ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় নিখোঁজ হওয়া দুই ব্যক্তির খোঁজে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে এসেছিলেন তাঁদের স্বজনেরা। এর মধ্যে একজন তাঁর স্বজনের সঙ্গে একটি মরদেহের সাদৃশ্য পেয়েছেন। পুলিশ বলছে, আন্দোলনের সময়ের বেওয়ারিশ লাশ দেখে কেউ শনাক্ত করলে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তা যাচাই করা হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানবিষয়ক বিশেষ সেল গত শুক্রবার ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক মর্গে থাকা বেওয়ারিশ ছয়টি মরদেহের তথ্য সামনে আনে। লাশগুলো হলো অজ্ঞাতনামা পুরুষ (২০), অজ্ঞাতনামা পুরুষ (২৫), অজ্ঞাতনামা পুরুষ (২২), অজ্ঞাতনামা নারী (৩২) ও অজ্ঞাতনামা পুরুষ (৩০)। আরেকজনের নাম এনামুল (২৫)। বিষয়টি গণমাধ্যম ও ফেসবুকে দেখে আজ রোববার সকালে স্বজনদের খোঁজে দুজন হাসপাতালে আসেন। এদিকে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা মেডিকেলে সাতটি বেওয়ারিশ লাশ রয়েছে।

নিখোঁজ স্বজনের মরদেহ খুঁজতে আজ ঢাকা মেডিকেলে এসেছিলেন, নিখোঁজ কাবিল হোসেনের (৬০) স্ত্রী সেলিনা বেগম ও নিখোঁজ মো.

হাসানের (১৯) চাচা নূরে আলম। তাঁরা সাংবাদিকদের জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যে ছয়টি মরদেহের তথ্য সামনে এনেছে, তা গণমাধ্যম ও ফেসবুকে দেখেছেন। মর্গে থাকা মরদেহগুলোর মধ্যে তাঁদের স্বজন থাকতে পারে, সেই ধারণা থেকে মর্গে এসেছেন।

নিখোঁজ কাবিল হোসেন পেশায় মাছ ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার কায়েকখালী গ্রামের বুলু মিয়ার ছেলে। থাকতেন ঢাকার মুগদায়। দুই সন্তানের বাবা কাবিল গত ৫ আগস্ট থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে খুঁজেও তাঁর সন্ধান পায়নি পরিবার। আজ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে আসা তাঁর স্ত্রী সেলিনা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর স্বামীর বয়স ৬০ বছর। তাঁর মুখে দাড়ি ছিল, পরনে ছিল লুঙ্গি। তবে মর্গে থাকা সাতটি লাশের যে বয়স বলা হচ্ছে, তার সঙ্গে তাঁর স্বামীর বয়সের বড় পার্থক্য আছে।

নিখোঁজ মো. হাসান ভোলা সদর উপজেলার বাগচির গ্রামের মনির হোসেনের ছেলে। মর্গে এসে হাসানের চাচা নূরে আলম জানান, গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেও হাসানকে পাওয়া যাচ্ছে না। হাসান ঢাকার কাপ্তান বাজারে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের একটি দোকানের কর্মী ছিলেন, থাকতেন যাত্রাবাড়ীর সুতি খালপাড় বালুর মাঠ এলাকায়। হাসানের বাবা গ্রামে কৃষিকাজ করেন। দুই ভাইবোনের মধ্যে হাসান বড়।

চাচা নূরে আলম বলেন, তিনি ঢাকা মেডিকেলের মর্গে থাকা বেওয়ারিশ মরদেহগুলো দেখেছেন। হাসানের মুখে হালকা দাড়ি আছে, পরনে ছিল পায়জামা-পাঞ্জাবি। বেওয়ারিশ মরদেহগুলো দেখে চেহারা বোঝা না গেলেও একটি মরদেহের সঙ্গে হাসানের অনেকটাই সাদৃশ্য পেয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুনঢাকা মেডিকেলে ৬ বেওয়ারিশ মৃতদেহের তথ্য সামনে আনল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন১০ জানুয়ারি ২০২৫

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর জানান, ঢাকা মেডিকেলের মর্গে থাকা সাতটি বেওয়ারিশ মরদেহের মধ্যে ছয়টি শাহবাগ থানার অধীনে রয়েছে। অন্যটি যাত্রাবাড়ী থানার অধীনে। ওসি বলেন, নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের অনেকে নিয়মিত মর্গে এসে মরদেহের খোঁজ করছেন। কেউ মরদেহ দেখে শনাক্ত করার পর ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে মরদেহ হস্তান্তরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এদিকে বেওয়ারিশ মরদেহগুলোর বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানবিষয়ক বিশেষ সেল। সেলের সদস্য নাফিসা ইসলাম বলেন, ঢাকা মেডিকেলের মর্গে থাকা বেওয়ারিশ মরদেহগুলো এখনো শনাক্ত হয়নি। নিখোঁজ হওয়া পরিবারের কেউ যদি মরদেহ শনাক্ত করতে পারেন, তাঁদের ডিএনএ পরীক্ষাসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সিদ্ধিরগঞ্জে ইয়াবাসহ চিহ্নিত মাদক কারবারি গ্রেপ্তার

সিদ্ধিরগঞ্জে পুলিশের বিশেষ অভিযানে ১০০ পিস ইয়াবাসহ রিয়াজ (২৯) নামে এক চিহ্নিত মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রবিবার (২ নভেম্বর) গভীর রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি কান্দাপাড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত রিয়াজ কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার মোকশাইল গ্রামের আব্দুল ছাত্তার মিয়ার ছেলে। সে বর্তমানে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি কান্দাপাড়া এলাকায় মিজানের বাড়ির ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছিল।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. জহুরুল ইসলাম জানান, থানা এলাকায় মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও বিশেষ অভিযান চলাকালীন সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারি যে, মিজমিজি কান্দাপাড়া এলাকায় মিজানের বাসার সামনের পাকা রাস্তার ওপর রিয়াজ নামে ওই ব্যক্তি ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অবস্থান করছে।

এমন তথ্যের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌঁছালে রিয়াজ পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর চেষ্টা করে। পুলিশ সদস্যরা তাকে ধাওয়া করে আটক করতে সক্ষম হন। পরে তার দেহ তল্লাশি করে লুঙ্গির ভাঁজ থেকে সাদা পলিথিনে মোড়ানো ১০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত মাদকের আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৩০ হাজার টাকা।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহীনূর আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গ্রেপ্তারকৃত রিয়াজ একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে দীর্ঘদিন ধরে সিদ্ধিরগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় মাদকদ্রব্য ইয়াবা বিক্রি করে আসছিল বলে স্বীকার করেছে।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত আসামির বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ