‘এ রকম একটা দিন দেখার জন্য বেঁচে থাকতে হবে জীবনেও ভাবিনি’
Published: 13th, January 2025 GMT
দাবানলে জ্বলে পুড়ে ছারখার যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের বিলাসবহুল শহর লস অ্যাঞ্জেলেস। আর সেই দাবানলের কারণে অগণিত মানুষের মতো আতঙ্কে আছেন বলিউড অভিনেত্রী প্রীতি জিনতা। কারণ বিয়ের পর থেকে মার্কিন মুল্লুকের লস অ্যাঞ্জেলেসেই বসবাস করছেন এই অভিনেত্রী।
কয়েক কছর ধরে স্বামী জেনে গুডএনাফ ও দুই সন্তান নিয়ে সেখানকার এক বাংলোয় সুখের ঘরকন্না করে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু বিধ্বংসী দাবানল এবার ছারখার করে দিল সেই স্বপ্নের নিবাস। ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রীতি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা এখন সুরক্ষিত।
সেই খবর জানানোর পাশাপাশি অভিনেত্রী তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে শেয়ার করেছেন ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা। লিখেছেন, ‘এ রকম একটা দিন দেখার জন্য বেঁচে থাকতে হবে জীবনেও ভাবিনি। দাবানলের গ্রাসে আমাদের লস অ্যাঞ্জেলেসের পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব, পরিজনরা গৃহহারা ও সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন। চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আকাশ ধোঁয়াচ্ছন্ন, সর্বত্র ছাই। তুষারপাতের মতো আকাশ-বাতাসে ছাই ভেসে বেড়াচ্ছে। এ রকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে বাচ্চা এবং বয়স্কদের জন্য সমস্যা আরও বাড়বে। চারপাশের এ ধ্বংসলীলা দেখে আমি ভেঙে পড়েছি। তবে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, আমরা যে এখনও সুরক্ষিত।’
এই পোস্টের পর প্রীতির সংযোজন, “এই অগ্নিকাণ্ডে বাস্তুচ্যুত এবং সর্বস্ব হারানো মানুষদের জন্য প্রার্থনা করছি প্রতিটা মুহূর্তে। আশা করি, শিগগিরই হাওয়ার দাপট কমে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসবে। দমকল বিভাগ, অগ্নিনির্বাপক কর্মী এবং যারা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কাজ করে চলেছেন, তাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সবাই নিরাপদে থাকুন।’
প্রসঙ্গত, দাবানলের গ্রাস থেকে মুক্তি পাইনি প্যারিস হিলটন, জেমি লি কার্টিস, অ্যান্থনি হপকিনস, ম্যান্ডি মুরেদের মতো হলিউড তারকাদের বাড়িঘর। আগুনের লেলিহান শিখায় জ্বলতে থাকা বাড়িঘরের ছবি শেয়ার করে একাধিক হলিউড তারকা সোশ্যাল মিডিয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।