‘শীতে বেয়া (বাঁকা) হই গেছি। এ কম্বলগা আঁর বহুত উপকারে আইবো। তোন্ডারে (তোমাদের) আল্লাহ বাঁচাই রাখোক। তোন্ডা অনেক বড় হও, তোন্ডা লাই দোয়া রইল।’ প্রথম আলো বন্ধুসভার দেওয়া একটি কম্বল পেয়ে এসব কথা বলেন ষাটোর্ধ্ব সুফিয়া বেগম। গতকাল শনিবার সকালে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের বকুলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কম্বল তুলে দেওয়া হয় স্থানীয় বাসিন্দা সুফিয়া বেগমের হাতে। একই দিনে তাঁর মতো শতাধিক শীতার্ত মানুষকে কম্বল দিয়েছে প্রথম আলো ফেনী বন্ধুসভা।

কম্বল বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান। কম্বল হাতে পেয়ে বাদুরিয়া এলাকার মিজানুর রহমান বলেন, ‘গেল বছর ভয়াবহ বন্যার পর এ বছর এই প্রথম আমাদের কেউ কম্বল দিয়েছে। এ কম্বল গায়ে দিয়ে শীতের শেষ সময়টুকু আরামে ঘুমাতে পারব।’

প্রথম আলো ফেনী বন্ধুসভার সভাপতি জান্নাত আক্তার জাহানের সভাপতিত্বে ও কুঠিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু তৈয়বের সঞ্চালনায় কম্বল বিতরণের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বকুলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের, ফেনী বন্ধুসভার উপদেষ্টা আমজাদ হোসাইন, বিষ্ণুপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক খোরশেদ আলম প্রমুখ।

কম্বল বিতরণের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ফেনী বন্ধুসভার সহসভাপতি মো.

ইব্রাহিম, সাধারণ সম্পাদক লোকমান চৌধুরী, সহসাংগঠনিক সম্পাদক নুর উদ্দিন ভূঁঞা, পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক দীপংকর রায়, প্রশিক্ষণ সম্পাদক তন্ময় নাথ, কার্যনির্বাহী সদস্য দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।

প্রথম আলো ফেনী বন্ধুসভার সভাপতি জান্নাত আক্তার বলেন, ‘প্রতিবারের মতো এবারও প্রথম আলো বন্ধুসভার পক্ষ থেকে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছি। কম্বল নিতে বিভিন্ন বয়সী মানুষ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সকাল থেকে ভিড় করেন। বন্ধুসভার সদস্যরা সবাইকে কম্বল তুলে দেন।’

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ