যুক্তরাষ্ট্র সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। হোয়াইট হাউসে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দুই নেতার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। দুই দিনের এই সফরে বাণিজ্য, শুল্ক, অভিবাসন, প্রতিরক্ষা, জ্বালানি এবং প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া, প্রধানমন্ত্রী মোদির টেসলার সিইও ইলন মাস্কের সঙ্গেও দেখা করার কথা রয়েছে।

এনডিটিভি জানিয়েছে, মোদি ইতোমধ্যে ওয়াশিংটনে মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা দপ্তরের পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই সফরটি যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ককে আরও গভীর করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর মোদি এবং ট্রাম্পের মধ্যে এটিই প্রথম দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। 

ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে, যা ভারতীয় কোম্পানিগুলোর জন্য উদ্বেগের বিষয়। মোদি এই শুল্ক নীতির প্রভাব কমানোর জন্য আলোচনা করবেন এবং ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সম্প্রসারণের উপায় নিয়ে কথা বলবেন।

ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতি ভারতীয় শিক্ষার্থী এবং শ্রমজীবীদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এ বিষয়ে ভারতের উদ্বেগ উত্থাপন এবং এই নীতির প্রভাব কমানোর জন্য আলোচনা হবে। দুই নেতা প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় এবং যৌথ নিরাপত্তা উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করবেন। ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি আমদানিতে আগ্রহী। এ ছাড়া জ্বালানি নিরাপত্তা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহযোগিতা এই বৈঠকের অন্যতম বিষয়। ভারত মার্কিন প্রাকৃতিক গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি সম্পদ আমদানিতে আগ্রহ দেখিয়েছে।

প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সাইবার নিরাপত্তা এবং ডিজিটাল অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা হবে। ইলন মাস্কের সঙ্গে বৈঠকে প্রযুক্তি ও টেকসই উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিয়ে দুই নেতা আলোচনা করবেন। ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।

ইউক্রেন সংকট, পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি এবং অন্যান্য বৈশ্বিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে। দুই নেতা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সহযোগিতা জোরদার করবেন।

এদিকে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ভারত লাভবান হবে বলে মনে করেন দেশটির ৪০ শতাংশের বেশি নাগরিক। মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে বুধবার এই জরিপ প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে। 

ইন্ডিয়া টুডের পরিচালিত ‘জাতির মনোভাব’ (মুড অব দ্য ন্যাশন) শিরোনামের ওই জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মতামত যাচাই করে দেখা গেছে, মোদি সমর্থক ও তাঁর রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মধ্যে ব্যাপক সমর্থন রয়েছে ট্রাম্পের। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ১৬ শতাংশ মনে করে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের দ্বিতীয় মেয়াদে ভারতের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সহয গ ত র জন য করব ন

এছাড়াও পড়ুন:

চলতি বছর বিশ্বে মন্দার ঝুঁকি বেড়েছে, জরিপে অর্থনীতিবিদদের শঙ্কা

চলতি বছরে মন্দার ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে গেছে বলে জরিপে দেখা গেছে। ৫০টি দেশের অর্থনীতিবিদ এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির কারণে ব্যবসায়িক পরিবেশের অবনতি হয়েছে।

চলতি বছরে বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ১৬৭ জন বিশ্লেষকের মধ্যে ১০১ জন ‘উচ্চ’ বা ‘খুব উচ্চ’ ঝুঁকির কথা বলেছেন। ৬৬ জন বলেছেন ঝুঁকি ‘কম’, যার মধ্যে চারজন বলেছেন ‘অত্যন্ত কম’।

জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ অর্থনীতি বিশ্লেষক বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের কারণে (যদিও ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে) ব্যবসায়িক আস্থা নষ্ট হয়েছে; সৃষ্টি করেছে অস্থিরতা। ফলে চলতি বছর মন্দার ঝুঁকি অনেকটা বেড়েছে। মাত্র তিন মাস আগেও এই অর্থনীতিবিদদের অধিকাংশ শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। শুধু তা–ই নয়, তাঁরা বলেছিলেন, প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা থাকবে।

কিন্তু ট্রাম্পের বিশ্ববাণিজ্য ‘নতুনভাবে গঠনের’ উদ্যোগ, বিশেষ করে সব আমদানির ওপর শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত, অর্থনীতিতে তীব্র অভিঘাত সৃষ্টি করেছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজারে বাজার মূলধন কমেছে ট্রিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ। ডলারসহ যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদগুলোয় বিনিয়োগকারীদের আস্থা নড়বড়ে হয়েছে।

জরিপে অংশগ্রহণকারী ৩০০ জনের বেশি অর্থনীতিবিদের মধ্যে কেউই বলেননি, ট্রাম্পের শুল্কনীতির ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ৯২ শতাংশ অর্থনীতিবিদ বলেছেন, ব্যবসায়ীদের মনোবলে এই শুল্কনীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মাত্র ৮ শতাংশ নিরপেক্ষ মত দিয়েছেন, যাঁদের বেশির ভাগই ভারত ও অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির প্রতিনিধি।

জরিপে ২০২৫ সালের জন্য বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে আনা হয়েছে। জানুয়ারি মাসের জরিপে এই অর্থনীতিবিদেরাই বলেছিলেন, প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ শতাংশ। এবার তা ২ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস অবশ্য একটু বেশি—তারা ২ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলেছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৪৮টি অর্থনীতির মধ্যে ২৮টি অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে আনা হয়েছে।

২০২৬ সালের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও আশাব্যঞ্জক নয়। অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে যে অর্থনৈতিক মন্দার আবহ তৈরি হয়েছে, তা সহজে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। জরিপে অংশগ্রহণকারী ১৬৭ অর্থনীতিবিদের মধ্যে ১০১ জন (৬০ শতাংশ) অবশ্য বলেছেন, চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার ঝুঁকি বেশি বা খুব বেশি। মাত্র ৬৬ জন এটিকে কম ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন।

চীন ও রাশিয়ার অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে ভালো করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীরা মনে করছেন, চীনের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ; রাশিয়ার হতে পারে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। অন্যদিকে মেক্সিকো ও কানাডার প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে দশমিক ২ ও ১ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসতে পারে, গত কয়েক মাসের মধ্যে যা সবচেয়ে বড় অবনতি।

গবেষণাপ্রতিষ্ঠান স্টেট স্ট্রিটের ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার প্রধান কৌশলবিদ টিমোথি গ্রাফ বলেন, এই পরিবেশে প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশাবাদী হওয়া কঠিন। আজকের মধ্যে সব শুল্ক তুলে নেওয়া হলেও ট্রাম্পের নীতির কারণে দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা চুক্তিতে বিশ্বাসযোগ্যতার যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠা কঠিন।

এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বজুড়ে যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছিল, নীতি সুদহার বৃদ্ধির মাধ্যমে তা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু এখন উচ্চ শুল্কের কারণে নতুন করে মূল্যস্ফীতির চাপ তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া ও বেকারত্ব বাড়লে স্ট্যাগফ্লেশন (উচ্চ মূল্যস্ফীতি+বেকারত্ব নিম্ন প্রবৃদ্ধি) সৃষ্টি হতে পারে। সেই আশঙ্কা দিন দিন বাড়ছে বলেই মনে করেন গ্রাফ।

জরিপে আরও দেখা গেছে, ২৯টি প্রধান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে ১৯টি ব্যাংক চলতি বছর মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আগামী বছরের জন্য এ সংখ্যা কিছুটা কমে ১৫-তে নামবে বলে পূর্বাভাস।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই বাণিজ্যনীতির অভিঘাত কেবল যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে নয়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়ও দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। ফলে ভবিষ্যতেও চাপ অব্যাহত থাকবে। এখন দেখার বিষয়, বিশ্বনেতারা কীভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেন, অর্থাৎ কীভাবে স্থিতিশীল বাণিজ্যনীতি প্রণয়ন করতে পারেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শ্রমিকদের আবাসনসহ ৯ দফা দাবিতে মানববন্ধন
  • চলতি বছর বিশ্বে মন্দার ঝুঁকি বেড়েছে, জরিপে অর্থনীতিবিদদের শঙ্কা
  • বুয়েটের নতুন রিকশার অনুমোদন দেবে সরকার, ‘মাস্টার ট্রেইনার’ হবেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা