খাজা নাফে-হুসেইন তালাত যেভাবে ব্যাট করছিলেন চিটাগং কিংসের জয় মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার। চার-ছয়ের মারে কমে আসছিল বলের সঙ্গে রানের পার্থক্য। তখনই নাসুম আহমেদের আঘাত। এরপর নাফের উইকেট ভেঙে মুশফিক হাসান যেন চিটাগং কিংসের স্বপ্নও ভেঙে দেন। কিন্তু না! গল্পের এখানেই শেষ নয়। স্ট্রেচার থেকে মাঠে ফিরে আলিস আল ইসলাম লেখেন রূপকথার গল্প।

শেষ বলে প্রয়োজন ছিল চার, বুদ্ধিদীপ্ত শটে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ১১ বছর পর বিপিএলের ফাইনালে নাম লেখায় চিটাগং কিংস। আর পঞ্চমবার প্লে’অফে ওঠা খুলনার সামনে সুযোগ ছিল ফাইনালে নাম লেখানোর, কিন্তু ভাগ্য কথা বলেনি। মুশফিক হাসান হতে পারেন নায়ক, কিন্তু শেষ ওভারে ১৫ রান দিয়ে বনে যান খলনায়ক!

মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বুধবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে টস জিতে বোলিং নেয় চিটাগং। ব্যাটিং করতে নেমে ৬ উইকেটে ১৬৩ রান করে খুলনা। তাড়া করতে নেমে ২ উইকেটে জয় নিয়ে চিটাগং মাঠ ছাড়ে। ৭ বলে ১৭ রান নিয়ে ম্যাচসেরা হন আলিস। বল হাতে ৪ ওভারে ১৪ রানে নিয়েছেন ১ উইকেট।  

আরো পড়ুন:

হেটমায়ার ঝড়ে শেষ চার ওভারে ৬৯, খুলনার চ্যালেঞ্জ

ইয়াশা সাগরকেও টাকা দেয়নি চিটাগং কিংস, ‘হেনস্থার’ অভিযোগ

১৮তম ওভারে জেসন হোল্ডারকে পরপর ছয়-চারে রানের ব্যবধান কমিয়ে দেন আলিস আল ইসলাম। শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন ছিল ২১। হাসান মাহমুদের করা ১৯তম ওভারে ৬ রানের বেশি নিতে পারেনি। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৫ রান। মুশফিক হাসানের প্রথম বলে চার মেরে ম্যাচ জমিয়ে দেন আরাফাত সানি। পরের বলে ডাবলের পর তৃতীয় বলে ডাবল নিতে গিয়ে মাঠ ছাড়েন আলিস। সানির সঙ্গী হন শরিফুল ইসলাম। চতুর্থ বলে চার হাঁকিয়ে শরিফুল ব্যবধান কমিয়ে দুই বলে চার রানে আনেন। পরের বলের আউট হয়ে ফেরেন এই ব্যাটার। শেষ বলে প্রয়োজন ছিল ৪। স্ট্রেচার থেকে নেমে আলিস চার মেরে উল্লাসে ভাসান চিটাগংকে।

চিটাগংয়ের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৭ রান করেন নাফে। ৪৬ বলে এই রান করেন তিনি। এ ছাড়া ৪০ রান করেন তালাত। দুজনে জুটিতে যোগ করেন ৭০ রান। এরপর পরপর উইকেট পড়লেও টেল এন্ডাররা ম্যাচ বের করে আনেন। আরাফাত সানি ১৮ বলে ১৩ রান করে অপরাজিত ছিলেন। খুলনার হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট শিকার করেন মুশফিক হাসান-হাসান মাহমুদ। 

এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৬ ওভার পর্যন্ত ধুঁকেছে দলটি। বলের চেয়ে রানের সংখ্যা ছিল কম। ধীরে ধীরে ক্রিজে সেট হওয়া শিমরন হেটমায়ারের ঝড়ের পর জেসন হোল্ডার-মোহাম্মদ নাওয়াজের ক্যামিওতে চিটাগং কিংসকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে খুলনা। 

মাত্র ৩৩ বলে ৬৩ রান করেন হেটমায়ার। অথচ প্রথম ২১ বলে এসেছিল মাত্র ২২ রান! এর পরের ১২ বলে করেন ৪১ রান। ৪টি ছয় ও ৬টি চারের মারে ইনিংসটি সাজান হেটমায়ার।

৪২ রানে ৪ উইকেটের পতনের পর মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনকে সঙ্গে নিয়ে জুটি গড়েন হেটমায়ার। ৩২ বলে ৪১ রানে অঙ্কন আউট হলে ভাঙে ৫০ বলে ৭৩ রানের জুটি। শেষে হোল্ডার ৫ বলে ১২ ও মোহাম্মদ নাওয়াজ ২ বলে ৫ রান করে অপরাজিত ছিলেন। 

খুলনার প্রথম চার ব্যাটারের মধ্যে শুধু মোহাম্মদ নাঈম শেখ দুই অঙ্কের ঘর ছুঁতে পারেন। ২২ বলে ১৯ রান করেন নাঈম শেখ। চিটাগংয়ের হয়ে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নেন বিনুরা ফার্নান্দো। 

ঢাকা/রিয়াদ/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব প এল র ন কর ন ল ইসল ম উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল

বাঁশির সঙ্গে সখ্য সেই শৈশবে। গ্রামে যাত্রাপালায় গান করতেন আর বাঁশির সুরে ছড়াতেন মুগ্ধতা। জীবন-জীবিকার তাগিদে একসময় বেছে নেন রিকশাচালকের পেশা। গ্রাম ছেড়ে থিতু হন ব্যস্ত শহরে। তবে বাঁশের বাঁশিকে হাতছাড়া করেননি শফিকুল ইসলাম (৪৫)।

যানজটে গতি থামতেই রিকশার হ্যান্ডেল ছেড়ে শফিকুল কোমর থেকে হাতে নেন প্রিয় বাঁশি। হর্নের কর্কশ ধ্বনি এড়িয়ে তখন বাতাসে ভাসে সুরের মূর্ছনা। বেখেয়ালি যাত্রী আর পথচারীরা হঠাৎ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকেন বাঁশিওয়ালার দিকে।

দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। সেই বাঁশির সুরেই যেন তাঁর জীবন বাঁধা। অভাব, দুর্দশা আর দারিদ্র্যও এ বন্ধন থেকে তাঁকে আলাদা করতে পারেনি। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।

শফিকুলের পৈতৃক ভিটা বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার শালিখা গ্রামে। তবে জীবিকার তাগিদে থাকেন বগুড়া শহরের মালতীনগর এলাকার একটি গ্যারেজে। গত রোববার বিকেলে তাঁর দেখা মেলে বগুড়া শহরের কোর্ট হাউস স্ট্রিটের ব্যস্ত সড়কে। শেষ বিকেলে যানজটে যখন পথচারীরা বিরক্ত, তখন বাতাসে ভেসে আসে ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ ভাওয়াইয়া গানটির সুর।

দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।

এরই একফাঁকে আলাপ হয় শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। কথায় কথায় তিনি জানান, দারিদ্র্যের কারণে পঞ্চম শ্রেণির গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়। এরপর জড়িয়ে পড়েন গ্রামের একটি যাত্রাপালার দলে। ‘কাজলরেখা’, ‘সাগরভাসা’, ‘গুনাইবিবি’, ‘রাখালবন্ধু’, ‘রূপবান’সহ নানা লোককাহিনিনির্ভর যাত্রাপালায় অভিনয় ও গান করেছেন। শুধু তা–ই নয়, গানের সুরে হারমোনিয়ামও বাজাতেন। এসবের ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক রিকশা চালাতেন তখন।

পরিবারের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল বলেন, ২০০০ সালে বিয়ে করেন। স্ত্রী মোর্শেদা গৃহিণী। তাঁদের তিন মেয়ে—শরীফা, শম্পা ও শাকিলা। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। স্ত্রী ও দুই মেয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। মাসে দুবার তিনি বাড়িতে যান। শফিকুলের দাবি, বগুড়া শহরে রিকশা চালিয়ে দিনে পান ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। থাকা-খাওয়া ও রিকশার জমা খরচ ছাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা থেকে যায়। সেই টাকায় চলে সংসার।

শুরুতে শহুরে জীবন শফিকুলের একদম ভালো লাগত না, মন পড়ে থাকত সেই গ্রামে। মন ভালো রাখতে রিকশা চালানোর সময় গুনগুন করে গাইতেন। এর মধ্যে শহরের রাস্তায় একদিন এক বাঁশিওয়ালার সঙ্গে তাঁর দেখা। তাঁর কাছ থেকে উপার্জনের ৮০ টাকা দিয়ে একটি বাঁশি কেনেন তিনি। এরপর রাতে গ্যারেজে শুয়ে সেই বাঁশিতে সুর তোলেন। এখন বাঁশি তাঁর নিত্যসঙ্গী।

বাঁশি বাজাতে বাজাতে রিকশা চালানো অভ্যাস হয়ে গেছে জানিয়ে শফিকুল বলেন, যানজটে আটকা পড়লে বাঁশিতে সুর তোলেন। যাত্রী না পেলে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে একমনে বাঁশি বাজান। সুর শুনে যাত্রীরা ১০-২০ টাকা বেশি ভাড়া দেন কখনো কখনো।

গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী।শফিকুল ইসলাম

স্মৃতি হাতড়ে শফিকুল বলেন, একবার ঢাকায় রিকশা চালাতে গিয়েছিলেন। দৈনিক বাংলার মোড়ে রিকশা থামিয়ে একমনে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি ২০ তলা ভবন থেকে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তির চিৎকার শুনতে পান। ওপরে তাকাতেই ৫০ টাকার একটা নোট নিচে ফেলে দেন ওই ব্যক্তি। প্রশংসা করেন বাঁশির সুরের।

আলাপচারিতা একসময় আনমনে হয়ে পড়েন শফিকুল। বলেন, ‘মন তো (মনে) না পাওয়ার কষ্ট আচে। ১৬ বছর বয়সে এলাকার এক মেয়ের প্রেমে পড়চিনু। ৬ মাস ভালোই চলিচ্চিল সেই প্রেম। গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী। আরও পরে সঙ্গী হয় বাঁশি। এহন বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলে থাকপার চেষ্টা করি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাকিস্তানি খেলোয়াড়ের থ্রো লাগল আম্পায়ারের মাথায়, এরপর যা হলো
  • ফের রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার 
  • আমার স্বামীর উপরে কু-নজর পড়েছে: অঙ্কিতা
  • সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
  • ‘আমি থানার ওসি, আপনার মোবাইল হ্যাকড হয়েছে’
  • অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকের প্রশ্নে কেন চটে গেলেন ট্রাম্প, আলবানিজের কাছে নালিশেরও হুমকি দিলেন
  • কালিয়াকৈরে এক মাসে ২০ ডাকাত গ্রেপ্তার 
  • বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
  • ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা
  • ভাড়া বাসায় একা থাকতেন বৃদ্ধা, তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার