প্রেমে জড়িয়ে প্রতারণার শিকার, ‘আমার জীবনের মূল্য নেই’ লিখে চিরতরে চলে গেল কিশোরী
Published: 13th, January 2025 GMT
প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে কিশোরী (১৭) অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিল। আর সেই তরুণ বিয়ে করেছিলেন আরেকজনকে। স্থানীয়ভাবে সালিস ও মামলা করেও কিশোরী কোনো প্রতিকার পায়নি। অবশেষে আত্মহননেই তার জীবনপ্রদীপ নিভে গেল। এই ঘটনা কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার।
গত বুধবার রাতে ওই কিশোরী বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে ভূরুঙ্গামারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসক তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে কিশোরী শনিবার সকালে মারা যায়। ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।
আত্মহত্যার আগে ওই কিশোরী একটি চিরকুট লিখে গেছে। এতে সে লিখেছে, ‘আমার জীবনের মূল্য নেই, এসবের পিছনে সব দায়ি জাহেদা, আমি এই দুনিয়া থেকে চলে যায়তেছি (যাইতেছি), আমি তখনি শান্তি পাব, যখন জাহেদা আর কাওছার সারা জীবন জেলে ধুঁকে ধুঁকে মরবে। আমি তখনই শান্তি পাব।’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কাওছার (২২) নামের এক তরুণের সঙ্গে ওই কিশোরীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। একপর্যায়ে কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হলে কিশোরীর পরিবার বিয়ের জন্য কাওছারকে চাপ দেয়। এ নিয়ে কয়েক দফা সালিস হয়। এতে কোনো সুরহা হয়নি। অন্যদিকে কাওছার গোপনে অন্যত্র বিয়ে করেন। এ ঘটনায় কিশোরীর মা বাদী হয়ে উপজেলার কচাকাটা থানায় ধর্ষণের অভিযোগে কাওছারের বিরুদ্ধে মামলা করেন। কাউছারের পরিবারের সদস্যদেরও আসামি করা হয়। পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় কিশোরী আত্মহত্যা করে।
কচাকাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সারোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোরীর মায়ের করা মামলা ৭ জানুয়ারি রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যেই ৮ জানুয়ারি রাতে ওই কিশোরী বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরে রংপুর মেডিকেলে মারা গেছে বলে শুনেছি। গতকাল রাতে তার লাশ দাফন করা হয়েছে। আজ সকালে ওই কিশোরীর পরিবারের কাছে গিয়েছিলাম। তারা আজ সন্ধ্যায় হত্যা মামলা করবে বলে জানিয়েছে। আগের মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শুল্ক হ্রাসে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই, আরো কমাতে আলোচনার পরামর্শ
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হ্রাসে আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই মন্তব্য করে শুল্ক আরো কমাতে আলোচনার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান।
তিনি বলেন,“বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হ্রাসে আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ নির্বাহী আদেশে স্পষ্ট বলেছে, বেশকিছু দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বা নিরাপত্তা চুক্তি আলোচনা এখনো চলমান রয়েছে, যেগুলো সম্পাদিত হলে এসব দেশের শুল্ক আরো কমতে পারে। তাই বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হ্রাস আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।”
শনিবার (২ আগস্ট) রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ সভাকক্ষে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে বারে গুলিতে নিহত ৪, সন্দেহভাজন পলাতক
৩০ বছরের হিমায়িত ভ্রুণ থেকে জন্ম নিলো জীবিত শিশু
তিনি বলেন, “প্রথমেই আমি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, তারা একটি ভারসাম্যপূর্ণ শুল্ক কাঠামো ঘোষণা করেছে। যেটি বিগত প্রায় ৪ মাস যাবৎ আমাদের আমাদের উদ্বেগের কারণ ছিল। বাংলাদেশ থেকে অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ পুননির্ধারণ করা হয়েছে। যা আমাদের প্রধান পোশাক রপ্তানিকারী প্রতিযোগীদের তুলনায় সমান বা কাছাকাছি এবং কিছু প্রধান প্রতিযোগী যেমন চীন (৩০ শতাংশ) ও ভারতের (২৫ শতাংশ) তুলনায় কম।”
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞতার সাথে বলতে চাই আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, বিশেষ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা, নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও তাদের টিম এই কঠিন আলোচনার সময় যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তা প্রশংসনীয়। তাদের প্রচেষ্টাতেই বাংলাদেশ একটি বিপর্যয় এড়াতে পেরেছে।”
মাহমুদ হাসান খান বলেন, “এই ফলাফল একদিনে আসেনি, যাত্রাটি ছিল অনেক চ্যালেঞ্জের।২ এপ্রিল যখন যুক্তরাষ্ট্র ‘লিবারেশন ডে ট্যারিফ’ নামে নতুন শুল্ক ঘোষণা করল, তখন বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ ধার্য করা হয়। তখন ভারতের ওপর ২৬ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ৩২ শতাংশ ও পাকিস্তানের ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হলো। এটা আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য একটি বড় হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়। কারণ এত বড় শুল্ক ব্যবধানে বাজার ধরে রাখা সম্ভব নয়। আমাদের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ২০ শতাংশ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে, আর দেশটিতে আমাদের মোট রপ্তানির ৮৭ শতাংশ হয় তৈরি পোশাক পণ্য।”
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “গোপনীয়তা রক্ষা চুক্তির কারণে বেসরকারি খাত এই আলোচনায় সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল না। তাই রপ্তানিকারক ও ক্রেতাদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছিল, ‘কী হতে যাচ্ছে?’ আমরা সত্যিই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। যখন দেখলাম ২ জুলাই ভিয়েতনামের ওপর শুল্ক ৪৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হলো। আর প্রায় তিন মাস নেগোশিয়েশনের পর ৭ জুলাই আমাদের ওপর শুল্ক মাত্র ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হলো, তবে পুনরায় আলোচনার জন্য ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময় পাওয়া যায়। এরই মধ্যে পরবর্তী ২ সপ্তাহে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনও ১৯ শতাংশ হারে সমঝোতায় পৌঁছায়।”
তিনি বলেন, “আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি আলোচনায় সম্পৃক্ত হতে। সব রকম তথ্য-বিশ্লেষণ দিয়ে সরকারকে সহায়তা করতে। আমরা চেষ্টা করেছি যেন বিষয়টিকে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ গুরত্ব দেওয়া হয়। এছাড়া আমরা বিজিএমইএর পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সবার সাথে যোগাযোগ করেছি। এমনকি আমরা ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গেও বৈঠক করেছি।”
মাহমুদ হাসান খান বলেন, “বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক অবধারিতভাবে আমাদের পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়াবে। যেখানে শিল্পগুলো আগে থেকেই ঊর্ধ্বমুখী উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে তাল মেলাতে প্রাণান্তকরভাবে যুদ্ধ করছে। এক্ষেত্রে সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলো যাতে করে ব্যবসা থেকে ছিটকে না পড়ে, তা সরকারকে নজরদারিতে রাখতে হবে। আমরা একান্তভাবে আশা করি, শিল্প ও দেশের স্বার্থে সরকারের সকল নীতি সহায়তা চলমান থাকবে।”
“এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে, বিশেষ করে কাস্টমস সংক্রান্ত নীতিগুলো শিল্পবান্ধব হবে, চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং শিল্প নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ পাবে।”
তিনি বলেন, “মার্কিন রপ্তানির প্রায় ৭৫ শতাংশ হচ্ছে আমাদের তুলাভিত্তিক পোশাক। শুল্ক সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে বলা আছে, যদি নূন্যতম ২০ শতাংশ আমেরিকার কাঁচামাল (যেমন আমেরিকার তুলা) ব্যবহার করা হয়, তাহলে আমেরিকার কাঁচামালের মূল্যের ওপর এই অতিরিক্ত ২০ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য হবে না। অর্থাৎ আমেরিকার কাঁচামাল ব্যবহার করলে আমরা বাড়তি কিছু শুল্ক ছাড় পাব।”
ঢাকা/নাজমুল/সাইফ