
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ রবর ত স রজগত গ রহ র বস ত র
এছাড়াও পড়ুন:
সৌরজগতের গ্রহাণু বলয় হারিয়ে যাচ্ছে
বৃহস্পতি ও মঙ্গল গ্রহের মাঝখানে থাকা গ্রহাণু বলয় থেকে ধীরে ধীরে বিভিন্ন উপাদান হারিয়ে যাচ্ছে। মহাকর্ষীয় শক্তি ও ঘন ঘন সংঘর্ষের কারণে এই মহাজাগতিক অঞ্চলটি ছোট হয়ে আসছে বলে জানিয়েছেন উরুগুয়ের ইউনিভার্সিড্যাড দে লা রিপাবলিকার জুলিয়ো ফার্নান্দেজের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী। এই ক্ষয় পৃথিবীর অতীত ও ভবিষ্যতের উল্কাপিণ্ডের আঘাতের ঝুঁকির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করছেন তাঁরা।
নতুন এক গবেষণায় জানা গেছে, মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের মাঝখানের গ্রহাণু বলয় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার উপাদান হারাচ্ছে। ৪৬০ কোটি বছর আগে সৌরজগতের জন্মের সময় এই অঞ্চলে একটি গ্রহ তৈরির সম্ভাবনা থাকলেও, তা হয়নি। মূলত বৃহস্পতি গ্রহের শক্তিশালী মাধ্যাকর্ষণের কারণে তা সম্ভব হয়নি। বৃহস্পতি গ্রহ মহাজাগতিক বস্তুকে একত্র হওয়ার সুযোগ না দিয়ে উল্টো সংঘর্ষ ঘটিয়ে সেগুলোকে ভেঙে ফেলে।
বর্তমানে এই গ্রহাণু বলয়ে চাঁদের ভরের মাত্র প্রায় ৩ শতাংশ উপাদান অবশিষ্ট আছে। বিশাল এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে এসব উপাদান। বৃহস্পতি, শনি ও মঙ্গল গ্রহের মহাকর্ষীয় প্রভাবের কারণে এই মহাজাগতিক শিলার কক্ষপথ ক্রমেই প্রভাবিত হচ্ছে। কিছু শিলা সৌরজগতের ভেতরের দিকে থাকা পৃথিবীর কক্ষপথের কাছে চলে আসছে। আবার কিছু শিলা বৃহস্পতির দিকে ছিটকে যাচ্ছে। কিছু শিলা সংঘর্ষের ফলে ধুলায় পরিণত হচ্ছে।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, বলয়টি প্রতিবছর প্রায় শূন্য দশমিক শূন্য শূন্য ৮৮ শতাংশ হারে ছোট হচ্ছে। এই হিসাব শুধু বলয়ের সেই অংশের জন্য, যেখানে এখনো সংঘর্ষ ঘটছে। এই হার ছোট মনে হলেও শত শত কোটি বছর ধরে এর বিশাল প্রভাব তৈরি হচ্ছে। হারিয়ে যাওয়া উপাদানের প্রায় ২০ শতাংশ অপেক্ষাকৃত বড় খণ্ড হিসেবে ছিটকে যায়। সেসব বড় খণ্ডকে আমরা কখনো কখনো পৃথিবীর কক্ষপথে প্রবেশ করতে দেখি উল্কাপিণ্ড হিসেবে। অবশিষ্ট ৮০ শতাংশ সূক্ষ্ম ধুলায় পরিণত হয়। সেই ধুলার কারণে সূর্যাস্তের পরে বা সূর্যোদয়ের আগে আমাদের পৃথিবীর আকাশে এক ক্ষীণ আভা সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুনসৌরজগতের শেষ সীমানায় কী আছে১১ আগস্ট ২০২৫গ্রহাণু বলয়কে আমাদের সৌরজগতের একটি স্থায়ী অংশ মনে হলেও নতুন গবেষণা বলছে, এটি ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এই গবেষণায় সেরেস, ভেস্টা ও প্যালাসের মতো বড় ও স্থিতিশীল গ্রহাণুকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বলয় এলাকার চলমান ক্ষয়ের প্রক্রিয়া বোঝার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর অতীত ইতিহাস নিয়ে আরও ভালোভাবে গবেষণা করার সুযোগ পাচ্ছেন।
সূত্র: এনডিটিভি
আরও পড়ুনপৃথিবী কি সত্যিই সৌরজগৎ থেকে বেরিয়ে যাবে২৩ জুন ২০২৫