সুহান রিজওয়ান: বইমেলায় আপনার একটি গল্পের বই আসছে শুনেছি...

সাগুফতা শারমীন তানিয়া: হ্যাঁ, এবার বইমেলায় ঐতিহ্য থেকে এবার ‘প্রিয় ১৫’ সিরিজে আমার গল্পের বই আসছে। প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ। প্রকাশে দূতিয়ালি করেছেন পিয়াস মজিদ। আর এ বই উৎসর্গ করেছি সদ্য প্রয়াত সাহিত্যিক ফয়জুল ইসলাম ভাইকে।

সুহান: তাহলে গল্প লেখা নিয়েই প্রশ্ন করি। জানতে চাইব আপনার গল্প লেখার কায়দা নিয়ে। একেকটা গল্প একদম শুরু থেকে শেষ করেন ঠিক কী কী ধাপ মেনে? নাকি একেবারে স্বতঃস্ফূর্ত থাকে রচনাপ্রক্রিয়া?

সাগুফতা: অনেক দিন ধরে কোনো ক্রাফট নিয়ে পড়ে থাকলে কোনটা স্বতঃস্ফূর্ত আর কোনটা বাঁধাধরা চর্চা, তা আর আলাদা থাকে না। নিয়মিত চর্চাটাই তখন স্বতঃস্ফূর্ত হতে বাধ্য। আমার গল্প লেখার কায়দাটা ইন্ধননির্ভর, কোনো একটি মেটাফোরকে ধরে নিয়েও একটা পুরো প্লটে পৌঁছেছি এমনও হয়েছে। কখনো অকারণই মনে লেখা ভেসে আসে। প্যারাগ্রাফ, উপমা, অ্যানেকডোট। তখনই লিখে রাখি। কোনো খবর বা নিবন্ধ পড়তে গেলেও লিখে রাখি, কিছু একান্ত গবেষণা ছাড়া তো লেখা যায় না। তারপর একদিন লিখতে বসে দেখি, ওসব একের পর এক জুড়ে যাচ্ছে। দু-একসময় আমি শেষটুকু আগে লিখেছি, কিন্তু যেতে যেতে শেষটা সামান্য বদল করতে হয়েছে। কখনো একটানা লিখে শেষ করে কয়েক দিন পর ফেরত আসি, তারপর শুচিবায়ুগ্রস্তের মতো এডিট করি। যা আমাকে উদ্দীপিত করে, স্পর্শ করে, ভাবিত করে, আমি তা–ই নিয়ে লিখি। সেদিক থেকে স্বতঃস্ফূর্তই বলতে পারেন।

সুহান: আপনার গদ্য পড়তে গেলে আমি আগাগোড়া একটা কাব্যগন্ধী ব্যাপার টের পাই। খুব রুঢ় বিষয়ে বলতে গিয়েও আপনার শব্দরা যেন কোমলতা হারায় না। এই ভাষারীতি আয়ত্ত করতে ঠিক কী কী ব্যাপার প্রভাবিত করেছে আপনাকে?

সাগুফতা: এই ‘কাব্যগন্ধী’ শব্দটায় আমার টনি মরিসনের লিখনরীতি নিয়ে একটি প্রিয় উক্তির কথা মনে পড়ল, যাকে বলে ‘প্রিটি ল্যাঙ্গুয়েজ’, তা মরিসন ব্যবহার করেছেন, কিন্তু ‘প্রিটি’ আর ‘সুগার’ এক নয়। প্রিটি ল্যাঙ্গুয়েজও পরখ করে দেখলে দেখবেন, প্রয়োগের কারণে নৃশংস, নির্মেদ, চোখা এবং ক্ষেত্রবিশেষে ইতর হতে পারে। শব্দকে অনিবার্য হতে হবে, শব্দের পরবর্তী শব্দের সঙ্গে অন্বয় থাকতে হবে। আমি সেই চেষ্টাই করি। মনে করি না আমার ভাষারীতি গীতল-কোমল। বাংলা ও ইংরেজিতে পঠিত যত গল্পে জ্বলজ্বল করছে মানুষের প্রতিভা, তার সবই আমাকে প্রভাবিত করেছে। তাঁরা প্রত্যেকে একে অন্যের থেকে আলাদা। ন্যারেটিভ ভয়েস অত্যন্ত জরুরি জিনিস, সেদিক থেকে তিন বন্দ্যোপাধ্যায়, নারায়ণ সান্যাল, বিমল কর, সুবোধ ঘোষ, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ…বহু লেখক আমার চিন্তা, আমার রীতিকে প্রভাবিত করেছেন।

সুহান: এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, অন্তর্জগতের টানাপোড়েন নিয়ে নাড়াচাড়া দেখতে চান আপনি। এমন টানাপোড়েন, যেটা ‘আরবান’। প্রশ্নটা করছি সেখান থেকেই, যেহেতু দুনিয়াজোড়া মেট্রোপলিসগুলো এখন একই ঘরানার; সেটা কি এই আরবান ধাঁচের গল্প লেখায় একটা সমস্যা, না সম্ভাবনা?

সাগুফতা: দুনিয়াজোড়া মেট্রোপলিস একই ঘরানার হয়ে গেছে? এ কথায় আমার মনে হলো, হয়তো গুহায় ঘুমিয়ে ছিলাম, জেগে উঠে শতবর্ষ পুরোনো মুদ্রা নিয়ে হাটবাজারে হাজির হয়েছি। একেকটা শহর একেক ভঙ্গিমায় গল্প বলে। শহরবাসীরা আবার একে অপরের থেকে আলাদা, তাদের টানাপোড়েন আলাদা, তাদের আকাঙ্ক্ষা আর আর্তি আলাদা। তারা প্রত্যেকে একেক সময়ে প্রায় প্রতিপাদস্থানের মতো উল্টো বা দ্বান্দ্বিক মনোভাব পোষণ করতে পারে বা তেমন কাজ করতে পারে। আবার একই শহর একেক শতাব্দীতে একেক টোনে গল্প বলেছিল। ফলে প্রবাবিলিটি ট্রিতে অনেক ডালপালা, সম্ভাবনা অসীম। 

আমরা ভুবনপল্লির বাসিন্দা, গ্রামের ভিটিবাড়ির মাটিতে, পানাপুকুরে স্তরে স্তরে প্লাস্টিক ঢোকার মতো করে গ্রামবাসীর ‘পাস্টোরাল’-এ–ও বহু ‘আরবান’ ঢুকে গেছে। ফলে একই ধাঁচের হওয়ার সমস্যা ও সম্ভাবনা সেখানেও বিদ্যমান। প্রতিটি চেনা গল্পের ভেতরই কিছু উদ্ভট অনাবিষ্কৃত দৃষ্টিকোণ থাকে, সেটাই আশার কথা। 

সুহান: আপনার লেখা প্রথম পড়ি সেই দেড় দশক আগে। লেখক হিসেবে আপনার সঞ্চারপথ তাই খুব কম নয়। যখন লিখতে শুরু করেছিলেন, আর এই যে এখনো লিখে যাচ্ছেন—এই দুটো বিন্দুর মধ্যে বাংলাদেশি সাহিত্যের গতিপ্রকৃতির কেমন বদল দেখতে পান?

সাগুফতা: সাহিত্যের গতিপ্রকৃতির বদল দেখার জন্য দেড় দশক খুব হ্রস্ব সময়। দূরে থাকি, সেটাও পর্যবেক্ষণের বাধা। তবে নিয়মিত পড়ি। দু-তিন দশক আগে যে প্রস্তুতি-চর্চা নিয়ে এমনকি কমার্শিয়াল ফিকশনের সাহিত্যিকেরা লিখতে বসতেন, এখনকার মানুষ বোধ হয় তার প্রয়োজন বোধ করেন না। ‘সাহিত্যশিক্ষিত’ হতে হবে না, ‘ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন’ বলে মাঠে নেমে পড়লেই হবে। মাঝেমধ্যে মনে হয়, ক্ষমাই কি চাই শুধু, মুগ্ধতা চাই না? সাহিত্যে হিউমার বেড়েছে, সেটি একটি পজিটিভ দিক। কথায় কথায় আমরা শুনিয়ে দিই, ভাষার জন্য বুকের রক্ত দেওয়া জাতি আমরা, কিন্তু বাংলা ভাষার ঋদ্ধি-শুদ্ধি-বিকার-বিলয় কিছুমাত্র নিয়ে মাথা ঘামাই না। পশ্চিমে বলা হয়, সাহিত্যিককে বৈয়াকরণের চেয়ে বেশি ব্যাকরণ জানতে হবে, কারণ সে সেটা জেনেশুনে ভাঙবে, নাপিতের নির্বিকার ছুরি হাতে নয়। অনেক ভাষাভাষী আমাদের, কিন্তু ভাষাচর্চার প্রসার নিয়ে কাজ কম, উদাসীনতা বেশি। মানভাষা আর আঞ্চলিকের দ্বন্দ্ব ছাড়া আমাদের আর কোনো কোলাহল নেই। ভাষা নিয়ে যাঁরা এত নিরুদ্বেগ, তাঁদের সাহিত্য যেখানে যাওয়ার, সেখানেই চলেছে।

গল্প

প্রিয় ১৫ গল্প

সাগুফতা শারমীন তানিয়া

প্রকাশক: ঐতিহ্য, ঢাকা

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভ ব ত কর কর ছ ন আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকায় জামায়াতসহ ৭ দলের বিক্ষোভ আজ, কোথায়, কখন, কোন দল

ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ কয়েক দফা দাবিতে রাজধানী ঢাকায় আজ বৃহস্পতিবার একযোগে বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি দল।

বিক্ষোভের আগে বায়তুল মোকাররম, জাতীয় প্রেসক্লাবসহ আশপাশের এলাকায় দলগুলো সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করবে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব কর্মসূচি চলবে।

প্রায় অভিন্ন দাবিতে সাতটি দল তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আজ প্রথম দিনে রাজধানী ঢাকায়, আগামীকাল শুক্রবার বিভাগীয় শহরে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সব জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি রয়েছে দলগুলোর।

জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এই কর্মসূচি পালন করবে। সাতটি দলের কেউ ৫ দফা, কেউ ৬ দফা, কেউ ৭ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করলেও সবার মূল দাবি প্রায় অভিন্ন। দাবিগুলো হচ্ছে

জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং তার ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান, জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষে (কেউ কেউ উচ্চকক্ষে) সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি চালু করা

অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা

বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

সাড়ে চারটায় জামায়াত

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ ফটকের সামনে সমাবেশের পর বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াত। সমাবেশে দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতারা বক্তব্য দেবেন। জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।

জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।

বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।জোহরের পর ইসলামী আন্দোলন

জোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন দলের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

জোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।আসরের পর বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস

আসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল এক বিবৃতিতে দলের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ কর্মসূচিতে সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

এ ছাড়া খেলাফত মজলিস বেলা তিনটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। এতে দলের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন।

একই সময়ে, একই জায়গায় মিছিল করবে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনও। বিকেল চারটায় একই জায়গায় বিক্ষোভ করবে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি।

আসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজধানীর মধ্য এলাকায় একযোগে সাতটি দলের বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘিরে নেতা-কর্মীদের সমাগমে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য নগরবাসী দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে পারেন। যদিও আজ ও আগামীকাল সকালে বিসিএস পরীক্ষা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য এই সাত দল কর্মসূচি বিকেলে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ