Samakal:
2025-06-15@22:51:31 GMT

হায়রে কপাল মন্দ!

Published: 14th, January 2025 GMT

হায়রে কপাল মন্দ!

প্রশাসনিক কার্যক্রমের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়েরই যেইখানে অধিকাংশ সিসি ক্যামেরা বন্ধ তখন ‘হায়রে কপাল মন্দ’ ব্যতীত কী আর রহিয়াছে বলিবার! মঙ্গলবার প্রকাশিত সমকালের শীর্ষ প্রতিবেদনে উঠিয়া আসা চিত্র আমাদের স্মরণ করাইয়া দিতেছে গীতিকার আমজাদ হোসেনের বহুল জনপ্রিয় সংগীতের সেই চরণ- ‘হায়রে কপাল মন্দ/ চোখ থাকিতে অন্ধ’! নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা যেইখানে ‘চক্ষু’রূপে ব্যবহৃত হইতেছে, সেই ক্যামেরা বন্ধ থাকিবার বিষয়ে আলোচ্য সংগীতের ন্যায় আক্ষেপ প্রকাশ ব্যতীত আমরা আর কী করিতে পারি? আক্ষেপের অন্তরালে অবশ্য এই প্রশ্ন ঢাকা পড়িয়া যায় না– সচিবালয়ে গতিবিধি পর্যবেক্ষণে স্থাপিত সোয়া ছয়শত ক্যামেরার প্রায় ছয়শতই এত শীঘ্র বিনষ্ট হইল কী প্রকারে? খোদ সচিবালয়েই যখন নিরাপত্তার এই হাল তখন অপরাপর সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার পরিস্থিতি সহজেই অনুমেয়। 

বস্তুত বিদায়ী বৎসরের শেষ সপ্তাহে সচিবালয়ে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের অব্যবহিত পরই প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা লইয়া বিস্তর প্রশ্ন উঠিয়াছিল। যদিও বর্তমানে সচিবালয়ে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হইয়াছে; আমরা মনে করি, প্রথমেই ইহার ‘চক্ষু’ সংস্কার করিতে হইবে। সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের বরাতে সমকালের প্রতিবেদন হইতে জানা যাইতেছে, গত বৎসরও সচিবালয়ের নিরাপত্তার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকার ক্যামেরাসহ আরও কতিপয় সরঞ্জাম ক্রয়ের উদ্যোগ লওয়া হইলেও প্রথম যাত্রায় উহা সফল হয় নাই। অতঃপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উপসচিবকে আহ্বায়ক করিয়া যেই কমিটি গঠন করা হয়, ১৫ ডিসেম্বর সেই কমিটির প্রতিবেদনে সচিবালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্যামেরা স্থাপনের পরামর্শ দেওয়া হইয়াছে।  
সচিবালয়ের নিরাপত্তার স্বার্থে কমিটির পরামর্শ নিশ্চয় গ্রহণ করিতে হইবে। কিন্তু এত দিবস-রজনী কী প্রকারে এমন ‘অন্ধ’ ছিল রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠান? একই সঙ্গে বিপুলসংখ্যক সিসি ক্যামেরাই বা কেন দ্রুত অকার্যকর হইল এবং নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্টরা কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই? সেই বিষয়গুলিও কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ জরুরি ছিল। বিশেষ করিয়া যেইখানে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন হইতে বিপুল অর্থ ব্যয় করিয়া উন্নত এই সকল ক্যামেরা ক্রয় করা হইল, সেইগুলি অকার্যকর হইবার কারণ কী? উহা কি অব্যবস্থাপনা, নাকি মানগত– অন্তর্নিহিত কারণ জানাও গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে সম্প্রতি নূতন করিয়া সরঞ্জাম ক্রয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে পত্র দেওয়া হইয়াছে, সেই অর্থ ছাড় করিলে ক্যামেরাসহ প্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো সম্ভব হইবে।
সচিবালয়ের নিরাপত্তার জন্য কমিটির প্রতিবেদনে ব্যাগেজ স্ক্যানার স্থাপনের পরামর্শও দেওয়া হইয়াছে। অথচ সমকালের প্রতিবেদনে প্রকাশ, ২০২২ সালে একটি ব্যাগেজ স্ক্যানার জার্মানি হইতে আমদানি করা হইয়াছিল এবং একই সঙ্গে প্রথমবারের মতো সচিবালয়ের চারটি ফটকে গাড়ি স্ক্যানারও স্থাপন করা হইয়াছিল। উহার সকলই এখন অকার্যকর। যুক্তরাষ্ট্র হইতে ক্রয় করা এই সকল স্ক্যানার এত অল্প সময়ের ব্যবধানে কেন বিকল হইল– সেই প্রশ্নও উঠিয়াছে। আমরা মনে করি, মেয়াদ থাকিবার পূর্বেই যেই সকল সিসি ক্যামেরা ও স্ক্যানার বিকল হইয়াছে, সেইগুলির ব্যাপারে ব্যবস্থা লওয়া দরকার। সেইগুলি মেরামতযোগ্য হইলে তাহা সম্পাদনকরত পুনরায় কার্যকর করিতে হইবে এবং যেই সকল কোম্পানির মাধ্যমে ক্রয় করা হইয়াছে, তাহাদের জবাবদিহির আওতায় আনিতে হইবে। 

টেকসই নিরাপত্তা নিশ্চিত করিতে আমরা চাহি, সচিবালয়ের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তার যন্ত্রপাতি ক্রয় করিবার পূর্বে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ পরামর্শ লওয়া উচিত। ক্রয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি যদ্রূপ গুরুত্বপূর্ণ, তৎসহিত ভবিষ্যতে এই সকল যন্ত্রপাতি অকার্যকর হইলে তৎক্ষণাৎ মেরামতের ব্যবস্থাও থাকা চাই। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়কে এইভাবে অরক্ষিত রাখা যাইবে না। 
 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

২২ ক্যাডার নিয়ে চলতেন স্বেচ্ছাসেবক দলের জিতু

বগুড়ায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত ও বাবাকে খুনে অভিযুক্ত জিতু ইসলাম দলীয় প্রভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কথায় কথায় যাকে-তাকে অহেতুক মারধর করতেন। চলতেন ২২ জনের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। তারা সবাই নানা অপকর্মে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। তাঁর আয় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা থেকে। গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, জিতু ফুলবাড়ী কারিগরপাড়ার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। ২০০৩ সালে এলাকায় বালু ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ রবিউল ইসলামকে খুন করেন। সেই মামলায় তাঁর ১৪ বছর সাজা হয়। সাজা খেটে তিন বছর আগে বের হন। এর পর এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁর বাহিনীতে যে ২২ জন সদস্য, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের পদ-পদবিতে নেই। হত্যা মামলা ছাড়াও জিতুর বিরুদ্ধে একটি মাদক ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।

ফুলবাড়ীর এক মুদি দোকানি বলেন, জিতু মাঝেমধ্যে তাঁর দোকান থেকে বাকি নিতেন। দু’বছরে বাকির পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার টাকা হয়। তখন একদিন টাকা চান। এ কারণে জিতু তাঁকে মারধর করে নাকে খত নেন।
বৃন্দাবন এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাঝেমধ্যে জিতু তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হতেন। মোটা অঙ্কের চাঁদা চাইতেন। চাঁদার কমপক্ষে অর্ধেক দিয়ে তবে নিস্তার পাওয়া যেত। এ ছাড়া ঈদে সেলামির নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো তাঁকে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চান জিতু। না দেওয়ায় দোকানে ককটেল হামলা করেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আগস্টের পর জিতু বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ছোট ভাই মিতুলও তাঁর বাহিনীর সদস্য।

জিতু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সহসাধারণ সম্পাদকের পদ পান। সন্ত্রাসী হয়ে দলের পদ পাওয়ায় এলাকায় তাঁকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পদ পেয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জিতুর কারণে আমরা মুখ খুলতে পারি না। সে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে এলাকা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি পেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার নির্যাতনের শিকার অর্ধশতের কম হবে না। তার বখাটেপনার কারণে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতো না।’
এক বছর আগে থেকে ফুলবাড়ির পাশেই শহরের শিববাটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন জিতু। সেই এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল হোসেন। শাকিলের মেয়ে স্থানীয় ভান্ডারী সিটি বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ৫২ বছর বয়সী জিতু বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিলের মেয়েকে। বিষয়টি শাকিল জেনে রাগ করেন। জিতুর ওপর চড়াও হন। কিছুতে রাজি না হলে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন জিতু। তাঁর মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতেন। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে শাকিলকে পিটিয়ে খুন করেন জিতু ও তাঁর বাহিনী।
এ হত্যার ঘটনায় জিতুকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল রোববার বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন শাকিলের স্ত্রী মালেকা খাতুন। পুলিশ শনিবার রাতেই জিতু ও তাঁর সহযোগী মতি এবং বিপ্লবকে আটক করে।

সন্ত্রাসীকে দলের পদ দেওয়ার বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল বলেন, ‘আমি জানতাম না, সে দলের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে। আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।’ শনিবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সই করা বিবৃতিতে জিতু ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়।

বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, ‘এ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জোবায়ের খান জানান, গতকাল জিতুসহ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা শাখা। গতকাল বিকেলে শহরের সাতমাথায় সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এতে সভাপতিত্ব করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ