৮৮৮ কোটি টাকার সার ও ফসফরিক এসিড কিনবে সরকার
Published: 4th, February 2025 GMT
দেশের কৃষি খাতে ব্যবহারের জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে পৃথক ৫টি চুক্তির আওতায় এক লাখ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের সার ও আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে সার উৎপাদনে ব্যবহারের জন্য ৪০ হাজার মেট্রিক টন ফসফরিক এসিড আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে ৮৮৮ কোটি ১৯ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড.
সভা সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় সৌদি আরব থেকে দ্বিতীয় লটে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি (ডাই এ্যামোনিয়াম ফসফেট) সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
সৌদি আরব থেকে ডিএপি সার আমদানি করা হবে। এতে আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে মোট ব্যয় হবে ২ কোটি ৪৪ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৯৮ কোটি ১৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা। প্রতি মেট্রিক টন ডিএপি সারের দাম পড়বে ৬১১ মার্কিন ডলার। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বিএডিসি থেকে ডিএপি সার আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ৮.৭৯ লাখ মেট্রিক টন; এ পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ৩.৬৯ লাখ মেট্রিক টন।
সভায় কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশ এর কাছ থেকে ১২তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাফকো, বাংলাদেশ থেকে ৫.৪০ লাখ মে. টন ইউরিয়া সার ক্রয়ের সংশোধিত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ১২তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ের জন্য প্রাইস অফার পাঠানোর অনুরোধ করা হলে কাফকো, বাংলাদেশ প্রাইস অফার পাঠায়। কাফকোর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সারের মূল্য নির্ধারণ করে ১২তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার প্রতি মেট্রিক টন ৩৮৯.৭৫ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ১ কোটি ১৬ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৪২ কোটি ৬৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।
সূত্র জানায়, সৌদি আরব থেকে ১৬তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় কমিটি। প্রতি মেট্রিক টন ৩৯৫.১৬ মার্কিন ডলার হিসাবে মোট ব্যয় হবে ১ কোটি ১৮ লাখ ৫৪ হাজার ৮০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৪৪ কোটি ৬২ লাখ ৮৫ হাজার ৬০০ টাকা।
এছাড়া, সভায় চট্রগ্রামের ডিএপিএফসিএল-এর জন্য ২০ হাজার মেট্রিক টন ফসফরিক এসিড আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ডিএপি সার উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল ফসফরিক এসিড বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স সান ইন্টারন্যাশনাল এফজেডই, ইউএই এই ২০ হাজার মেট্রিক টন ফসফরিক এসিড সরবরাহ করবে। প্রতি মেট্রিক টন ফসফরিক এসিডের দাম ৬৩৩.৪২ মার্কিন ডলার হিসাবে বাংলাদেশি মুদ্রায় মোট ব্যয় হবে ১৫২ কোটি ২ লাখ ৮ হাজার টাকা।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের ডিএপিএফসিএল’র জন্য ২০ হাজার মেট্রিক টন ফসফরিক এসিড আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এর জন্য আন্তর্জাতিক উম্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে মাত্র ১টি দরপত্র জমা পড়ে। প্রস্তাবটি কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি থেকে সুপারিশকৃত রেসপনসিভ একমাত্র দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স সান ইন্টারন্যাশনাল এফজেডই, ইউএই এই সার সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ১৫০ কোটি ৭৩ লাখ ৩৪ হাজার ৪০০ টাকা।
ঢাকা/হাসনাত/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ট র ক টন ব স র আমদ ন আমদ ন র দরপত র র জন য ইউর য়
এছাড়াও পড়ুন:
বেসরকারি ঋণ তলানিতে, তবে ঋণপত্র খোলায় গতি
প্রবাসী আয়ের পর দেশের অর্থনীতির সূচকে আরেকটি ইতিবাচক যাত্রা শুরু হয়েছে। পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র খোলা বেড়ে গেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ঋণপত্র খোলায় প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র দশমিক ১৮ শতাংশ। আর চলতি (২০২৫-২৬) অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে, অর্থাৎ গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ঋণপত্র খোলা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে ১০ দশমিক ৮২ শতাংশ। খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে ঋণপত্র খোলা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। পাশাপাশি শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে ঋণপত্র খোলাও বেড়েছে।
এদিকে ঋণপত্র খোলা বাড়লেও বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি দিন দিন কমে আসছে। গত আগস্ট শেষে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশে। গত বছরের আগস্টে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ফলে বাড়তি ঋণপত্র কারা খুলছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ঋণপত্র খোলা বেড়েছে, এটা অর্থনীতির জন্য ভালো বার্তা। এর মাধ্যমে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দেখতে পাচ্ছি। নির্বাচন নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। এই অনিশ্চয়তা কেটে গেলে ঘুরে দাঁড়ানোটা আরও বেগবান হবে—মোস্তাফিজুর রহমান, সম্মাননীয় ফেলো, সিপিডিবাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, গত অর্থবছরে পণ্য আমদানি তলানিতে নেমে গিয়েছিল। সেখান থেকে গত জুলাই থেকে কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে। এ কারণে ঋণপত্র খোলার প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। তবে প্রকৃতপক্ষে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসেনি। শিল্পের মূলধনি যন্ত্রে প্রতিবছর কিছু ছোট ছোট যন্ত্র সংযোজন করতে হয়। এসব পণ্য আসা বেড়েছে। এ ছাড়া এখন মৌসুম না থাকায় প্রয়োজনীয় খাদ্য আমদানি করছে বড় শিল্পগ্রুপগুলো। পাশাপাশি সরকারি চাল ও গম আমদানি হচ্ছে। এসব কারণে খাদ্যপণ্যে ঋণপত্র খোলা বেড়েছে। তবে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতির জন্য যে পরিবেশ দরকার তা এখনো ফেরেনি।
আমদানি ঋণপত্র পরিস্থিতিবাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ঋণপত্র খোলায় প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র দশমিক ১৮ শতাংশ ও ঋণপত্র নিষ্পত্তিতে প্রবৃদ্ধি হয় ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ। গত অর্থবছরে আমদানি হয় ৬৮ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় যা ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শিল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে ঋণপত্র নিষ্পত্তি কমে ২৫ শতাংশ, মধ্যবর্তী পণ্যের নিষ্পত্তি কমে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এ ছাড়া ভোগ্য পণ্যের ঋণপত্র নিষ্পত্তিও কমে যায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ভোগ্যপণ্যের ঋণপত্র খোলা হয়েছে ১৫৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলারের, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি। গত জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে মূলধনি যন্ত্রপাতির ঋণপত্র খোলা হয়েছে ৪৭ কোটি ১৬ লাখ ডলারের, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২২ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া আলোচ্য সময়ে শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্য, পেট্রোলিয়াম, শিল্পের কাঁচামালসহ সব পণ্যের আমদানি ঋণপত্র খোলা বেড়েছে।
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, অর্থনীতির গতি বাড়াতে আমদানি বাড়ানোর বিকল্প নেই। মূলধনি যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বাড়লে কলকারখানার চাকা বেশি ঘুরবে। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, অর্থনীতিতে গতি ফিরে আসবে।
জানতে চাইলে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, কিছু কারখানা ভালো ক্রয়াদেশ পাচ্ছে। এ ছাড়া পুরোনো অনেক কারখানা আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। এ জন্য মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কিছুটা বেড়েছে। এখন দেশে খাদ্য উৎপাদনের মৌসুম নয়। এ জন্য বেসরকারি শিল্পগ্রুপগুলো প্রচুর খাদ্যপণ্য আমদানি করছে। এতে ঋণপত্র খোলা বেড়েছে।
বেসরকারি ঋণ তলানিতেগত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির সমর্থিত অনেক ব্যবসায়ী পালিয়ে গেছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন মামলায় আটক হয়ে জেলহাজতে রয়েছেন শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ব্যাংকমালিকদের সংগঠনের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ আরও কয়েকজন শীর্ষ ব্যবসায়ী। পাশাপাশি শেখ হাসিনার পরিবারসহ ১১টি শিল্পগ্রুপ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। ফলে তাদের ব্যবসার গতি ধীর হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া পরিচালনা পর্ষদ বদলে দেওয়ার ১৫টি ব্যাংকঋণ কার্যক্রমও কমিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে একীভূত হতে যাওয়া ৫ ব্যাংকঋণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বেশ কিছু শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে তাই ব্যবসা-বাণিজ্য গতি হারিয়েছে। ফলে বেসরকারি খাতের ঋণের চাহিদা কমে গেছে। এ কারণে গত আগস্টে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশে নেমেছে। গত জুলাই মাসে যা ছিল ৬ দশমিক ৫২ শতাংশ।
জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঋণপত্র খোলা বেড়েছে, এটা অর্থনীতির জন্য ভালো বার্তা। এর মাধ্যমে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দেখতে পাচ্ছি, তবে সেটা পুরোপুরি না। বিনিময় হার স্থিতিশীল ও রিজার্ভ বাড়ায় আমদানি বাড়ছে। মূল্যস্ফীতি এখনো বেশি থাকায় সুদের হার কমছে না। এর নেতিবাচক প্রভাব অর্থনীতিতে আছে। পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। এই অনিশ্চয়তা কেটে গেলে ঘুরে দাঁড়ানোটা আরও বেগবান হবে।’