‘আত্মার আওয়াজ সুফি ঘরানার কবিতা দিয়ে সাজানো পাণ্ডুলিপি’
Published: 29th, January 2025 GMT
কবি ও কথাসাহিত্যিক জব্বার আল নাঈম তার কবিতা ও কথাসাহিত্যে যাপিত জীবনের অস্থিরতার করুণতম দিক তুলে ধরেন। মানুষের স্ববিরোধী বিশ্বাসকে তার কবিতায় প্রশ্নের পর প্রশ্ন করা হয়। জব্বার আল নাঈমের প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘তাড়া খাওয়া মাছের জীবন’ বইটি ২০১৫ সালে প্রকাশ হয়। দ্বিতীয় বই ‘বিরুদ্ধ প্রচ্ছদের পেখম’ এর জন্য জব্বার আল নাঈম ‘রবীন্দ্র জার্নাল-দাগ সাহিত্য পুরস্কার-২০১৬’ অর্জন করেন। ২০২৫ বইমেলায় তার দুইটি বই প্রকাশ হচ্ছে। কবিতার বই ‘আত্মার আওয়াজ’ এবং কিশোর উপন্যাস ‘বোকা বাঘ’ নিয়ে রাইজিংবিডিকে নানা কথা জানিয়েছেন জব্বার আল নাঈম। সাক্ষাৎকার গ্রহণে স্বরলিপি।
আত্মার আওয়াজ কবিতার বই কোন ঘরানার কবিতা দিয়ে সাজানো হয়েছে? আপনার কবিতাভাবনা জানতে চাচ্ছি?
জব্বার আল নাঈম: আত্মার আওয়াজ সুফি ঘরানার কবিতা দিয়ে সাজানো পাণ্ডুলিপি। প্রথম পরিকল্পনা ছিল বিপ্লবী ধাচের কবিতাগুলো নিয়ে বই করা। সেটাও করব, তবে মেলার পর করার পরিকল্পনা। তাছাড়া এটা আমরা নিশ্চিত জানি যে, মেলার অধিকাংশ কবিতার বইয়ের সংগ্রহ হবে জুলাই বিপ্লব বা ফ্যাসিবাদ সময়ের কবিতা। এর বাইরেও কিছু পাঠক আছে, যারা ভিন্ন স্বাদের কবিতাও পড়তে চাইবে।
আর কবিতা ভাবনা নিয়ে আগে অনেক কথা বলেছি, সেই জায়গায় কিছু পরিবর্তন এসেছে। কবিতা সবসময় তীক্ষ্ম, তীব্র, শাণিত বা প্রাণিত। কবিতা অনেককিছুরই ধারক বা বাহক। কবিতা অনুভূতির চূড়ান্ত প্রকাশ। সেই প্রকাশটা নিয়েই যত জঞ্জাল বা যন্ত্রণা। কারো কারো প্রকাশ থাকে এবস্ট্রাক্ট ফর্মেটে। পাঠক অনুধাবন করতে অক্ষম। আমার প্রকাশটা পাঠক যদি অনুধাবনে ব্যর্থ হয়, তাহলে এর রেসপন্স কম হওয়া স্বাভাবিক। তাই প্রকাশটা হতে হবে সহজ, সরল এবং প্রাঞ্জল। পৃথিবীর বিখ্যাত কোনো কবিতা এই ধারার বাইরে নয়। যদি এটা আমার সুনির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞাও নয়, প্রত্যেক কবি তার নিজের ভাবনাটা নিজের মতো করেই প্রকাশ করবে।
রাইজিংবিডি: বাঘের বোকামি কিশোর উপন্যাসের প্রেক্ষাপট জানতে চাই।
জব্বার আল নাঈম: আমি শিশুদের জন্য লিখি খুব কম। এর একটা কারণও আছে, শিশুদের জন্য লিখতে গেলে ভাষার দিকে খেয়াল করতে হয়, শব্দ ও বাক্যের বুননের দিকে খেয়াল করতে ও রাখতে হয়। বড়দের সাহিত্যেও এসব খেয়াল রাখতে হয়, কিন্তু শিশুদের জন্য বেশি খেয়াল রাখতে ও মানতে হয়। শিশুদের নিয়ে কাজ করাটা খুবই সেনসেটিভ।
সিম্পল একটি কাহিনি, বয়স্ক ও ক্ষুধার্ত একটি বাঘ। অথচ বাঘটির সঙ্গে বনের অনেক পশুর সম্পর্ক আছে। সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও সে কোনো শিকারে ব্যর্থ হয়। এভাবেই গল্পের পরিধি বা কলেবর বাড়তে থাকে। একটা পর্যায়ে গিয়ে একটি কচ্ছপ ধরে, শেষ পর্যন্ত কচ্ছপটিও খেতে পারে না। ফলে বনের সকলে বাঘটিকে বোকা বাঘ খেতাব দেয়।
রাইজিংবিডি: কিশোর উপন্যাসের ভাষা বিন্যাসে কোন কোন দিক খেয়াল রেখেছেন?
জব্বার আল নাঈম: ভাষা ও বিন্যাস দুটির দিকেই খেয়াল রেখেছি। কতটুকু সফল হয়েছি সেটা হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই জানতে পারব। যদিও আমি কাহিনির দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কারণ, শেষ পর্যন্ত কাহিনিটাই সবার স্মরণে থাকে।সেই ছোটবেলায় আমরা পড়েছি, যেগুলোর কাহিনি সুন্দর, কেবল সেগুলোই আমাদের স্মরণে রয়ে গেছে এখনো। ফলে ভাষা ও বিন্যাসের পাশাপাশি কাহিনিটাও গুরুত্বপূর্ণ।
রাইজিংবিডি: বই প্রচারে লেখক এবং প্রকাশকের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন?
জব্বার আল নাঈম: ব্যক্তির বিকাশে বই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে কোনো না কোনোভাবে বইয়ের শরণাপন্ন আমাদেরকে হতেই হচ্ছে। মনে রাখতে হবে ধর্মীয় নিয়ম-কানুন যার মাধ্যমে প্রবর্তিত হয়েছে সেগুলোও বই। মানুষ যেকোনো ভাবেই হোক, বইয়ের কাছে যাচ্ছে, যাবেই। তাই বইয়ের প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা উচিত। সেটা হতে পারে লেখক বা প্রকাশকের। প্রকাশকেরই এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা উচিত। কারণ, বই বাণিজ্য তারই কাজ। এটার বহুমুখী প্রচার ও প্রসারণার দায়িত্ব তার ওপর বর্তায়। এখানে লেখকের ভূমিকাও থাকে। যদিও বর্তমান সময়ে রোলটা চেঞ্জ হয়েছে। কিছু প্রকাশক লেখকের কাছে জানতে চায়, কয় কপি বই ছাপাব। তখন বুঝবে হবে উক্ত প্রকাশকের ভেতরে প্রফেশনালিজম নেই।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য বইয় র
এছাড়াও পড়ুন:
গণভোট নিয়ে মতভেদে উপদেষ্টা পরিষদের উদ্বেগ
জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুতত সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়। যদিও এর আগেই এক সংবাদ সম্মেলনে এমন কথায় জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
প্রেস উইং জানায়, জাতীয় ঐক্যমত কমিশন থেকে প্রণীত জুলাই সনদ এবং এর বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য স্থাপনের প্রচেষ্টার জন্য এবং বহু বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।
এতে বলা হয়, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) আদেশ চূড়ান্তকরণ এবং এতে উল্লেখিত গণভোট আয়োজন ও গণভোটের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে লক্ষ্য করা হয় যে, ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘদিন আলোচনার পরও কয়েকটি সংস্কারের সুপারিশ বিষয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। এছাড়া, গণভোট কবে অনুষ্ঠিত হবে ও এর বিষয়বস্তু কী হবে এসব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে সে জন্য সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে গণভোটের সময় কখন হবে, গণভোটের বিষয়বস্তু কী হবে, জুলাই সনদে বর্ণিত ভিন্নমতগুলো প্রসঙ্গে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা নিয়ে ঐক্যমত কমিশনের প্রস্তাবগুলোর আলোকে জরুরী ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে সভা অভিমত ব্যক্ত করে।
এসব ক্ষেত্রে ফ্যসিবাদবিরোধী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বীয় উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে দ্রুততম সময়ে ( সম্ভব হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে) সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা প্রদান করার আহ্বান জানানো হয়। এমন নির্দেশনা পেলে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেক সহজ হবে। বলেও উল্লেখ করা হয়। পরিস্থিতিতে কালক্ষেপণের যেকোনো সুযোগ নাই সেটাও সবার বিবেচনায় রাখার জন্য বলা হয়।
সভায় ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা না পেলে কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা আলাপ-আলোচনা করে এই বিষয়েও আমাদের একটি ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা দেবে—এ প্রত্যাশা করছি। ওনারা যদি আলাপ-আলোচনা করেন, আমাদের জন্য কাজটি অত্যন্ত সহজ হয়। ওনারা যদি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, অবশ্যই সরকার সরকারের মতো সিদ্ধান্ত নেবে।”
ঢাকা/ইভা