হাজার প্রদীপে আলোকিত গণ বিশ্ববিদ্যালয়
Published: 20th, October 2025 GMT
সন্ধ্যার আকাশ ঢেকে গেছে নরম কুয়াশায়। আকাশের বুক জুড়ে নরম কুয়াশার পরত, আর মাটির উপর ঝলমলে হাজার প্রদীপের সারি। সব মিলিয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ধ্যা যেন আজ অন্যরকম।
ট্রান্সপোর্ট চত্বর থেকে শুরু করে বাদামতলা হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে ছোট ছোট প্রদীপ—যেন কারো সূক্ষ্ম আঁচড়ে আঁকা আলোর নদী। প্রতিটি শিখা যেন অন্ধকারকে ভাঙতে চায়, হৃদয়ের অজানা এক অদৃশ্য পথ দেখায়।
আরো পড়ুন:
সুন্দরবনে রাসপূজায় যেতে বন বিভাগের ৫ রুট, মানতে হবে যেসব নির্দেশনা
লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে গোপালগঞ্জে বসেছে প্রতিমার হাট
প্রথমবারের মতো ২০১৯ সালে ক্যাম্পাসে দীপাবলি উদযাপন করা হয়। দীর্ঘ সময় পর সোমবার (২০ অক্টোবর) দ্বিতীয়বারের মতো এবার শ্যামা কালীপূজাকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এ দীপাবলি উৎসবের আয়োজন করে ‘বাণী অর্চনা সংঘ’। শিক্ষার্থীদের হাতে তৈরি আলপনা আর মাটির প্রদীপে আজ আলোকিত হয়ে উঠেছে পুরো ক্যাম্পাস।
এর আগে, বিকেল থেকেই শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে শুরু করেন ট্রান্সপোর্ট চত্বরে। কেউ হাতে প্রদীপ নিচ্ছেন, কেউ ঝাড়বাতি জ্বালাচ্ছেন, কেউবা বন্ধুর সঙ্গে হাসিতে মেতে উঠছেন।
সন্ধ্যা নামতেই এক জাদুকরী দৃশ্যে রূপ নেয় পুরো ক্যাম্পাস। সারি সারি প্রদীপের আলোয় ক্যাম্পাসের লাল ইটের পথ হয়ে ওঠে সোনালি। বাতাসে ভেসে আসছে ধূপের গন্ধ। হাসির ঝলক আর আলোর মায়ায় মুহূর্তগুলো থেকে যায় স্মৃতির ভাঁজে।
এক শিক্ষার্থী বললেন, “সারা বছর ক্লাস, পরীক্ষা, ব্যস্ততা— আজকের এই সন্ধ্যা যেন একটু থেমে থাকার দিন। প্রদীপ জ্বালানোটা শুধু ধর্মীয় আয়োজন নয়, বরং একসঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার একটা উপলক্ষ।”
বাণী অর্চনা সংঘের সভাপতি অনিক মালো বলেন, “ক্যাম্পাসে দীপাবলীর উৎসব উদযাপন করতে পেরে নিজের কাছে খুব উৎফুল্ল মনে হচ্ছে। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে সব অপশক্তি দূর হবে, এটা আশা করি।”
মূল ফটকের সামনে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি প্রদীপের আলো বাতাসে কাঁপছে, যেন এক জীবন্ত শিখা। কেউ বাজি ফুটাচ্ছে, কেউ কেউ শাড়ি পরে এসেছে–মনোযোগ ভালো ছবির ফ্রেমে। সেলফি তুলছে। তবে উৎসবের মধ্যে কোথাও নেই বিশৃঙ্খলা— আছে শুধু উচ্ছ্বাস আর আলোর স্নিগ্ধতা। মিষ্টিমুখ চলছে, কেউ মিষ্টি মুখে তুলে বলছে, “এত সুন্দর ক্যাম্পাস আগে দেখিনি!”
ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সাইন্সেস অনুষদের শিক্ষার্থী ঋতু রানী বলেন, “পরিবারের বাইরে প্রথমবারের মত দীপাবলি পালন করছি। সবারর অংশগ্রহণে বেশ আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ হচ্ছে।”
ট্রান্সপোর্ট চত্বরে তখন চলছে আরেক দৃশ্য। গানের আসর বসেছে ছোট করে। কেউ গিটার হাতে, কেউ তাল দিচ্ছে তালি দিয়ে। লালন গীতির সুরের ভেলায় মিলেমিশে যাচ্ছে দীপের আলো আর তারুণ্যের হাসি। রাত যত গভীর হচ্ছে, প্রদীপগুলো তত নিভে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের চোখে তখনও জ্বলছে আলো। সেই আলো শুধু প্রদীপের নয়। একাত্মতার, সৌন্দর্যের, আর জীবনের প্রতি ভালোবাসার আলো।
রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী সৌরভ রায় বলেন, “শ্যামা পূজায় পৃথিবীর সকল অশুভ শক্তি বিরুদ্ধে আমরা প্রদীপ প্রজ্বলন করি। আমরা চাই এই প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে সব খারাপ শক্তির বিনাশ হোক।”
আজকের এই এক হাজার প্রদীপের সন্ধ্যা যেন শুধু আলোর উৎসব নয়, বরং শিক্ষার্থীদের অন্তরের এক দীপান্বিত যাত্রা। প্রতিটি শিখা যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে, জীবন ছোট ছোট আলোয় পূর্ণ, আর সেই আলোর উষ্ণতায় আমরা সবাই এক।
ঢাকা/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ প বল সন ধ য র র মত
এছাড়াও পড়ুন:
মোরাল প্যারেন্টিং বৃত্তি পেল অর্ধশতাধিক ইবি শিক্ষার্থী
‘উইথ দ্য কনভিকশন টু বিল্ড এ মোরাল সোসাইটি’ প্রতিপাদ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বৃত্তি উৎসবের আয়োজন করেছে শাখা মোরাল প্যারেন্টিং ট্রাস্ট। এর আওতায় ৬০ জনের অধিক শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করে সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী, অরাজনৈতিক এই সংগঠনটি।
রবিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র-নজরুল একাডেমিক ভবনে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়।
আরো পড়ুন:
খুবির হল ও ক্যাফেটেরিয়ার খাবারে টেস্টিং সল্ট ব্যবহারের অভিযোগ
জিএস পদে হারলেও সিনেটে নির্বাচিত ফাহিম
অনুষ্ঠানে সংগঠনটির ক্যাম্পাস গার্ডিয়ান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. ধনঞ্জয় কুমার, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহাদাৎ হোসেন আজাদ, সহযোগী অধ্যাপক প্রদীপ কুমার অধিকারী ও হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাফর আলী।
সংগঠনটির ক্যাম্পাস প্রতিনিধি মিশুক শাহরিয়ার বলেন, “মোরাল প্যারেন্টি ট্রাস্ট একটি সামাজিক অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। বাংলাদেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় এই সংগঠনটি অদম্য, অস্বচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহযোগিতা করে থাকে। এছাড়াও সংগঠনটি শিক্ষার্থীদের আত্মউন্নয়ন, ব্যক্তিগত দক্ষতাবৃদ্ধি নিয়ে কাজ করে।পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণ, চিকিৎসা পরামর্শ, নৈতিক সমাজ গঠন ও সুন্দর সমৃদ্ধ দেশ গঠনে মোরাল প্যারেন্টিং পরিবার কাজ করে যাচ্ছে।”
ক্যাম্পাস গার্ডিয়ান অধ্যাপক ড. ধনঞ্জয় কুমার বলেন, “এসব অনুষ্ঠানে মোরাল চাইল্ডদের সর্বোচ্চ উপস্থিতি কামনা করছি। যারা আমাদের বৃত্তি দিচ্ছেন, তাদের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল থাকব এবং তাদের কমিটমেন্টের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকব। এই বৃত্তির অর্থ নিজেদের উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করব।”
সংগঠনটি বৃত্তি উৎসব, ফ্রি চিকিৎসা পরামর্শ, সাবলম্বী প্রজেক্ট, ১০০ বই পড়া উৎসব, বেসিক কম্পিউটার কোর্স, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, গবেষণা ও বিদেশে অধ্যয়ন ও আইএলটিএসসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
ঢাকা/তানিম/মেহেদী