নষ্ট ডিজিটাল হাজিরা যন্ত্রে গচ্চা সাড়ে ১৩ লাখ টাকা
Published: 24th, January 2025 GMT
জয়পুরহাটের কালাইয়ে ৫৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ২০১৯ সালে বায়োমেট্রিক হাজিরা যন্ত্র স্থাপন করেছিল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টাকায় এসব যন্ত্র ক্রয়ের পর বিদ্যালয়ে স্থাপন করা হলেও বাস্তবায়ন হয়নি আসল উদ্দেশ্য। উল্টো কিছুদিন পরই প্রায় সব যন্ত্র অকেজো হয়ে পড়ে। অনেকগুলো যন্ত্র খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না কিছু বিদ্যালয়ে। যেসব বিদ্যালয়ে এখনও যন্ত্র আছে সেগুলো পড়ে আছে নষ্ট। কিছু বিদ্যালয়ে এখনও যন্ত্র স্থাপনই হয়নি।
জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন উপকরণ ক্রয়ের টাকা থেকে হাজিরা যন্ত্রগুলো কিনে ৫৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপন করা হয়। তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ইতিআরা পারভীন তার পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এইচআর অটোমেশিন থেকে এসব যন্ত্র কিনতে বিদ্যালয়গুলোকে নির্দেশ দেন। প্রধান শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে ২৫ হাজার করে যন্ত্র কেনা বাবদ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেন। যদিও বাজারে এসব মেশিনের মূল্য ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার বেশি নয়।
প্রথমদিকে ২-১ মাস যন্ত্রগুলো চালু থাকলেও পরে সেগুলো অকেজো হয়ে যায়। তারপর আর সেগুলো মেরামত করা হয়নি। তাছাড়া অধিকাংশ বিদ্যালয়ে ইন্টারনেট সংযোগও নেই। আবার অভিযোগ আছে, যেসব বিদ্যালয়ে ইন্টারনেট সংযোগ আছে, তাদের মধ্যে অনেকে ইচ্ছা করেই এসব যন্ত্র ব্যবহার করছে না। অনেক স্কুলের শিক্ষকরা এই যন্ত্র ব্যবহার করতেও জানেন না। এরই মধ্যে যন্ত্রগুলোর ওয়ারেন্টটির মেয়াদও শেষ।
শিক্ষকদের ভাষ্য, তৎকালীন প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার চাপে অল্প সময়ের মধ্যে তাদের হাজিরা যন্ত্র একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কিনতে হয়েছিল। ফলে হাজিরা যন্ত্রের বাজারমূল্য যাচাইয়ের সুযোগও পাননি তারা।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, হাজিরা যন্ত্র যে উদ্দেশ্যে স্থাপন করা হয়েছে তা পূরণ হয়নি। স্থাপনের কিছুদিন পর থেকেই যন্ত্রগুলো অকেজো হয়ে পড়ায় গচ্চা গেছে পুরো টাকা।
কালাই মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা বিদ্যালয় ফান্ডের টাকা থেকে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে হাজিরা যন্ত্র কিনেছিলাম। কিন্তু সংযোগ না থাকায় ব্যবহার করা হয়নি। যন্ত্রটি এখন নষ্ট হয়ে আছে।
ইটাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাদিরা বেগম বলেন, ২৫ হাজার টাকা দিয়ে ডিজিটাল হাজিরা যন্ত্র কিনেছিলাম। চালু করা দূরের কথা, যন্ত্রটি প্যাকেটবন্দি অবস্থায় আজও পড়ে আছে।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এইচআর অটোমেশিনের স্বত্বাধিকারী হারুন অর রশিদ বলেন, হাজিরা যন্ত্র নিয়ে আমাদের কোনো গাফিলতি ছিল না। যন্ত্রগুলো মানসম্পন্ন ছিল। এসব যন্ত্র স্থাপনের পর ইন্টারনেট সংযোগ লাগে। এর জন্য ৩ হাজার টাকা রিচার্জ, সার্ভার এবং সার্ভিস চার্জ রয়েছে। শিক্ষকরা এ টাকা না দেওয়ায় যন্ত্রগুলো চালু করা সম্ভব হয়নি।
বর্তমান উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি যোগদানের আগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়েছে। তাই হাজিরা যন্ত্র নিয়ে কোনো কথা বলতে পারব না। তবে এটা সত্য যে, কোনো বিদ্যালয়েই ডিজিটাল যন্ত্র সচল নেই।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স।
গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’
পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।
আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’
তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ