পদ্মার চরে বেপরোয়া সন্ত্রাসীরা, চলছে অস্ত্রের মহড়া
Published: 13th, February 2025 GMT
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মার চরে ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী বাহিনী। গত সোমবার দিবাগত রাতে উপজেলার বৈরাগীর চর এলাকায় রাজু হোসেন (১৮) নামের এক যুবককে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। একই রাত ও পরদিন রাতে আবেদের ঘাট ও বৈরাগীর চর এলাকার পদ্মার চরে অন্তত শতাধিক গরু ও মহিষ লুটের অভিযোগ উঠেছে এসব বাহিনীর বিরুদ্ধে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এসব সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা প্রতিদিন চরাঞ্চলে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের আতঙ্কে রাখছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দিবাগত রাতে মরিচা ইউনিয়নের রাজু হোসেনকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে পদ্মার চরে গুলি করে হত্যা করা হয়। একই রাতে মরিচা এলাকার শহিদ মন্ডলের বাথান থেকে অন্তত ৫০টি মহিষ ও ১৫টি গরু লুট করে সন্ত্রাসীরা। এ সময় তারা রাখাল মাজদার আলী, কামাল হোসেন ও সৈকতকে বেধড়ক মারপিট করে ও অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে পার্শ্ববর্তী রহিমপুর মাঠে নিয়ে আটকে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাখালদের উদ্ধার করলেও লুট হওয়া গরু-মহিষ উদ্ধার করতে পারেনি।
এরপর মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ফিলিপনগর ইউনিয়নের আবেদের ঘাট এলাকায় কালু কবিরাজের বাথান থেকে ছোট-বড় মিলিয়ে ৩৪টির বেশি গরু লুট করা হয়। এ ছাড়া চরাঞ্চলের আরও কয়েকটি বাথানে গরু-মহিষ লুটের ঘটনা ঘটেছে।
গরু-মহিষ লুটের ঘটনায় শহিদ মন্ডলের স্ত্রী তমা খাতুন পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতে তিনি মরিচা ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অন্যদিকে ফিলিপনগর ইউনিয়নের কালু কবিরাজ জানান, তার বাথানে গভীর রাতে অস্ত্রধারীরা হামলা চালায় এবং রাখালদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গরুগুলো লুট করে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, ‘‘কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তা বললে আমাকে গুলি করে মেরে ফেলবে।’’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর লালচাঁদ বাহিনীর সদস্যরা সংঘবদ্ধ হয়ে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছেন। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে স্থানীয় কিছু অস্ত্রধারী।’’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক সাইদুর রহমান বলেন, ‘‘আমি কোনো খারাপ কাজের সঙ্গে জড়িত নই। কিছুদিন ধরে এলাকায় অস্ত্রধারীদের আনাগোনা বেড়েছে। তারা রাতে পদ্মার চরে ঘুরে বেড়ায়। এরই মধ্যে আমার ভাতিজা রাজু খুন হয়েছে। এসব অস্ত্রধারীরা গরু-মহিষ লুট করেছে।’’
দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ বলেন, ‘‘একটি হত্যাকাণ্ডের পর পদ্মার চরাঞ্চলে গরু-মহিষ লুটের খবর পেয়েছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া কোনো সন্ত্রাসী বাহিনী সক্রিয় হলে বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদের দমন করা হবে।’’
ঢাকা/কাঞ্চন/রাজীব
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
কৌশলগত নেতৃত্ব বিকাশে জোর সেনাপ্রধানের
কৌশলগত নেতৃত্ব বিকাশের মাধ্যমে জাতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার আহ্বান জানিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেছেন, এই নেতৃত্বই দেশকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুর সেনানিবাসের ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে তিন সপ্তাহব্যাপী স্ট্র্যাটেজিক লিডারশিপ প্রশিক্ষণ ক্যাপস্টোন কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। সেনাপ্রধান ক্যাপস্টোন ফেলোদের মধ্যে সনদ বিতরণ করেন।
এই কোর্সে জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, সিনিয়র চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, কূটনীতিক, সাংবাদিক এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী প্রতিনিধিসহ সর্বমোট ৪৫ জন ফেলো অংশগ্রহণ করেন।
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জাতি গঠনের সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৌশলগত নেতৃত্বের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি দেশের সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও কার্যকর ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার জন্য গতিশীল ও সংস্কারমুখী নেতৃত্বের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।
দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আলোকপাত করে সেনাপ্রধান বলেন, বিদ্যমান পরিবর্তনশীল ভূরাজনীতি, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও নতুন জাতীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ক্যাপস্টোন কোর্স কৌশলগত অন্তর্দৃষ্টি, সহযোগিতা ও জ্ঞানভিত্তিক নেতৃত্ব গড়ে তুলতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
এনডিসি কমান্ড্যান্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ শাহীনুল হক বলেন, ‘ক্যাপস্টোন কোর্স জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বস্তুনিষ্ঠ সংলাপ ও একীভূত চিন্তাধারার বিকাশ ঘটানোর লক্ষ্যে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। এতে অংশগ্রহণকারীদের সক্রিয়, চিন্তাশীল ও সশ্রদ্ধ অংশগ্রহণ তাদের কৌশলগত ও মননশীল চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটিয়েছে এবং বিভিন্ন সংস্থার নেতৃবৃন্দের মধ্যে জাতীয় পর্যায়ের মেলবন্ধন তৈরি করতে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।’
ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ক্যাপস্টোন কোর্স ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ পরিচালিত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কোর্স। এই কোর্সের লক্ষ্য কৌশলগত সচেতনতা বৃদ্ধি, সূক্ষ্ম চিন্তাভাবনার বিকাশ, আন্তসংস্থার সহযোগিতা বৃদ্ধি করা এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থার নেতৃত্ব পর্যায়ে জাতীয় নিরাপত্তা ও উন্নয়নবিষয়ক সমন্বিত ধারণা গড়ে তোলা।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সশস্ত্র বাহিনী ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, এনডিসির ফ্যাকাল্টি ও স্টাফ অফিসার এবং জাতীয় পর্যায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।