‘আমরা ফুটবল খেলিনি’, বার্সার কাছে বিধ্বস্ত হয়ে আনচেলত্তি
Published: 13th, January 2025 GMT
মরুর বুকে মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার বিপক্ষে বড় পরাজয়ের স্বাদ পেয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। স্প্যানিশ সুপার কাপের ম্যাচে বার্সার কাছে ৫-২ গোলের ব্যবধানে হেরে গেছে আনচেলত্তির দল। দলের এমন পারফরম্যান্সে হতাশ হয়ে এই খেলার মানকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তি।
এই ম্যাচ জিতলে লা লিগায় হারের শোধ নেওয়ার পাশাপাশি সুপার কাপের শিরোপা জেতার সুযোগ ছিল রিয়ালের। শুরুতে এগিয়ে যাওয়ায় সেই সম্ভাবনা জাগিয়েছিল আনচেলত্তির শিষ্যরা। তবে ম্যাচের বাকি সময়ে বার্সার দাপটে ছিটকে যায় রিয়াল। তাদের রক্ষণভাগ একের পর এক ভুল করে বার্সাকে সহজেই গোলের সুযোগ দেয়।
ম্যাচ শেষে আনচেলত্তি বলেন, ‘এটা খুব বাজে একটি রাত। আমাদের খেলায় অনেক ত্রুটি ছিল। আমরা যেমন খেলতে চেয়েছিলাম, সেটা করতে পারিনি। প্রথমার্ধে আমরা মূলত ফুটবল খেলিনি, লং বল খেলেছি। অথচ, এভাবে খেলার কোনো পরিকল্পনা আমাদের ছিল না। বিরতির সময় আমি খেলোয়াড়দের বলেছিলাম যে, আমরা হয়তো হারতে পারি, কিন্তু এমনভাবে হার নয়।’
দলের রক্ষণভাগের ব্যর্থতা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন আনচেলত্তি। তিনি বলেন, ‘আমরা খুব বাজে ডিফেন্ড করেছি। এর ফলে বার্সেলোনা সহজেই গোল করার সুযোগ পেয়েছে। প্রচণ্ড চাপের মুখে আমাদের রক্ষণভাগ কার্যকরভাবে কাজ করতে পারেনি। এটি আমাদের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
এই পরাজয় রিয়াল সমর্থকদের মতো কোচ আনচেলত্তিকেও হতাশ করেছে। তবে তিনি সামনে ভালো পারফরম্যান্সের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ‘জীবনের মতো ফুটবলেও জয়-পরাজয় থাকবে। আমাদের পরাজয় থেকে শিক্ষা নিতে হবে এবং সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’
বার্সার বিপক্ষে এভাবে বিধ্বস্ত হওয়া রিয়ালের জন্য যেমন হতাশাজনক, তেমনি এল ক্লাসিকোর উত্তেজনায় মুগ্ধ ফুটবলপ্রেমীদের জন্যও এটি ছিল একপেশে এক ম্যাচ।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
স্বপ্নের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে জুয়েল, অর্থাভাবে অনিশ্চিত ভুটান যাত্রা
ভুটান প্রিমিয়ার লিগের পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ক্লাব পারো এফসিতে খেলার সুযোগ পেয়েছেন নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের নওদাবস গ্রামের তরুণ ফুটবলার মো. জুয়েল রানা। কিন্তু অর্থাভাবে অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে তার স্বপ্নপূরণের যাত্রা।
শৈশব থেকেই ফুটবলের প্রতি ছিল জুয়েলের গভীর ভালোবাসা। স্থানীয় পর্যায়ের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের মাধ্যমে নিজেকে চিনিয়েছেন জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়েও। খেলেছেন ঢাকা সিটি কাপ, মেয়র কাপ, এমনকি বসুন্ধরা অনূর্ধ্ব-১৮ দলের হয়ে। সেই ধারাবাহিকতায় ডাক পান ভুটানের পেশাদার ফুটবল লিগের ট্রায়াল ক্যাম্পে, যেখানে ৫০ জনের মধ্যে বাংলাদেশের মাত্র তিনজন নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের একজন জুয়েল। বর্তমানে জুয়েল ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যামার স্কুল, রংপুর-এর নবম শ্রেণির বাংলা ভার্সনের শিক্ষার্থী।
আরো পড়ুন:
১০ গোলের রোমাঞ্চকর ম্যাচে সিউলকে বিধ্বস্ত করল বার্সেলোনা
রোনালদোর অদম্য ক্ষুধা, দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে জেতালেন আল-নাসরকে
নভেম্বর মাসের শেষের দিকে হতে যাওয়া লিগে অংশ নিতে হলে এর আগেই পাসপোর্ট, বিমানের টিকিট ও খেলার কিটসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু এখানেই সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থ।
জুয়েলের বাবা একজন দিনমজুর ও ভ্যানচালক। এমন আর্থিক অবস্থায় এত ব্যয়ভার বহন করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
জুয়েল রানা বলেন, “আমি ডোমার হাইস্কুল মাঠে খেলা শুরু করি, ডোমার ফুটবল একাডেমির কোচ সুজন ভাইয়ের কাছেই প্রথম হাতে খড়ি। এরপর উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় পর্যায়ে এবং বসুন্ধরা অনূর্ধ্ব-১৮ দলের হয়ে খেলি। ভুটান থেকে পারো এফসির প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসে। তাদের নেয়া ট্রায়ালে ৫০ জনের মধ্যে ৫ জন নির্বাচিত হই, পরে মেডিকেল টেস্টের পর আমিসহ ৩ জন সুযোগ পাই। লিগ শুরু হওয়ার এক মাস আগেই যেতে হবে। কিন্তু এখন অর্থের কারণে যাওয়া হবে কি না, সেটা অনিশ্চিত। পাসপোর্ট, বিমানের টিকিট, কিটস সবকিছুতেই টাকা দরকার। আমি শুধু চাই কেউ পাশে দাঁড়াক। আমি দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে চাই।”
জুয়েলের মা রশিদা বেগম বলেন, “ছেলেটা অনেক কষ্ট করে আজ এই পর্যন্ত এসেছে। এখন যদি শুধু টাকার অভাবে তার স্বপ্ন থেমে যায়, সেটা আমাদের সহ্য হবে না।”
জুয়েলের বাবা জয়নুল ইসলাম বলেন, “আমি দিনমজুর মানুষ, ছেলের স্বপ্নপূরণে কিছুই করতে পারছি না। এই কষ্ট ভাষায় বোঝানো যায় না। সরকার কিংবা কেউ যদি সাহায্য করত, আমার ছেলে বিদেশে গিয়ে খেলতে পারত।”
এলাকাবাসীরাও জুয়েলের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, “জুয়েল অনেক ভালো খেলে, সে আমাদের গর্ব। কিন্তু তার পরিবার অত্যন্ত অসচ্ছল। সরকার বা সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে সে একদিন দেশের নাম উজ্জ্বল করবে।”
ডোমার ফুটবল একাডেমির কোচ মো. সাদিকুর রহমান সুজন বলেন, “জুয়েল আমাদের একাডেমির অন্যতম প্রতিভাবান খেলোয়াড়। সে তার পরিশ্রমে অনেক দূর এগিয়েছে। সে ভুটানে খেলার সুযোগ পেয়েছে, কিন্তু এখন শুধু অর্থের অভাবে তার যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে গেছে। তার বাবা একজন ভ্যানচালক—এই খরচ বহন তার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি অনুরোধ করব সরকার বা সমাজের বিত্তবানরা যেন জুয়েলের পাশে দাঁড়ায়।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শায়লা সাঈদ তন্বী বলেন, “আমরা জুয়েলকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার চেষ্টা করব। আপনারাও সকলে জুয়েলের পাশে দাঁড়ান, সে যেন দেশের গর্ব হয়ে ওঠে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
একজন উদীয়মান প্রতিভাবান ফুটবলারের স্বপ্ন যেন শুধু আর্থিক সংকটে থেমে না যায়। এই লক্ষ্যেই জুয়েলের পরিবার সমাজের দানশীল, খেলাপ্রেমী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সহযোগিতার আবেদন জানিয়েছেন।
ঢাকা/সিথুন/আমিনুল