জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহতদের হাসপাতালে ভর্তি রেখে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কে এম মহিউদ্দিনের আদালতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকা জেলার সাভারে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাইয়ুম হত্যা মামলায় রিমান্ড শুনানিতে এ দাবি করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তার ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ইকবাল হোসেন রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন।

তিনি বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সবচেয়ে বেশি তাণ্ডব চালানো হয় সাভার ও আশুলিয়া এলাকায়। আশুলিয়ায় ৪১ জন ও সাভারে ২১ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনা ঘটেছে তার নির্বাচনি এলাকায়। এ আসামির ছত্রছায়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। তিনি ধনাঢ্য ব্যক্তি। টাকা দিয়ে এসব অপকর্ম করিয়েছেন। লাশে গান পাউডার দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। তার দায়ভার তাকেই নিতে হবে।”

আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তারা বলেন, “আমরাও চাই, মামলার তদন্তভার ঠিকভাবে হোক। বয়স বিবেচনায় তার রিমান্ড বাতিলের আবেদন করছি। প্রয়োজনে তাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।”

এসময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, “পুলিশের পেছনে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আহতদের চিকিৎসাও করতে দেয়নি।”

এ সময় ডা.

এনাম বলেন, “এটা মিথ্যা কথা। যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু তখন বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে নির্দেশ দিয়েছি। আমি নিজে গেছি। জুলাই থেকে অক্টোবর চার মাসে গুলিবিদ্ধ ২৯০ জনকে এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দিয়েছি। ওষুধ, খাবার, অপারেশন করিয়েছি। জরুরি বিভাগ থেকে আহত ৫৭৬ জনকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছি৷ সব রেকর্ডে আছে। রানা প্লাজার ভবন ধসের সময় সাড়ে পাঁচ হাজার শ্রমিককে চিকিৎসা দিয়েছি। এনাম মেডিক্যাল মানবিক হাসপাতাল।”

পরে আদালত তার ৫ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকা জেলার সাভার বাসস্ট্যান্ডে ৫ আগস্ট দুপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ'র শিক্ষার্থী কাইয়ুম। এ ঘটনায় তার মা কুলছুম বেগম সাভার মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।

গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ অগাস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। দুই দিন বাদে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর একে একে গ্রেপ্তার হন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও প্রভাবশালী সংসদ সদস্যরা। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের প্রায় ছয় মাস পর গত ২৬ জানুয়ারি দিবাগত রাতে ঢাকার ভাটারা এলাকা থেকে ডা. এনামুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় মিরপুর মডেল থানায় হকার সাগর হত্যা মামলায় তার ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ২ ফেব্রুয়ারি রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

পেশায় চিকিৎসক এবং সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এনাম ২০১৯ সালে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় থাকলেও ২০২৪ সালে বাদ পড়েন।

২০১৩ সালের রানা প্লাজা ধসের পর আহতদের একটি বড় অংশের চিকিৎসা হয়েছিল এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এতে এনামুরের প্রশংসা ছড়িয়ে পড়ে।

এর আগে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলেও ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে তাকে নৌকা প্রতীক দেয় ক্ষমতাসীন দল।

বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্জনের সেই নির্বাচনে জনপ্রিয়তার পরীক্ষা দিতে হয়নি এনামুরকে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে সংসদে আসেন তিনি।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও একই আসন থেকে জয় লাভ করেন। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি শেখ হাসিনার চতুর্থ মন্ত্রিসভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

তবে ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু তাকে হারিয়ে বিজয়ী হন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম, যিনি আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

ঢাকা/মামুন/ইভা

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আহতদ র মন ত র ল কল জ আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

সিলেটে পাথরবাহী ট্রাক্টরচাপায় পর্যটক নিহত, আহত ৫

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে যাওয়ার পথে পাথরবাহী ট্রাক্টরচাপায় জিয়াউল হক (৬৫) নামে এক পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ৫ জন।

শনিবার (১ নভেম্বর) দুপুরে সিলেট-ভোলাগঞ্জ মহাসড়কের ভোলাগঞ্জ পয়েন্টে এই দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে, একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

আরো পড়ুন:

চট্টগ্রামে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গেল পুলিশবাহী বাস, আহত ২০

খাগড়াছড়িতে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সিলেট থেকে পাঁচজন পর্যটক নিয়ে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্রে যাচ্ছিল। ভোলাগঞ্জ পয়েন্টে আসলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি পাথরবাহী ট্রাক্টর অটোরিকশাকে চাপা দেয়। এতে অটোরিকশার চালকসহ ৬ জন আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক জিয়াউল হককে মৃত ঘোষণা করেন। পরে আহতদের সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি রতন শেখ বলেন, ‘‘ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে যাওয়ার পথে পাথরবাহী ট্রাক্টরচাপায় এক পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।’’

ঢাকা/নূর/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কমিটি পুনর্বহাল
  • সিলেটে পাথরবাহী ট্রাক্টরচাপায় পর্যটক নিহত, আহত ৫