৪০ বছরের বন্দিত্ব ঘুচলেও মেলেনি ‘মুক্তি’ যেতে হবে নির্বাসন
Published: 7th, February 2025 GMT
কৈশোরেই জড়িয়ে পড়েছিলেন তৎকালীন নিষিদ্ধ ‘ফাতাহ আন্দোলনে’। ২৮ বছর বয়সে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধে অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে যান। সকলেই ভেবেছিলেন মারা গেছেন। তার মৃত্যুতে পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছিলেন সবাই। আয়োজন করা হয়েছিল শোকসভাও। এর মাস ছয়েক পর পরিবার জানতে পারে, তাদের ছেলে মরেনি। ইসরায়েলি বিমান হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে গেছে বটে, তবে আটক রাখা হয়েছে ইসরায়েলি কারাগারে। এ খবর শুনে তার পরিবারের সদস্যরা একইসঙ্গে হতবাক ও উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন। পরিবার ও অন্যান্য ফিলিস্তিনিদের কাছে ‘জীবন্ত শহীদ’ উপাধি পান আল-তুস। এরপর কেটেছে ৪০ বছরের বন্দী জীবন। বলছি ফিলিস্তিনি নাগরিক মোহাম্মদ আল-তুসের কথা।
এখন তাঁর বয়স ৬৯ বছর। চার দশক বন্দী থাকার পর ছাড়া পেলেও প্রকৃত ‘মুক্তি’ মেলেনি আল-তুসের। যে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য জীবনবাজি রেখেছিলেন সেই নিজভূমে থাকার সুযোগ থেকেও এখন তিনি বঞ্চিত। বন্দী বিনিময়ের শর্ত অনুসারে জীবনের বাকি দিনগুলো থাকতে হবে পরভূমে।
হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে তিন-ধাপের যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় বন্দী বিনিময়ের অংশ হিসেবে ইসরায়েল তাকে কারাগার থেকে ছেড়ে দেয়। এই বন্দী বিনিময় কার্যকর হয়েছিল ১৯ জানুয়ারি। ২৫ জানুয়ারি ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া ২০০ ফিলিস্তিনি বন্দীর মধ্যে ছিলেন আল-তুসও। এছাড়া ১২১ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৭৯ জন দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন। বন্দী বিনিময়ের অংশ হিসেবে গাজায় হামাস কর্তৃক জিম্মি চার ইসরায়েলি নারীর মুক্তির বিনিময়ে তারা মুক্তি পান। মুক্ত ফিলিস্তিনিরা পশ্চিমতীরে নিজ নিজ পরিবারের কাছে ফিরে গেছেন। তবে তাদের মধ্যে ৭০ জনকে মিসর, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, তুরস্কে পাঠানো হবে। আল-তৌস যাবেন মিসরে।
১৯৮৫ সালে ২৮ বছর বয়সে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হয়েছিলেন আল-তুস। ওই বছরের অক্টোবরে জর্ডান সীমান্তের কাছে দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনী এবং ফিলিস্তিনি কমান্ডো ইউনিটের মধ্যে একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। ওই সময় তাকে বন্দী করা হয়েছিল। একটি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান তাদের কমান্ডো ইউনিট বহনকারী গাড়িকে আঘাত করে। এতে কমান্ডো ইউনিটের সব যোদ্ধা নিহত হন। গুরুতর আহত হলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তিনি।
প্রাণে বাঁচলেও দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে মেলেনি পরিত্রাণ। দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে জড়িত এবং তৎকালীন নিষিদ্ধ ফাতাহ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার জন্য ইসরায়েলি একটি আদালত আল-তুসকে একাধিক যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স সোসাইটির (পিপিএস) তথ্য অনুসারে, ১৪ বছর বয়সে তিনি যোগ দিয়েছিলেন ফাতাহ আন্দোলনে।
২০১১ ও ২০১৪ সালের বড় কয়েকটি বন্দি বিনিময় চুক্তিসহ কয়েক দশক ধরে চালিয়ে যাওয়া নানা চেষ্টাও ইসরায়েল আল-তুসকে মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে তিনিই ইসরায়েলি কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দীদের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী বন্দী হিসেবে রেকর্ড গড়েন। এজন্য কারাগারে ‘ফিলিস্তিনি বন্দীদের ডিন’ উপাধিও পেয়েছেন তিনি।
আল-তুসের মুক্তির সঙ্গে ২১ জন ফিলিস্তিনি বন্দীরও মুক্তি মেলে যারা ১৯৯৩ সালের অসলো শান্তি চুক্তির আগে ইসরায়েলি কারাগারে আটক ছিলেন। ফিলিস্তিনের নিরাপত্তা সংস্থা প্যালেস্টাইন প্রিভেনটিভ সিকিউরিটি জানিয়েছে- আল-তুস তার দীর্ঘ কারাবাসের সময় ব্যক্তিগতভাবে নানা ক্ষতির শিকার হয়েছেন। জেলে থাকাকালীন নানা সময় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বেথলেহেমের কাছে আল-জাবা গ্রামে তার পারিবারিক বাড়িটি ভেঙে গুড়িয়ে দেয়।
স্বামীর শোকে দীর্ঘ অসুস্থতার পর তার স্ত্রী আমনা ২০১৫ সালে মারা যান। আল-তুসের ছেলে শাদি যিনি দেশটির একজন সংসদ সদস্য তিনি বলেন, ‘বাবাকে ছাড়া কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে আমাদের পরিবারকে পার হতে হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার মা স্ট্রোকে মারা যাওয়ার পর আমাদের অবস্থা খারাপ থেকে খারাপ হয়ে গেছে। তখন থেকে আমি ও আমার ভাইয়েরা এতিম হিসেবে বসবাস করতাম।’
মুক্তির পরপরই আল-তৌসের তিন ছেলের একজন থায়ের স্থানীয় একটি টেলিভিশনকে বলেন, মিশর ও অন্যান্য ভ্রাতৃপ্রতিম দেশগুলোর প্রচেষ্টায় বন্দী বিনিময় চুক্তিতে ইসরায়েলের সঙ্গে সমঝোতা পৌঁছে হামাস। এর প্রেক্ষিতে আমাদের বাবার মুক্তি নিশ্চিত হয়।
তিনি বলেন, ‘গাজার যুদ্ধের আগে আমরা মাসে একবার বাবার সঙ্গে দেখা করতে পেরেছিলাম। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে আমাদের এবং অন্যান্য বন্দীদের পরিবারকে তাদের (বন্দীদের) সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেয়নি ইসরায়েল। আমরা এখন আমাদের বাবার সঙ্গে দেখা করতে পারি তবে তার নির্বাসিত দেশে’ বলেছিলেন থায়ের।
তিনি বলেন, ‘আমি দখলদার ইসরায়েলি কারাগারে ফিলিস্তিনি সকল বন্দীর মুক্তির দাবি করছি। গাজার পুনর্গঠন শুরু করার জন্য এই চুক্তির সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন কামনা করছি।’
এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হলেও গাজাকে কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত করে রেখেছে ইসরায়েল। তারা ফিলিস্তিনিদের উত্তরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান যুদ্ধের মধ্যে হামাস আরও ১০ থেকে ১৫ হাজার যোদ্ধা নিয়োগ দিয়েছে। গত ১৫ মাসে যুদ্ধে একই সংখ্যক নিহতও হয়েছেন। গত কয়েক সপ্তাহে বেশ কয়েকটি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার জরিপে এসব তথ্য উঠে আসে। যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের অধিকাংশই নবীন ও অপ্রশিক্ষিত। এ প্রসঙ্গে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, যতবার ইসরায়েল তাদের অভিযান শেষ করে, ততবারই হামাস আবার পুনর্গঠিত হয় এবং শূন্যস্থান পূরণ করে। খবর-আহরাম অনলাইন
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল আল ত স র র পর ব র বন দ দ র ইসর য় ল আম দ র ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স তাঁর স্ত্রী উষা ভ্যান্স ক্যাথলিক গির্জার মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে কোনো একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন বলে যে মন্তব্য করেছিলেন, তা নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। নিজের এ মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বিশাল এক পোস্ট দিয়েছেন তিনি।
জেডি ভ্যান্স বলেন, তাঁর যে মন্তব্য নিয়ে কথা হচ্ছে, সেটি মূল বক্তব্য থেকে কেটে নেওয়া একটি অংশ। কোন প্রসঙ্গে তিনি ওই মন্তব্য করেছেন, সেটা দেখানো হয়নি।
গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যে তরুণদের সংগঠন ‘টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ’র একটি অনুষ্ঠানে এক তরুণীর প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ভ্যান্স তাঁর স্ত্রী উষা একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত উষা হিন্দু সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছেন।
স্ত্রী একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ভ্যান্সের এ মন্তব্য কি তাঁর স্ত্রীকে ধর্ম পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়ার ইঙ্গিত।
স্ত্রী একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা ভিডিও ভাইরাল হওয়া পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ভ্যান্সের এ মন্তব্য কি তাঁর স্ত্রীকে ধর্ম পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়ার ইঙ্গিত।জবাব দিতে এক্স পোস্টে ভ্যান্স বলেন, একটি পাবলিক ইভেন্টে তাঁকে তাঁর আন্তধর্মীয় বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি ওই প্রশ্ন এড়িয়ে যেত চাননি, উত্তর দিয়েছেন।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, ‘প্রথমেই বলি, প্রশ্নটি আসে আমার বাঁ পাশে থাকা একজনের কাছ থেকে, আমার আন্তধর্মীয় বিয়ে নিয়ে। আমি একজন পাবলিক ফিগার, লোকজন আমার ব্যাপারে জানতে আগ্রহী এবং আমি প্রশ্নটি এড়িয়ে যেতে চাচ্ছিলাম না।’
এ বছর জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে জেডি ভ্যান্স ও তাঁর স্ত্রী উষা ভ্যান্স