সাহসী সাহাবি হজরত যুবাইর (রা.)
Published: 8th, February 2025 GMT
খন্দকের যুদ্ধের সময়ের কথা। মদিনার ইহুদি গোত্র বনু কুরাইজা মুসলমানদের সঙ্গে সম্পাদিত মৈত্রী চুক্তি ভেঙে ফেলে। রাসুল (সা.) তাঁদের অবস্থা জানতে গুপ্তচর হিসেবে কাউকে পাঠাতে চাইলেন। সাহাবাদের উদ্দেশ্য করে তিনি তিনবার জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে তাদের সংবাদ নিয়ে আসতে পারবে? প্রত্যেকবারই যুবাইর (রা.
রাসুল (সা.) যুবাইর (রা.)-এর উদ্দীপনায় সংকট হয়ে বলেছিলেন, প্রত্যেক নবীরই একজন ঘনিষ্ঠ অনুসারী থাকে। যুবাইর আমার অনুসারী।
মক্কায় একবার এই গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল যে অবিশ্বাসীরা রাসুল (সা.)–কে বন্দী অথবা হত্যা করেছে। খবরটি শোনামাত্র একটি বালক ক্ষিপ্ত হয়ে তলোয়ার হাতে বেরিয়ে পড়ল। ঘটনাটির সত্য–অসত্য নিশ্চিত হওয়ার জন্য সে হাজির হলো রাসুল (সা.) এর দরবারে। রাসুল (সা.) তাঁকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে?
সে উত্তর দিল, আমি শুনেছি আপনি বন্দী অথবা নিহত হয়েছেন। তাই আমি প্রতিশোধ নিতে বেরিয়েছি।
তাঁর প্রতি বালকটির এমন ভালোবাসা আর সাহস দেখে রাসুল (সা.) অত্যন্ত মুগ্ধ হন। তিনি বালকটির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।
আরও পড়ুনজানাজার নামাজের নিয়ম ও ফজিলত ২৩ নভেম্বর ২০২৩যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা.) নামে সেই বালকটিই ছিলেন জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবিদের একজন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি প্রথম পর্বে ইসলাম গ্রহণকারীদের একজন।
যুবাইর (রা.)–এর মা হজরত সাফিয়া ছিলেন রাসুল (সা.)–এর ফুপু এবং যুবাইর (রা.)–এর স্ত্রী আসমা বিনতে আবু বকর ছিলেন উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.)–এর বোন।
অল্প বয়স থেকেই যুবাইর (রা.) ছিলেন খুব দুঃসাহসী। ছোটবেলা থেকেই তিনি বড় বড় পালোয়ান ও শক্তিশালী লোকদের সঙ্গে কুস্তি লড়তেন। যুদ্ধে অংশগ্রহণের ব্যাপারে তিনি ছিলেন অনন্য। অত্যন্ত বীরত্বের সঙ্গে ইসলামের প্রায় সব যুদ্ধেই অসামান্য অবদান রেখেছেন।
বদরের যুদ্ধে শত্রুপক্ষের আঘাতে যুবাইর (রা.)–র শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল। একটি ক্ষতের গভীরতা গর্তের মতো হয়ে যায়। পরে তাঁর ছেলে বলেছিল, আমরা বাবার সেই গর্তে আঙুল ঢুকিয়ে খেলা করতাম।
আরও পড়ুনপাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যেভাবে এল২৬ ডিসেম্বর ২০২৩উহুদের ময়দানে যখন পরিস্থিতি মুসলিমদের প্রতিকূলে গিয়ে রাসুল (সা.) অরক্ষিত হয়ে পড়েন, সে সময় যে ১৪ জন সাহাবি নিজেদের জীবনের বিনিময়ে রাসুল (সা.)-কে কেন্দ্র করে প্রতিরোধ করেন যুবাইর (রা.) ছিলেন তাঁদের অন্যতম। তাঁর এমন দুঃসাহসী ও আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠার পেছনে তাঁর মা সাফিয়া (রা.)–র অবদান ছিল অনেক।
মক্কা বিজয়ের দিন রাসুল (সা.) মুসলিম সেনাবাহিনীকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেন। সর্বশেষ এবং ছোট দলটিতে ছিলেন রাসুল (সা.) নিজে। এ দলটির পতাকাবাহী ছিলেন যুবাইর (রা.)।
উহুদ যুদ্ধে তাঁর মামা হজরত হামজা (রা.) শাহাদত বরণ করেন তাঁর মা সাফিয়া (রা.) ভাইয়ের কাফনের জন্য দু টুকরো কাপড় নিয়ে আসেন। মামার পাশেই ছিল একজন আনসারি সাহাবির লাশ। একটি লাশের জন্য দুটি কাপড় হবে, আরেকটি লাশ থাকবে কাফনহীন—এ ব্যাপারটি তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না। তাই তিনি দুজনের মধ্যে ভাগ করার জন্য কাপড় দুটি মাপলেন। লটারি করে বিষয়টি সমাধান করে দুজনের জন্য দু টুকরো কাপড় দিয়ে কাফন করলেন।
উমর (রা.)–এর শাসনামলে ইয়ারমুক নামে একটি যুদ্ধ হয়। সে যুদ্ধে যুবাইর (রা.) অসাধারণ ভূমিকা পালন করেন। যুদ্ধে যুবায়ের (রা.) মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন। উমর (রা.)–র মৃত্যুর পর শূরা কমিটিতে খলিফা নির্বাচনের জন্য যে ছয়জন সাহাবির নাম ছিল, তাঁদের একজন ছিলেন যুবাইর (রা.)।
ইসলামের ইতিহাসে যুবাইর (রা.)–র অসামান্য অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে চিরদিন।
আরও পড়ুননামাজে অন্য চিন্তা আসবে না অর্থ বুঝে পড়লে১৯ জানুয়ারি ২০২৪উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আমি গর্বিত আমি একজন মুসলিম: আমির খান
বলিউডের মিস্টার পারফেকশনিস্ট আমির খানকে নিয়ে রাজকুমার হিরানি নির্মাণ করেন আলোচিত সিনেমা ‘পিকে’। ২০১৪ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় এটি। মুক্তির পর বক্স অফিসে সুপারডুপার হিট হয়।
এ সিনেমা মুক্তির আগে প্রকাশিত হয় আমিরের পোস্টার। সিনেমাটিতেও নগ্ন আমিরের দেখা মেলে। তারপর দারুণ আলোচনায় উঠে আসেন এই অভিনেতা। সমালোচনাও কম সইতে হয়নি তাকে। এখানেই শেষ নয়, হিন্দু ধর্মের প্রতি কটাক্ষ করার অভিযোগে তীব্র সমালোচনা মুখে পড়েন আমির। ভাঙচুর করা হয় প্রেক্ষাগৃহ।
প্রায় এক যুগ পর এসব বিষয় নিয়ে মুখ খুলেছেন আমির খান। ইন্ডিয়া টিভি চ্যানেলের ‘আপ কি আদালত’ শোয়ে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেন আমির। তার ভাষায়— “ধর্ম নয়, ধর্মের নামে যারা প্রতারণা করে ‘পিকে’ সেসব লোকদের সমালোচনা করেছে।”
আরো পড়ুন:
জোড়া লাগল অর্জুন-মালাইকার ভাঙা প্রেম!
অন্তঃসত্ত্বা কিয়ারাকে কী উপহার দিলেন রাম চরণ?
ব্যাখ্যা করে আমির খান বলেন, “তারা ভুল। আমরা কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে নই। আমরা সমস্ত ধর্ম ও সমস্ত ধর্মের মানুষদের শ্রদ্ধা করি। যারা ধর্মকে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে টাকা কামায়, তাদের বিষয়ে সচেতন করাই ‘পিকে’ সিনেমার উদ্দেশ্য ছিল। প্রতিটি ধর্মেই এমন লোক পাওয়া যায়।”
‘পিকে’ সিনেমায় পাকিস্তানি এক মুসলিম ছেলেরি প্রেমে পড়ে ভারতীয় হিন্দু ধর্মের অনুসারী এক নারী (আনুশকা শর্মা)। এটাকে ‘লাভ জিহাদ’ বলে অনেকে অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে আমির খান বলেন, “সবসময়ই এটিকে লাভ জিহাদ বলা উচিত নয়। এটি মানবতা। মানবতা ধর্মের উর্ধ্বে।”
গত ৭-৮ বছরে দেশদ্রোহী, হিন্দুবিরোধী হওয়ার অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন আমির খান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি গর্বিত আমি একজন মুসলিম। আমি গর্বিত আমি একজন ভারতীয়। দুটোই একসঙ্গে সত্যি হতে পারে।”
ঢাকা/শান্ত