ব্যাংক কর্মচারীকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে তুলে নিয়ে ছিনতাই
Published: 14th, January 2025 GMT
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে দিনে-দুপুরে এজেন্ট ব্যাংকের এক কর্মচারীকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে অপহরণ ও মারধর করে ১৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলার ইছাপুরা-ভবানীপুর সড়কের কাঁঠালতলী গ্রামের ফারুকের পোল্ট্রি ফার্মের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
অপহরণ ও ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন উপজেলার জৈনসার ইউনিয়নের ভবানীরপুর ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট শাখার কর্মচারী আফজাল শেখ। তিনি ভবানীরপুর পশ্চিপাড়া গ্রামের মৃত জসিমউদ্দিন শেখের ছেলে।
আফজাল শেখ সাংবাদিকদের জানান, ভবানীপুর এজেন্ট শাখার জন্য মঙ্গলবার দুপুরে ইসলামী ব্যাংক নিমতলা শাখা থেকে ১৫ লাখ ৭ ০ হাজার টাকা নিয়ে নিমতলা বাসে করে ইছাপুরা আসেন তিনি। পরে ইছাপুরা থেকে ভবানীপুর এজেন্ট শাখায় যাওয়ার উদ্দেশে ব্যাটারি চালিত অটো রিকসায় ওঠেন। অটো রিকসাটি কাঠালতলী গ্রামে ফারুকের পোল্টি ফার্মের সামনে পৌঁছালে একটি মাইক্রোবাস তার রিকসার গতিরোধ করে।
৪-৫ লোক হ্যান্ডকাফ পরিয়ে অস্ত্রের মুখে তাকে গাড়িতে তোলে। তার চোখের চশমা ভেঙে চোখ বেঁধে ফেলে ওই দুর্বৃত্তরা। চোখ বাঁধা এবং হ্যান্ডকাফ লাগানোর বিষয়টি আফজাল দুর্বৃত্তের কাছে জানতে চাইলে, তাকে মারধর করে এবং বলে তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা রয়েছে এজন্য তাকে কোর্টে চালান দিবে। পরে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে তার কাছ থেকে ১৫ লাখ ৭ ০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেস ওয়ের একটি নির্জন স্থানে চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
এ ব্যাপারে সিরাজদিখানের ইসলামী ব্যাংক ভবানীপুর আউটলেট শাখার এজেন্ট কামাল শেখ বলেন, “আফজাল প্রায় সময় এভাবে টাকা আনা-নেওয়ার কাজ করতো। কখনো এমন ঘটনা ঘটেনি। আমরা থানা পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছি। যারা আফজালকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের পরনে ডিবির জ্যাকেট ছিল। যেখান থেকে আফজালকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজও আফজালকে তুলে নেওয়ার ভিডিও আমরা দেখেছি।”
এ বিষয়ে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সিরাজদিখান সার্কেল ) আ ন ম ইমরান খান মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে বলেন, “আমরা ঘটনাস্থল এবং যার কাছ থেকে টাকা ছিনতাই হয়েছে তাঁর সঙ্গে কথা বলে তদন্ত কাজ শুরু করেছি। যতদূর শুনেছি, আফজাল খানকে মাইক্রোস করে উঠিয়ে নিয়ে মারধর করে এক্সপ্রেসওয়ের নিমতলা আবদুল্লাপুরের মাঝামাঝি এলাকায় ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত, গাড়িতে থাকা ব্যক্তিদের গায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহীনির পোশাক ছিল কিনা এটা আফজাল খান বলতে পারছেন না। এ ঘটনায় এখনো কোনো অভিযোগ করা হয়নি।”
ঢাকা/রতন/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।
আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।
বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’
এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।