আমরা জানি, প্রতিটি শিশুই আলদা। একেক শিশুর বেড়ে ওঠার ধরন, কোনো কিছু বোঝার সক্ষমতা, কাজের ধরন, কাজ করার প্রতি আগ্রহ একেক রকম। কোন পরিস্থিতিতে শিশু কেমন আচরণ করবে, তা একটা বয়স পর্যন্ত আন্দাজ করা যায় না। ফলে অনেক সময়েই দেখা যায়, বাড়ির বাইরে কোথাও শিশুর আচরণে বিরক্ত হয়ে মা-বাবা বকাঝকা করেন। সবার সামনেই তাকে শাসন করেন, কখনো কখনো শিশুর গায়ে হাতও তোলেন। অথচ ২০১৩ সালের শিশু আইনেই স্পষ্ট উল্লেখ আছে, শিশুকে আঘাত করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

আমাদের দেশের মা-বাবার মধ্যে একটি ধারণা বেশ প্রচলিত, আর সেটি হলো শাসন না করলে সন্তান ‘মানুষ’ হবে না। আর শাসন বলতে এখানে মারধর, অপমানজনক কথাবার্তা, অন্যের সঙ্গে তুলনা, চিৎকার ইত্যাদিকেই বোঝায়। পুরো পরিবারের সামনে কিংবা একদম অপরিচিত পরিবেশে অনেক মানুষের সামনেও শিশুকে বকাঝকা দিতে পিছপা হন না অনেক অভিভাবক। কারণ, তাঁরা মনে করেন, শিশুর ভালোর জন্যই এই শাসন। এ ছাড়া নিজের সন্তানকে শাসন করতে কেন স্থান-কাল-পাত্র দেখতে হবে, এটাও বোধগম্য হয় না অনেকের কাছে। বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন অনেক ভিডিও আমরা ছড়িয়ে পড়তে দেখি, যেখানে বাবা কিংবা মা শিশুকে বকছেন, মারধর করছেন কিংবা প্রকাশ্যে অপমান-অপদস্থ করছেন। আবার পরিবার বা বাইরের কোনো সদস্য সেই ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দিচ্ছেন।

অথচ শিশুকে প্রকাশ্যে শাসন করলে তার নানা ধরনের মানসিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। নিউজ এইটিন ডটকমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকাশ্যে শাসন করলে শিশুর শৈশব নিয়ে একধরনের ভীতি তৈরি হয়। অনেক গবেষকই প্রমাণ করে দেখিয়েছেন, প্রকাশ্যে শাসনের শিকার হয়েছেন, এমন অনেকেই বড় হয়ে বিষণ্নতায় ভুগেছেন।

আরও পড়ুনকোন বয়সের শিশুকে ঘরের কী কাজ করাবেন২০ নভেম্বর ২০২৪

কঠোর শাসন শিশুর মস্তিষ্কের গঠনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। শৈশবে কঠোর শাসনের মুখে পড়েছেন, এমন মানুষদের সঙ্গে অন্যদের এমআরআই রিপোর্টের তুলনা করে এর প্রমাণও পাওয়া গেছে। শিশুকে প্রকাশ্যে শাসন করা বা মারধর করা কেন উচিত নয়, সে বিষয়ে জানতে কথা বলেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাউফুন নাহারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আধুনিক মনোবিজ্ঞান বলে, প্রকাশ্যে বা গোপনে কোনোভাবেই শিশুকে শাস্তি দেওয়া যাবে না। তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে, তার সঙ্গে চিৎকার করা যাবে না, মারধর তো করা যাবেই না।’

অতিরিক্ত মারধর বা শাসনে বেড়ে ওঠা শিশুর মধ্যে পরবর্তী জীবনে নিষ্ঠুরতা দেখা দিতে পারে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র স মন ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের

ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।

এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।

এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।

সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।

আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।

শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্‌ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।

পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেল ঘোষণা
  • আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতি আগ্রহের কারণ কী, প্রশ্ন টিআইবির
  • মুসলিম পরিবারে শিশুর নিরাপত্তা
  • পুরোপুরি বিলুপ্তির পর উগান্ডায় আবার ফিরল গন্ডার
  • ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের