হজরত আবু মুসা আল আশয়ারি (রা.)-এর জীবন ছিল যেন রাসুলের (সা.) জীবনের প্রতিচ্ছবি। সব সময় তিনি চেষ্টা করতেন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতিটি কাজ ও আচরণ হুবহু অনুসরণ করতে। রমজানের রোজা ছাড়াও তিনি নফল রোজা রাখতেন। এ ছাড়া তিনি আশুরার রোজা রাখতেন এবং মানুষকে তা রাখতে বলতেন। প্রচণ্ড গরমের সময়ও তাঁকে রোজা রাখতে দেখা যেত। তিনি বলতেন, ‘হয়তো দুপুরের গরমের তৃষ্ণা কিয়ামতের দিনে আমাদের জন্য প্রশমিত হবে।’

সুন্নত ছাড়া মুস্তাহাবের প্রতিও তিনি খুব যত্নবান ছিলেন। কোরবানির পশু নিজ হাতে জবাই করা মুস্তাহাব। এ কারণে তিনি তাঁর কন্যাদেরও হুকুম দিতেন নিজ হাতে পশু জবাই করার জন্য। আবু মুসা (রা.

) জীবনের শেষ পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদেশ ও নিষেধ পালনে অত্যন্ত সচেতন ছিলেন। জীবনের শেষ দিকে তাঁর অবস্থা যখন সংকটজনক হয়ে পড়ে এবং তিনি চেতনা হারিয়ে ফেলেন, তখন নারীরা কান্নাকাটি শুরু করেন। সেই কঠিন মুহূর্তেও ক্ষণিকের জন্য চেতনা ফিরে পেলে তিনি বলেন, রাসুল (সা.) এভাবে বিলাপ করতে নিষেধ করেছেন।

আরও পড়ুনজুমার দিনে সুরা কাহাফ পাঠ২৪ নভেম্বর ২০২৩

আবু মুসা (রা.)-এর মধ্যে এ গুণ পরিপূর্ণরূপে ছিল। রাতে ঘুমানোর সময়ও তিনি বিশেষ ধরনের পোশাক পরে নিতেন, যাতে সতর (শরীরের সেসব অংশ অপরের সামনে ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক) উন্মুক্ত না হয়ে যায়। আবু মুসা (রা.) ছিলেন অত্যন্ত সরল ও সাদাসিধে প্রকৃতির। প্রথম জীবনে দরিদ্র ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী। তবে পরবর্তী জীবন সচ্ছলতায় কেটেছে তাঁর।

যে ছয়জন সাহাবি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবদ্দশায় ফতোয়া দানের অনুমতি পেয়েছিলেন, আবু মুসা আল আশয়ারি (রা.) তাঁদেরই একজন। রাসুল (সা.) তাঁর সম্পর্কে বলতেন, ‘আবু মুসা (রা.) অশ্বারোহীদের নেতা।’

আবু মুসা আল আশয়ারি (রা.) ছিলেন ইয়েমেনের অধিবাসী। সেখানকার আল আশয়ার গোত্রের সন্তান হওয়ায় তিনি আল আশয়ারি হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেন।

আরও পড়ুনসুরা মায়িদায় আল্লাহ্‌র নির্দেশনা২৫ ডিসেম্বর ২০২৩

আবু মুসা (রা.) ইসলামের পরিচয় পেয়ে ইয়েমেন থেকে মক্কায় আসেন এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাতে বাইয়াত নেন। কিছুদিন মক্কায় অবস্থানের পর স্বদেশবাসীকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার উদ্দেশ্যে আবার ইয়েমেনে ফিরে যান। আবু মুসা (রা.) ছিলেন তাঁর বংশের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা। তাই খান্দানের লোকেরা দ্রুত এবং ব্যাপকভাবে তাঁর দাওয়াতে সাড়া দেন।

রাসুল (সা.)-এর মদিনায় হিজরতের কয়েক বছর পর প্রায় ৫০ জন মুসলিমের একটি দলকে সঙ্গে নিয়ে আবু মুসা (রা.) মদিনায় যাওয়ার জন্য ইয়েমেন থেকে সমুদ্রপথে যাত্রা করেন। তাঁরা যখন মদিনায় পৌঁছান, সে সময় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনীও খাইবার বিজয় শেষ করে মদিনায় ফেরেন। রাসুল (সা.) আবু মুসা (রা.) ও তাঁর সঙ্গীদের সবাইকে খাইবারের গনিমতের অংশ দান করেছিলেন। আবু মুসা (রা.) তাড়াতাড়ি মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে অত্যন্ত সম্মানিত হয়ে ওঠেন।

আরও পড়ুনরাতে ঘুমানোর আগে সুরা মুলক পড়ার কারণ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

শিকলে বাধা শান্তর চিকিৎসায় ইউএনওর সহায়তা

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ছাতিয়ান গ্রামে টাকার অভাবে শিকলবন্দী জীবন কাটছে ১৪ বছর বয়সী শান্তর। জন্মের পর থেকেই মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। পরিবার তাকে চিকিৎসা করানোর চেষ্টা করে। তবে অর্থ সংকটে নিয়মিত চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দিন–দিন অস্বাভাবিক আচরণ বাড়তে থাকে। সে কারণে রাতে ঘরে, আর দিনে গাছের সঙ্গে শিকলে বেঁধে রাখতে বাধ্য হন অভিভাবকরা।

গত রবিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে শান্তর বাড়িতে যান নবাগত জেলা প্রশাসক মো. ইকবাল হোসেন। তিনি শিশুটির অবস্থা দেখে চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাস দেন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে শান্তর বাড়িতে প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করার জন্য নগদ ১৫ হাজার টাকা শান্তর বাবা জসীম উদ্দীনের হাতে তুলে দেন মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম। 

এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার পীযূষ কুমার, সমাজসেবা কর্মকর্তা জামশেদ আলী, মিরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মারফত আফ্রিদি।

এ ব্যাপারে শান্তর পিতা জসিম উদ্দিন জানান, ২০১১ সালে জন্ম নেওয়ার পর শান্ত সাড়ে তিন বছর বয়সে নানা অস্বাভাবিক আচরণ ও অখাদ্য খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলে। পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে গেলে দীর্ঘ পাঁচ বছর চিকিৎসা চালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।

দারিদ্র্যের কারণে নিয়মিত ওষুধ কিনতে না পেরে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায়। কিছুটা ভালো হওয়ার পর আবার সমস্যার পুনরাবৃত্তি হলে ২০১৮ সালে ফের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। সেবারও পাঁচ বছর ধরে ওষুধ চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ আসে। কিন্তু দৈনিক ১০০-২০০ টাকার ওষুধ বাবদ খরচ মেটানো তার পক্ষে সম্ভব হয়নি।

জসিম আরো জানান, করোনাকালে গণমাধ্যমে শান্তর ভিডিও ভাইরাল হলে সেসময়ের পুলিশ সুপার তানভির আরাফাত চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। পরে তিনি বদলি হলে চিকিৎসা থেমে যায়। বর্তমানে প্রতিবন্ধী ভাতার ২ হাজার ৬০০ টাকা তিন মাস পরপর পেলেও তা খাবার, কাপড় ও পরিচর্যায় শেষ হয়ে যায়। 

তিনি বলেন, “গত ২৪ নভেম্বর ডিসি স্যার শান্তকে দেখতে আসেন এবং চিকিৎসার সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন। গতকাল ইউএনও স্যার ১৫ হাজার টাকা প্রদান করলেন এবং শান্তর চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাও সার্বিক সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন।”

মিরপুরের ইউএনও মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, “শান্তকে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতার কারণে শিকলে বেঁধে রাখা হয়। বিষয়টি জেলা প্রশাসকের নজরে আসার পর তিনি নিজে গিয়ে শিশুটির খোঁজ খবর নেন। আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসার জন্য ১৫ হাজার টাকা প্রদান করি। সরকারি সকল সহযোগিতা থেকে শান্তর চিকিৎসার সুব্যবস্থা করা হবে।”

ঢাকা/কাঞ্চন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এক ম্যাচে ১৭ লাল কার্ড!
  • তিন নারী শুটারকে হয়রানির অভিযোগে শুটিং ফেডারেশনের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জিডি
  • শিকলে বাধা শান্তর চিকিৎসায় ইউএনওর সহায়তা
  • নারীরা চলাফেরা, আচরণের ক্ষেত্রে যে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন, তা কল্পনা করা যায় না: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
  • বিশ্বকাপে নিষিদ্ধ হচ্ছেন না রোনালদো, খেলতে পারবেন পর্তুগালের প্রথম ম্যাচ থেকেই