জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতিতে জামালপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নে তারুণ্যের উৎসবের হাডুডু খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) পাশাপাশি বসে থাকার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এরপর থেকেই এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে নানা প্রতিক্রিয়া।

মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে হাডুডু খেলার অনুষ্ঠানে তাদের বসে থাকার ছবি ভাইরাল হয়।

ছবিটিতে দেখা যায়- অনুষ্ঠানের প্রথম সারিতে জামলপুর সদর উপজেলার ইউএনও জিন্নাত শহীদ পিংকি, জামালপুর সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন মিলন এবং তাদের পাশে বসে আছেন আওয়ামী লীগ নেতা নাজমুল হক বাবু। অনুষ্ঠানে আ.

লীগ নেতা বাবুর বক্তব্যের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেখানে বাবুকে বলতে শোনা গেছে- বিএনপির নেতা মিলনকে আগামীতে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসাবে দেখতে চান তিনি। 

আরো পড়ুন:

বাগেরহাটে বিএনপির দু’ গ্রুপের পৃথক সংঘর্ষে আহত ২৫

ক্রীড়া অনুষ্ঠানে ওসি, আ.লীগ ও বিএনপি নেতা, মিশ্র প্রতিক্রিয়া

আওয়ামী লীগ নেতা নাজমুল হক বাবু জামালপুর সদর উপজেলার মেষ্টা ইউনিয়নের ৪ বারের চেয়ারম্যান। স্বতন্ত্রভাবে ইউপি নির্বাচন করার জন্য তিনি দলীয় পদ থেকে একবার বহিষ্কারও হয়েছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়- গতকাল সকাল থেকে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানটিতে দুপুর ১টার দিকে যোগ দেন আওয়ামী লীগ নেতা বাবু। সেখানে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর বক্তব্য দিয়ে চলে যান তিনি। 

অনুষ্ঠানটির সভাপতি বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুমনুল করিম মোবাইল ফোনে বলেন- “খেলা বা অনুষ্ঠানটি আমাদের বিদ্যালয়ের মাঠে হওয়ায় আমাকে সভাপতি করা হয়। মূলত খেলাটি পরিচালনা করেছে উপজেলা প্রশাসন, উদ্বোধন করেছে উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক রুহুল আমিন মিলন। সঞ্চালনা করেছেন ছাত্র আন্দোলনের শাকিল নামে একটি ছেলে। এখানে বাবু চেয়ারম্যান কিভাবে বক্তব্য দিলেন এই বিষয়টি আমি জানি না। কারণ স্বাগত বক্তব্য দিয়েই আমি আমার অফিস রুমে চলে যায়।”

জামালপুর সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি রুহুল আমিন মিলন বলেন, “আমি ওই অনুষ্ঠানের কোনো অতিথি না। আমার এলাকা তাই সেখানে গিয়েছিলাম। এখন কে, কোথায়, কার সঙ্গে বসবে এটা তো আমি জানি না। অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে উপজেলা প্রশাসন।” 

তিনি আরো বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আমি মোট ৪০টি মামলার আসামি ছিলাম, জেল খেটেছি। ১৬টি বছর বাড়িতে থাকতে পারিনি। তাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করার কোনো সুযোগ নেই।”

আওয়ামী লীগ নেতা নাজমুল হক বাবু মোবাইল ফোনে বলেন, “আমি স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছি। জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য পদে আমাকে রাখা হয়েছিলো। আমি তখন জানতাম না। জানার পরপরই আমি এই পদ প্রত্যাহার করে চিঠি দিয়েছিলাম। এছাড়াও ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আমার এলাকায় যারা মামলার শিকার হয়েছিল, নিজের পকেটের টাকা খরচ করে জামিনের জন্য  ৫ আগস্টের আগেই তাদের উচ্চ আদালতে পাঠিয়েছিলাম। নিম্ন আদালতেও আসামি হওয়া ছাত্রদের জন্য আমি শ্রম, সময়, অর্থ ব্যয় করেছি। ৫ আগস্টের পর এখনো আমি এলাকাতেই আছি। শুধুমাত্র আমি এলাকার মানুষের জন্য কাজ করেছি আর জনগণ আমাকে ভালোবাসে বলে। একটি পক্ষ আমার ক্ষতি করার জন্য ষড়যন্ত্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে।” 

জামালপুর সদর উপজেলার ইউএনও জিন্নাত শহীদ পিংকি বলেন, ‘তিনি (নাজমুল হক বাবু) আওয়ামী লীগ নেতা, সেই বিষয়টি আমি একদমই জানতাম না। যেহেতু আমি সম্প্রতি যোগদান করেছি, তাই তার  সম্পর্কে আমার তেমন কোনো ধারণা নেই। আমি কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তারা আমাকে বলেছে তিনি স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করেছে। আর একটি বিষয় হচ্ছে- আমি ওই অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলাম। কিন্তু তাকে দাওয়াত করা হয়েছিল কিনা, সেই বিষয়টি আমি নিশ্চিত না। আমি যেহেতু জানতে পারলাম, সেহেতু এরপর থেকে আমি তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করব।”

ঢাকা/শোভন/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ইউএনও আওয় ম ল গ ব এনপ র ন কর ছ র জন য হয় ছ ল আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ