যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে তর্কাতর্কির জেরে ১৬ বছরের কিশোরের ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন ২৪ বছরের যুবক। এ ঘটনায় কুইন্সের গোয়েন্দারা অভিযুক্ত কিশোরকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। অভিযোগ অনুযায়ী তিনি রোববার সকালে উক্ত যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রোববার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ৬টার পর ১১৫তম প্রিসিঙ্কটের অফিসাররা ঘটনাস্থলে পৌঁছে কোরোনার ৩৫তম অ্যাভিনিউ এবং ১০২তম স্ট্রিটের কোনে একটি বাড়িতে অভিযুক্তকে ডাকে নেন। এ সময় ২৪ বছর বয়সী বায়রন লেমা-নাউলাকে ৩৫তম অ্যাভিনিউয়ের বাড়ির ভেতরে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেন। তার গলায় ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

লেমা-নাউলাকে দ্রুত এলমহার্স্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে চিকিৎসকারা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। ১৬ বছর বয়সী এক পুরুষ সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে। তদন্তের পর অভিযোগ আনার প্রক্রিয়া চলছে।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, লেমা-নাউলা ওই বাড়িতে সন্দেহভাজনের পরিবারের কাছ থেকে একটি কক্ষ ভাড়া নিয়েছিলেন। ঘটনার ঠিক আগে নিহত ব্যক্তি এবং সন্দেহভাজন ওই কিশোর একটি বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন।

স্থানীয় লোকজন আমনিউইয়র্ক মেট্রোকে বলেন, তারা লেমা-নাউলাকে খুব একটা দেখতেন না। তবে যারা তাকে চিনতেন। তারা তাকে ভালো ছেলে বলে বর্ণনা করেছেন।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা লুইস তিনি কাছাকাছি একটি স্থানে কাজ করেন। তিনি জানান, তাকে তিনি ভালোভাবে চিনতেন না। তবে প্রায়শই তাকে সকালে কাজে যেতে দেখতেন এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন। লুইস বলেন, তিনি মনে করেন, নিহত ব্যক্তি ইকুয়েডর থেকে এসেছিলেন।

প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, বাড়িটির নতুন মালিক সম্প্রতি বাসাটি কিনে তরুণ ভাড়াটেদের কাছে ঘর ভাড়া দিচ্ছিলেন। তবে বাড়িটি একটি ‘ঘূর্ণায়মান দরজার মতো’ হয়ে উঠেছিল যেখানে বারবার নতুন মুখ দেখা যেত।

গ্রীষ্মে ওই বাড়ি থেকে অনেক কার্যকলাপ দেখা যেত, যেমন বারবিকিউ পার্টি। তবে, সাধারণত বাসিন্দারা নিজেদের মতো থাকতেন।

২২ বছর বয়সী স্কারলেট অ্যাস্টুডিলো বলেন, আমরা বেরিয়ে এসে দেখলাম পুলিশ অফিসাররা রয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে এটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং পাগলাটে মনে হয়েছে। আমরা ঠিক জানি না কী সমস্যার কারণে এই মৃত্যু হয়েছে। এটি পাগলামি ছাড়া কিছুই নয়।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

কীর্তনখোলার তীর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে

আনিকা জেবা ও মালিহা জেবা। যমজ বোন। গত ১৭ মে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ পদে কমিশন্ড হন। বরিশাল সদরে জন্ম নেওয়া দুই বোন ২০১০ সালে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর পর কেমন করে গেলেন স্বপ্নের বন্দরে তাই তুলে ধরেছেন মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ 

গত ১৬ মে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসা প্রশাসনে বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন আনিকা জেবা ও মালিহা জেবা। এর ঠিক পরদিনই এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ পদে কমিশন্ড হন। আরও মজার বিষয় হচ্ছে, এমবিএ গ্র্যাজুয়েশন ও সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভের ঠিক পরদিন, ১৮ মে ছিল এই দুই বোনের জন্মদিন। জন্মদিনটি তারা পরিবারের সঙ্গে উদযাপন করেন নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের আর রাজ্জাক সুপারমার্কেটের ব্যাঙ্কুয়েট হলে।
কীর্তনখোলার তীর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে...
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি আমেরিকানদের মধ্যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যমজ বোন আনিকা জেবা ও মালিহা জেবার জন্ম বরিশাল সদরে। ২০১০ সালে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তারা। নিউইয়র্কে গিয়ে হাইস্কুল শেষ করে তারা সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটিতে ব্যবসা প্রশাসনে ভর্তি হন এবং একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর রিজার্ভ অফিসার্স ট্রেনিং প্রোগ্রামে অংশ নেন। ১৬ মে সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসা প্রশাসনে বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ পদে 
কমিশন্ড হন।
যে উদ্যোগ অনুপ্রেরণাদায়ক
সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটি ১৭ মে তাদের ডিগ্রি অর্জন উপলক্ষে যে সংবর্ধনা দেন তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ব্রায়ান জে শ্যানলি বলেন, ‘শিক্ষার পাশাপাশি দেশসেবায় তাদের এই উদ্যোগ অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক। জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে তারা নিয়মিত বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রে অংশ নেবেন।’
যে জন্য করেছেন এমবিএ
মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এমবিএ কোর্স সম্পন্নের পর আনুষ্ঠানিক সার্টিফিকেট অর্জনে আনিকা জেবা ও মালিহা জেবা বলেন, এমবিএ হয়েছি নিজের ব্যবসাকে আরও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার মধ্য দিয়ে বহুজাতিক সমাজে বাঙালির এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকার জন্য। অধ্যয়নের পাশাপাশি নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে পাঁচটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু করেছি। বাংলাদেশেও রয়েছে দুটি কসমেটিকস ব্র্যান্ড ‘দ্য বিউটি মল’ এবং ক্লথিং ব্র্যান্ড ‘ইলেনি’। এ দুটো পরিচালিত হচ্ছে অনলাইনে অর্ডার নিয়ে। আর রাজ্জাক ম্যানেজমেন্ট ইনকের অধীনে নিউইয়র্কের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পাঁচটি হচ্ছে– এবিসি ফুড অ্যান্ড ভেজিটেবল, বুচার মিট, আর রাজ্জাক সুপারমার্কেট, আর রাজ্জাক ব্যাঙ্কুয়েট এবং আর রাজ্জাক হোলসেল ফ্লাওয়ার। 
ঐতিহ্য ও মায়ের অগ্রযাত্রা
বরিশাল থেকে মা মোর্শেদা বেগমের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো দুই বোন দেখেছেন মায়ের দৃঢ়তা ও পরিবারের জন্য মায়া। এও দেখেছেন যে মায়ের তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠা ‘আর রাজ্জাক ম্যানেজমেন্ট’ কেমন করে আস্থা অর্জন করে নিয়েছে স্থানীয় বাঙালিদের মাঝে! প্রতিষ্ঠানটির মাটি দিয়ে তৈরি ডিনার সেট প্রবাসীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কেবল পহেলা বৈশাখেই নয়; বাঙালিয়ানা প্রদর্শনের অন্য সব অনুষ্ঠানে এবং শৌখিন প্রবাসীদের ড্রয়িং রুমেও স্থান করে নিয়েছে তাদের মাটির ডিনার সেট। মায়ের মতো দুই বোনও বাংলাকে ভালোবেসে, বাঙালিয়ানায় ভর করে এগিয়ে যেতে চান। 
আগামীর স্বপ্ন
আনিকা জেবা এবং মালিহা জেবা দেশ ছাড়ার পর থেকে তাদের উচ্চশিক্ষা লাভের ব্যয় নিয়ে কোনো রকম দুশ্চিন্তা করতে হয়নি মা মোর্শেদা বেগম মায়াকে। তারা বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গেই নিজেদের পড়াশোনা চালিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৭ মে তারা ‘ইউএস আর্মি রিজার্ভ অফিসার্স ট্রেনিং কোর্স’ সম্পন্নের সার্টিফিকেট তথা ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছেন। সেদিন সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট ব্রায়ান জে শ্যানলি ক্লাস-২০২৫ কমিশনিংপ্রাপ্ত ১৪ জনকে অভিনন্দন জানান। সেকেন্ড লেফটেন্যান্টের ব্যাজ পরার আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে দুই বোন বলেন, ‌‘পেশার পাশাপাশি আগামীতে নিজেদের ব্যবসাকেও এগিয়ে নিতে চাই। দেশেও কাজ করছি আমরা। সেখানেও রয়েছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এসবের পাশাপাশি মানবিক কাজ করে যাচ্ছি। এই কাজের ধারাবাহিকতার পাশাপাশি নিজেদের সঙ্গে লাল-সবুজের পতাকাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই!’ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কীর্তনখোলার তীর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে