দেওয়ানগঞ্জে জিল বাংলা চিনিকল ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়ে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার চিনিকলের ২ নম্বর গেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।

জানা গেছে, ২০২২-২৩ আখ মাড়াই মৌসুমে জিল বাংলা চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের দ্বিবার্ষিক নির্বাচন হয়। ওই প্যানেলের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় আগামী ২৮ জানুয়ারি জিল বাংলা চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের ২০২৪-২৫ আখ মাড়াই মৌসুমে দ্বিবার্ষিক নির্বাচন হওয়ার কথা। ইতোমধ্যে তপশিল ঘোষণা করা হয়েছে। 

আজ বৃহস্পতিবার ছিল বিভিন্ন পদে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। ওই দিন সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী খোকন মোল্লা ও শওকত হোসেন সোহাগ সমর্থকদের নিয়ে গেটের সামনে সমবেত হন। উভয় পক্ষের দাবি, প্রতিপক্ষ তার দলের ওপর হামলা করে। তা রোধ করতে গিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষের ঘটনায় জিল বাংলা চিনিকল কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের নির্বাচন স্থাগিত ঘোষণা করে।

শওকত হোসেন সোহাগ বলেন, ‘মিলে আমার যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। সে কারণে আমি এবার ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু খোকন মোল্লার লোকজন আমাকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেয়। সে কারণে সংঘর্ষ হয়। এতে আমার পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।’

খোকন মোল্লা জানান, তিনি আগে থেকেই চিনিকলের শ্রমিকদের সঙ্গে আন্তরিকতা বজায় রেখে চলছেন। তাকে সবাই পছন্দ করেন। সে কারণে এবার ওয়ার্কার্স ইউনিয়নে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করতে চাচ্ছেন। এজন্য সকালে গেটের ভেতরে অবস্থান করছিলেন তারা। এ সময় হামলা চালায় শওকত হোসেন সোহাগের লোকজন। এতে তার (খোকন) পক্ষের অন্তত আটজন আহত হয়েছেন।

নির্বাচন কমিশনার শরিফুল ইসলামের ভাষ্য, সংঘর্ষের ঘটনায় ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের নির্বাচন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থাগিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত হলে কর্তৃপক্ষ নির্বাচন আয়োজন করবে।

দেওয়ানগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হাসান জানান, জিল বাংলা চিনিকলের সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ব্যাপারে এখনও মামলা হয়নি।

জিল বাংলা চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় আমরা মর্মাহত। এ কারণে ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চ ন কল চ ন কল র

এছাড়াও পড়ুন:

আরপিওর বিধানের বৈধতার রায় রিভিউর জন্য হলফনামার অনুমতি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধানের বৈধতা দিয়ে ১৪ বছর আগে রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদনের জন্য হলফনামার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন দুজন আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আজ সোমবার হলফনামা করার অনুমতি দিয়েছেন।

আবেদনকারী সাত ব্যক্তি হলেন ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন, মেজর (অব.) এস এম হারুনুর রশীদ, কাজী জাহেদুল ইসলাম, আইনজীবী এস এম আজমল হোসেন, মেজর (অব.) নিয়াজ আহমেদ জাবের, মেজর (অব.) মো. জিয়াউল আহসান ও সালাহ উদ্দিন।

আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ মামলায় আবেদনকারীরা পক্ষ ছিলেন না। যে কারণে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন দায়েরের জন্য হলফনামা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তাঁরা। চেম্বার আদালত হলফনামা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে শিগগিরই রিভিউ আবেদন করা হবে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২(৩ক)(ক) বিধান অনুযায়ী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যুক্ত করে দিতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতিপূর্বে জাতীয় সংসদের কোনো নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকলে ওই তালিকা প্রদানের প্রয়োজন হবে না।

আইনজীবীর তথ্য অনুসারে, ঢাকার একটি আসন থেকে ২০০৭ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র নেন। পরে নির্বাচনের ওই তারিখ পিছিয়ে যায়। অন্যদিকে ২০০৮ সালে আরপিও দফা ১২(৩ক)–তে সংশোধনী আনা হয়। এই বিধান সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদ ও আরপিওর ১২(১) ধারার পরিপন্থী উল্লেখ করে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী ২০১০ সালে হাইকোর্ট রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট রুল ডিসচার্জ (খারিজ) করে রায় দেন। দফা (৩ক) সংবিধান পরিপন্থী নয় বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন রিট আবেদনকারী। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি লিভ টু আপিল খারিজ করে রায় দেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত আরপিওর ১২(৩ক)–তে বেআইনি কিছু পাননি বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে দুই আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি আবেদন করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে ভোটারের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। ভোটার কোন প্রার্থীকে ভোট দেবেন বা দেবেন না, এটি একান্তই তাঁর চিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার। সিক্রেট ব্যালটে হামলা হলে ভোট বাতিলও হয়। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে। রাজনৈতিক দল হলে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন লাগবে না, অথচ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে গেলে লাগবে অর্থাৎ একই মনোনয়নপত্র ঘিরে দ্বৈত বিধান। ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন থাকার ওই বিধানের মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা সংবিধান সমর্থন করে না এবং ভোটারের গোপনীয়তারও লঙ্ঘন—এসব যুক্তি তুলে ধরে আবেদনটি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচিত সরকার ছাড়া ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি হবে না, অর্থনীতিতে গতি আসবে না
  • আরপিওর বিধানের বৈধতার রায় রিভিউর জন্য হলফনামার অনুমতি