Prothomalo:
2025-05-01@09:59:24 GMT

রাদিফ

Published: 10th, February 2025 GMT

এখানে ঘুমিয়ে থাকলে বুকের ভেতর দিয়ে এক শ ট্রেন দৈনিক আনাগোনা করে। এক শই কি? বিতৃষ্ণা বলেই হয়তো কখনো সংখ্যাটা গুনে দেখোনি তুমি। অথচ একটা লম্বা সময় পর্যন্ত তুমি ভাবতে, গণিতে খুব পাকা তুমি।

অবশ্য বিতৃষ্ণাকে আর অন্য কিছু দিয়ে তুলনা করা যায় না। যার একবার কোনো কিছুর প্রতি এটি জন্মে, সে আর ফিরতে পারে না। শৈশবে এক মহাজন চিনতে তুমি। ফটফটে চেহারা, কী সুন্দর হাসি.

.. সেই লোক নাকি রাতে ঘুমায় না। কী বিস্ময়! কী বিস্ময়! কেউ কীভাবে রাতে না ঘুমিয়ে থাকে, না ঘুমিয়ে বাঁচে?

লোকটাকে জানার পর থেকেই তুমি তার পিছু পিছু ঘোরো। সে কোথায় যায়, কেনই–বা যায়, কী করে—সব তোমার জানা চাই। অথচ দিন দশেকের মফস্​সলি তদন্তেও লোকটার গতিবিধি জানা হয় না তোমার। সকালে সে বড় ইঁদারার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে অনেকক্ষণ, একদৃষ্টে কিছু একটা দেখে, কিন্তু কীই-বা দেখার আছে ওখানে? ইঁদারার সবচেয়ে বড় যে সৌন্দর্য, সেই পানিই নেই ভেতরে। বরং বাজারজুড়ে হাজারো ময়লা নিয়মিত জমা হচ্ছে ভেতরে। ক্রমেই ইঁদারাটা হয়ে উঠছে এক মহাভাগাড়। ভাগাড়ে মানুষের কী এমন থাকে?

অথচ দেখে মনে হয়, ওই মহাজনের কিছু না কিছু তো আছেই সেখানে।

দুপুরে লোকটা যায় সিঁড়িঘাটে। তুমি যাও তার পিছু পিছু। লোকটা তার বাড়তি লুঙ্গিটা পাথরের ওপর রেখে কোমরপানিতে নেমে যায়। অথচ গোসল করে না। ডুব দেয় না। তাকিয়ে থাকে একদৃষ্টিতে পানির দিকে। এদিকে তুমিও তাকিয়ে থাকো একইভাবে লোকটার দিকে।

আর লোকটা নাকি রাতের বেলা বের হয় ঘুরে বেড়াতে? কোথায় ঘুরতে যায়, তোমার দেখতে ইচ্ছা হয় খুব। কিন্তু তোমার সেই ক্ষমতা নেই। রাতের বেলা বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই তোমার। তোমাকে ঘিরে ঘুমিয়ে থাকে তোমার পরিবার। অথচ তুমি আর তাদের মধ্যে থাকো না। তুমি মনে মনে ঘুরতে থাকো লোকটার পিছু পিছু।

এ রকম চলতে চলতেই এক রাতে তুমি আর ঘুমাও না। সারা রাত মনে মনে লোকটাকে খুঁজতে থাকো। কখনো বড় বাজার, কখনো গোলা মাঠ, কখনো বাবুদের নৌকার ওপর, কখনোবা কাজীপাড়ার আমবাগানে। এত দূরেই যেতে পারো তুমি মনে মনে...আর এতটুকুতেই তোমার একটা পুরো রাত ফুরিয়ে যায় ঘুমহীন। শুয়ে শুয়ে তুমি শুনতে পাও শিমুল ফুলের পড়ে যাওয়ার শব্দ, পাশের বাড়ির খোপে পায়রার খসখস করে হেঁটে চলা।

জীবনে প্রথম নির্ঘুম রাত কাটিয়ে তুমি যাও পুনর্ভবার কাছে। আর কী বিস্ময়! তুমি দেখতে পাও মহাজনও দাঁড়িয়ে আছে নদীর ওপর। ভোর বলেই হয়তো তুমি সাহস করো। সাহস করে এগিয়ে যাও তার দিকে। আর বলো, ‘আপনি ঘুমান না?’

লোকটা তাকায়। বলে না কিছুই। তুমি অনেকক্ষণ আর কিছু বলতে পারো না। তারপর জিজ্ঞেস করো, ‘আপনার ঘুম আসে না?’

লোকটা তবু নিরুত্তর।

তুমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারো না। ফিরে আসতে চাও। আর যখন ফিরে আসবে বলেই সিঁড়ি বাইতে থাকো, তখনই লোকটা খসখসে কণ্ঠে বলে ওঠে, ‘ঘুম আসে। কিন্তু ঘুমাই না। বিতৃষ্ণা লাগে!’

২.

সেই প্রথম ‘বিতৃষ্ণা’ শব্দটা শুনেছিলে তুমি। তখন তার মানে জানা ছিল না তোমার। কিন্তু শব্দটা শোনার পর থেকেই কী যেন হয় তোমার মধ্যে, কিছুই যেন আর ভালো লাগে না। কোথাও গিয়ে স্বস্তি হয় না। স্কুলে তোমার তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করে না কোনো দিকে। খেলতে খেলতে তুমি কেমন যেন আটকে পড়ো নিজের ভেতরেই। অনেক অনেক বছর পর যখন তোমার সঙ্গে দেখা হয় নিত্রার, সে বলে, অর্থ না জেনেই তুমি সেই ছোটবেলায় বিতৃষ্ণার ভেতর ঢুকে গিয়েছিলে রাদিফ। সেখান থেকে আর কখনো বের হতে পারোনি।

‘আমার কোনো বিতৃষ্ণা নেই। কোনো কিছুতেই নেই।’

তোমার কথায় নিত্রা হেসেই ছিল শুধু। পরে বলেছিল, নিজেকে যদি এখন আয়নায় দেখতে পেতে তুমি, বুঝতে বিতৃষ্ণা আসলে দেখতে কেমন!

নিত্রা তোমার সঙ্গে অনেক দিন ছিল। তোমার মনে হয়েছিল, নিত্রা বোধ হয় সারা জীবনই তোমার সঙ্গে থেকে যাবে। ব্যাপারটা তোমাকে মাঝেমধ্যেই অস্বস্তিতে ফেলত। তুমি জানতে চাইতে, তুমি কি প্রতিদিনই আসবে আমার এখানে?

নিত্রা বলত, ‘ইয়েস!’ তারপর হাসত অনেকক্ষণ। শেষে বলত, ‘তোমার কি এখন আমাকে বিতৃষ্ণা হচ্ছে?’

কিছুই বলতে না তুমি। কিন্তু তোমার মনে হতো নিত্রা চলে যাক। মনে হতো, সে যদি তোমার দিকে তাকিয়ে থাকে, তোমার পাশে বসে, তোমার এক অদ্ভুত অনুভূতি হয়। যেন তোমার ওপর একটা ভার এসে ভর করে। যেন তুমি যা চাও, তা করতে পারো না। ফলে বৃষ্টির ওই সন্ধ্যায় তুমি অসহ্য রকম বিদ্রোহী হয়ে ওঠো। নিত্রা যখন কফির কাপের সঙ্গে নিজেকেও এগিয়ে দেয় তোমার দিকে, তোমার শরীরের সঙ্গে তার শরীর...বাড়তে থাকা প্রেম, তখন তোমার পৃথিবীও কেমন যেন গুলিয়ে ওঠে। একঝটকায় তুমি সরিয়ে দাও নিত্রাকে। আর প্রবল অপমানে বৃষ্টির মধ্যে সে ভেসে যেতে থাকে। তীব্র ক্ষোভ থেকেই নিত্রা বলে ওঠে, ‘শোনো, ওই ভোরে লোকটা তোমাকে ঘুম নিয়ে কিছু বলেনি, বিতৃষ্ণা নিয়েও কিছু বলেনি...কিছুই বলেনি...সে তোমার শরীর ধরেছিল সেদিন...পুনর্ভবাকে উথাল-পাতাল করে লোকটা তোমার শৈশবকে মেরে ফেলেছিল! তুমি বলোনি, কিন্তু আমি জানি!’

নিত্রা সেদিন চিরদিনের মতো চলে গিয়েছিল। তোমার বুক থেকে নেমে গিয়েছিল এক পৃথিবীর ভার!

৩.

রাদিফ মানে তুমি জানো। কিন্তু কাউকে তোমার তা বলতে ইচ্ছা করে না। সারা রাত তুমি চোখ মেলে তাকিয়ে থাকো ছাদের দিকে। ঝমঝমিয়ে ট্রেন চলে যায় একের পর এক। এক শ, দুই শ, তিন শ... ট্রেন চলে যায়, যেতেই থাকে একের পর এক!

কখনো কখনো তোমার বাইরে যেতে ইচ্ছা হয়, কাউকে বলতে ইচ্ছা হয় রাদিফ মানে কী...কিন্তু কোথায় যাবে তুমি? কাকেই–বা বলবে কিছু...

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।  

প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।  কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।

মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।

নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ