Samakal:
2025-11-03@13:59:14 GMT

হায়রে কপাল মন্দ!

Published: 14th, January 2025 GMT

হায়রে কপাল মন্দ!

প্রশাসনিক কার্যক্রমের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়েরই যেইখানে অধিকাংশ সিসি ক্যামেরা বন্ধ তখন ‘হায়রে কপাল মন্দ’ ব্যতীত কী আর রহিয়াছে বলিবার! মঙ্গলবার প্রকাশিত সমকালের শীর্ষ প্রতিবেদনে উঠিয়া আসা চিত্র আমাদের স্মরণ করাইয়া দিতেছে গীতিকার আমজাদ হোসেনের বহুল জনপ্রিয় সংগীতের সেই চরণ- ‘হায়রে কপাল মন্দ/ চোখ থাকিতে অন্ধ’! নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা যেইখানে ‘চক্ষু’রূপে ব্যবহৃত হইতেছে, সেই ক্যামেরা বন্ধ থাকিবার বিষয়ে আলোচ্য সংগীতের ন্যায় আক্ষেপ প্রকাশ ব্যতীত আমরা আর কী করিতে পারি? আক্ষেপের অন্তরালে অবশ্য এই প্রশ্ন ঢাকা পড়িয়া যায় না– সচিবালয়ে গতিবিধি পর্যবেক্ষণে স্থাপিত সোয়া ছয়শত ক্যামেরার প্রায় ছয়শতই এত শীঘ্র বিনষ্ট হইল কী প্রকারে? খোদ সচিবালয়েই যখন নিরাপত্তার এই হাল তখন অপরাপর সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার পরিস্থিতি সহজেই অনুমেয়। 

বস্তুত বিদায়ী বৎসরের শেষ সপ্তাহে সচিবালয়ে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের অব্যবহিত পরই প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা লইয়া বিস্তর প্রশ্ন উঠিয়াছিল। যদিও বর্তমানে সচিবালয়ে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হইয়াছে; আমরা মনে করি, প্রথমেই ইহার ‘চক্ষু’ সংস্কার করিতে হইবে। সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের বরাতে সমকালের প্রতিবেদন হইতে জানা যাইতেছে, গত বৎসরও সচিবালয়ের নিরাপত্তার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকার ক্যামেরাসহ আরও কতিপয় সরঞ্জাম ক্রয়ের উদ্যোগ লওয়া হইলেও প্রথম যাত্রায় উহা সফল হয় নাই। অতঃপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উপসচিবকে আহ্বায়ক করিয়া যেই কমিটি গঠন করা হয়, ১৫ ডিসেম্বর সেই কমিটির প্রতিবেদনে সচিবালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্যামেরা স্থাপনের পরামর্শ দেওয়া হইয়াছে।  
সচিবালয়ের নিরাপত্তার স্বার্থে কমিটির পরামর্শ নিশ্চয় গ্রহণ করিতে হইবে। কিন্তু এত দিবস-রজনী কী প্রকারে এমন ‘অন্ধ’ ছিল রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠান? একই সঙ্গে বিপুলসংখ্যক সিসি ক্যামেরাই বা কেন দ্রুত অকার্যকর হইল এবং নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্টরা কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই? সেই বিষয়গুলিও কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ জরুরি ছিল। বিশেষ করিয়া যেইখানে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন হইতে বিপুল অর্থ ব্যয় করিয়া উন্নত এই সকল ক্যামেরা ক্রয় করা হইল, সেইগুলি অকার্যকর হইবার কারণ কী? উহা কি অব্যবস্থাপনা, নাকি মানগত– অন্তর্নিহিত কারণ জানাও গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে সম্প্রতি নূতন করিয়া সরঞ্জাম ক্রয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে পত্র দেওয়া হইয়াছে, সেই অর্থ ছাড় করিলে ক্যামেরাসহ প্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো সম্ভব হইবে।
সচিবালয়ের নিরাপত্তার জন্য কমিটির প্রতিবেদনে ব্যাগেজ স্ক্যানার স্থাপনের পরামর্শও দেওয়া হইয়াছে। অথচ সমকালের প্রতিবেদনে প্রকাশ, ২০২২ সালে একটি ব্যাগেজ স্ক্যানার জার্মানি হইতে আমদানি করা হইয়াছিল এবং একই সঙ্গে প্রথমবারের মতো সচিবালয়ের চারটি ফটকে গাড়ি স্ক্যানারও স্থাপন করা হইয়াছিল। উহার সকলই এখন অকার্যকর। যুক্তরাষ্ট্র হইতে ক্রয় করা এই সকল স্ক্যানার এত অল্প সময়ের ব্যবধানে কেন বিকল হইল– সেই প্রশ্নও উঠিয়াছে। আমরা মনে করি, মেয়াদ থাকিবার পূর্বেই যেই সকল সিসি ক্যামেরা ও স্ক্যানার বিকল হইয়াছে, সেইগুলির ব্যাপারে ব্যবস্থা লওয়া দরকার। সেইগুলি মেরামতযোগ্য হইলে তাহা সম্পাদনকরত পুনরায় কার্যকর করিতে হইবে এবং যেই সকল কোম্পানির মাধ্যমে ক্রয় করা হইয়াছে, তাহাদের জবাবদিহির আওতায় আনিতে হইবে। 

টেকসই নিরাপত্তা নিশ্চিত করিতে আমরা চাহি, সচিবালয়ের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তার যন্ত্রপাতি ক্রয় করিবার পূর্বে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ পরামর্শ লওয়া উচিত। ক্রয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি যদ্রূপ গুরুত্বপূর্ণ, তৎসহিত ভবিষ্যতে এই সকল যন্ত্রপাতি অকার্যকর হইলে তৎক্ষণাৎ মেরামতের ব্যবস্থাও থাকা চাই। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়কে এইভাবে অরক্ষিত রাখা যাইবে না। 
 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারের ভেতরে একটা অংশ নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে: এনসিপি

সরকারের ভেতরের একটি পক্ষ ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের বাইরে গিয়ে নিজেরাই ঐকমত্য কমিশন হওয়ার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, এই চেষ্টার কারণে নির্বাচন ঝুঁকিতে পড়বে।

আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আখতার হোসেন এ কথা বলেন।

আখতার হোসেন বলেন, তাঁদের কাছে স্পষ্টতই প্রতীয়মান যে সরকারের ভেতরের কোনো একটা অংশ সংস্কারকে ভন্ডুল করে নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ–আলোচনার ভিত্তিতেই কমিশন সুপারিশ উপস্থাপন করেছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, সেই সুপারিশের ভিত্তিতেই সরকার আদেশ জারি করবে, সেটাই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যখন সরকারের তরফ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে আরও এক সপ্তাহ রাজনৈতিক দলগুলোকে আলাপ–আলোচনার কথা বলা হয়, তখন মনে হয় যে সরকার আসলে এই সংস্কারের বিষয়গুলো নিয়ে সাপ-লুডো খেলছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ৯৬-তে পৌঁছে গিয়েছিলাম, সেটাকে আবার তিনে নিয়ে আসা হয়েছে সাপ কেটে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের বর্তমান যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে।’

অতি দ্রুত সরকারকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, সরকারকে নিজেকেই দায়িত্ব নিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করতে হবে। সামনের সংসদকে গাঠনিক ক্ষমতা প্রদান করার মধ্য দিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। গণভোটের মাধ্যমে অর্জিত জনগণের অভিপ্রায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে যেন বাস্তবায়িত হয়, সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ