Samakal:
2025-06-16@05:35:03 GMT

অমিতাভ রেজা ও রিকশা গার্ল

Published: 23rd, January 2025 GMT

অমিতাভ রেজা ও রিকশা গার্ল

রিকশার প্যাডেলে পা রাখা জীবনের সঙ্গে নগরের অনেক মানুষই পরিচিত নন, পরিচিত নন জীবিকার তাগিদে, তিন বেলার খাবারের টাকা জোগাড় করতে, পরিবারের অসুস্থ মানুষটির ওষুধ কেনার কষ্টের গল্পগুলোর সঙ্গেও। শহরের প্রত্যেক রিকশাচালকের গল্পই যেন একেকটা উপন্যাস, সুখ-দুঃখে ভরা বাস্তব গল্পের সিনেমা। সেই গল্পটিই পর্দায় তুলে এনেছেন নির্মাতা অমিতাভ রেজা।

আয়নাবাজির মতো ব্যবসাসফল সিনেমার নির্মাতা রিকশা গার্ল-এর দুঃখ-বেদনা আর আনন্দকে একত্র করে বানিয়েছেন ‘রিকশা গার্ল’। যে সিনেমায় শহরের যাপিত এক জীবনের প্রতিচ্ছবির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন নান্দনিক সিনেগ্রাফি; যেখানে রয়েছে সম্পর্ক, দায়িত্বশীলতা, আতঙ্ক আর প্রেমের প্রতিচ্ছবি। রয়েছে বুনো শালিকের দল, শহুরে রাস্তার কুকুরও। নির্মাতা জানালেন, সিনেমার পুরোটা জুড়ে রিকশা পেইন্টিংয়ের সঙ্গে সংগতি রেখে প্রতিটি ফ্রেমে আলো ও রঙের পরীক্ষায় উৎরে যাওয়ার চেষ্টাও রয়েছে। 

আয়নাবাজির ৯ বছর পর.

..
প্রথম সিনেমা দিয়ে বাজিমাত করেছিলেন অমিতাভ রেজা চৌধুরী। ২০১৬ সালে মুক্তি পেয়েছিল তাঁর পরিচালিত ‘আয়নাবাজি’। এরপর কেটে গেছে প্রায় ৯ বছর। এ ৯টি বছর কেবল রিকশা গার্ল সিনেমাটি নিয়ে বসেছিলেন তা কিন্তু নয়। বানিয়েছেন ওটিটি কনটেন্ট ও বহু বিজ্ঞাপন। সিনেমাটির শুটিংও করোনা মহামারির আগে শেষ হয়েছিল। পরে ২০২০ সালে মুক্তির কথা থাকলেও বদলে যায় পরিকল্পনা। দেশে মুক্তি না দিলেও বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় সিনেমাটি। বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে পুরস্কারও জিতেছে রিকশা গার্ল। এবার আগামীকাল সারা দেশে মুক্তি পাচ্ছে ‘রিকশা গার্ল’।

নারীর ক্ষমতায়ন ও রিকশা পেইন্টিংয়ের ঐতিহ্য
‘রিকশা গার্ল’ ছবির গল্প নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে। বাংলাদেশের মেয়ে নাইমা। পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করেন। পুরুষের বেশে অসুস্থ বাবার রিকশা নিয়ে রাস্তায় বের হন। এক দুর্ঘটনায় বাবার প্রিয় রিকশাটি ভেঙে যায়। রিকশার ভেঙে যাওয়া অংশ ঠিক করতে শুরু হয় নাইমার নতুন সংগ্রাম। এ সিনেমার মাধ্যমে সমাজের কঠিন কাজ রিকশা চালানোর মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নকেই প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছেন পরিচালক। সঙ্গে বাংলাদেশের চিরায়ত পেইন্টিংয়ের ঐতিহ্যের দিকটাও তুলে আনা হয়েছে। অমিতাভ রেজা এখানে বলেছেন, ‘‘ছবির চরিত্র নাইমা বেশ শিল্পমনা। ছবি আঁকতে পছন্দ করে। দরিদ্র সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবা হঠাৎ অসুস্থ হলে স্রোতের প্রতিকূলে লড়াই শুরু হয় তার। উপায়ান্তর না পেয়ে রিকশা নিয়ে রাস্তায় বের হয়। ‘রিকশা গার্ল’ ছবির মাধ্যমে রিকশা পেইন্টিংয়ের ঐতিহ্য আর ধারণাকে তুলে ধরারও চেষ্টা ছিল।’’  

যেভাবে রিকশা গার্ল হয়ে ওঠা
ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের লেখিকা মিতালি পারকিনসের কিশোর সাহিত্য ‘রিকশা গার্ল’ বইটি ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সর্বাধিক বিক্রি হয়েছিল। এ উপন্যাসের ছায়া অবলম্বনে চিত্রনাট্য লিখছেন শর্বরী জোহরা আহমেদ। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া অভিনীত যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘কোয়ান্টিকো’র চিত্রনাট্যকারদের একজন তিনি। কাজেই সিনেমাটির প্রধান চরিত্রে যে অভিনয় করবেন তাঁকে প্রস্তুতি নিয়েই নামতে হবে মাঠে। নেমেছেনও। সিনেমাটির প্রধান নাইমা। তিনিই মূলত ‘রিকশা গার্ল’। চরিত্রটি ফুটে উঠেছে নভেরা চৌধুরীর মাধ্যমে। বাস্তব জীবনে তিনি অভিনেত্রী মোমেনা চৌধুরীর মেয়ে। অভিনয় যার রক্তে তিনি যে পুরোপুরি রিকশা গার্ল হয়ে উঠতে পারবেন সে বিশ্বাস নির্মাতা অভিতাভ রেজার ছিল। সে বিশ্বাস ভাঙেনি। এ সিনেমায় নভেরা থেকে নাইমা হয়ে উঠতে বেশ কাঠখড় পোহাতে হয়েছে অভিনেত্রীকে। নভেরার মুখেই শুনি, ‘নভেরা থেকে নাইমা হওয়ার জার্নিটি বেশ অদ্ভুত ছিল। মনে আছে, নিকেতনপাড়ার ভেতর আমি এক মাস রিকশা চালিয়েছি। আমার পেছনে ইডিরা বসে থাকত আর আমি রিকশা চালাতাম। পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে অনেক বছর থাকতে হয়েছে। সিনেমায় কাজ করতে গিয়ে ঢাকাকে খুব গভীরভাবে দেখার সুযোগ হয়েছে। শুধু ঢাকা নয়, পাবনাতেও এর দৃশ্য ধারণ হয়েছে। সেখানের রাস্তার রিকশাচালকদের সঙ্গে মিলেমিশে রিকশা চালিয়েছি। নির্মাতা, অভিনশিল্পী– সবার জন্য এটি কষ্টের প্রজেক্ট ।’

আঁকিয়েদের অনুপ্রেরণা দেবে
অমিতাভ রেজা চৌধুরী বলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রের লেখক মিতালি পারকিনসের উপন্যাস অবলম্বনে হলেও ‘রিকশা গার্ল’ নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশের পটভূমিতে। আমাদের দেশের রিকশা পেইন্টিংয়ের মতো দারুণ একটা শিল্পকে সারা বিশ্বের দর্শকের সামনে তুলে ধরা হয়েছে সিনেমায়। আমাদের কিশোর-কিশোরী, যারা ছবি আঁকতে চায়, তাদের অনুপ্রাণিত করবে সিনেমাটি। আশা করি অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের সিনেমাটি দেখার সুযোগ করে দেবেন।’’ বিভিন্ন চরিত্রে সিনেমাটিতে আরও অভিনয় করেছেন চম্পা, মোমেনা চৌধুরী, নরেশ ভূঁইয়া, অ্যালেন শুভ্রসহ অনেকেই। 

ত্রিশটিরও বেশি আন্তর্জাতিক উৎসবে প্রদর্শন
মুক্তির আগেই বিশ্বের ৩০টির বেশি আন্তর্জাতিক উৎসবে প্রদর্শিত হয় সিনেমাটি। এরমধ্যে ব্রাসেলসে ১৬তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ফিলেম’অন কিডস অ্যাওয়ার্ড জিতেছে, শিকাগো ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেনস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ৩৯তম আসরের ‘বেস্ট অব ফেস্ট’ পুরস্কার পাওয়াসহ জাপানের ওসাকা এশিয়ান চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৪-এ প্রদর্শিত হয়েছে। পাশাপাশি ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ১৮ রাজ্যের ৫২টি শহরে চলচ্চিত্রটি দেখানো হয়। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র প রদর শ

এছাড়াও পড়ুন:

তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।

মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।

সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।

প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।

আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।

মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। 

মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বকুলতলায় বৃষ্টির সুর
  • কলকাতায় নতুন সিনেমার শুটিং শুরু করলেন জয়া
  • বর্ষা উৎসবে বন ও পরিবেশ ধ্বংসের প্রতিবাদ, পান্থকুঞ্জ পার্ক রক্ষাসহ কয়েকটি দাবি
  • নাচ-গান-আবৃত্তিতে চারুকলায় বর্ষাবরণ
  • মেঘ-রোদের লুকোচুরির সকালে নাচে-গানে বর্ষাবরণ 
  • মেঘ-রোদের লুকোচুরি সকালে নাচে-গানে বর্ষাবরণ 
  • আষাঢ়ের প্রথম দিন আজ
  • কলিজা ঠান্ডা করে দেওয়া ছবি ‘উৎসব’
  • তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
  • ভালোবাসার ফ্রেমে মেহজাবীন-রাজীব, পেছনে আইফেল টাওয়ার