ভারতে আগের বছরের তুলনায় ২০২৪ সালে সংখ্যালঘুবিদ্বেষী বক্তব্য বেড়েছে ৭৪ শতাংশ
Published: 10th, February 2025 GMT
ভারতে ২০২৪ সালে মুসলিমসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য আগের বছরের তুলনায় ৭৪ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষ করে গত বছরে দেশটির জাতীয় নির্বাচন ঘিরে এমন বক্তব্য ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। আজ সোমবার ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়া হেট ল্যাবের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
২০২৪ সালে ভারতে এমন ১ হাজার ১৬৫টি উদাহরণ নথিবদ্ধ করেছে ইন্ডিয়া হেট ল্যাব, সেগুলোকে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এর আগের বছর এমন ৬৬৮টি উদাহরণ নথিবদ্ধ করেছিল তারা। বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশ, ধর্মীয় সমাবেশ, প্রতিবাদ বিক্ষোভ ও সাংস্কৃতিক জমায়েতে এসব বক্তব্য দেওয়া হয়েছে।
ইন্ডিয়া হেট ল্যাব প্রতিষ্ঠা করেছেন কাশ্মীরি সাংবাদিক রাকিব হামিদ নাইক। এটি ওয়াশিংটনভিত্তিক অলাভজনক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব অর্গানাইজড হেটের একটি প্রকল্প। বিজেপির অভিযোগ, ভারতবিরোধী চিত্র তুলে ধরে ইন্ডিয়া হেট ল্যাব। তবে সংস্থাটির ভাষ্য, তাদের প্রতিবেদন তৈরি করতে জাতিসংঘ বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের যে সংজ্ঞা দিয়েছে, সেটি অনুসরণ করা হয়েছে।
ইন্ডিয়া হেট ল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আসল বিষয়টি হলো ২০২৪ সাল ভারতে জাতীয় নির্বাচনের বছর ছিল। ১৯ এপ্রিল থেকে ১ জুন পর্যন্ত সাত ধাপে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচন ২০২৩ সালের তুলনায় (২০২৪ সালে) বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের ঘটনার ধরন তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।’ এই প্রতিবেদন নিয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি ওয়াশিংটনে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস।
এই প্রতিবেদন এমন সময় প্রকাশ করা হলো, যখন কয়েক দিন বাদেই হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মোদি সরকারের বিরুদ্ধে ভারতের সংখ্যালঘুদের সঙ্গে অন্যায্য আচরণের অভিযোগ এনেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
ইন্ডিয়া হেট ল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ১৬ মার্চ থেকে ১ জুন পর্যন্ত এক-তৃতীয়াংশ বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় নির্বাচন চলছিল। বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছিল মে মাসে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এপ্রিলে নরেন্দ্র মোদি ভারতের মুসলিমদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন, যাঁরা বেশি সন্তান জন্ম দিয়ে থাকেন।
গত বছর জোট গঠনের মাধ্যমে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসে নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি। ইন্ডিয়া হেট ল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিজেপি ও মিত্র দলগুলো শাসিত রাজ্যে গত বছর ৮০ শতাংশ বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের ঘটনা ঘটেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২০২৪ স ল গত বছর ইন ড য় র বছর
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
যশোরের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুতের (রস সংগ্রহের উপযোগী করা) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে চৌগাছা উপজেলার হায়াতপুর গ্রামে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনুর আক্তার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, রস-গুড় সংগ্রহের জন্য গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খেজুরগাছ প্রস্তুত করা হবে। এ বছর জেলায় অন্তত তিন লাখের বেশি গাছ প্রস্তুত করা হবে। যশোরে খেজুরের রস ও গুড়ের ১০০ কোটির বেশি টাকার বাজার রয়েছে। অন্তত ছয় হাজার কৃষক এই পেশায় যুক্ত।
যশোরের খেজুর গুড় জিআই পণ্য হলো যেভাবে
২০২২ সালে চৌগাছার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) ইরুফা সুলতানা খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণে খেজুর গুড়ের মেলা, গাছিদের প্রশিক্ষণ, গাছি সমাবেশ, গাছিদের সমবায় সমিতি গঠন, খেজুরগাছ রোপণ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। একই বছর জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য যশোরের খেজুর গুড়ের আবেদন করেন তিনি। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সেটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়।
শতকোটি টাকার বাজার ধরতে ব্যস্ত গাছিরা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যশোরের প্রায় ছয় হাজার গাছি খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে খেজুরগাছ প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। খেজুরগাছ সংরক্ষণ, রোপণ, গাছিদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনাসহ নানাভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে গুড় উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যশোর জেলায় খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫টি। এর মধ্যে রস আহরণের উপযোগী গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি। গাছ থেকে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৩ হাজার লিটার রস ও ২ হাজার ৭৪২ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারদর অনুযায়ী প্রতি লিটার রসের দাম ৩৫ টাকা ও গুড়ের কেজি ৩৪০ টাকা। সেই হিসাবে রস ও গুড়ের বাজার দর ৯৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রামের গাছি আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার দাদা খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দাদার সঙ্গে বাবাও যুক্ত ছিলেন। বাবার পেশায় আমিও যুক্ত হয়েছি। বাবা আর আমি এবার ৩০০টি খেজুরগাছ থেকে রস-গুড় তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। গতবছর ভালো দাম পেয়েছি। এবারও ভালো দাম পাব বলে আশা করি।’
গাছিরা জানান, কার্তিক মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই খেজুরগাছ ছেঁটে রস ও গুড় তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেন তাঁরা। শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকদের অন্যতম আয়ের উৎস এটি। এখানকার কারিগরদের দানা পাটালি তৈরির সুনাম রয়েছে। পাটালি ও ঝোলা গুড় তৈরি ছাড়াও চাষিরা শীতের ভোরে ফেরি করে কাঁচা রস বিক্রি করেন। কাঁচা রস প্রতি মাটির ভাঁড় ১৫০-২০০ টাকা, দানা গুড় ৩৫০-৪০০ টাকা আর পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কেনারহাটের উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর আমাদের কাছে ভোক্তার চাহিদা ছিল সাড়ে ছয় হাজার কেজি পাটালি গুড়। সরবরাহ করতে পেরেছিলাম দুই হাজার কেজি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি, শীত কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পাটালি গুড় সরবরাহ করতে পারিনি। এ বছর ইতিমধ্যে অর্ডার আসতে শুরু করেছে।’