সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির ১৬টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী হোসনে আরা বেগমের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের স্ত্রী ও দুই সন্তানের বিদেশযাত্রায়ও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পৃথক পৃথক আবেদনের শুনানি নিয়ে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো.

জাকির হোসেন আজ বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেন।

দীপু মনির ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

দীপু মনির ১৬টি ব্যাংক হিসাবের বিস্তারিত তথ্য আদালতের কাছে তুলে ধরে দুদক। একই সঙ্গে দীপু মনির এসব ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ চেয়ে আবেদন করে সংস্থাটি। শুনানি নিয়ে আদালত দীপু মনির এসব ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, দীপু মনির ১৬টি ব্যাংক হিসাবে জমা হয় ৩১ কোটি ৯ লাখ টাকা। অন্যদিকে এসব ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা হয়েছে ২৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। বর্তমানে এসব ব্যাংক হিসাবে ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা জমা রয়েছে।

দুদক আদালতকে লিখিতভাবে জানিয়েছে, দীপু মনির ব্যাংক হিসাবে বিপুল পরিমাণ অর্থের সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। অর্থ হস্তান্তর বা স্থানান্তর বা বেহাত করার চেষ্টা করছে বলে দুদক জানতে পেরেছে। এ জন্য এসব ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন। শুনানি নিয়ে আদালত দীপু মনির নামে থাকা এসব ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন।

উল্লেখ্য, গত ১৯ আগস্ট গ্রেপ্তার হন দীপু মনি। এর পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।

নুরুজ্জামানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা

সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও তাঁর স্ত্রীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদন করে দুদক। আদালতকে লিখিতভাবে দুদক জানিয়েছে, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করেছে দুদক। নুরুজ্জামান ও তাঁর স্ত্রীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়। শুনানি নিয়ে আদালত তাঁদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন।

উল্লেখ্য, গত ৩০ জানুয়ারি গ্রেপ্তার হন নুরুজ্জামান।

শিবলী রুবাইয়াতের স্ত্রী-সন্তানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের স্ত্রী শেনীন রুবাইয়াত, তাঁর দুই সন্তান জুহায়ের শারার ইসলাম ও শাহদান ইসলামের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আজ বৃহস্পতিবার আবেদন করে দুদক।

শিবলী রুবাইয়াতের স্ত্রী ও দুই সন্তানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞার আবেদনে দুদক আদালতকে জানিয়েছে, শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামসহ অন্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। রুবাইয়াত ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানসহ অন্যরা বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে দুদক জানতে পেরেছে। শুনানি নিয়ে আদালত রুবাইয়াতের স্ত্রী, দুই সন্তানসহ ১১ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন। উল্লেখ্য, ৪ ফেব্রুয়ারি শিবলী রুবাইয়াত গ্রেপ্তার হন।

সিরাজগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা

সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কে এম হোসেন আলী ও তাঁর স্ত্রী বেগম গোলে নূরের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মেয়ে হাসনা হেনা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাক (ডিজিএম) আবদুস সালামের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

এই চারজনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদন করেন দুদকের উপপরিচালক মো. আবু সাইদ। তাতে বলা হয়, কে এম হোসেন আলী, তাঁর স্ত্রীসহ অন্যরা ঘুষ গ্রহণ করে দলীয় পদ-বাণিজ্য, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চাকরি-বাণিজ্য, জমি দখল ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত আওয়ামী লীগ নেতা কে এম হোসেন আলীসহ চারজনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এসব ব য ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে তানিয়া আমিরের বক্তব্য খণ্ডন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের

২০০৯ সালের বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) বিদ্রোহ নিয়ে ব্যারিস্টার তানিয়া আমিরের বক্তব্য বিভ্রান্তিকর বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। 

২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহ সম্পর্কে তানিয়া আমিরের বক্তব্য, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত হচ্ছে, তাতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থক হিসেবে তার নিজস্ব রাজনৈতিক এজেন্ডা প্রতিফলিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রেস উইংয়ের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ- সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস-এ পোস্ট করা এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে। খবর বাসসের 

প্রেস উইং বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ডের পেছনের সত্য উদঘাটনে অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত উদ্যোগগুলো উপস্থাপন করে। উদ্যোগগুলো হচ্ছে-

তদন্ত কমিশন

২০২৪ সালের ২২ ডিসেম্বর সরকার পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্তের জন্য সাত সদস্যের একটি জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে।

অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এএলএম ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে কমিশন কয়েক ডজন সাক্ষীর (এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৭ জন, যার মধ্যে অফিসার, বিডিআর কর্মী এবং ভুক্তভোগীদের পরিবার অন্তর্ভুক্ত) সাক্ষ্য সংগ্রহ করেছে। এটি ‘ঘটনার প্রকৃত প্রকৃতি উন্মোচন’, সমস্ত দোষী ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ এবং এমনকি যেকোনো দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র তদন্তে  প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

গোপনীয়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১৮ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে কমিশন একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ২০০৯ সালের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য বা সাক্ষ্য থাকা যেকোনো ব্যক্তির কাছে তাদের ওয়েবসাইট বা ই-মেইলের মাধ্যমে জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানায়।

সত্য উন্মোচনের অঙ্গীকার

স্বরাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী পিলখানার ঘটনার পূর্ণাঙ্গ পুনঃতদন্তের জন্য সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে, কমিশনের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, তদন্ত কমিশন ইতোমধ্যেই কয়েক ডজন সাক্ষীর সাক্ষ্য রেকর্ড করেছে এবং প্রয়োজনে তারা এমনকি শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের (যেমন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রাক্তন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ) ডাকবে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার ‘প্রকৃত প্রকৃতি উন্মোচিত’ হবে, মামলায় প্রকৃত অপরাধীদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং সম্ভাব্য সকল বিদেশী বা দেশীয় চক্রান্তের বিষয়টি খুঁজে দেখা হবে।

তথ্যের জন্য জনসাধারণের কাছে আবেদন

প্রাসঙ্গিক তথ্য সম্বলিত যেকোনো নাগরিক বা সংস্থাকে তার ওয়েবসাইট বা ইমেলের মাধ্যমে এগিয়ে আসার জন্য কমিশন ১৮ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।

এটি ১৬ বছর আগের একটি অপরাধের তদন্তের জটিলতা তুলে ধরে এবং তথ্যদাতাদের গোপনীয়তা নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছে। যা সরকার বিষয়গুলো ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে- তানিয়া আমিরের এমন দাবির বিপরীতে এটি স্বচ্ছ এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ হওয়ার একটি আনুষ্ঠানিক প্রচেষ্টার ইঙ্গিত দেয়।

আদালতের মামলা এবং মুক্তি

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে, বিদ্রোহ-সম্পর্কিত মামলায় কয়েকশ’ সাবেক বিডিআর কর্মীকে জামিন দেওয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে তানিয়া আমিরের অভিযোগ কোনো আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু  বন্দইদের জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। নিহত অফিসারদের পরিবার তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ জানায় যে যারা সেনা অফিসারদের হত্যা করেছে তাদের সম্পূর্ণ মুক্তি দেওয়া উচিত নয়। ইতিমধ্যে, বেঁচে যাওয়াদের পরিবারগুলো নতুন অভিযোগ দায়ের করেছে (যেমন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে) এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হলে নতুন করে বিক্ষোভের হুমকি দিয়েছে।

নিহতদের স্মরণ

অন্তর্বর্তী সরকার একই সঙ্গে নিহতদের সম্মান জানাতে পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে এবং পিলখানায় নিহত ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে ‘শহীদ’ মর্যাদা প্রদান করে।

প্রেস উইং জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমিরের সম্পৃক্ততা সুপরিচিত। ২০২৩ সালের নভেম্বরে, তিনি এবং তার বাবা ব্যারিস্টার এম আমির-উল ইসলাম ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে সংসদীয় আসন কুষ্টিয়া-৩ এবং কুষ্টিয়া-৪ এর জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন, যা দলের সাথে সক্রিয় রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত বহন করে।

‘তার পারিবারিক পটভূমি আওয়ামী লীগের উত্তরাধিকারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত: তার বাবা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং সংবিধান প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং পরিবার ঐতিহাসিকভাবে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছে। যদিও তিনি স্বাধীনভাবে আইনি মামলা করেছেন, তবুও তাকে দলের রাজনৈতিক ও আদর্শিক অবস্থানের সাথে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত হিসেবে দেখা হয়।’

বিবৃতিতে বলা হয়েছে- এই সম্পৃক্ততার পরিপ্রেক্ষিতে, জেনেভা প্রেস ক্লাবে অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে এবং ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহে জড়িত সন্ত্রাসী ও বিদ্রোহীদের প্রতিনিধিত্ব করে এমন ইঙ্গিত দিয়ে তার সাম্প্রতিক মন্তব্যকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করা যেতে পারে।

উল্লেখ্য, জেনেভা সম্মেলনে তানিয়া আমির এবং অন্যান্য বক্তারা কোনও নতুন প্রমাণ উদ্ধৃত করেননি; বরং, তারা বছরের পর বছর ধরে বিরোধী পক্ষগুলোর মধ্যে প্রচারিত দাবিগুলো  (যেমন মৃত্যুর সংখ্যা, ক্ষতিপূরণ আইন, বন্দীদের মুক্তি) পুনরাবৃত্তি করেছেন বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ