যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে যুক্ত হলো আরেকটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা
Published: 31st, January 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে মাঝ আকাশে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ ও সামরিক হেলিকপ্টারের মধ্যে সংঘর্ষের পর নদীতে বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় সবাই নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বুধবার স্থানীয় সময় রাত ৯টায় রিগ্যান ওয়াশিংটন ন্যাশনাল এয়ারপোর্টের রানওয়ে ৩৩-এর কাছাকাছি দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্য দিয়ে দেশটির ইতিহাসে যুক্ত হলো আরেকটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা।
বৃহস্পতিবার আমেরিকান এয়ারলাইন্স জানায়, ওয়াশিংটনে বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটি কানসাসের উইচিটা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীতে যাচ্ছিল। ওয়াশিংটন ডিসির মাঝ আকাশে উড়োজাহাজ ও মার্কিন সেনাবাহিনীর ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সেনা কর্মকর্তা জানান, সামরিক হেলিকপ্টারটিতে তিন সেনা সদস্য ছিলেন। এটি ভার্জিনিয়ার ফোর্ট বেলভোয়ার থেকে উড্ডয়ন করেছিল।
ওয়াশিংটন ডিসির দমকল বাহিনীর প্রধান জন ডোনেলি জানান, সংঘর্ষের পর দুটি উড়োযানই হিমশীতল পটোম্যাক নদীতে বিধ্বস্ত হওয়া তিনি কারও বেঁচে থাকার আশা করছেন না।
বৃহস্পতিবার ভাষণে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই দুর্ঘটনাকে ‘দেশের রাজধানীর অন্ধকার ও বেদনাদায়ক রাত’ এবং ‘ভয়াবহ অনুপাতের ট্র্যাজেডি’ বলে অভিহিত করেছেন।
বিধ্বস্ত হওয়া যাত্রীবাহী উড়োজাহাজটির ফ্লাইট ডেটা (উড্ডয়ন–সংক্রান্ত তথ্য) ও ককপিট ভয়েস রেকর্ডার উদ্ধার হয়েছে।
এ ঘটনার তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র সিবিএস নিউজ ও এবিসি নিউজকে বৃহস্পতিবার বলেছে, আমেরিকান এয়ারলাইনসের ওই উড়োজাহাজের রেকর্ডিং যন্ত্রগুলো (ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার ও ককপিট ভয়েস রেকর্ডার) উদ্ধার হয়েছে, যা সাধারণত ব্ল্যাক বক্স নামে পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের স্বাধীন তদন্ত সংস্থা ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড এখন ব্ল্যাক বক্সের তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করবে। ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ডই এ ঘটনার তদন্তে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
সিবিএস নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে পটোম্যাক নদীতে উদ্ধারকাজ স্থগিত করা হয়েছে। তবে ডুবুরিদের আশা, সব দেহাবশেষ তারা উদ্ধার করতে পারবেন।
কী ঘটেছিল
স্থানীয় সময় বুধবার রাত ৯টার দিকে ওয়াশিংটন ডিসির দক্ষিণ-পশ্চিমে পটোম্যাক নদীর তীরে অবস্থিত রিগ্যান ওয়াশিংটন ন্যাশনাল এয়ারপোর্টে কাছে পৌঁছানোর সময় কানাডীয় প্রতিষ্ঠান বোম্বার্ডিয়ারের তৈরি আমেরিকান এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজের (ফ্লাইট ৫৩৪২) সঙ্গে সিকোরস্কি ব্ল্যাক হক আর্মির একটি হেলিকপ্টারের সংঘর্ষ হয়।
অবতরণের আগে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাররা পাইলটদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, তারা রানওয়ে ৩৩ এ অবতরণ করতে পারে কিনা। ফ্লাইট ট্র্যাকিং সাইটগুলো দেখিয়েছিল- কন্ট্রোলারদের কথায় সাড়া দিয়ে পাইলটরা উড়োজাহাজ অবতরণ করার কথা জানান।
বিধ্বস্ত হওয়ার ৩০ সেকেন্ডেরও কম সময় আগে এক এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারটিকে জিজ্ঞাসা করেন, যে তারা উড়োজাহাজটি দেখতে পাচ্ছে কিনা।
দুর্ঘটনার সময় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের বলতে শোনা যায়, ‘ক্র্যাশ, ক্র্যাশ, ক্র্যাশ, দিস ইজ অ্যালার্ট থ্রি।’
এক এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার বলেন, আমি শুধু একটি আগুনের গোলা দেখেছি। নদীতে নামার পর থেকে কিছুই দেখিনি।
একটি সিসিটিভি ক্যামেরা দেখা যায়, সংঘর্ষে দুটি উড়োযানেই আগুন লাগে। পরে পটোম্যাক নদীতে পড়ে যায়
নিহতদের পরিচয় সম্পর্কে যা জানা গেছে
ইউএস ফিগার স্কেটিং গভর্নিং বডি জানিয়েছে, উড়োজাহাজাটিতে থাকা ৬০ জন যাত্রীর মধ্যে বেশ কয়েকজন মার্কিন আইস স্কেটার, পরিবারের সদস্য এবং ফিগার স্কেটিং প্রতিযোগিতা শেষে একটি ক্যাম্প থেকে ফিরে আসা কোচ ছিলেন। হেলিকপ্টারে থাকা তিনজনই সৈনিক বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, অন্তত ৩০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মার্কিন সরকারি কর্মকর্তারা জীবিতদের সম্পর্কে কিছু উল্লেখ করেননি।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, দুর্ঘটনার শিকার উড়োজাহাজের যাত্রীদের মধ্যে রুশ আইস স্কেটিং প্রশিক্ষক এবং সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এক দম্পতি ছিলেন। ইয়েভজেনিয়া শিশকোভা ও ভাদিম নাউমভ ১৯৯৪ সালে ফিগার স্কেটিংয়ের যুগল ক্যাটাগরিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। তারা ১৯৯৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। সেখানেই তরুণ স্কেটারদের তারা প্রশিক্ষণ দিতেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে নিহতের সংখ্যা ঘোষণা করা না হলেও মার্কিন সিনেটর রজার মার্শাল জানিয়েছেন, উড়োজাহাজের সবাই না হলেও তাদের অধিকাংশই নিহত হয়েছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তিনি লিখেছেন, উড়োজাহজটি তার সঠিক পথেই বিমানবন্দরের দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু হেলিকপ্টারটি অনেকক্ষণ ধরেই সরাসরি উড়োজাহাজটির দিকে এগোচ্ছিল।
রাতের আকাশ যথেষ্ট পরিষ্কার ছিল। বিমানে আলো জ্বলছিল। হেলিকপ্টারটি উপরে উঠে যেতে পারত, নিচে নেমে আসতে পারত কিংবা উল্টো দিকে ঘুরে যেতে পারত। কেন তা করা হল না? কন্ট্রোল টাওয়ার থেকেই বা কেন হেলিকপ্টারকে এ সংক্রান্ত সঠিক নির্দেশনা দেওয়া হলো না?
কন্ট্রোল টাওয়ারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ট্রাম্প লিখেছেন, হেলিকপ্টারের পাইলট উড়োজাহাজটি দেখেছেন কিনা তা জিজ্ঞাসা করার পরিবর্তে কন্ট্রোল টাওয়ার কেন হেলিকপ্টারটিকে কী করতে হবে তা জানায়নি?
ট্রাস্প এ দুর্ঘটনাকে ‘ভয়ানক বিপর্যয়’ উল্লেখ করে বলেন, এই রাত কত ভয়াবহই না ছিল! খুবই খারাপ একটি পরিস্থিতি গেছে। দেখে মনে হচ্ছে এটা ঠেকানো যেত। ভালো হলো না।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, এ দুর্ঘটনার তদন্ত করা হবে।
পরে পেন্টাগনের পোস্ট করা এক ভিডিওতে হেগসেথ বলেন, এই দুর্ঘটনা একটি ট্র্যাজেডি। ঘটনার সময় উড়োজাহাজটি করিডোরে এবং সঠিক উচ্চতায় ছিল কিনা তা তদন্তে দ্রুত জানা যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ যত উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা
২০০১ আমেরিকান এয়ারলাইনসের একটি জেট নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পর দুর্ঘটনায় পড়ে। এতে ২৬০ জন নিহত হন এবং বিমানের বাইরে পাঁচজন মারা যান। বিমান দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় হতাহত হয় ২০১১ সালের ৯ সেপ্টেম্বরে। সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের চারটি বিমান ধ্বংস হয়।
আমেরিকান এয়ারলাইনসের একটি হাইজ্যাক করা বিমান বোস্টন থেকে ছেড়ে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ভবনে বিধ্বস্ত হয়, এতে ৯২ জন আরোহীর সবাই নিহত হন। বিধ্বস্তের সময় আশপাশে থাকা ১ হাজার ৬০০ জন মারা যান। আরেকটি হাইজ্যাক করা ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের জেটও বোস্টন থেকে উড্ডয়ন করে এবং ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আঘাত হানে, এতে ৬৫ জন যাত্রী নিহত হন। আর দুর্ঘটনার স্থানে থাকা প্রায় ৯০০ জন মারা যান।
ওয়াশিংটন-ডুলেস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে তৃতীয় একটি হাইজ্যাক করা আমেরিকান এয়ারলাইনসের জেট পেন্টাগনের ওপর বিধ্বস্ত হয়, এতে ৬৪ জন যাত্রী নিহত হন। দুর্ঘটনার স্থানে থাকা প্রায় ১২৫ জন মারা যান।
আর ইউনাইটেড এয়ারলাইনের হাইজ্যাক করা জেটটি নিউজার্সি থেকে উড্ডয়ন করে পেনসিলভানিয়ার একটি মাঠে বিধ্বস্ত হয়, এতে ৪৪ জন যাত্রী নিহত হন।
এছাড়া ২০০৩, ২০০৪, ২০০৫, ২০০৬ ও ২০০৯ সালে দেশটিতে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা ঘটে। ২০০৩ সালে ইউএস এয়ারওয়েজ এক্সপ্রেসের একটি টার্বোপ্রপ বিমান উত্তর ক্যারোলিনার শার্লটে উড্ডয়ন করার পর দুর্ঘটনায় পড়ে। উড়োজাহাজের ২১ জন আরোহী মারা যান। পরের বছর ২০০৪ সালে করপোরেট এয়ারলাইনসের একটি টার্বোপ্রপ বিমান মিজৌরির কার্কসভিলে অবতরণের সময় দুর্ঘটনায় পড়ে, এতে ১৫ জনের মধ্যে ১৩ জন নিহত হন। ২০০৫ সালে ফ্লোরিডার মায়ামি থেকে উড্ডয়নের পর চক’স ওশান এয়ারলাইনের একটি টার্বোপ্রপ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে ২০ জন আরোহীর সবাই নিহত হন। ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকি রাজ্যের লেক্সিংটন থেকে উড্ডয়নের সময় রানওয়েতে ছিটকে পড়ে কমএয়ারের একটি রিজওনাল জেট। এতে বিমানের ৫০ জন আরোহীর মধ্যে ৪৯ জন মারা যান। ২০০৯ কলগান এয়ারের একটি টার্বোপ্রপ বিমান নিউইয়র্কের বাফেলোতে অবতরণের সময় দুর্ঘটনায় পড়ে। এতে বিমানে থাকা ৪৯ জনের মৃত্যু হয়। আর বিমানের বাইরের একজন নিহত হন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দ র ঘটন দ র ঘটন র জন য ত র ঘটন র স স র একট ফ ল ইট জন ম র স ঘর ষ র কর ড কর ড র সব ই ন তদন ত র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
কীর্তনখোলার তীর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে
আনিকা জেবা ও মালিহা জেবা। যমজ বোন। গত ১৭ মে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ পদে কমিশন্ড হন। বরিশাল সদরে জন্ম নেওয়া দুই বোন ২০১০ সালে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর পর কেমন করে গেলেন স্বপ্নের বন্দরে তাই তুলে ধরেছেন মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ
গত ১৬ মে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসা প্রশাসনে বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন আনিকা জেবা ও মালিহা জেবা। এর ঠিক পরদিনই এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ পদে কমিশন্ড হন। আরও মজার বিষয় হচ্ছে, এমবিএ গ্র্যাজুয়েশন ও সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভের ঠিক পরদিন, ১৮ মে ছিল এই দুই বোনের জন্মদিন। জন্মদিনটি তারা পরিবারের সঙ্গে উদযাপন করেন নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের আর রাজ্জাক সুপারমার্কেটের ব্যাঙ্কুয়েট হলে।
কীর্তনখোলার তীর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে...
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি আমেরিকানদের মধ্যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যমজ বোন আনিকা জেবা ও মালিহা জেবার জন্ম বরিশাল সদরে। ২০১০ সালে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তারা। নিউইয়র্কে গিয়ে হাইস্কুল শেষ করে তারা সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটিতে ব্যবসা প্রশাসনে ভর্তি হন এবং একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর রিজার্ভ অফিসার্স ট্রেনিং প্রোগ্রামে অংশ নেন। ১৬ মে সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসা প্রশাসনে বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ পদে
কমিশন্ড হন।
যে উদ্যোগ অনুপ্রেরণাদায়ক
সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটি ১৭ মে তাদের ডিগ্রি অর্জন উপলক্ষে যে সংবর্ধনা দেন তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ব্রায়ান জে শ্যানলি বলেন, ‘শিক্ষার পাশাপাশি দেশসেবায় তাদের এই উদ্যোগ অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক। জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে তারা নিয়মিত বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রে অংশ নেবেন।’
যে জন্য করেছেন এমবিএ
মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এমবিএ কোর্স সম্পন্নের পর আনুষ্ঠানিক সার্টিফিকেট অর্জনে আনিকা জেবা ও মালিহা জেবা বলেন, এমবিএ হয়েছি নিজের ব্যবসাকে আরও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার মধ্য দিয়ে বহুজাতিক সমাজে বাঙালির এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকার জন্য। অধ্যয়নের পাশাপাশি নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে পাঁচটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু করেছি। বাংলাদেশেও রয়েছে দুটি কসমেটিকস ব্র্যান্ড ‘দ্য বিউটি মল’ এবং ক্লথিং ব্র্যান্ড ‘ইলেনি’। এ দুটো পরিচালিত হচ্ছে অনলাইনে অর্ডার নিয়ে। আর রাজ্জাক ম্যানেজমেন্ট ইনকের অধীনে নিউইয়র্কের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পাঁচটি হচ্ছে– এবিসি ফুড অ্যান্ড ভেজিটেবল, বুচার মিট, আর রাজ্জাক সুপারমার্কেট, আর রাজ্জাক ব্যাঙ্কুয়েট এবং আর রাজ্জাক হোলসেল ফ্লাওয়ার।
ঐতিহ্য ও মায়ের অগ্রযাত্রা
বরিশাল থেকে মা মোর্শেদা বেগমের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো দুই বোন দেখেছেন মায়ের দৃঢ়তা ও পরিবারের জন্য মায়া। এও দেখেছেন যে মায়ের তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠা ‘আর রাজ্জাক ম্যানেজমেন্ট’ কেমন করে আস্থা অর্জন করে নিয়েছে স্থানীয় বাঙালিদের মাঝে! প্রতিষ্ঠানটির মাটি দিয়ে তৈরি ডিনার সেট প্রবাসীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কেবল পহেলা বৈশাখেই নয়; বাঙালিয়ানা প্রদর্শনের অন্য সব অনুষ্ঠানে এবং শৌখিন প্রবাসীদের ড্রয়িং রুমেও স্থান করে নিয়েছে তাদের মাটির ডিনার সেট। মায়ের মতো দুই বোনও বাংলাকে ভালোবেসে, বাঙালিয়ানায় ভর করে এগিয়ে যেতে চান।
আগামীর স্বপ্ন
আনিকা জেবা এবং মালিহা জেবা দেশ ছাড়ার পর থেকে তাদের উচ্চশিক্ষা লাভের ব্যয় নিয়ে কোনো রকম দুশ্চিন্তা করতে হয়নি মা মোর্শেদা বেগম মায়াকে। তারা বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গেই নিজেদের পড়াশোনা চালিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৭ মে তারা ‘ইউএস আর্মি রিজার্ভ অফিসার্স ট্রেনিং কোর্স’ সম্পন্নের সার্টিফিকেট তথা ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছেন। সেদিন সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট ব্রায়ান জে শ্যানলি ক্লাস-২০২৫ কমিশনিংপ্রাপ্ত ১৪ জনকে অভিনন্দন জানান। সেকেন্ড লেফটেন্যান্টের ব্যাজ পরার আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে দুই বোন বলেন, ‘পেশার পাশাপাশি আগামীতে নিজেদের ব্যবসাকেও এগিয়ে নিতে চাই। দেশেও কাজ করছি আমরা। সেখানেও রয়েছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এসবের পাশাপাশি মানবিক কাজ করে যাচ্ছি। এই কাজের ধারাবাহিকতার পাশাপাশি নিজেদের সঙ্গে লাল-সবুজের পতাকাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই!’