বিএনপির দ্রুত নির্বাচনের দাবিকে ভালো চোখে দেখছেন না ইসলামী আন্দোলনের আমির, চরমোনাইয়ের পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির বিরোধিতা করার কারণেও বিএনপির সমালোচনা করেছেন তিনি।

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলনের যুব সংগঠন ‘ইসলামী যুব আন্দোলনের’ কনভেনশনে বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্য করে রেজাউল করিম বলেন, “আপনারা মনে করেন আপনারা অনেক তালগাছ হয়ে গেছেন। আসলে আপনাদের পায়ের নিচে মাটি নাই।”

যুব আন্দোলনের সভাপতি নেছার উদ্দিনের সভাপতিত্বে কনভেনশনে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি রেজাউল।

আরো পড়ুন:

‘নির্বাচন ছাড়া দেশ স্থিতিশীলতা আসবে না’

তরুণ প্রজন্মকে পড়ালেখায় বেশি গুরুত্ব দিতে হবে: মির্জা ফখরুল 

সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন ও যুব আন্দোলনের নেতারা ছাড়াও হিন্দু মহাজোটের সভাপতি গোবিন্দ চন্দ্র, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, যুব জাগপার সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবলু বক্তব্য দেন।

রেজাউল করিম বলেন, “গত ৫৩ বছর যারা দেশ চালিয়েছে। তাদের মানুষকে নতুন করে উপহার দেওয়ার মত কিছু নাই, নতুন কোনো কথা নাই। গ্রামে একটা কথা আছে গোদা পা দিয়ে লাথি মারলে শক্তি থাকে না। এটা আমাদের জানা হয়ে গেছে।”

তিনি বলেন, “আপনারা দেশ ৫৩ বছর পরিচালনা করেছেন, তাতে আমাদের কী দিয়েছেন? নতুনভাবে ওই পা দিয়া ভয় দেখাইয়া আর লাভ নেই।”

বিএনপির উদ্দেশ্যে মুফতি রেজাউল বলেন, “যারা নাকি নির্বাচন করতে অস্থির হয়ে গেছেন। পিআর নির্বাচন (সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি) পছন্দ করছেন না। আমি বলব মানুষ সজাগ হয়েছে। জরিপ করে দেখেন। আপনাদের পায়ের নিচে মাটি সরে গেছে। এখন বাংলাদেশে এই চাঁদাবাজদের, এই দখলকারী, খুনিদের বাংলাদেশের মানুষ দেখতে চায় না। পরিবর্তন করতে হবে।”

বিএনপি আওয়ামী লীগকেও নির্বাচনে চায়–এমন ইঙ্গিত করে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, “যারা হাজার মায়ের কোল খালি করেছে, তাদেরকে আবার নির্বাচনের জন্য আহ্বান করছেন, আপনারা কী ইঙ্গিত দিচ্ছেন। এখনো মায়ের কান্না শেষ হয়নি। আর আপনারা তাদের নির্বাচনে আহ্বান করবেন। তাদের নিয়ে এসে ক্ষমতা দখল করবেন। এই ধোঁকাবাজি জনগণ বুঝে গেছে। ভারতের আচরণে আমরা বন্ধুত্ব পাইনি। আর আপনারা তাদের দোসরদের খুশি করবেন।”

মুফতি রেজাউল বলেন, “পিআর সিস্টেমের নির্বাচনের মাধ্যমেই বাংলাদেশে জাতীয় সরকার গঠন হবে। এটা আপনারা (বিএনপি) কেন চাচ্ছেন না। আবার আপনারা এককভাবে ক্ষমতায় গিয়ে আমাদের ওপর স্টিম রোলার চাপিয়ে দেবেন–সেটা হবে না। মায়ের কোল খালি করার রাজনীতি মানুষ আর দেখতে চায় না। দেশের টাকা পাচার করবেন, বিদেশে বেগম পাড়া তৈরি করবেন- এটা বাংলার মানুষ আর দেখতে চায় না। এই পরিবর্তন আমাদেরই করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে আমরা আবার রক্ত দেব।”

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে মুফতি রেজাউল বলেন, “আমাদের দায়িত্বশীলরা বলেছেন, আপনারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার নয়। আপনারা গণঅভ্যুত্থান, ছাত্র-জনতা, হাজারো মায়ের কোল খালি করার বিনিময়ে আপনারা ক্ষমতায় বসেছেন। কিন্তু আপনাদের কাজকর্মগুলো অনেকাংশে প্রশ্নবিদ্ধ। এসব দেখে আমাদের দুঃখ হয়।”

সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে আন্দোলনের ডাক দেন মুফতি রেজাউল। তিনি বলেন, “পিআর সিস্টেমে নির্বাচন হতে হবে। প্রত্যেকটা ভোটারের ভোটের অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশে জাতীয় সরকার হবে। এজন্য লাগলে আন্দোলন করব, সংগ্রাম করব।”

সমাবেশে অংশ নেওয়া যুবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “সামনে জাতীয় নির্বাচন আসবে। এই নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে হবে যুবকদের। সেন্টারভিত্তিক দাওয়াতের মাধ্যমে প্রতি মাসে ৪জনকে তৈরি করতে পারলে সেদিন বেশি দেরি নয় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামের নীতি আদর্শ বাস্তবায়িত হবে। এখন পরিবর্তনের সময়। গত ৫৩ বছরে এত সুন্দর ইসলামের পক্ষের পরিবেশ আর তৈরি হয়নি।”

ঢাকা/হাসান/এসবি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ করব ন আপন র সরক র ইসল ম ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

ভাঙা বেড়িবাঁধ, আমন নিয়ে দুশ্চিন্তায় মাতারবাড়ীর চাষিরা

চলতি মৌসুমে আমন চাষ করার জন্য এক ব্যক্তির এক একর জমি ১৮ হাজার টাকায় ইজারা নেন কক্সবাজারের মহেশখালীর সাগর উপকূলীয় মাতারবাড়ী ইউনিয়নের নয়াপাড়ার কৃষক জাকের হোছাইন। এই মাসের শেষের দিকে আমন চাষ শুরু করার কথা তাঁর। তবে সাগরে বিলীন হওয়া বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে বর্ষায় ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়ার শঙ্কায় আমনের চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কেবল জাকের হোছাইন নন, তাঁর মতো একইভাবে আমনের চাষাবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন মাতারবাড়ী ইউনিয়নের অন্তত ২০০ চাষি।

কুহেলিয়া নদীর পশ্চিমে আর বঙ্গোপসাগরের পূর্বে জেগে ওঠা প্রায় ১২ বর্গকিলোমিটার চর নিয়ে মহেশখালীর মাতারবাড়ী ইউনিয়ন। এর পশ্চিম পাশে রয়েছে আট কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, যার মধ্যে প্রায় এক কিলোমিটার ভাঙা অবস্থায় পড়ে রয়েছে এক দশক ধরে। ওই অংশ দিয়ে আশপাশের লোকালয় ও ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়া ঠেকাতে সর্বশেষ চার বছর আগে বসানো হয়েছিল জিও টিউব। তবে গত ২৯ ও ৩০ মে নিম্নচাপের প্রভাবে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে জিও টিউব বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বেড়িবাঁধের ওই ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয় ও ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সম্প্রতি তিন দফায় লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ভেঙে গেছে অন্তত ১০টি কাঁচা বসতঘর। স্থানীয় মানুষের চোখে ঘুম নেই। চাষিরাও আমন ধানের চাষাবাদ আদৌ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।সরওয়ার কামাল, সদস্য, মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ

বেড়িবাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশটি ইউনিয়নের ষাইটপাড়া এলাকায়। গত শনিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা বেড়িবাঁধের পাশে বসানো জিও টিউব সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। সাগরের পানি ঢেউয়ের সঙ্গে বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ উপচে পাশের ফসলি জমিতে ঢুকে পড়ছে। সেখানে স্থানীয় মাঝের ডেইল এলাকার বাসিন্দা আবদুল কাদেরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, বেড়িবাঁধের জিও টিউব বিলীন হওয়ার দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা খুবই উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আমনচাষিরা চাষাবাদ করতে পারবেন কি না তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মানুষ তাঁদের ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন। জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার করা উচিত।

মাতারবাড়ী ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নুরুল হোছাইন মোহাম্মদ তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, ভাঙা বেড়িবাঁধের কারণে ষাইটপাড়াসহ আশপাশের চারটি গ্রামে জলাবদ্ধতার শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে এসব এলাকার অন্তত ৮০ একর জমিতে আমন চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সরওয়ার কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সম্প্রতি তিন দফায় লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ভেঙে গেছে অন্তত ১০টি কাঁচা বসতঘর। স্থানীয় মানুষের চোখে ঘুম নেই। চাষিরাও আমন ধানের চাষাবাদ আদৌ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।’ ইউপি সদস্য সরওয়ার কামাল আরও বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই এলাকার মানুষের উদ্বেগ বাড়ে। অথচ ভাঙা বেড়িবাঁধ সংস্কারের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড।

মহেশখালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হেদায়েত উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, জরুরি ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে। জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি নিম্নচাপের প্রভাবে মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় অন্তত ১ হাজার ৬০০ মিটারের বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আপাতত বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানি টেকানোর জন্য ভাঙা বেড়িবাঁধের ওপর জিও টিউব বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কক্সবাজারের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জামাল মুর্শিদ প্রথম আলোকে বলেন, মাতারবাড়ী ও ধলঘাট ইউনিয়নে স্থায়ী বাঁধের জন্য প্রায় ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় চারপাশে ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার সুপার ডাইকের আদলে স্থায়ী বেড়িবাঁধ ও ৭টি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া খনন করা হবে সাড়ে ১৯ কিলোমিটার কুহেলিয়া নদী। গত এপ্রিলে প্রকল্প প্রস্তাবনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ